আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিস্টার্ট

লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। রিস্টার্ট মোহাম্মদ ইসহাক খান আমার জীবনে তিনটি খুব বড় বড় ভুল আছে। প্রথম ভুল, আমি ঠিকমতো পড়াশোনা করিনি।

বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছি, রাত জেগে সিনেমা দেখেছি, সিগারেট খেয়েছি। ফলাফল, আমি যখন লেখাপড়া শেষ করি, তখন আমি যেখানেই যাই, সেখানেই আমার সাদামাটা রেজাল্ট দেখে সবাই ফিরিয়ে দিতে লাগলো। প্রথম ভুলটি বোধহয় বিধাতা ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। আমি এক বছরের মাথায় খুব সাধারণ হলেও একটা চাকরি জুটিয়ে নিতে সক্ষম হলাম। দ্বিতীয় ভুল, আমি আমার নিষ্পাপ স্ত্রীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলাম।

ফুলের পাঁপড়ির মতো কোমল একজন তরুণী মুখ বুজে অনেক কিছু সহ্য করে নিতে পারে। কিন্তু নিজের সবচেয়ে নির্ভরতার মানুষের কাছ থেকে বেঈমানি সহ্য করতে পারে না। তাই সে বড় দুঃখে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। চলে যাওয়াই উচিৎ। আমি তার যোগ্য ছিলাম না।

সে চলে যাওয়ার পর আমি আক্ষেপে অনেকগুলো রাত কেঁদে কাটিয়েছি। নিঃসন্দেহে সে আমার জীবনে দেখা শ্রেষ্ঠ নারীটি ছিল। কী পুণ্যে তাকে পেয়েছিলাম জানি না। কিন্তু কু-প্রবৃত্তি আমাকে অনেক দূরে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো, যার ফলে আমার সুখে অরুচি ধরেছিল, অন্য এক নারীর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করেছিলাম। দ্বিতীয় ভুলটি বোধহয় বিধাতা ক্ষমা করেন নি।

কিন্তু জীবন আমার থেমে থাকেনি। আমি সময়ের প্রয়োজনে আরেকজন সঙ্গিনী জুটিয়ে নিয়ে আবার সংসার পেতেছিলাম। সযত্নে চেপে গিয়েছিলাম, গোপন করে গিয়েছিলাম আমার পাপে জড়ানো কুটিল জীবনের বৃত্তান্ত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন গোপনীয়তা থাকে না, কথাটা ভুল। আমার মতো খারাপ মানুষের জন্য ব্যাপারটা প্রযোজ্য নয়।

তৃতীয় ভুল, আমি পরিবারের চাপে, নিজের সুবিধের জন্য আমার বৃদ্ধা মা-কে বৃদ্ধাশ্রমে "ফেলে দিয়ে" এসেছিলাম। তিনি কাঁদেন নি, কোন অনুযোগ করেন নি। বরং আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, "ভালো থাকিস বাপ। " একজন মা তাঁর সন্তানকে কখনো অভিশাপ দেন না, সন্তান যত খারাপই হোক না কেন। আমার মা-ও দেন নি।

কিন্তু বিধাতার রোষদৃষ্টি কি আমার ওপর এসে পড়েছিলো? আমি জীবনের পথে এগিয়ে গেছি ঠিকই, থেমে যাইনি ঠিকই, কিন্তু সত্যি বলছি, কখনো "শান্তি" নামের বস্তুটির স্বাদ পাইনি। আজ যখন কোন ছেলেকে দেখি, ভাল রেজাল্ট করে নিজের বাবা-মাকে সালাম করছে, তখন আমার হিংসে হয়। যখন কোন সুখী দম্পতিকে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে দেখি, তখন হিংসে হয়। যখন কোন বৃদ্ধা মা'কে দেখি, তিনি তাঁর ছেলের মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, তখন হিংসে হয়। আমার জীবনে যে তিনটি ভুলের কথা বলেছি, সেগুলো আসলে ভুল নয়।

সেগুলো পাপ। আমি ভুল করিনি, সম্পূর্ণ সজ্ঞানে পাপ করেছি। বিরাট বড় পাপ। কম্পিউটার গেমে "রিস্টার্ট" বলে একটা ব্যাপার আছে। রেসিং গেমে যদি কোন গেমার দেখে যে সে অনেক পিছিয়ে পড়েছে, কিছুতেই রেস জিততে পারবে না, তখন সে রিস্টার্ট বাটনে ক্লিক করে।

কম্পিউটারে ফুটবল গেম খেলার সময় কেউ যদি দেখে যে চার-পাঁচটা গোল খেয়ে গেছে, তাহলে সে "রিস্টার্ট ম্যাচ" অপশনে ক্লিক করে। অ্যাকশন গেমে কেউ শত্রুর হাতে গুলি খেয়ে মারা গেলেও "রিস্টার্ট মিশন" নামে অপশনে ক্লিক করার সুযোগ তার হাতে থাকে। জীবন কোন কম্পিউটার গেম নয়। বিধাতা যখন পরম যত্নে, বিপুল পরিকল্পনা করে নিখুঁতভাবে জীবন আর মৃত্যুর সূত্রপাত করেছিলেন, তখন তিনি মানুষের ভাগ্যলিপি থেকে সন্তর্পণে "রিস্টার্ট" অপশনটি মুছে দিয়েছিলেন। আজ আমি জীবন সায়াহ্নে।

আজ আমার মনে হচ্ছে, যদি সুযোগ থাকতো, তাহলে আমি "রিস্টার্ট" বোতামে অবশ্যই ক্লিক করতাম। (৫ ডিসেম্বর, ২০১২) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.