আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিটারের কাটা যখন ১৫৭ টাকায় ......

শুক্রবার (৩০/১১/১২) বিকালে ঘুম থেকে উঠে বসে আছি,শ্যামলীতে যাবো গ্রুপ এর মিটিং আছে , হটাৎ মেজ মামা চট্টগ্রাম থেকে ফোন করে তার এক খালা গ্রীন লাইফ হসপিটাল এ আছে তাকে নিয়ে ডেমরা বড় মামার বাসায় যেতে হবে । খুব বিরক্ত ঝরছিল,মামার উপর রাগ ও হচ্ছিল সময় টময় নেই যেখানে ইচ্ছে যেতে বলে। পরে বড় মামাকে ফোন করে সকালে তাকে নিয়ে মামার বাসায় যাবো বলে মেনেজ করি । শ্যামলীতে গিয়ে কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে প্রিয় বন্ধুটাকে ফোন দিয়ে বলি ‘ অনেক দিন তো যাত্রাবাড়ী যাবি যাবি বলস , যাইনি , কালকে সকালে ৮ টায় যাবো রেডি হয়ে থাকিস। ’ ও প্রথমে যেতে রাজি না হলেও পরে ভার্সিটি বন্ধ থাকার কারনে রাজি হয়।

পরদিন (১/১২) সকালে তরিগরি করে উঠে রেডি হয়ে বন্ধুকে নিয়ে গ্রীন লাইফ হসপিটাল চলে যাই , নানুর সব কিছু গোছানর জন্য একটু লেট হয়। এতঃপর সকাল ১০ টার দিকে হসপিটাল থেকে বের হয়ে কয়েকটা CNG ওয়ালা কে জিজ্ঞাসা করি ডেমরা রানী মহল সিনেমা হলের কাছে যাবে কিনা , ৩০০ টাকার নিচে কেও ভাড়া নিবে না,অনেকক্ষণ পর একজনকে পেলাম,২৮০ টাকায় যেতে রাজি হইচে । তিন জন CNG তে উঠে বসলাম। কিছুক্ষন চলার পর CNG ওয়ালা বলল ‘ মামা কোন সার্জেন্ট জিজ্ঞাসা করলে বলবেন আমারা মিটারে ভাড়ায় আসছি। ’কিন্তু আমি মিথ্যা বলতে নারাজ, তাই বললাম আমাদের আনছ ইচ্চা মত ভাড়ায় আর আমারা কেন বলব আমারা মিটারে ভাড়ায় আসছি।

যাই হোক এ নিয়ে অনেকক্ষণ হাঁসি ঠাট্টা করছি আর গাড়ি চলছে। পথে পথে অনেক অলি গলি দিয়ে নিয়ে তিনি আমাদের দেখায় মামা এটা অমুক এটা অমুক । আমি বলি মামা মেইন মেইন রাস্তা চিনি ,কিন্তু অলিগলি চিনি না । এর পর সে নিজ মনে গাড়ি চালায় । খিলখেত বাসাবো দিয়ে জ্যামের মধ্য দিয়ে অনেক পর ডেমরার রাস্তা ধরে ।

রাস্তার ধরনটা এমন । দু পাশের জমি গুলো অনেক নিচু আর রাস্তা টা ভুমি থেকে অনেক উঁচু । রাস্তার দু ধারের দৃশ্যটা দেখতে ভালোই লাগছিলো। আমার সাথে যে বন্ধুটা ছিল ও আবার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পরে , ও বলে – “আমাদের এসব এলাকাতেই কাজ করতে হবে , কারন আমাদের পড়াশুনা শেষ হতে হতে ঢাকায় আর কাজ করার মত জায়গা থাকবে না। ” আরও কিছু বিষয় নিয়ে আমার কথা বলি আর হাসা হাঁসি করি।

এরপর এরপর হটাৎ আমাদের বহনকারী CNG টা ডেমরা কোয়াটার এর সামনে চলতি অবস্থায় রাস্তার মাজে উল্টিয়ে পরে , ওই মুহূর্তের ঘটনাটা আসলে ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। বাঁচব বলে আশা করিনি , আমার মাকে শেষ দেখা তো দূরের কথা আর কথা বলতে পারব কিনা টাও চিন্তা করি নি । নানুর মাথার উপর দিয়ে CNG এর ছাউনি দিয়ে আমি বের হলাম হাতে আর কপালে মোটামুটি ভালোই ব্যথা পাইছি,আমি হাত নাড়াতে পারলাম না , আমার বন্ধু বাম পাশে ছিল কিন্তু CNG টা ডান পাশে উল্টে পড়ায় ওর বেশি ক্ষতি হই নি। নানু ছিল বাম পাশে এবং তিনিই বেশি বেথা পাইছেন-বুকে এবং কপালে। নানুর কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন , আমিও ছটফট করছিলাম।

স্থানিও মানুষ আমাদের অন্য একাটা CNG তে উঠিয়ে দিয়েছে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য । নতুন CNG তে উঠার সময় একবার লক্ষ করছিলাম আগের CNG ওয়ালা ঘাসের মধ্যে দু পা মেলে শুয়ে আছে । CNG টা একদম দুমড়ে মুচড়ে গেছে । এরপর ২০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছলাম। জরুরী বিভাগে নানুর কপালে সেলাই,এক্সরে করা সহ কাজ সম্পূর্ণ হল।

আমাকেও হাত ঝুলিয়ে দিল , এক্সরে করল। অবশ্য এর মধ্যে অনেক কিছু হয়ে গেছে , ২/৩ জায়গাই ফোন ও চলে গেছে । মামা এসে আমাদের বাসায় নিয়ে গেল। দুপুরে খেয়ে আমি আর আমার বন্ধু চলে আসি । এখন মোটামুটি ভালো আছি আমি ।

জীবনে এই প্রথম কোন দুর্ঘটনার শরণাপন্ন হলাম, মহান আল্লহর কাছে অশেষ সুকুরিয়া যে তিনি আমাদেরকে খুব বড় বিপদের হাত থেকে অল্পতেই রক্ষা করেছেন । আমাদের CNG এর সামনে বা পিছনে কোন ভারী জানবাহন ছিল না , টা না হলে হয়ত শেষ যাত্রায় যেতে হতো কিংবা অসহায়ত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে হতো সারা জীবন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।