আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের প্রথিতযশা অভিনেতা, গীতিকার, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমানের জন্ম দিন আজঃ সুরকার, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংগীত পরিচালক, গীতিকার, প্রযোজক খান আতাউর রহমানের জন্ম দিনে আমাদের শুভেচ্ছা

আমি সত্য জানতে চাই প্রখ্যাত গায়ক, গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র অভিনেতা ও পরিচালক খান আতাউর রহমানের জন্মদিন আজ। ১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলা রামকান্তপুর গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। বাবার নাম জিয়ারত হোসেন খান, মায়ের নাম যোহরা খাতুন। তার মা তাকে আদর করে ডাকতেন "তারা"। তার মায়ের পরিবার ছিলেন মাজারের খাদিম তথা তত্ত্বাবধায়ক।

ধর্মীয় উরসে তার মামা নানারকম আধ্যাত্মিক সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। ১৯৩৭ সালে ঢাকা জিলা সঙ্গীত প্রতিযোগীতায় খান আতা প্রথম স্থান দখল করেন। তিনি তখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। সুরকার, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংগীত পরিচালক, গীতিকার, প্রযোজক খান আতাউর রহমানের (যিনি খান আতা নামে বহুল পরিচিত) জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন।

ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে তিনি আইএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। এসময় তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনে তিনি পরিবারের এক সদস্যের চোখে পড়ে গেলে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই মেডিকেল ছেড়ে চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

এবারো তার বোহেমিয়ান স্বভাবের কারণে তিনি সেখানে থাকলেন না। এ বছরেই তিনি লন্ডনে ফটোগ্রাফি বিষয়ক একটি বৃত্তি লাভ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি সেখানে যাননি। ১৯৪৯ সালে আবার তিনি বাড়ি ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করেন। এবারো উদ্দেশ্য ছিল একই।

এবার তিনি প্রথমে মুম্বাই যান। মুম্বাই গিয়ে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন, চলচ্চিত্র জগতের আনাচে কানাচে গিয়েছেন। এসময় তিনি জ্যোতি স্টুডিওতে ক্যামেরাম্যান জাল ইরানির শিক্ষানবিশ হেসেব কিছুদিন কাজ করেন। বিএসসি পরীক্ষা না দিয়েই ১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে চলে আসেন করাচি। করাচী এসে তিনি যোগ দেন রেডিও পাকিস্তান এ সংবাদপত্র পাঠক হিসেবে।

এ সময় খ্যাতনামা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ জহুরী খানের কাছে সঙ্গীতে তালিম নেন। ১৯৫৩ সালে ভর্তি হন সিটি লিটারারি ইনস্টিটিউটের নাট্যকলা বিভাগে। একই বছর লন্ডনের পাকিস্তান স্টুডেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। এখানেই আরেকজন প্রতিভাবান বাঙালি ফতেহ লোহানী এর সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। তখনো চলচ্চিত্রের ব্যাপারে তার উৎসাহ কমেনি।

যার কারণে তিনি প্রায়ই লাহোর যেতেন। ফতেহ্‌ লোহানী কিছুদিন পরে লন্ডন চলে গেলে ১৯৫২ সালে খান আতা একটি পোল্যান্ডীয় জাহাজে করে লন্ডন পাড়ি জমান। সেখানে অনেক বাঙালি অনুষ্ঠানে গায়ক এবং অভিনেতা হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এখানে এস এম সুলতানের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। এস এম সুলতানের চিত্রকর্মের উপকরণ যোগানে সাহায্য করেন তিনি।

খানা আতা এবং তার সাথীরা এস এম সুলতানের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী এবং বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেন। লন্ডনের সিটি লিটারেরি ইন্সটিটিউটে তিনি থিয়েটার ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। পরের বছরেই তিনি ইউনেস্কোর বৃত্তি নিয়ে ১৯৫৪ সালে শিক্ষা সফরে হল্যান্ড গমন করেন। লন্ডনে ফিরে একটি কলেজে অঙ্ক ও ইংরেজির শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন থিয়েটার কোম্পানিতে প্রায় দুই বছর কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে আবার লন্ডনে ফিরে এসে থিয়েটার রয়াল, ইউনিটি থিয়েটার, আরভিং থিয়েটারে সকল স্থানীয় গ্রুপের সাথে কাজ করতে থাকেন।

এসময় তিনি কিছুদিন বিবিসি’র সাথেও কাজ করেছেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। ১৯৫৭ সালে তিনি পাকিস্তান অব্জারভারে চাকরি নেন। এরপর তিনি রেডিওতে গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক, আবৃত্তিকার এবং অভিনেতা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানি পরিচালক আখতার জং কারদার পরিচালিত ছবি জাগো হুয়া সাভেরাতে মূল ভূমিকাতে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূত্রপাত হয়।

তার বিপরীতে ছিলেন তৃপ্তি মিত্র নামক ভারতীয় অভিনেত্রী। এ ছবির সহকারী পরিচালক ছিলেন জহির রায়হান। চলচ্চিত্র জগতে তিনি আনিস নামটি ব্যবহার করতেন। তার অভিনীত প্রথম বাংলা ছবি "এদেশ তোমার আমার" মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। এহতেশামের এই চলচ্চিত্র এ দেশ তোমার আমার-এ তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।

১৯৬০ সালে জহির রায়হানের সাথে গড়ে তোলেন লিটল সিনে সার্কেল। এর পরের বছরগুলোতে জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় তার। অভিনেতা এবং সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন কখনো আসেনি, যে নদী মরুপথে, সোনার কাজল এর মতো সফল চলচ্চিত্রে। তার রচিত ও সুরারোপিত পাঁচ শতাধিক আধুনিক, দেশাত্মবোধক, শিশুতোষ ও বিষয়ভিত্তিক গান আজো জনপ্রিয়। বিশেষত দেশাত্মবোধক সঙ্গীতে তার সুর সৃষ্টির ক্ষমতা ছিল অসাধারণ।

খান আতাউর রহমান একটি বিশেষ গায়কী ঢঙ প্রবর্তন করেন। সূর্যস্নান ছবিতে ১৯৬২ তে তিনি উপহার দেন পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে এর মতো গান। যাতে কন্ঠ দেন কলিম শরাফী। তার প্রথম পরিচালিত ছবির নাম অনেক দিনের চেনা। ছবিটি ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায়।

এরপর তিনি রাজা সন্ন্যাসী, সিরাজউদ্দৌলা, সোয়ে নদীয়া জাগে পানি, সাত ভাই চম্পা, অরুণ বরুণ কিরণমালা, আবার তোরা মানুষ হ, সুজন সখী, আরশী নগর, এখনও অনেক রাত প্রভৃতি চলচ্চিত্র তৈরি করেন। অন্যদের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে তিনি সঙ্গীত পরিচালক, কেন্দ্রীয় চরিত্র ও অভিনেতা হিসেবে কুশলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯৬৩ সালে জহির রায়হানের কাঁচের দেয়াল ছবিতে তিনি নিয়ে আসেন শ্যামল বরণ মেয়েটি শীর্ষক একটি জনপ্রিয় গান। সূর্যস্নান ছবির গীতিকার হিসেবে এবং কাঁচের দেয়াল ছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে পাকিস্তান ফিল্ম ফেস্টিভাল এ ১৯৬৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাহানা, সাগার, আখেরি স্টেশান, মালা প্রভৃতি উর্দু ছবিতে সঙ্গীত পরিচালানা করেছেন।

১৯৬৯ সালে জহির রায়হানের পরিচালনায় জীবন থেকে নেয়া তে অভিনয় করেন। এই ছবিতে তিনি এ খাঁচা ভাংবো আমি কেমন করে শীর্ষক গানের কথা লিখেন এবং নিজেই কন্ঠ দেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর তৈরি করেন আবার তোরা মানুষ হ যার বিষয়বস্তু ছিল যুদ্ধ পরবর্তী বাস্তবতা। ৮০'র দশকের শেষে বানান হিসাব নিকাশ এবং পরশপাথর নামের দুইটি ছবি। মুক্তিযুদ্ধের উপর ১৯৯৪ সালে তিনি এখনো অনেক রাত নামের একটি ছবি তৈরি শুরু করেন।

১৯৯৭ সালে ছবির কাজ শেষ হয়। এ ছাড়াও তিনি বাংলার কবি জসীম উদ্‌দীন, গঙ্গা আমার গঙ্গা, গানের পাখি আব্বাস উদ্দিন সহ বেশকিছু তথ্যচিত্রও তৈরি করেছেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধক গান লিখেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য এবং চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করে সাহায্য করেন। ’৭০ এবং ’৮০'র দশকে উপহার দেন সাবিনা ইয়াসমীনের কন্ঠে এ কি সোনার আলোয়, শহনাজ রহমতুল্লাহের কন্ঠে এক নদী রক্ত পেরিয়ে এর মতো গান। খান আতাউর রহমান প্রায় ৫০০ গানের গীতিকার।

চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিনি অনেক পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, নিগার পুরস্কার, মস্কো ও তাসখন্দ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ব্যাক্তিগত জীবনে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব খান আতাউর রহমানের দুই স্ত্রী মাহবুবা রহমান ও নীলুফার ইয়াসমীন। খান আতা ও নিলুফারের ঘরে জন্ম নেন বর্তমান প্রজন্মের গায়ক ও অভিনেতা আগুন। অপরদিকে মাহবুবা রহমান ও খান আতার ঘরে জন্ম নেন কণ্ঠশিল্পী রুমানা ইসলাম।

১৯৯৭ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। একাধারে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রাভিনেতা, সুরকার, গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, প্রযোজক, সংলাপ রচয়িতা, কাহিনীকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা খান আতাউর রহমানের জন্ম দিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়। সূত্রঃ Banglapedia Khan Ataur Rahman  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.