আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ জার্নি বাই ট্রেন: সিলেট টু ঢাকা***যাপিত রস! পুরোটাই চিরতা!!!

বোবা আর বোকার কোনো শত্রু নাই সারাদেশে অবরোধ। বিন্পি-আম্লীগ, হরতাল, রাজনীতি এ শব্দগুলো আমাকে কোনদিনই টানতে পারেনি। বুঝিও যেমন কম, চেষ্ঠাও করি না বুঝার। বিরোধীদল অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে, বাংলাদেশের নরমাল ট্রেন্ড। টেলিভিশনের সাথে যোগাযোগ একেবারেই ছিলনা।

তাই তখনও জানা হয়নি দেশ কি রকম একটা বিভীষিকাময় দিন পার করে ফেলেছে। । ১। সন্ধ্যা ছয়টা। টিউশনি বাসায় যেতে যেতেই বাবাকে ফোন করলাম।

বাবার কাছেই প্রথম শুনলাম পরশু হরতাল, সাথে বিশ্বজিৎয়ের মৃত্যু রচনা। ঠিক ভেবে পাই না হরতাল আর আর আজকের দেয়া অবরোধের বেসিক পার্থক্যটা কি? যথারীতি ফোন গেল মার হাতে। মা শুরুতেই গাঁইগুঁই করল এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা যাওয়ার দরকার নেই। তিনদিন আগেই ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম। না গেলে ২৯৫ টাকা গচ্ছা।

তাছাড়া কাজটাও জরুরী। সুপারভাইজারের সাথে এপয়েন্টমেন্ট নেয়া। না গেলে মাস্টার্সের থিসিস আরো পিছিয়ে যাবে। ফেব্রুয়ারীতে ভাইভা, একটা শব্দও পেপার লেখা হয়নি। অতঃপর মা'ই বললেন যাওয়ার জন্য।

যদিও যাওয়ার প্রিপারেশন নিয়েই হল থেকে বের হয়েছিলাম। প্রথমে টিউশনি, তারপর পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট, তারপর স্টেশন। কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে নয়টায় স্টেশন পৌঁছালাম। দশটায় ট্রেন। উপায়ান্ত না দেখে মোবাইল বের করলাম।

ফেসবুক, ব্লগে কিছুক্ষন গুতোগুতি। স্পষ্টই বুঝছি পাশে বসা বুড়ো লোকটি মোবাইলের খচখচ শব্দে বেশ বিরক্ত। কিন্তু ঐদিকে আমার বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপও নেই। ট্রেন যে কখন ছেড়ে দিয়েছে টেরই পাই নি। ততক্ষনে ব্লগার্স অব সিলেট পেজে চ্যাটিং বেশ জমে উঠেছে।

নিয়েল ( হিমু ) আমি আর আদনান। ============================================= । ২। চ্যাট করতে করতে কখন যে ১২টা বাজিয়ে ফেললাম টেরই পাই নি। সময়ের হিসেবে ততক্ষনে আরো একটি দিনের পরিসমাপ্তি।

নতুন দিনের শুরুতেই একটা ঝামেলা পাকালাম। যদিও দোষটা আমার। ট্রেনের টিটি গুলারে কোন কালেই আমার পছন্দ হয় না। বজ্জাতগুলো যখনই কোন অকাম করে সব আমার চোখের সামনে এসে করে। নাকি সারা দিনেই এরা অকাম করে ঘুরে বেড়ায়।

টিকেট ছাড়া লোকগুলারে হোয়াইটওয়াশ করছে বেশ মনের আনন্দে। একটা কোশ্চেন হঠাত্‍ মাথা ছাড়া দিয়ে উঠল। আচ্ছা এদের সাদা গ্রাউনটাতে পকেট থাকবে কেন? এদের কাজতো টিকেট চেক করা। অযাচিত এ পকেট দুটার দরকার কি? এতসব উদ্ভট ভাবনার ফাঁকে সাত আট বছরের একটা টোকাই শিশু এসে দাঁড়াল আমার পাশে বসা বুড়ো লোকটির গা ঘেঁষে। -ঐ ব্যাটা সর সর? বুড়ো হল কি হবে, ধমকে জোর আছে।

ততক্ষনে টিটি সাহেবও হাজির। উনি আবার চাচাজানের মত ধমকে বিশ্বাসী না সরাসরি গালি দিলেন। -শুয়োরের বাইচ্চা জানালা দিয়া ফালাইয়া দিমু। বুঝলাম উনার হোয়াইট ওয়াশে শিশুটির কোন অবদান নেই। ধমক খেয়ে ছেলেটা সরে গেল।

খুব মায়া হচ্ছিল, আহারে আমাদের সন্তানরা ইট পাথরের দেয়ালে কত নিশ্চিন্তে আছে। হোয়াইট ওয়াশ হওয়া এক মুরুব্বী বিষয়টাকে ইজি করার চেষ্ঠা করছেন (আসলে টিটি সাবরে তৈল মর্দন করছেন), -এ পোলাগুলারে বেশি পাত্তা দিতে নাই। সবসময় চুরির ধান্ধা লইয়া ঘুরে। টিটি মশাই আমার টিকেট চেক করছেন, দেখেই মাথাটা বিলা হয়ে গেল। আমিও ঐ মুরুব্বিটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, -চাচা খালি ঐ চোরগুলারে দেখলেন? আমাদের আশে পাশে যে কত স্যুটেট ব্যুটেট চোর ঘুরে বেড়ায় হেগুলারে দেখলেন না।

টিটি বেশ কড়া গলায় আমার দিকে তাকাল। বলল, -আপনি লাগে কিছু বুঝানের? বুঝলাম এক ঘাঁ তেই কাজ হয়েছে। আমি শুধু কেশে বললাম, -আংকেল ওনারাতো আর সত্যিকারের চোর চিনে না। আপনি আর আমি বুঝলেই হইব। -বেশি বুইজ্জেন না।

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টিটি মহাশয় ভাগলেন। বুঝলাম না এ লোকগুলো এত বেকুব হয় কি করে। তর্কটাও ঠিকমত করতে জানেনা। ধ্যাত্‍ মেজাজটাই থারাপ হয়ে গেল। কানে হেডফোন গুঁজে দিলাম ঘুম।

এক ঘুমে সোজা বিমানবন্দর স্টেশন। ঢাকার রাতের কৃত্রিম আলো দেখে বুঝারই উপায় নেই কাল দিনের আলোতে কি ঘটে গিয়েছিল। ট্রেন আবার ছেড়ে দিল। নতুন গন্তব্যে। নতুন দিনের আশায়।

============================================= । ৩। কমলাপুর স্টেশন। ট্রেন এখনো থেমে সারেনি। সবাইকে ঠেলেঠুলে আগে নামা আমার পুরনো বাতিক।

এ ভোরের ঠাণ্ডায়ও এর ব্যতিক্রম করিনি। নামার সময়ই প্ল্যাটফর্মে থাকা এক পুলিশের সাথে ধাক্কা খেলাম। হুজুর টাইপ, গাল ভর্তি ছাপ দাঁড়ি। আচ্ছা হুজুর পুলিশগুলোও কি দূনীতি করে? কথাটা কেন মাথায় আসলো ঠিক বুঝলাম না। তবে এমনভাবে আমার দিকে রক্তচক্ষু হয়ে তাকালেন অনুমান একেবারে মিথ্যেও না।

এমনও হতে পারে আগামীকাল হরতালে সরকার তাকে ভয়ানক কোন স্পটে নামিয়ে দিচ্ছে। হয়তো আজকের অবরোধে ইটপাটকেল ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যাথা পেয়ে এসেছেন। । ৪। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম।

ঠিক ছয়টা। এক্সপেক্টশনের চেয়ে আধা ঘন্টা বেশি লেগেছে। খারাপ না শীতের সকালের জন্য বরং ভালই হয়েছে। কিন্তু কোথায় কী? এত কুয়াশা মনে হয় ঢাকা শহরে এ প্রথম দেখলাম। একটা রিক্সা ভাড়া করলাম।

পঞ্চাশ টাকায়। নেহাত এত কুয়াশা আর ঠাণ্ডা না হলে কমলাপুর টু ওয়ারী পঁয়ত্রিশ টাকার বেশি এক টাকাও দিতাম না। রিক্সায় উঠেই সামনে হাত বাড়ালাম। একহাত দূরত্বের জিনিসও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। ঘন কুয়াশা ঠেলে রিক্সা এগিয়ে যাচ্ছে।

মনের মধ্যে কিছুটা ভয়, ছিনতাইকারীর! অনিশ্চয়তার পথে আমি! ঠিক আমার দেশটার মত?  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।