আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্রাট শাহজাহান এবং তাজমহল

শাহজাহান মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন । তিনি ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছেন। শাহ জাহান নামটি এসেছে ফারসি ভাষা থেকে যার অর্থ "পৃথিবীর রাজা"। তিনি ছিলেন বাবর, হুমায়ুন, আকবর, এবং জাহাঙ্গীরের পরে পঞ্চম মুঘল সম্রাট। তার পিতা সম্রাট জাহাঙ্গীর।

সম্রাট শাহজাহান তাজমহল তৈরি করে জগৎ বিখ্যাত হয়ে আছেন। ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকাল। তাঁর চেহারা, পোশাক-পরিচ্ছেদ একজন পূর্ণ ঈমানদার মুসলমানের মতই ছিল এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের ধর্মীয় ভাবান্তর ও ইসলামে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণের ছাপ তাঁর উপরও পড়েছিল। আল্লাহ এই মহান বাদশাহকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। মোগল যুগে ভারত বর্ষের সামাজজিক অবস্থা খুব চমকপ্রদ ও নানাদিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক বিরাজমান ছিল। হিন্দুরা ধর্ম ও ধর্মীয় অনষ্ঠান ভোগ কারা পূর্ণ অধিকার অর্জন করেছিল। মোগল শাসনামলে বাংলার অর্থনীতি, সমাজ ও বাঙালীর জাতীয় জীবনে এক নতুন রূপ দেখা দেয়। বিক্রমপুর ( মুন্সিগঞ্জ ) সে সময়েই জাতিগত ঐক্যের উন্নতি সাধিত হয়। সে সময় বিক্রমপুরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজার উদ্ভবের ফলে শিক্ষা, বাণিজ্য ও ভাস্কর্য শিল্পের অভাবিত উন্নতি হয় ।

মোগল আমলের ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমভাগে সম্রাট শাহজাহানের বিক্রমপুর আগমন যেমন তিনটি যুগের গৌরবময় অধ্যায়কে জাগরিত করেছে । শাহজাহান বাংলায় থাকাকালীন নিজ চোখে পর্তুগীজদের সন্ত্রাস ও অত্যাচার দেখে গিয়েছেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর শাহজাহান সম্রাট হয়েই মগ পর্তূগীজদের বিতাড়িত করার জন্য কাসিম খাঁকে সুবেদার নিযুক্ত করে প্রেরণ করেন। শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র সুলতান সুজা বাংলাদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তিনি ১৬৩৯ সালে থেকে ১৬৫৯ খৃঃ পর্যন্ত বাংলাদেশের সুবেদার ছিলেন।

একবার সম্রাট শাহজাহান রাতের বেলা স্বপ্নে একটি মসজিদ দেখেন। মসজিদটি হল দিল্লীর শাহী জুমআ মসজিদ। বাদশাহ, দিল্লীর এই শাহী মসজিদ এত বিরাট উঁচু জায়গায় নির্মাণ করছেন কেন?" উত্তরে সম্রাট বলেন,"আমার মৃত্যুর পর আমার ছোট-বড় প্রজারা যখন উচ্চ স্থানে স্থাপিত মসজিদে আল্লাহকে সিজদা করবেন, আমি তখন আমার প্রিয় প্রজাবৃন্দের পায়ের নীচে, অনেক নীচে কবরে তাঁদের দোয়ার ভিক্ষুক হয়ে প্রতীক্ষায় থাকব। " দিল্লীর বুকে আজো সেই মসজিদ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রাজকীয় সুখ মমতাজমহলের ভাগ্যে ছিল না।

তবুও ১৮ বছরের দাম্পত্য জীবনে একদিনের জন্য স্বামীকে ছেড়ে অন্য কোথায়ও থাকেননি। শাহজাহানের সিংহাসনে আরোহণের মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি ইন্তেকাল করেন। প্রিয়তমার ইন্তেকালে শাহজাহান শোকে ভেঙে পড়েন। তিনি এতো শোকাভিভূত হয়েছিলেন যে, রাতারাতি তার (এ সময় তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৮ বছর) সব চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল। দু’বছর পর্যন্ত তিনি ভালো খাবার, পোশাক, সংগীত থেকে দূরে থেকেছেন, সব ধরনের আনন্দ বিলাসিতা বর্জন করেছিলেন।

তাজমহল নির্মাণের কাজে হাত দেওয়ার পর থেকে তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকেন। মমতাজমহল ইন্তেকাল করেন ১৬৩১ সালে। তাজমহলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ সালে। আর শেষ হয়েছিল ১৬৪৮ সালের দিকে। জীবনের শেষ দিনগুলোতে শাহজাহান মাইল খানেক দূরে অবস্থিত শীষমহলের কাঁচঘেরা কক্ষে বসে সর্বক্ষণ তাকিয়ে থাকতেন তাজমহলের দিকে।

তাজমহল তৈরী হয় মমতাজের জন্য কিন্তু সম্রাজ্ঞী মমতাজ ছিলেন শাজাহানের ৭ বিবির মধ্যে চতুর্থ । মমতাজ কে বিয়ের জন্য শাজাহান তার পূর্বের স্বামীকে হত্যা করে। মমতাজ তার ১৪তম সন্তান জন্মদানের সময় মৃত্যুবরন করে । এরপর শাজাহান মমতাজের ছোটবোন কে বিয়ে করেন। তাজমহল নির্মানের জন্য পাঞ্জাব থেকে আনা হয় স্বচ্ছ মার্বেল পাথর, চীন থেকে সবুজ পাথর, তিব্বত থেকে স্বচ্ছ ও নীল পাথর এবং শ্রীলংকা থেকে নীলমনি।

তাছাড়া ভারত, পাকিস্তান, পারস্য ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৮ রকমের মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি করা হয় এই অনন্য স্থাপত্য। মমতাজ মহলের সমাধিস্থলে আল্লাহতায়ালার ৯৯ নাম খোদাই করা আছে। ১৯৮৩ সালে তাজমহল ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। মুঘল সম্রাট শাহজাহান এর পরিচিতি : পারিবারিক নাম : তীমুরীয় উপাধী : মুঘল সম্রাজ্যের সম্রাট জন্ম : জানুয়ারি ৫, ১৫৯২ জন্মস্থান : লাহোর মৃত্যু : জানুয়ারি ২২, ১৬৬৬ মৃত্যুস্থান : আগ্রা সমাধী : তাজ মহল উত্তরাধিকারী : আওরঙ্গজেব ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।