আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাসের ঘর

রুপ নারানের কুলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগত স্বপ্ন নয়। দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ কোথায় অবস্থিত? উত্তর: হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনায়। বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছেন অথচ এই প্রশ্ন পড়েননি এমন লোক খুজে পাওয়া যাবেনা। পঠন সংখ্যার দিক থেকে হয়তো এই প্রশ্নটাই সর্বাধিক পঠিত হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারে অথবা এক দিক থেকে এই প্রশ্নকে জাতীয় প্রশ্ন বলে চালিয়ে দেয়া যায়। বৈশাখের এক ঝি-ঝি ডাকা তপ্ত দুপুরে আম গাছের ছায়ায় বসে এই অতি দরকারী প্রশ্ন গুলোর এ্যানসার মুখস্ত করছিলাম।

সেখানে আরো কিছু মহামূল্যবান প্রশ্ন ছিলো যা না জানলে হয়তো আপনার বাংগাল জনম বৃথা যেতে পারে, এই যেমন ভুসুকুপা কয়টি পদ রচনা করেছিলেন অথবা একটি কাচা পাটের গাইটের ওজন কত? ইত্যাদি ইত্যাদি। চর্যাপদ জীবনে চোখে দেখুন আর নাই দেখুন আপনাকে জানতে হবে তার পদসংখ্যা কত, কোন নদী কোথায় গিয়ে কোন নদীর সাথে মিশে কী নাম ধারণ করেছে; ওহ মাই গড। আমার পাশেই এক দঙ্গল দুষ্টু বালক-বালিকার দল রান্না-বান্না খেলছে। তাদের পাতানো সংসারের কলকাকলীতে মুখরিত আকাশ-বাতাস। পড়াশোনা বাদ দিয়ে তাদের দিকে মনযোগ দিলাম ।

তাদের মধ্যে একজন হয়েছে চাকর, তার কাজ শুধু বাজার সদাই করা আর বকা খাওয়া। আরেকজন সেজেছে চাকরিজীবি, সে ঢাকায় চাকরি করে কিন্তু গ্রামেই থাকে, তার কাজ ঝিম মেরে বসে থাকা আর চাকর-বাকরদের নামে কমপ্লেইন করা। তার কাছেই মূলত এই সংসারের টাকা-পয়সা, সোনা-দানা সহ যাবতীয় মূল্যবান সামগ্রী গচ্ছিত। কাঠালপাতা হলো টাকা-পয়সা আর দিয়াশলাইয়ের খোল, সিগারেটের প্যাকেট এগুলো হলো সোনা-দানা । সে এই সংসারের কর্তা, কিন্তু সর্বেসর্বা নয়।

উপস্থিত সবার মধ্যে সবচাইতে বুদ্ধিমতী, বদমেজাজী, দরদী, রাগী এবং পরিশ্রমী ব্যক্তিটিই এই সংসারের গৃহকর্ত্রী। সেই এই সংসারের সর্বেসর্বা। গৃহকর্ত্রী কারণে অকারণে সবাইকে শাসাচ্ছে, কারও খাবার-দাবার বন্ধ করে দিচ্ছে, কাউকে বাড়ি থেকে বহিষ্কার করছে। তার অত্যাচারে এই সংসারের সবাই সদা তটস্থ। তার ভালোবাসায় সবাই বিগলিত।

মেয়েরা জম্নসুত্রেই মা । ঠিক ভাবে কাজ করতে না পারা, অতিরিক্ত ঘুম এবং মাত্রাহীন টিভি দেখার অভিযোগে সে কাজের ছেলেটিকে তার পদ হতে বরখাস্ত করলো। ডিমোশনপ্রাপ্ত হয়ে সে এখন এই বাড়ির দারোয়ান। তবে গৃহকর্ত্রীর কড়া শর্ত, সারা জীবনে সে একবারও ঘুমাতে পারবেনা। দারোয়ান সাহেব তাতেই রাজি।

অনতিবিলম্বে কাজের ছেলে চাই বলে একটা সার্কুলার জারি হলো। আমার মতামতের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই এবং সম্পুর্ন নির্বিকার চিত্তে গৃহকর্ত্রী আমাকে তার বাড়ির কাজের ছেলে হওয়ার জন্য অফার দিলো। হায় খোদা এই ছিলো আমার কপালে। আমার হাতে তখন বিসিএস পরীক্ষার গাইড। গাইড বই ছুড়ে ফেলে, সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার বাসনা সম্পুর্ন ত্যাগ করে আমি এই সংসারে কাজের ছেলে হিসেবে যোগদান করলাম।

আমার কাজ এখন বাজার-সদাই করা আর বকা খাওয়া। শুরু হলো আমার ভৃত্য জীবন। আমার ব্যাপক পারফরমেন্স দেখানোর জন্য দারোয়ানকে সাথে নিয়ে আকাশ-পাতাল মন্থন করে আল্লাহর দুনিয়ায় যত ধরণের লতা-পাতা, ফুল-ফল, খাদ্য-অখাদ্য হয় সব কিছু বাজার করে আনলাম। বাজারতো করলাম এবার বকা খাওয়ার পালা। আমি আসতে না আসতেই ঢাকায় চাকরী করা কর্তামশাই আমার নামে মালেকিনের কাছে অভিযোগ করলো।

অনেকগুলো অভিযোগের মধ্যে একটি ছিলো, আমি নাকি অমিতব্যয়ী এবং কান্ডজ্ঞানহীন। আমার মত উড়নচন্ডীগোছের লোক চাকর থাকলে নাকি সে সংসার লাটে উঠবে বলে মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করলো। সে আরও বললো, এভাবে চলতে থাকলে সে আর মাসে মাসে টাকা পাঠাতে পারবেনা। দারোয়ান হারামীটা তার সাথে সুর মেলালো। গৃহকর্ত্রী সংক্ষেপে শুধুমাত্র ইংরেজিতে বললেন “শিট”।

আমার চাকুরী টলটলায়মান। উত্তেজনা ছাড়া জীবন চলেনা। এই তাসের ঘরেও একদিন উত্তেজনার প্রয়োজন পড়লো। আমরা একদিন সংলাপে বসলাম; গৃহকর্ত্রী, কর্তামশাই, দারোয়ান সাহেব ও আমি । সংলাপের বিষয়বস্তু খুবই উত্তেজনাকর।

কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই এক সুদীর্ঘ আলোচনার পর ঠিক হলো, একদিন রাতের বেলা সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমাবে। টাকা-পয়সা, সোনা-দানা সব কিছুই সিন্ধুকে তালামারা থাকবে এবং চাবি থাকবে কর্তামশাইয়ের কাছে। তবে চাবিটা কর্তামশাই এমনভাবে হাতে নিয়ে ঘুমাবে যাতে সহজেই যে কেউ তা নিতে পারে। দারোয়ান সাহেব রাতের আধারে এই ক্ষুদ্র পরিবারটির শত-সহস্র বছরের জমানো সমস্ত সহায়-সম্বল চুরি করে ভাগবে। আমি সেটা দেখে ফেলব এবং কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করবো, তাতে কর্তা-কর্ত্রীর ঘুম ভেঙ্গে যাবে এবং তারা চোরের পিছু ধাওয়া করবে…………. এভাবেই চলে আসছে নাকি অনাদিকাল হতে? মানুষকি এভাবেই শিখে আসছে তার বাস্তব জীবনের পুতুল খেলার সংবিধান ? হবে হয়তোবা।

সংসার কাউকে বানিয়েছে ভৃত্য, কাউকে প্রভু, কাউকে চোর। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।