আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দূষিত ছাত্র রাজনীতি আর কত দিন....? সজিব তৌহিদ

I am waiting for someone and I know she will ever come. রাজার নীতি আর নীতির রাজা। যেটাই বলি না কেন রাজনীতি আর সেই পর্যায়ে নেই। যে পর্যায়ে থাকলে রাজনীতিকে ভালোবাসা যায় ,সম্মান করা যায়। বিশেষয়ত ছাত্র রাজনীতিকে। পঞ্চাশ থেকে আশির দশক পর্যন্ত ক্লাসের সেরা ছাত্ররাই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল।

সেইসব রাজনীতি পিপাসু শিক্ষার্থীদেরকে সামাজিকভাবে আলাদাভাবে শুভ্র দৃষ্টিতে দেখা হতো। অথচ বর্তমানে হয়েছে তার উল্টৈাটা। ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ, বখাটে পড়া ফাঁকি দেয়া ছাত্ররাই রাজনীিিতর সাথে যুক্ত। রাজনীতির নামে করা হচ্ছে নোংরামি, ক্যাম্পাসে অস্ত্রের ঝনঝনানি, প্রেমের নামে করা হচ্ছে নারী ভোগামী। যা শুরু হয়েছে ১৯৯৭ সালে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা সেঞ্চুরিয়ান ধর্ষক মানিকের মাধ্যমে।

যে সংস্কৃতি এখন অনার্স কলেজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বহাল তবিয়ত আছে। কখনো তা ছাত্রদল আবার কখনো ছাত্রলীগের মাধ্যম্যে। একদিকে ছাত্রলীগের ভর্তি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি । অন্যদিকে জামায়াত শিবিরের হরতাল-ধর্মঘট আর রগ কাটার মহোৎসব। যা সমাজের অতি সাধারণ মানুষ কে প্রতিনিয়ত উদ্বিগ্ন করে তুলছে।

অতীতের মত ছাত্ররা এখন জাতীয় সমস্যা নিয়ে কথা বলে না। তারা এখন তাদের মূল দলীয় স্বার্থ নিয়ে কথা বলে। মূল দল থেকে যে সিধান্ত নেয়া হয় সেটাই ছাত্রদল, ছত্রলীগ, ছাত্রশিবির ও ছাত্রসমাজ আজ্ঞে জি হুজুর বলে মেনে নিয়ে রাজপথে নেমে ভাংচূর করতে তিলার্ধ কুণ্ঠাবোধ করে না। সেটা দেশের জনগণের স্বার্থে থাক আর দুই একজন মন্ত্রী আমলার ঘরে যাক। চেটে পুটে ছাত্র রাজনৈতিকদের পকেটে গেলেই তারা মহাখুশি।

আবার সেই খুশিটা যদি সুষম বণ্টন না হয় তবে তা নিয়ে হবে মহাকাণ্ড। সে কাণ্ডের সচিত্র প্রতিবেদন দেখতে পাই পরের দিনের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে। এর ফাঁদে পড়ে আবু বকর সিদ্দিক, ফারুকের মত সরল প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে। সাহারা খাতুনের মত মন্ত্রীর ভাষায় তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে বিবেচিত হবে। বায়ান্ন, ঊনসত্তর গণ অভ্যুত্থান, একাত্তরের যুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বেরাচারী পতনে ছাত্ররাজনীতি এক জ্বল জ্বলে ইাতহাস রচনা করেছিল।

সে ইাতহাসের দোহাই দিয়ে আজো এদেশে ছাত্র রাজনীতি টিকে আছে গৌরবের সাথে নয়। বরং ঘৃণাার সাথে লজ্জার সাথে, সংহিসতার সাথে, ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধাংসী কুলষিত বিকৃত মানসিকতার সাথে। ইতিহাস কে উদাহরণ দিয়ে ক্যাম্পাসে আর কত লাশ পড়বে...? আর কত মায়ের বুক খালি হবে..? বাবার স্বপ্ন লুট হবে..? আর কত বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন হবে..? প্রেমিকার ঘন কালো চুল ফ্যাকাশে হয়ে দু চোখ মেয়ে আশ্রু ঝরবে..? বলতে পারেন এদেশের মহান কর্তারা..? বলতে পারেন..? জানি পারবেন না । কারণ নব্বইয়ের পরে এদেশে ছাত্ররাজনীতির উল্লেখযোগ্য কেলেঙ্কাররি ছড়া কোন সাফল্য নেই। এখনো কি সময় হয়নি এদশের ছাত্র রাজনীতিকে নিয়ে নতুন করে ভাববার..? ভারত , পাকিস্থান আমেরিকা, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, সৌদি আরব ও ভেনুজুয়েলায় চাত্র রাজনীতি নেই।

ল্যাটিন আমেরিকার ১৭ টি দেশে ১৯৮৩ সালে আইন করে ছাত্র রাজনীতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই বেলে তো সেব দেশ ধ্বংস হয়ে যায় নি। নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায় নি। বরং তারা উন্নত রাাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এদেশের আমলা-মন্ত্রী, সরকার, নীতি নির্ধারক মহল কথায় কথায় উন্নত রাষ্ট্রের উদাহরণ দিয়ে অনেক নীতি ও সিদ্ধান্ধ গ্রহণ করেন।

বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে আমরা উন্নত রাষ্ট্রের মত সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিলের মাধ্যমে কমলমতি শিশুদের উদার জমিনে ‘ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সৃষ্টির’ বয়ানে রাজনীতির বিষবৃক্ষ রোপণ করে দিলাম। আজ অবধি কোনদিন মাধ্যমিক স্কুলে ছাত্র রাজনীতি নেয়ে সহিংসতার কোন ঘটনা শুনিনি। আমার খুব সংশয় ও আশক্সক্ষা জাগে কবে যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অচিরেই দক্ষ নেতৃত্ব তৈরি হয়ে সহিংসতার মত ঘটনা ঘটে। আমরা যদি এতই সচেতন ও বিবেকবান হই । জাতির ভবিষ্যৎ ও নেতৃত্ব নিয়ে এতোই ভাবি, তবে কেন বিশ্ববিদ্যালয় ও আনার্স কলেজ পর্যাায়ে ছাত্র সাংসদ চালু করছি না.? রাজনীতির চর্চা, আদর্শ নৈতিকতা এবং শিক্ষণীয় বিষয় যদি থাকে তবেই ছাত্র সংসদের রাজনীতিতেই আছে।

আর সেটি চালু ন করে শিশুদের কে নিয়ে আমরা নতুন খেলায় মেতে উঠছি। কারণ শিশুরা মূল রাজনীতি বুঝে না। দেশের জাতীয় সম্পদ তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ ও খনির সম্পদ লুট হয়ে গেলেও প্রতিবাদ করতে পারে না। অত:এব ছাত্র সংসদ নয়,‘স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন করাই দেশ ও জাতির মঙ্গল’। এই যদি হয় দেশের বর্ষিয়ান রাজনৈতিকদের চাল তবে বিজয়ের শত বছর পেরিয়ে গেলেও দু:খিনি জন্মভূমির দ:খ মোচন করা সম্ভব নয়, দেশটার গুণগত উন্নয়ন সম্ভব নয়।

বস্তুত কাক্সিক্ষত বিজয় বার বার দ্বার থেকে ফিরে যাবে ঘরে উঠবেনা কোন বার। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন। ক্রিকেটে বিশ্ব কাঁপানো। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সেনা বাহিনীর অবদান। পোশাক শিল্পে রেমিটেন্স অর্জন।

শান্তিতে নোবেল বিজয়। প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের পাটের জিনোম আবিষ্কার এবং ৫০০ উদ্ভিদের ছত্রাকের জীবন রহস্য উদ্ভাবণ। আব্দুল্লাহ আবু সাঈদের তরুণ প্রজন্মকে ফেরী করে বই পড়িয়ে আলোকিত মানুষ গড়বার প্রচেষ্টা। মুহম্মদ জাফর ইকবালের গণিত নিয়ে বিশ্বজয় করার স্বপ্ন।

হূমায়ূনের জাদুর কলমে বখাটে ছেলেকে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি। রাজশাহীর পলান সরকার , গহর আলী এবং রংপুরের বুলু আপার মত সাদা মনের সাদা স্বপ্নগুলো বাংলাদেশ কে সত্যিই এক নতুম মাত্র দান করেছে। সেই নতুন মাত্রাকে আমরা নেশা আর তারুণ্যের অশুভ শক্তি দিয়ে তাড়িয়ে দিতে পারি না। বিজয়ের এতো গুলো বছর পেরিয়ে যদি আমরা দূষিত লেজুরবৃত্তি ছাত্র রাজনীত বন্ধ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে নতুনভাবে ছাত্র রাজনীতি চালু করতে পারি সেটাই হবে বিজয়ের মাসে মহা বিজয়। সে বিজয়ের স্বপ্ন দেখা কি আনিসুল হকের মত‘ অরণ্যে রোদন’ করা হবে.....!!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.