আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কপাল

শুধু তোকে হাসাতে জোকার সেজেছি, আর তুই কিনা......। বেশ কিছুদিন ধরেই সময় খুব খারাপ যাচ্ছে। ক্লাসে খুবই সামান্য একটা বিষয় নিয়ে পিন্টুর সাথে আজ ঝগড়া হল। তরু না থাকলে তো নিশ্চিত হাতাহাতির পর্যায়ে যেত। এদিকে রাগ করে তরু আমার সথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।

বিকেলে টিউশনে যাওয়ার পথে দেখি, সাইকেলের টায়ার পাংচার। মেকারের কাছে নিলে নতুন টিউব লাগাতে বলল। মাসের শেষ , হাতে তেমন টাকাও নেই , মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। রাগ করে হেঁটেই টিউশনে গেলাম। খুবই সহজ একটা জ্যামিতি তিনবার বুঝানোর পরও ছাত্রী এমন ভাবে তাকাচ্ছিল যেন কিচ্ছু বোঝেনি।

ইচ্ছে করছিল ছাত্রীর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিই। সন্ধায় রুমে ফিরে ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসছিল। চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছি। এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠল। একটা অপরিচিত নম্বর।

আমি ফোন রিসিভ করলাম। একটা মেয়ে কন্ঠ বলছে... -হ্যালো, আমি “প্রথম আলো” থেকে বলছি। আপনি আব্দুল হাই সাহেব বলছেন। - জ্বি, বলুন। -আপনি কি মেরিল প্রথম আলো পাঠক জরিপে অংশ নিয়েছিলেন।

- জ্বি.. - আমরা একশজন ভাগ্যবান পাঠক নির্বাচন করেছি, যারা সরাসরি অনুষ্ঠানটি দেখার সুযোগ পাবে। তাদের মধ্যে আপনি একজন ভাগ্যবান। ভাগ্যবান শব্দটা আমার খুবই ভাল লাগল। যা হোক উনি আমাকে একটা ফোন নম্বর দিয়ে আমন্ত্রনপত্র সংগ্রহের জন্য বললেন। কথা শেষ করেই তরুর নম্বরে ফোন দিলাম।

সব শুনে তরু বলল, -আচ্ছা, মীম আপু কি ওই অনুষ্ঠানে আসবে। ওর কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম । বিদ্যা সিনহা মীমকে তরু ভীষণ পছন্দ করে। বললাম, -জানিনা, আসতে পারে। -তুই কিন্তু মীম আপুর একটা অটোগ্রাফ নিয়ে আসবি।

-আচ্ছা সুযোগ পেলে আনব। -আমি কিচ্ছু বুঝিনা । আমার মীম আপুর অটোগ্রাফ চাই ই চাই। তরু সবসময় এমন জেদ করে। পরদিন সকালে ক্লাসে গেলে তরু বলল, - তোর ঢাকা যাওয়া হচ্ছে না।

অনুষ্ঠানের দিনই আমাদের সিলেট ট্যুরের ডেট ঠিক হয়েছে । স্যার বলেছে, যারা ট্যুরে যাবেনা তাদের ২০ নম্বর করে কাটা হবে। আসলে তোর কপালটাই খারাপ। মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল। খুব কান্না পাচ্ছিল।

সন্ধায় টিভি নিউজে দেখলাম, ইলিয়াস আলি গুমের ঘটনায় বি.এন.পি হরতাল ডেকেছে। সিলেটের অবস্থা খুবই খারাপ। যা হোক শেষ পর্যন্ত ট্যুরের তারিখ পেছানো হল। অনুষ্ঠানের দিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পৌছে আমন্ত্রনপত্র সংগ্রহ করলাম। বিশাল লাইনের শেষ মাথায় দাড়িয়ে ভাবছি, যত ঝামেলা পার করে আসলাম, না জানি কপালে কি আছে।

যা হোক শেষ পর্যন্ত ভিতরে ঢুকে এক জমকালো অনুষ্ঠান উপভোগ করলাম। অনুষ্ঠান শেষে আনিসুল হক, মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী, তিশা, বিন্দু, জয়া আহসান , আরেফীন রুমী, নিরবের কাছে অটোগ্রাফ নিলাম। মনে মনে মীম আপুকে খুঁজছিলাম। না কোথাও নেই। মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

আমি চলে যাচ্ছিলাম , হঠাৎ দেখি পাশের একটা রুমে মীম আপু আর একজন মহিলা বসে আছে। আমি একরকম দৌড়ে রুমে ঢুকলাম। মহিলা আমাকে থামিয়ে দিলেন। বললেন, - এখনো ওর গাড়ি আসে নাই বলে ওর মেজাজ খুবই খারাপ। কাছে যেওনা, মাইর-টাইর দিতে পারে।

ওর কিন্তু খুব রাগ!!! কথা শুনে আমি তো থ!! আমি ভয়ে ভয়েই আপুর কাছে গেলাম। নিরাপদ দূরত্বে থেকে বললাম, -আপু, আমার বান্ধবী আপনার ভীষন ভক্ত। একটা অটোগ্রাফ দিলে খুবই খুশি হব। আপু আমার দিকে এমন ভাবে তাকালেন, সত্যি বলছি, আমি ভয় পেয়ে গেলাম। সত্যি সত্যি মাইর দেবে কিনা কে জানে।

চলে আসার আগে আস্তে করে বললাম, -খুব বেশি মেজাজ খারাপ থাকলে, চাইলে মাইর দিতে পারেন। রাগ কমলে না হয় একটা অটোগ্রাফ দিয়েন। আমার কথা শুনে আপু হেসে ফেললেন। আমার হাত থেকে ডাইরিটা নিয়ে অটোগ্রাফ দিলেন। এই অটোগ্রাফ পেলে তরু যে কি খুশি হবে ।

পরদিন ট্রেনে করে ময়মনসিংহ ফিরলাম। ট্রেনে আজ যা ভীড় ছিল। হলে ফিরে ব্যাগ খুলে দেখি আমার ডাইরি গায়েব। অবাক কান্ড! অনেক খুঁজলাম, না কোথাও নেই। ভীষণ কান্না পাচ্ছিল।

বারবার মনে হচ্ছিল আসলে আমার কপালটাই খারাপ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।