আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রম্য রস: একদিন মালের দিন

... এতকাল যাবত আমোরা শুধুমাত্র মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুলমাল আব্দুল মুহিদ মালের কথাই শুনিয়াছি। এইবার আমোরা শুনিবো বিবিধ মালের বিবরণ। যাহা ঘটিত হইয়াছিল আমাদিগের ন্যয় গুটি কয়েক সরেশ মালের পার্থিব এবং অপার্থিব মালামালের মিলন মেলায়। অতঃপর যাহা হইবার তাহাই হইল। মালে মালে মালিত হইয়া শুরু হইল আমাদের মাল উৎসব।

ইহা একবৎসর আগেকার ঘটনা। যদিও কেহ কেহ মাতালের রটনা বলিয়া উড়াইয়াও দিয়াছেন। ইহা যে তাহাদিগের ঈর্ষার বহিঃপ্রকাশ তাহা সম্বন্ধে শংসয়ের অবকাশ নাই। বিষয়খানা জানিবার নিমিত্তে আপোনাদের চিত্ত বুঝিবা চঞ্চল হইয়া উঠিতেছে। ঘটনা তাহা হইলে খুলিয়াই বলি_ মাল বাবা জনাব কাজী গোলাম রাব্বানির আহ্ববানে মাল উৎসবে যাইব বলিয়া, সদলবলে দাঁড়াইয়া ছিলাম মিরপুর বেড়িবাধেঁর নৌকার ঘাটে মালামাল রাখিবার স্থানে।

ঠিক তখনই পশ্চাৎদেশ হইতে কেহ একজন বলিয়া উঠিল- ভাইজান! আপনার ভাই (মাকমুদ সোহেল) একখানা মাল লইয়া আসিয়াছেন, অতিব চমৎকার! যিনি কথাখানা বলিলেন তাহার হস্তখানা কচলানোর সহিত মুখমন্ডলের ভঙ্গীমাখানা যাহা করিলেন, তাহা দেখিবার মতো ব্যাপার বটে। মাল শব্দটা শোনা মাত্রই বন্ধুবর য়পূর্ণ রুবেলের বর্ণিত একখানা চুট্কি মনে পড়িয়া গেল। ‘একদিন নলাদা তার বন্ধুদের নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। তখন এক জন অত্যন্ত স্মার্ট তরুণী (পোশাকে ও হাঁটায়) রাস্তাদিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। নলাদা তার বন্ধুদের দেখিয়ে বলে- দেখ দেখ একটা কঠিন মাল যায়! মেয়েটি শুনতে পেয়ে এগিয়ে আসল আর নলাদাকে বলল- মেয়ে দেখলে মাল বলার সময় মালের শেষ অক্ষরটা বাদ দিয়ে বলা যায়না? নলাদার এবার সহজ উত্তর- শেষ অক্ষরটা বাদ দিলে আমার হাত থেকে রক্ষা পেলেও আমার বাপের হাত থেকে রক্ষা পাবানা।

’ ওই মিয়া জোবায়ের মাল দেন! চমকাইয়া উঠিলাম, মনে ভাবিলামÑ মাল পাইব কোথায়! পাশ ফিরিয়া তাকাইয়া দেখিলাম কাজী গোলাম রাব্বানী (রস বাবা)। তিনি আবারও বলিলেন- ওহে ছোকরা ছোঁকছোঁক না করিয়া মাল বাহির কর। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া পরিলাম। জনসম্মুখে কি করিয়া মাল বাহির করিব!!! কেহ একজন ইশারা করাতে বুঝিতে পারিলাম মাল কি জিনিস! চার সহস্র টাকা বাবার চরনে অর্পন করিলাম। হাপ ছারিয়া বাঁচিলাম ইজ্জত দিতে হইল না, দিলাম কাগজের তৈরি মাল।

ভদ্রে, মাল কি পর্যাপ্ত রহিয়াছে? ... দাউদ হোসাইন রনি ভাইকে খুব শান্ত ভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন শান্ত ভাই। রনি ভাই হাস্যজ্জ্বল মুখে বলিলেনÑ এতো বড় ড্রামের (একহস্ত মাথার উপরে আর অন্যহস্ত ধরনির দিকে নামাইয়া) এক ড্রাম রস মজুদ রহিয়াছে আমাদিগের জন্য। রস ফুরাইবার কোন আশঙ্কা নাই। খাওয়া নহে গোসলও করা যাইবেক। শান্ত ভাই শান্তমিষ্টি হাসিলেন।

তাহাতে বুঝিতে বাকি রহিলনা তিনি আশ্বস্ত বোধ করিলেন। প্রতিবছর মে মাসের পয়লা দিনে মাল উৎসবের আয়েজন (রস খাইবার উৎসব) করেন রস বাবা নামে খ্যাত লেখক ও সংবাদকর্মী কাজী গোলাম রাব্বানি। উক্ত উৎসবে অংশ গ্রহণ করিবার নিমিত্তেই আমোরা প্রায় জনা চল্লিশেক রস খাদক উপস্থিত হইয়াছিলাম সাভারের বিরুলিয়ায়। উৎসবের রস গুরুর গুরুতর দায়িত্ব গরুর মালার মতো গলায় লইয়াছিলেন ‘দেশের পথে’ খ্যাত জনাব টিংকু ...। কেহ কেহ বলিয়া থাকেন দেশের পথে ঘুরিতে-ঘুরিতে তিনি একখানা মালে পরিণত হইয়াছেন.. মালে মালামাল হইয়াছেন... মালে সয়লাবও হইয়াছেন।

বন্ধুবর পাভেল আহমেদও একখানা মাল। খাসা মাল। মাল খাইতে-খাইতে একখানা গান হাঁকাইলেন। কখন কোন গানখানা গাহিতে হইবে তাহা ভালো করিয়াই রপ্ত করিয়াছেন তিনি। গান গাহিয়া সবাইকে মাতাল করিয়া দিলেন।

তাহার পর কত কি যে হইল। গান হইল, রস পান হইল, কাহারও মান হইল, কাহারও বা কাহারও প্রতি টান হইল। হাসিতে হাসিতে সকলেই কাত হইল, এলাকাবাসিও মাত হইল, কেহবা পঁচিতে পঁচিতে জাত হইল, ক্রমে ক্রমে প্রায় রাত হইল। এইবার ফিরিবার জ্বালা। সকলেই তালের মালে টইটুম্বুর হইয়া, যাহারা হন নাই তাহারা ভান ধরিয়া, তলপেটখানা কয়েক কেজি ভারি করিয়া, ধানক্ষেতের আলে তালে তালে পা ফেলিয়া ফিরিবার পথে আগাইতে থাকিলাম।

আমাদের সঙ্গে লহিলাম স্মৃতি। নগরযন্ত্রনার হাত হইতে মুক্তি পাইবার স্মৃতি। সেই সব স্মৃতি আলাদিনের চেরাগের মতোন বন্দী করিলাম মুঠোফোনে ও ক্যামেরায়। পেছনে পড়িয়া রহিল সেই মাঠখানা। বলিলামÑ আবার আসিব ফিরে।

লেখা ও ছবি: জোবায়ের ইসলাম ২৬ এপ্রিল, ২০১৩ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.