আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুলনায় কাজের মেয়ে সীমা হত্যা নাটক : মামলার আইও আতংকে

তোলো ছিন্ন বীণা বাধো নতুন তারে.. খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানাধীন মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার কাজের মেয়ে সীমা হত্যা নাটকের অবসান হওয়ার পর ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দারোগা শাহ আলমের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। রোববার দুপুর থেকে দারোগা শাহ আলম লাপাত্তা ছিলেন। সোমবার দুপুরে খালিশপুর থানায় গিয়ে তাকে পাওয়া গেলেও প্রথমে তিনি সংবাদ কর্মীদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। পরে কেএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তিনি মিডিয়ার সামনে মুখ খুললেও ‘এখনও তদন্ত শেষ হয়নি’ উল্লেখ করে বলেন, তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ হলে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। কথিত সীমা হত্যার সাথে জড়িত মিল্কী আইসক্রীম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসান ও তার স্ত্রী ফাতিমা ইয়াসমিন দীর্ঘ প্রায় দু’মাস যাবত জেল হাজতে থাকলেও রোববার জীবিত সীমার আদালতে স্ব-শরীরে হাজির হওয়ার পরও তদন্ত বাকি থাকে কি করে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা না বলেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

এদিকে থানা চত্বরে সাংবাদিকদের অবস্থান দেখেই দারোগা শাহ আলম তার ব্যবহৃত মটর সাইকেল (খুলনা মেট্রো হ-০২-৩৭৫৩)যোগে চলে যাবার চেষ্টা করেন। সেখানে অবস্থানরত শফিক নামে এক ব্যক্তি বলেন, এ ধরনের পুলিশ কর্মকর্তার কারণেই পুরো পুলিশ বিভাগের বদনাম হয়। কথিত সীমা হত্যার নাটক সাজিয়ে কল্পকাহিনী মিডিয়ায় সরবরাহ করার দায়ে দারোগা শাহ আলমের শাস্তি হওয়া উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একই সাথে এ কল্পকাহিনী রচনার সাথে জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী বলেও তিনি মনে করেন। এদিকে কথিত হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত মাসুদ হাসান দম্পতির গতকালও জামিন হয়নি।

খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট কেরামত আলীর আদালতে মামলার সার্বিক এবং ভিকটিমের আদালতে হাজির হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মাসুদ হাসান দম্পতির জামিন আবেদন করা হলেও সংশ্লিষ্ট আদালতে এ সংক্রান্ত কোন নথিপত্র না আসার কারণে তাদের জামিন নামঞ্জুর হয়। যদিও এ মামলায় আগামী ১০ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। অপরদিকে মিথ্যা মামলায় পিতা-মাতা দীর্ঘ দু’মাস ধরে জেল হাজতে থাকার ফলে দম্পতির ৭ মাসের শিশু সন্তান নাহিদ হাসানসহ চারটি সন্তানের মানবেতর দিন কাটছে। বৃদ্ধ পিতা-মাতার দীর্ঘশ্বাস যে কোন বিবেকমান মানুষকে কাঁদালেও ‘এখনও তদন্ত শেষ হয়নি’ উল্লেখ করে বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন দারোগা শাহ আলম। আবার মাসুদ হাসানের মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার যে বাসায় মাসুদ হাসান ভাড়ায় ছিলেন ওই বাসা থেকেও তার পরিবারকে সম্প্রতি নামিয়ে দেয়া হয়।

অর্থাৎ ভয়ংকর ও দুর্ধর্ষ হিসেবে মাসুদ হাসান ইতোমধ্যেই পরিচিত হয়ে উঠলেও সীমার হাজির হওয়ার পর চিত্র পাল্টে গেল। এ অবস্থায় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভূমিকা কি হবে সেটিই দেখার বিষয় উল্লেখ করে খালিশপুরের এক ব্যবসায়ী বলেন, মাসুদ হাসান ও তার পরিবার এবং তাদের ৭ মাসের শিশু সন্তান যে চরম মানবাধিকার লংঘনের শিকার হলো এর দায়ভার কে নেবে ? কে ফিরিয়ে দেবে তাদের মান-সম্মান ? ঢাকাস্থ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের লিগ্যাল এইড প্রধান মিনা গোস্বামী বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা শুধুমাত্র সীমাকে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে রেখেছেন। এখন হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ’র সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, একজন ব্যবসায়ীকে এভাবে নাজেহাল করার জন্য যেসব ব্যক্তি দায়ী তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্যদের বিরুদ্ধ মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সোচ্চার হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, গত বছর এপ্রিল মাসে মাসুদ হাসানের বাসার কাজের মেয়ে সীমা নিখোঁজ হওয়ার পর ওই সময় তিনি খালিশপুর থানায় একটি জিডি করেন। জিডির পাশাপাশি স্থানীয় পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদও দেয়া হয়। এর কয়েকদিন পরে মাসুদ হাসানের বাসায় রক্ষিত কিছু টাকা স্বর্ণালংকার চুরির অভিযোগ এনে মাসুদ হাসান খালিশপুর থানায় চুরি মামলা করেন। ওই মামলায় সীমার পাশাপাশি তার সৎ মামা এখলাস গাজী ও মা সুফিয়া বেগমকে আসামি করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, সীমার মামা ও মা পরিকল্পিতভাবে সীমাকে তার বাসা থেকে নিয়ে অন্যত্র কাজে দেবে বলে মনে হচ্ছে।

কিন্তু ওই চুরি মামলা থেকে বাচার জন্য সীমার মামা এখলাস গাজী গত বছর ২৩ আগষ্ট নড়াইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি পাচার মামলা করেন। যেটি বিজ্ঞ আদালত খারিজ করে দেন। এরপর সীমার মা সুফিয়া বেগম পৃথক তারিখ ও ঘটনাস্থল উল্লেখ করে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুন্যালে আবার একটি পাচার মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়েই শুরু হয় দারোগা শাহ আলমের বাণিজ্য। তদন্তের এক পর্যায়ে ৩০ জানুয়ারি ডুমুরিয়ার একটি বিল থেকে অজ্ঞাত এক মহিলার লাশ উদ্ধার ও বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের পর ওই লাশের ছবি নিয়ে দারোগা শাহ আলম সেটি সীমার লাশ বলে প্রচার করার চেষ্টা করেন।

এমনকি সীমার মাকে দিয়ে ওইটি যে সীমার লাশের ছবি সেটিও বলানো হয়। এক পর্যায়ে মিল্কী আইসক্রীম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসান ও তার স্ত্রী ফাতিমা ইয়াসমিনকে ১৪ অক্টোবর সকালে গ্রেফতার করে খুনী হিসেবে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের ডেকে ছবি তুলে দ্রুত কোর্টে চালান দেয়া হয়। পর পর দু’দিন রিমান্ডের আবেদন জানানো হলেও বিজ্ঞ আদালত দু’দফায় জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। এতেও ক্ষান্ত হননি দারোগা শাহ আলম। তাকে রিমান্ডে আনা হলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহযোগিতা নিয়ে পুরো কল্পকাহিনী প্রচারের ব্যবস্থা করেন।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বিষয়টির গভীরে না গিয়ে শুধুমাত্র দারোগা শাহ আলমের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ওপর নির্ভর করে সংবাদ সম্মেলন, মানব বন্ধন, স্মারকলিপি পেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। আর কথিত নিহত সীমার রোববার স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার পর মোড় ঘুরে যায়। কথিত নিহত সীমা ও এ হত্যার গল্প সাজানো তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.