আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনীতিতে মেধার ঘাটতি থাকলেই পেশী শক্তির উপর নির্ভরতা বাড়ে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি পরিছন্ন রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, “জনগনের আস্থা এবং বিশ্বাসের উপর আগামী দিনের রাজনীতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। যে রাজনীতি জনবিচ্ছিন্ন, সে রাজনীতি টিকে থাকার কথা নয়। রাজনীতির বাইরে আমাদের সমাজের কোনো সমস্যার সমাধান শেষ পর্যন্ত হবে না। কিন্তু কোনো কোনো সময় থাকে মানুষ যখন রাজনীতির ওপর বিতৃষ্ণা হয়। এখন হলো তেমন একটি সময়।

তার অর্থ আবারও সংঘর্ষ হবে, আবারও মানুষ মারা যাবে”। বাংলাদেশের কোন সরকারই প্রতিবাদে বিচলিত হয় না, অটলতায় তারা অদ্বিতীয়। নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরোধীদের কোন কথায় গুরুত্ব দেয় না। নিজেদের সিদ্ধান্তকে সব সময় বড় করে দেখেন, সেটা যুক্তি সংগত না হলেও। আপোষহীন মনোভাব নিয়েই বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারই পরিচালিত হয়ে আসছে।

কোন সরকারেরই উচিত নয় তাদের নিজস্ব মতবাদ বা ভাবাদর্শ জনগনের উপর চাপিয়ে দেওয়া। কেননা সমস্ত ভাবাদর্শই ক্ষনস্থায়ী। আজ খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে মানুষের উপর বিশ্বাস রাখা, পৃথিবী জুড়ে মানুষ আজ মত্ত পাশবিক আচরণে; একজন আরেকজন মানুষের অধিকার হরন করে চলছে প্রতিনিয়ত। মানুষ বন্দি আর পীড়ন করে চলছে মানুষকে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রতিনিয়ত অন্যের অস্তিত্ব ধ্বংস করছে।

কযেক দিনের ধারাবাহিক ঘটনা গুলো বিশ্লেষন করলেই বুঝা যায় মানুষই এখন মানুষের চরম শত্রু। হিংস জানোয়ারের চেয়েও মানুষ এখন হিংস হয়ে উঠছে। পৃথিবী জুড়ে মানুষ আজ নিজের নিজস্ব চিন্তা চেতনা আর কাঠামোতে বাঁচে না, বেঁচে থাকে অন্যের কাঠামোর উপর নির্ভর করে; থাকতে বাধ্য হয়। মানুষ এখন সত্যকে ভয় পায়, সত্যকে ভয় পায় বলেই মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে সত্য বলে। মিথ্যাকে সত্য আঁকড়ে ধরার পিছনে রয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি।

এই রাজনীতির কারনেই মানুষ আলো থেকে ক্রমশ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সত্যকে বাদ দিয়ে মিথ্যার পেছনে ছুটছে। হুমায়ন আজাদ লিখেছেন, বাংগা্লীদের একটা বড় দুর্ভাগ্য; তারা বিকশিত হতে চায় না; তারা জীবিত প্রতিভাদের হত্যা করতে চায়। ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় চলে ক্ষমতাবাজি, দলবাজি দখলবাজি ও স্বেচ্ছাচারিতা। প্রতিবাদ করলেই হতে নির্যাতনের শিকার না হয় গুম।

সবচেয়ে বেশী ক্ষতির কবলে পড়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকগুলো। মধ্যবিত্ত এমন একটা শ্রেণী যারা সমাজ পরিবর্তনের মূল কাঁচামাল না হলেও মূল পরিকল্পনাকারী। কারণ তারা থাকেন সর্বহারা আর সর্ব পাওয়াদের মাঝখানে। দুই শ্রেণীরই লিয়াজো হিসাবে। বহুল প্রচারিত একটি ফরাসি প্রবচন আছে।

সেটি হচ্ছে : ‘যতই পরিবর্তন ঘটে, ততই অপরিবর্তিত থেকে যায়। ’ আমাদের দেশে ক্ষমতার জোরে নয়কে ছয় করা কোনো বিষয় নয়। ভুল কথায় ভুল বোঝাবুঝি হয়ে মানুষ বিভ্রান্ত হন। তাইা যোগ্যতাসম্পন্ন তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিকরা হতাশাগ্রস্ত। কথায় বলে, ‘মাটিতে পা রাখলেই মৃত্তিকার স্পর্শ।

’ মাটির স্পর্শহীন, বায়বীয় আবেগ মন বা চিন্তার সহায়ক বটে, তাকে ঘিরে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না। থ্রাসিমেকাসের মতে ’ন্যায়’ ‘অন্যায়’ এই শব্দসমূহ শক্তিমান তথা শাসকদের তৈরি। প্লাতনিয় থ্রাসিমেকাস আরো বলেন , ন্যায় হচ্ছে দুর্বলকে শোষণ করার জন্য শক্তিমানের কৌশল অথবা শক্তিমানকে পরাজিত করার জন্য দুর্বলের জোট। জনগণ যুক্তির মাধ্যমে এই ধরনের জোট করেছে তা নয়, শক্তিমান তার নীতি জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়ার ফলে এই জোটের জন্ম। ক্ষমতা আছে অথচ দূর্ণীতি করে নাই, জনগণরে শোষণ ও পীড়ন করে নাই এমন শাষকগোষ্ঠী বিরল ও গবেষণার বিষয়।

বর্তমান ভারসাম্যহীন পুঁজিতান্ত্রিক দুনিয়ায় রাষ্ট্রগুলো যেন সাম্রাজ্যবাদ নামের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির এজেন্সি। বিদেশী ক্ষমতার পুজা আর নিজেদের অনিয়ন্ত্রিত লোভের ক্ষুধা মেটানোই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। প্রশাসনিক মানদণ্ড নৈতিকতার হলেও বাংলাদেশে সবসময় যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই প্রশাসনকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থে। যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই সংবিধানটাকে নিয়া প্রচুর আগ্রহ দেখিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভেক ধরে ছিন্নভিন্ন করেছে মানুষের অধিকার।

জনগণের সাথে চুক্তিভঙ্গ করে নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সম্পূর্ণ দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছে। মহামতি টয়েনবি বলেন ‘সুগঠিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে কেউ যদি একবার নিজের কাজে লাগায়। তাহলে দুর্নীতি সেখানেও প্রবাহিত হয়ে যায়, তারা যে শুধু দুর্নীতিপরায়ণ হয় তাই নয় তারা সব ধরনের ছাড়পত্রই পেয়ে যায় এমনকি বিনা বিচারে হত্যা ও ধর্ষণেরও’। কারণ নিজেরা একবার দুষিত হলে দুষিতরা নিজেরাও সুবিধা চাইবে এটা নতুন কিছু নয়। এভাবে দুষিত হতে থাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা পরবর্তী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলো।

একাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশে সরকার পরিচালনার একটা বিশাল অংশ ভয়াবহ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। একটা আমলা ও নব্য লুঠেরাশ্রেণি। এই অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ এখনও মুক্তি পায় নাই। এটা যেন একটা দৈত্য। এমন কোনো সরকারি শাখা প্রশাখা নাই যেখানে টাকা ও ক্ষমতার খেলা চলেনা।

টাকা ও ক্ষমতাই হচ্ছে শক্তিমত্তা। থানা কোর্টে সরকারি অফিসগুলোতে উৎকোচপ্রথা খোলামেলা। জনগণের এখন কোনো খাদ্য নাই। খাদ্য ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে লুঠেরা সিন্ডিকেট। মাঝে মাঝে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তারা জনগণকে খাদ্যহীন করার ভয় ও অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত করে।

আর যা-ও পাওয়া যায় সব দূষিত, ভেজাল। পুরা জাতির স্বাস্থ্য আজ সিন্ডিকেটের হাতে। এই সিন্ডিকেট সাম্রাজ্যবাদের হাতের পুতুল। সার্বিকভাবে জনগণকে দারিদ্রে নিমজ্জিত করে রাখার মধ্যে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করবার রাজনীতি আছে। দারিদ্র আর অশিক্ষা প্রায় সমান পাপ।

একই সুঁতায় গাঁথা। এ পাপ কৃত্রিম, দানব রাষ্ট্রের তৈরি। জনজীবনকে সম্পুর্ণ দুষিত করে, অশিক্ষার অন্ধকারে রেখে, অসুস্থ দুর্বল রেখে ক্ষমতাবানরা ক্ষমতার চিরস্থায়ীত্ব চাইছে। দেশকে বিষাক্ত কারাগার বানিয়ে তারা পার করছে অভাবমুক্ত বিলাসবহুল জীবন। মহামতি হবস বলেন হত্যা , আঘাত বা পঙ্গু করবার; অথবা আক্রমণকারীকে প্রতিরোধ না করবার; অথবা খাদ্য, বাতাস, ঔষধ কিংবা যা না হলে সে বাঁচতে পারে না, এমন কোনো নির্দেশ যা ন্যায়সঙ্গত ভাবেই নিন্দার্হ, রাষ্ট্র জনগণের ওপর চাপিয়ে দিলে তার অবাধ্যতা বা বিদ্রোহের স্বাধীনতা ন্যায়সঙ্গত।

ম্যকিয়াভেলী আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছিলেন রাষ্ট্র তার চুক্তি ভঙ্গ করলে জনগণের বিদ্রোহ করবার অধিকারতো আছেই, তদোপরি অধিকার আছে রাজাকে হত্যা করবারও। ১৯৫০-৬০-৭০ দশকের ছাত্রনেতারা আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন। কিন্তু এখন আর শিক্ষাঙ্গন থেকে রাজনৈতিক কর্মী মূল রাজনীতিতে আসছে না। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্বের সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। এতে অবারিত হচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াবহির্ভূত নব্য ধনী, কালো টাকার মালিকদের আগমনের পথ।

এসব অরাজনৈতিক উচ্চাভিলাষীদের কাছে রাজনীতি আত্মপ্রতিষ্ঠার উপায়। তাই তারা সংসদ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থেকে তদবিরবাজিতে নিবেদিতপ্রাণ!আজ বাংলাদেশের বিরাজমান বাস্তবতা নিয়ে প্রবাসীদের উদ্বেগ রয়েছে। গণতান্ত্রিক বিশ্বে বসবাসরত বাঙালী তার নিজের জীবনের সঙ্গে দেশজ বাস্তবতার মিল খুঁজে বেড়ায়। কারন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এর কারনেই দেশের চাকা আজ সচল। মুষ্টিমেয় সচেতন বাংলাদেশী ব্যতীত কথিত আওয়ামীপন্থীরা কাঁচের ঘরে নিদ্রামগ্ন।

অথচ দেশের রাজপথগুলো হঠাৎ করে জামায়াত শিবিরের আক্রমনে রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে। ধর্মভীরুতাকে পুঁজি করে জামায়াত মাঠে শক্তি প্রদর্শন করে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে, যা দেশের জন্য কোন ভাবেই শুভ নয়। বাংলাদেশের মতো দেশে এজেন্ডা বাস্তবায়ন বা পরিকল্পনা সফল করা অবাস্তব। এটা সবাই মানে। কিন্তু সরকারী দলের ক্ষমতাপ্রবণ সাংসদ, মন্ত্রী, আমলারা মানেন না।

মানলেও তার কোন নজীর চোখে পড়ে না। ক্ষমতায়নের পথে প্রান্তিক মানুষ, শ্রমজীবী কৃষক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপচানো ভোট পাওয়ার পরও তাঁদের প্রতি চরম অবহেলাই প্রমাণ করে তাঁরা তা বোঝেন না। এতে আর যাই হোক, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের কপালে জঙ্গীবাদের কলঙ্কতিলক পুনর্বার জেঁকে বসার সম্ভাবনাই সর্বাধিক। নির্বাচনের সময় যত ঘনাচ্ছে হাওয়া ভবন, ওয়ান-ইলেভেন, জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীর মতো স্পর্শকাতর বিষয় আবার মাথা চাড়া দিচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে অবশেষে জামায়াত-শিবির সকল শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে।

ছাত্রশিবির জামায়াতের মূল ক্যাডার বাহিনী এটি এবার পরিষ্কার হচ্ছে। এতদিন বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছিল, বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে জামায়াতে ইসলামী ছাত্রশিবির নামক একটি সংগঠনকে রাজনৈতিক ও সামরিক মানসে গড়ে তুলছে যারা আসলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিধিবিধান মেনে চলছে না, যারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে উৎখাত করে একটি অগণতান্ত্রিক, তালেবানী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। ছাত্রশিবির জামায়াতে ইসলামীর তরুণ সংগঠন, তরুণদের মধ্যে সবচাইতে সংগঠিতভাবে এটি কাজ করা একটি সংগঠন। ফলে সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ঝাঁকুনি দেয়ার লক্ষ্যেই জামায়াত তাদের ‘রিজার্ভে’ থাকা সব চাইতে সংগঠিত শক্তি ছাত্রশিবিরকে এখন মাঠে নামিয়েছে। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা তাদের প্রগাঢ় বিশ্বাস থেকেই মাঠে নেমেছে, পুলিশের সঙ্গে সর্বাত্মক সংঘর্ষে নেমেছে।

এ সব আক্রমণ থেকে যেটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা হচ্ছে, ছাত্রশিবিরের প্রতিটি কর্মী এক ধরনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যে তা জনসম্মুখে প্রকাশিত হচ্ছে। এমনটি কেবল কোন বিপ্লবী সংগঠনই নিতে চেষ্টা করে থাকে। ছাত্রশিবির চিরায়ত বিপ্লবী আদর্শবাদী দল নয় মোটেও বরং এটি একটি ধর্মান্ধ, লুটেরা কোন বিশেষ শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর অর্থে লালিত পালিত সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম যা উগ্র, হঠকারী ধর্মীয়, উন্মাদনায় উজ্জীবিত থাকে। জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত ছাত্রশিবির সে ধরনেরই তরুণদের একটি সংগঠন যারা মূলত আবেগ, বিশ্বাস, অন্ধত্ব, অর্থ ও রাষ্ট্র ক্ষমতার মোহে জীবন বাজি রেখে রাজনীতির মাঠে অংশ নেয়। দলটি তরুণদের ধর্মীয় আবেগ ও বিশ্বাসকে বিপ্লব বাদীদের মতো প্রয়োগ করে।

তবে এদের এই চেষ্টাকে হঠাৎ যেমন নস্যাত করে দেয়া যাবে না, তেমনি কার্যকর কোন উদ্যোগ না নিলে রাষ্ট্র-রাজনীতি তাদের করায়ত্তে যাওয়া মোটেও অসম্ভবের কিছু নয়। দুর্বল গণতন্ত্র এবং গঠতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এ ধরনের জঙ্গী মানসিকতার শক্তিকে অবহেলা করে দেখার কোন অবকাশ নেই। যে সব দল বাংলাদেশকে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় না, যাদের আদর্শে তা নেই তেমন দলের সঙ্গেই বিএনপির গাঁটছড়া ভাব ও সখ্য বেশি। জামায়াত তার অন্যতম বড় উদাহরণ। জামায়াত কি ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা চাচ্ছে তা বিএনপির অজানা কিছু নয়।

এক সময় বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দল বলে দাবি করত। কিন্তু ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোটের সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিএনপি ‘ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে’র কথা প্রচার করে। জামায়াত শিবিরও তা প্রচার করে। বিএনপির বেশির ভাগ পেশাজীবী সংগঠন এখন জামায়াত-বিএনপিতে একাকার হয়ে আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে বিএনপি প্রকাশ্যে এক কথা বলে, রাজনৈতিক মঞ্চে কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবি প্রচারে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের প্রতি এমন দোদুল্যমানতা, রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আধুনিক গণতান্ত্রিক চরিত্র দানের দায়িত্ব গ্রহণের অবহেলার বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, রক্তস্নাত স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করেন না এমন রাজনৈতিক চিন্তাও বাংলাদেশে সক্রিয় রয়েছে। গভীর বিশ্লেষণে গেলে অনেকের কাছে উদঘাটিত হবে যে, স্বাধীনতার মূল সংগঠন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে এমন কিছু লোক ঘাপটি মেরে রয়েছেন, যারা শুধু আদর্শ বিচ্যুত বামই নন, পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষাকারী প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তিবর্গও বটে!’৭১-এ যেসব ব্যক্তি, জামায়াতের যেসব শীর্ষ নেতা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়ি ছিল, তারা কেউ বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি ছিল না। তারা ছিল জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা। তারা যাবতীয় অপরাধ করেছে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।

জামায়াতে ইসলামীর একটা আদর্শ আছে, যেটাকে আমরা বলি মওদুদীবাদ। মওদুদীবাদ ইসলামের নামে, ধর্মের নামে হত্যা, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগসহ যাবতীয় ধ্বংসযজ্ঞকে উৎসাহ দেয়। জামায়াতে ইসলামী, রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের বিচার না হলে এখন যে বিচার চলছে, তা পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য হবে না। বিচার অপূর্ণ থেকে যাবে। জামায়াতে ইসলামীকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার উপায় নেই।

১৯৭২-এর সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এই নিষেধাজ্ঞাটি তুলে নেয়। ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধান থেকে বাতিল করে দেয়। কোনো বিবেকবান মানুষ ধর্মের নামে রাজনীতি, ধর্মের নামে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন সমর্থন করতে পারে না। মহাজোট সরকারের সুযোগ ছিল পঞ্চম সংশোধনীর ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তা মেনে নিয়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা।

তারা সে পথে যায়নি। ফলে আজকে জামায়াত এতটা সহিংস হতে পেরেছে। সুযোগ রয়েছে এখনও ‘৭১-এর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের জন্য ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের বিচার করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা। ২০১৪ সালের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, আমরা লক্ষ্য করছি জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের প্রধান সহযোগী মরিয়া হয়ে উঠেছে। জামায়াতের মতো বিএনপিও জানে, এই বিচার যদি সরকার সময়মতো যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারে; শুধু জামায়াতের কোমর ভাংবে না, বিএনপির শক্তি অনেকখানি কমে যাবে।

******************************** লেখক: সৌদি প্রবাসী। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.