আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে......... কি, কেনো......

A friend is one who takes me for what I am........ আজ থ্যাঙ্কস গিভিং ডে। আমেরিকায় নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবারকে 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' হিসেবে উদযাপন করা হয়। আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছুটির দিনটি 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' নামে সরকারিভাবে স্বীকৃত। থ্যাঙ্কস গিভিং ডে-কে অন্যভাবে 'দ্য টার্কি ডেও' বলা যায়। কারণ এ দিনকে ঘিরে সবকিছুতেই থাকে টার্কির (বনমোরগ জাতীয় পাখি) আধিপত্য।

দোকানে বিশাল সাইজের টার্কি বিক্রি হয়, খাবারের প্লেট থেকে শুরু করে টেবিল ক্লথ, গ্লাস, বাটি, ন্যাপকিন এমনকি পোশাকেও থাকে টার্কির ছবি। মানে এই একমাস সব কিছুতেই শুধু টার্কিকে দেখা যায়। সাধারণত এই দিনে মার্কিনিদের ট্র্যাডিশন হচ্ছে, পরিবারের সবাই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব মিলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, গল্পগুজব, নানা আনন্দ-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেওয়া। খাবারের মধ্যে মূল আইটেম হচ্ছে টার্কির মাংস। ন্যাশনাল টার্কি ফেডারেশনের ভাষ্যমতে ৯০ শতাংশ মার্কিনি এ দিন টার্কি দিয়ে সমস্ত ভোজপর্ব সম্পন্ন করে।

কেউ রোস্ট করে, কেউবা আবার ডিপ ফ্রাই করে খায়, অথবা সব ধরনের রান্না করতে চেষ্টা করে। সঙ্গে থাকে ক্র্যানবেরি সস, ম্যাশড পটেটো, স্টাফিং, ক্যাসেরোল, গ্রিন বিন, পামকিন পাই, পিকান পাই ইত্যাদি। এই দিনে অনেকে আবার খাবার-দাবার ভলান্টিয়ারিং করে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান নিম্নবিত্তদের ফ্রি ডিনার করিয়ে থাকে। কেউ থ্যাঙ্কস গিভিং ডিনার থেকে বঞ্চিত হয় না। আসলে 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে'কি বা কোথা থেকে এর শুরু, এর তাৎপর্যইবা কতটুকু: ১৬২০ সালে 'মে ফ্লাওয়ার' নামের এক জাহাজে চড়ে ১০২ জন নানা ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করার জন্য ইংল্যান্ড ছেড়ে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে বের হন।

দুই/তিন মাস পর তারা মেসাচুসেটস বে তে এসে থামেন। যাত্রীদের অনেকেই অর্ধাহারে, শীতের কোপে অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে যারা সুস্থ ছিলেন, তারা জাহাজ থেকে তীরে এসে নামেন। ওখানেই তারা প্লিমথ নামে গ্রাম গড়ে তোলেন। স্কোয়ান্তো নামের এক উপজাতি আমেরিকান ইন্ডিয়ানের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়।

স্কোয়ান্তো তাদের নিজে হাতে শিখিয়ে দেয় কিভাবে কর্ন চাষ করতে হয় বা মাছ ধরতে হয়, কিভাবে মেপল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হয়। ১৬২১ সালের নভেম্বরে প্লিমথবাসী তাদের উৎপাদিত শস্য কর্ন নিজেদের ঘরে তুলতে পারল। কর্নের ফলন এত বেশি ভালো হয়েছিল যে, গভর্নর উইলিয়াম এ উপলক্ষে সব আদিবাসী এবং এই নতুন প্লিমথবাসীর সৌজন্যে 'ফিস্টি' আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানে সবাই প্রথমে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান তাদের সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, এমন সুন্দর শস্য ফলনের জন্য, তারপর সবাই সবাইকে ধন্যবাদ জানান, সারা বছর একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। এই অনুষ্ঠানটি আমেরিকার প্রথম থ্যাঙ্কস গিভিং ডে হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

১৮১৭ সালে নিউইয়র্কে সর্ব প্রথম 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' অফিসিয়ালি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর পর ১৮২৭ সালে বিখ্যাত নার্সারি রাইম 'মেরি হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব' রচয়িতা সারাহ যোসেফা উদ্যোগ নেন, যেন 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে'-কে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ৩৬ বছর তিনি একটানা আর্টিক্যাল, এডিটোরিয়াল লিখাসহ আবেদনের স্বপক্ষে প্রচুর চিঠিপত্র গভর্নর, সিনেটর, প্রেসিডেন্ট, রাজনীতিবিদদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৮৬৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন সারাহ যোসেফের আবেদন গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেন এবং যখন 'সিভিল ওয়ার' একেবারে তুঙ্গে, তখনই জনগণের উদ্দেশে আবেদনমূলক ঘোষণা দেন, যেন পরম করুণাময় ঈশ্বরের কাছে আমেরিকাবাসী প্রার্থনা জানায়_ "হে ঈশ্বর! তোমার স্নেহের পরশ, তোমার অপার করুণা তুমি তাদের ওপর বর্ষণ কর, যারা সিভিল ওয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেসব নারী স্বামী হারিয়েছে, যেসব সন্তান পিতৃহারা হয়েছে, জাতির যে ক্ষতি হয়েছে, সবার যেন মঙ্গল হয়, দেশের ক্ষতি যা হয়েছে তা যেন তাড়াতাড়ি সারিয়ে তোলা যায়। এরপরই আব্রাহাম লিংকন নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবারকে 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা দেন।

১৯৩৯ সাল পর্যন্ত এভাবেই পালিত হয় কিন্তু ১৯৩৯ সালে প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট তখনকার অর্থনৈতিক মন্দা (গ্রেট ডিপরেশন) কাটিয়ে ওঠার লক্ষে রিটেল সেল বাড়ানোর জন্য এ ছুটি এক সপ্তাহ এগিয়ে আনার ঘোষণা দেন এবং এরপর থেকে নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' পালিত হয়। তবে বর্তমানে দিনটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালিত না হয়ে পুরোপুরি কমার্শিয়ালভাবেই পালিত হচ্ছে !!!! 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে'র ঠিক পরের দিন হয় আরেক উন্মাদনা, যাকে বলা হয় 'ব্ল্যাক ফ্রাইডে'। এই শুক্রবারে প্রচুর জিনিস বিক্রি হয়। প্রচার হতে থাকে দুই সপ্তাহ আগে থেকেই ব্ল্যাক ফ্রাইডে সেলে কি কি আইটেম বাজারে আসবে। পুরো আমেরিকাবাসী শখের কিছু জিনিস কিনতে হলে ব্ল্যাক ফ্রাইডের আশায় অপেক্ষায় থাকে।

মধ্য রাত থেকেই ক্রেতাদের লাইন ধরা শুরু হয়, অন্ধকার থাকতেই স্টোর ওপেন করে দেওয়া হয়, বন্যার জলের মতো মানুষ হুড়মুড় করে দোকানে ঢুকে যে যেটা আগে ধরতে পারে, সে সেটা সঙ্গে সঙ্গে কিনে ফেলে। এ সেলের ব্যাপারটা শেষ হয়ে যায় ঘণ্টা খানিকের মধ্যেই, মানে সকাল হওয়ার আগেই। কাজেই সবকিছু ঘটে যায় দিনের আলো ফোটার আগে, তাই মনে হয় এই সেলের নাম 'ব্ল্যাক ফ্রাইডে সেল' বলা হয় !!!! ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।