আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হামাস ইসরায়েল যুদ্ধ বিরতি....অত:পর...

স্বাধীনতা, সে তো আমার প্রিয় মানুষের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা এই শিশুটি জানেনা যে তার মা ইসরায়েলের মিসাইল আঘাতে মারা গেছে কিন্তু সে জানে তার মা ঘুমিয়ে আছে। তাই তো সে মায়ের জেগে উঠার অপেক্ষায় ! আপনি বললেন যে হামাস প্রথম রকেট নিক্ষপ করেছে । এটা ইহুদীবাদীদের প্রচারনা ছাড়া আর কিছুই না। ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে হয়েছে, তাতে কোনোভাবে ইসরাইল আক্রান্ত হয়েছে বলার সুযোগ নেই। ১৪ নভেম্বর হামাস নেতা আহমদ জাবারিকে হত্যা করে ইসরাইল।

জাবারি তখন কোনো সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করছিলেন না। তিনি তখন সশস্ত্র অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমনও নয়। তিনি কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। এর জবাবে হামাস রকেট হামলা চালিয়েছে। ব্যাস একটা ওজর সৃষ্টি করে নেয়া গেল।

শুরু হয় ঝাঁকে ঝাঁকে বিমানের বোমা নিক্ষেপ অভিযান। নৌবাহিনীও শুরু করে গোলাবর্ষণ। তারপরেও মেনে নিলাম হামাসই প্রথম রকেট নিক্ষপ করেছে কিন্তু দোষের কোথায় ? একটা জনগোষ্ঠীকে বছরের পর বছরের ধরে অবরুদ্ধ করে রাখলে তারা কিই বা করতে পারে ? সেই ২০০৭ সাল থেকে তারা অবরুদ্ধ । একমাত্র রাফা ক্রসিং সেটাও ইহুদীবাদীদের চাপে মিশর বন্ধ করে রাখত কিন্তু মুরসি সরকারও পরিপূর্ন খূলে দিতে ব্যর্থ। আসলে ইসরাইলের আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্যে একটি ট্রাম্পকার্ড হাতে পাওয়ার জন্য গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন চালিয়েছিলেন ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

কিন্তু মাত্র আট দিনের মাথায় চরম লজ্জাজনক পরাজয়বরণ এবং যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। ইসরাইলি উস্কানিতে আমেরিকা সারাবিশ্বে যুদ্ধ চালালেও যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে ইসরাইলি নাগরিকরা ছিল সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু গাজা থেকে নিক্ষিপ্ত রকেটে ইহুদিবাদীদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। হামাসের রকেট ইসরাইলের কোনো শহরে আঘাত হানার আগে যে সাইরেন বাজানো হতো তাতে মারাত্মক আতঙ্ক তৈরি হচ্ছিল ইহুদিবাদীদের মনে। আতঙ্কিত এসব মানুষ যুদ্ধ বন্ধের জন্য নেতানিয়াহু সরকারের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে।

তেল আবিবের আসল পরাজয় ঘটে এখানেই। গাজা যুদ্ধে যে ইসরাইল পরাজিত হয়েছে তার তৃতীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্যে ছুটে এসেছেন । কোনো যুদ্ধে ইসরাইল যতক্ষণ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে ততক্ষণ আমেরিকাসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো এবং জাতিসংঘ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। কিন্তু হিলারি ক্লিন্টনের পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে পরিমরি করে ছুটে এসেছিলেন কায়রোয়। এখন প্রশ্ন হল গাজাবাসীদের কি বিজয়টা অর্জিত হল ? ১- জল, স্থল বা আকাশপথে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় কোনোরকম আগ্রাসন চালাবে না ২-সীমান্তেও কোনোরকম গোলাগুলি চালাবে না ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনি নেতাদের উপর কোনোরকম 'টার্গেটেড কিলিং' বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড চালাতে পারবে না ৩-যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে গাজা উপত্যকার সবগুলো ক্রসিং খুলে দেবে ইসরাইল।

সেইসঙ্গে গাজা অভিমুখী লোকজন বা পণ্য আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না তেল আবিব ৪- বিনিময়ে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা শুধুমাত্র ইসরাইলে রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ২০০৬ সালে লেবানননের হিযবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধেও ইসরাইল পরাজিত হয়েছিল এবং জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সে যুদ্ধেও কোনোমতে মুখরক্ষা করে সরে পড়েছিল তেল আবিব। তারপর আর এক মুহূর্তের জন্যও লেবাননে আগ্রাসনের কথা কল্পনাও করেনি ইসরাইল। হামাসের সবচেয়ে বড় অর্জন হল গাজার অবরোধ ভাঙ্গা আর হামাস নেতাদের যাতে ইসরাইল টার্গেট করতে না পারে তা বন্ধ করা যেখানে ইসরয়েল চেয়েছিল হামাসকে নির্মূল করতে। এখন বলেন গাজাবাসীর অবরোধর ভাঙ্গার জন্য জাতিসংঘ, বিশ্ববাসী, তাদের স্বগোত্রীয় আরবরা কিই করতে পেরেছে।

ইসরাইল ২০১০ সালে যখন গাজাঅভিমুখী ত্রাণবহরে কমান্ডে হামলা চালিয়ে ২০ জন নাগরিক নৃশংসভাবে হত্যা করল তখন কোথায় ছিল জাতিসংঘ ? এই আট দিন হামাস যদি যুদ্ধ না করত তাহলে কি ইসরাইল গাজা থেকে অবরোধ তুলে নিত ? হামাস হিজবুল্লাহ প্রমান করে দিয়েছে ইসরায়েল আর অজেয় নয়। তাইতো যুক্তরাস্ট্রের সাবেক দুর্দান্ত পররাস্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিন্জার ভবিষ্যৎবানী করেছেন ”ইসরায়েল আর মাত্র ১০ বছর বাঁচবে। ”  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.