আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাইকো থ্রিলারঃ লেখক (A Tribute To Rudlefuz!) - PART ONE

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! সামু ব্লগে এসে পরিচয়ের পর থেকে প্রতিনিয়ত যে মানুষটির মত লেখার চেষ্টা করছি, তিনি হচ্ছেন আসিফ রেহমান ভাই, ওরফে Rudlefuz . তার মত সাইকো থ্রিলার বাংলাদেশে কেউ লিখতে পারে কি না সন্দেহ আছে। তার লেখা পড়ে আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবারই রোম শিহরিত হয়, সেলিব্রেটি ব্লগারদেরও মনে হয়, আহ, এই ছেলেটার মত লিখতে পারলে মন্দ হত না! আজ আমি, এক ক্ষুদ্র ব্লগার, আমার লেখা বহু পুরনো একটা সাইকো থ্রিলার আসিফ ভাইয়ের নামে উৎসর্গ করলাম। ভাই, আমি যে আপনার কত বড় ফ্যান আপনি নিজেও জানেন না। ১ চোখ খুলেই আসিফ দেখলেন, তার চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আসিফ কয়েকবার চোখ খুললেন আর বন্ধ করলেন।

একই অবস্থা। অন্ধকার। তিনি কোথায়? এখানেই বা কিভাবে এলেন তিনি? আসিফ তার হাতদুটো নাড়ানোর চেষ্টা করলেন। পারলেন না। সেগুলো শক্ত কিছু দিয়ে বাঁধা।

তিনি তার পা দুটো নাড়ানোর চেষ্টা করলেন। একই অবস্থা। কে যেন শক্ত করে ওগুলোও বেঁধে রেখেছে। হঠাৎ শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের একটা স্রোত বয়ে গেল আসিফের। কেঁপে উঠল সমস্ত অন্তরাত্মা।

তবে কি তিনি... চিৎকার দেবার জন্য মুখ খোলার সাথে সাথে আসিফ বুঝতে পারলেন, তার মুখটা শক্ত টেপ দিয়ে আটকানো। আর তখনই সব মনে পড়ে গেল তার। ২ আসিফের স্ত্রীর নাম অন্তরা। আসিফ একজন লেখক। তিনি বিশ বছর ধরে লেখালেখি করে ভালোই সুনাম কামিয়েছেন।

তাকে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের কাতারেই ফেলা যায়। আসিফ বিশ্বাস করতেন, বিয়ের পর পাঁচ বছর একসাথে থাকলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আকর্ষণ কমে যায়। তখন সংসার টিকে থাকে ভালবাসার জোরে নয়, বরং ছেলেমেয়েদের প্রতি কর্তব্যের জোরে, পরস্পরের প্রতি নির্ভরতার জোরে। কিন্তু নতুন বিয়ের সেই স্বাদ আর আমেজের কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তাই আসিফ ঠিক করেছিলেন, বিয়ের পাঁচ বছর পর থেকে তিনি আর অন্তরা আলাদা থাকা শুরু করবেন।

আলাদা বাড়িতে। সপ্তাহে দুদিন দুরাত তারা একসাথে কাটাবেন। একদিন অন্তরার বাড়িতে, একদিন তার বাড়িতে। আর দুদিন তারা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করবেন। কাউকে না জানিয়ে।

তাতে যুবক বয়সের প্রেম আর অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদটা দুজনেরই অক্ষুণ্ণ থাকবে। অন্তরাকে কথাটা বলতে তিনি সানন্দে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। বিশেষ করে ভার্সিটির ছেলেমেয়েদের মত লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করার লোভ তিনি ছাড়তে পারেন নি। তারা লুকিয়ে লুকিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দেখা করেছেন। বিভিন্ন পার্কের খোলা গাছতলায়, পুকুরের ধারে, রেস্টুরেন্টে, মাঠে।

মজার ব্যাপার হল, অন্তরা সবসময়ই আসিফকে দেখা করার আগের রাতে মেসেজ দিতেন একটা নির্দিষ্ট জায়গায় থাকার জন্য। সেখানে সময়মত চলে যেতেন আসিফ। সেখানে পৌঁছানোর পর অন্তরা আরেকটা মেসেজ দিতেন, যাতে হয়তো কোথায় আসতে হবে সেই নিয়ে একটা ক্লু আছে। সেই জায়গায় যাবার পর আরেকটা ক্লু। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে হয়তো আসিফ দেখতেন, প্রথম তিনি যেখানে এসেছিলেন তার দশ হাত দূরেই একটা গাছের আড়াল থেকে সবই লক্ষ্য করে মুচকি মুচকি হাসছেন অন্তরা।

হয়তো তার মেসেজে থাকত, ekta tulsi gach khuje ber koro, jar goray dekhbe ekti kagojer plane rakha ache, oi plane tar vaj khule pore dekho. অথবা, resturenter sob tebil gulor niche takao, kono ektar niche dekhbe atha diye ekta kham lagano ache, oita khule dekho. তো শেষবার আসিফ অন্তরার ডাকে সাড়া দিয়ে পুরান ঢাকার একটা রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত গিয়েছিলেন। রেস্টুরেন্টে ঢোকার পর একটা মেসেজ পেলেন, ladies lkha toilt e dhko… মনে তার ছোট একটা খটকা ঠিকই লেগেছিল। অন্তরা তো ভাওয়েল ওমিট করে মেসেজ লেখে না! তবু তিনি ঠিকই খুঁজে খুঁজে ঢুকে পড়েছিলেন লেডিজ টয়লেটে। ডাক দিয়েছিলেন, হ্যালো। ঠিক তখনই একটা চাপা নারীকণ্ঠের গোঙানির শব্দ পান তিনি।

আর সাথে সাথে কেউ একজন ভারী একটা কিছু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। তারপর সব অন্ধকার। ৩ হঠাৎ আসিফের চোখের সামনে জ্বলে ওঠে চারটি দুইশ পাওয়ারের বাল্ব। প্রচণ্ড অসহ্য আলোয় চোখ ধাধিয়ে যায় তার। প্রাণপণে চোখ বন্ধ করেও সেই অসহ্য আলো থেকে মুক্তি পান না তিনি।

বাল্বগুলো হঠাৎ নিভে যায়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি। তার চোখ আবার অন্ধকারের সাথে ধাতস্থ হতে সময় নেয়। এমন সময় আবার জ্বলে ওঠে বাল্ব। সবগুলো।

আবার চোখ বন্ধ করে ফেলেন তিনি। আবার নিভে যায় সেগুলো। আবার জ্বলে ওঠে। আবার নিভে যায়। আসিফের মনে হয়, এর চেয়ে মৃত্যুও ভালো ছিল।

এরপর কতসময় আসিফ ঐ অবস্থায় কাটিয়েছেন জানেন না, হঠাৎ একটা মৃদু শব্দ পান তিনি। পা ঘষটানোর শব্দ। শব্দটা ক্রমে কাছে আসতে থাকে। আরও কাছে। আরও কাছে।

হঠাৎ খুব কাছে কারও উপস্থিতি অনুভব করেন আসিফ। খুব কাছে। ঘাড়ে তার নিঃশ্বাসের গন্ধও পান তিনি। বেশ দূরে একটা বাল্ব জ্বলে ওঠে। প্রথমে আসিফ কিছুই দেখতে পান না।

চারটে বাল্বের অত্যাচার তাকে সাময়িক ভাবে অন্ধ করে দিয়েছে। তারপর আস্তে আস্তে দেখতে সক্ষম হন তিনি। একটা ছোটখাটো কামরা। স্যাঁতসেঁতে দেয়াল। ছাদ থেকে ঝুলছে একটা কম পাওয়ারের বাল্ব।

মেঝেটা ময়লা। একটা বালতি। একটা টিনের মগ। একটা ভাঙ্গা রড। একটা ইঁদুরের দেহাবশেষ।

আবার পা ঘষটানোর শব্দ পান তিনি। একদম মাথার পিছনেই। ভয়ে হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে আসে তার। মাথা উলটে পিছনটা দেখার চেষ্টা করেন তিনি। পারেন না।

গলাটাও কি দিয়ে যেন বাঁধা। চিৎকার করতে ইচ্ছা হয় আসিফের। পারেন না। মুখ যে বন্ধ। খালি ছটফট করতে থাকেন আর তার গলা দিয়ে বেরুতে থাকে জান্তব শব্দ।

হঠাৎ একটা হাত তার গাল স্পর্শ করে। ভয়ে চমকে ওঠেন তিনি। হাতে ধরা ছুরিটার স্পর্শ পান মুখে। ছুরিটার ফলা তার দুগালে ভ্রমণ শেষে মুখে লাগানো টেপে এসে শেষ হয়। হ্যাঁচকা টান পড়ে ছুরির ফলায়।

ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেন আসিফ। কিন্তু ফলাটা তার মুখে লাগানো টেপটাকেই লম্বালম্বি প্রায় দুভাগ করে ফেলে। মুখের ফুটো উন্মুক্ত হয় তার। অনেক ক্ষণ পর মুখ দিয়ে শ্বাস নেন তিনি। প্রথমে বারবার চিৎকার করতে থাকেন তিনি।

বারবার। একটানা। কিন্তু কেউ উত্তর দেয় না। তারপর আসিফ প্রশ্ন করেন, "কে তুমি? আমি এখানে কেন?" পিছনে যে দাঁড়িয়ে ছিল সে বলে, "আমি? কে আমি? আসলেই তো, কে আমি?" হঠাৎ হা হা করে পাগলের মত অট্টহাসি দিয়ে ওঠে সে। সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে ওঠে আসিফের।

- "তুমি কি চাও? আমার অনেক টাকা, কত লাগবে তোমার?" - "টাকা? টাকা দিয়ে আমি কি করব? কি করব?" আবার হা হা করে কলজে কাঁপানো হাসি দেয় লোকটা। - "তাহলে তুমি কি চাও?" এবার লোকটা একটা টেবিল টেনে টেনে আসিফের পায়ের সামনে নিয়ে এল। আসিফ লোকটির চেহারা দেখলেন। কই, কোন পাগলামির ছাপ তো চেহারায় নেই! লোকটি টেবিলে কি যেন করতে লাগল। আসিফ চোখের কোণ দিয়ে দেখলেন, টেবিলে রাখা আছে একটা নেলকাটার, একটা হাতুড়ি, আর একটা পেরেক।

দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে একটা প্রার্থনা সেরে নিলেন আসিফ। ৪ - "কে তুমি?" - "আমি? আমি জাস্ট আপনার একজন ফ্যান। একজন পাঠক"। - "এই অবস্থায়ও অবাক হলেন আসিফ। পাঠক? তাহলে আমাকে এভাবে ধরে এনেছ কেন?" - "স্যার, আমি যে সাধারণ কোন পাঠক নই।

আমি যে অসাধারণ পাঠক"। - "মানে?" হঠাৎ স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলেন আসিফ। এ কি তাহলে তার কোন পাগল ফ্যান? প্রিয় লেখককে কাছে রাখার জন্যই ধরে এনেছে? - "তুমি আমার বই পড়েছ?" - "হ্যাঁ, পড়েছি। শুধু চোখ দিয়ে পড়িনি, অন্তর দিয়ে পড়েছি। সব আমার হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছি"।

- "মানে? তোমার কাছে কি আমার লেখা খুবই ভালো লেগেছে?" - "জি স্যার, খুবই ভালো লেগেছে"। - "তা আমাকে বেঁধে রেখেছ কেন? আর ওভাবে লাইট জ্বালালে আর নিভালেই বা কেন?" - "কেন স্যার, বললাম না, আপনার লেখা আমি হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছি?" - "মানে?" এবার লোকটা কোথা থেকে একটা চারকোণা জিনিস নিয়ে এল। আসিফ বুঝলেন, এটা একটা বই। - "এটা চিনতে পারছেন স্যার?" - "কি এটা?" - "আপনার বই। দি টর্চার"।

যৌবনে লেখা বইটার কথা মনে পড়ে যায় আসিফের। একটা মানুষকে কিডন্যাপ করে টর্চার করে মেরে ফেলার কাহিনী নিয়ে লেখা। - "চিনতে পেরেছেন?" - "হ্যাঁ...এটা দিয়ে কি হবে?" - "কি আর হবে? ওর চেয়ে আমি বরং কয়েকটা লাইন পড়ে শোনাই আপনাকে- হা ঈশ্বর! আমার হাত পা বাঁধা, মুখ বাঁধা। কিছুই নাড়াতে পারছি না। ... হঠাৎ জ্বলে উঠল বাল্ব, বিশাল বিশাল, মনে হচ্ছে যেন সুতীব্র আলো আমার চোখ দিয়ে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে...ছারখার হয়ে যাচ্ছে আমার অস্তিত্ব।

... হঠাৎ নিভে গেল আলো, আমি যেন দৃষ্টিহীন, কিছুই দেখতে পাচ্ছি না আমি, কিছুই না। ... - "মনে পড়ে?" আসিফ হঠাৎ যেন কয়েক বছর অতীতে ফিরে যান। এই লাইনগুলো তিনি অনেক যত্ন করে লিখেছিলেন... - "মনে পড়েছে না?" - "হ্যাঁ...তো কি হয়েছে?" - "আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি লেখক সাহেব, আপনার লেখা আমি হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছি। মানেটা বুঝলেন না? নাকি আমাকেই বলে দিতে হবে?" - "তুমি ঠিক কি বলতে চাও আমি বুঝতে পারছি না"। - "এখনও বুঝতে পারছেন না? আমি তো জানতাম লেখকদের কল্পনাশক্তি খুব উচ্চ মানের হয়"।

- "নাহ, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না"। এই সময় হঠাৎ আবার সেই চারটা বাল্ব জ্বলে উঠল। প্রচণ্ড আলোয় আবার চোখ বন্ধ করে ফেললেন আসিফ। - "চোখ খুলুন, লেখক"। - "তুমি কি পাগল? এসব কি করছ?" - "আমি পাগল? হঠাৎ আবার হা হা করে হেসে লোকটা বলল, তাহলে আপনি কি?" - "মানে?" - "মানে? আচ্ছা, আমি আরও কয়েকটা লাইন পড়ছি..." তীব্র আলো বারবার জ্বলছে নিভছে...আমি স্পষ্ট টের পাচ্ছি যে আমি অন্ধ হয়ে যাচ্ছি...আমার চোখ আর এত স্ট্রেন নিতে পারছে না...হা ঈশ্বর, তুমি আবার ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত এ-ই রেখেছিলে...? - "এসব লাইন কি আপনি লিখেছেন না? বলুন?" - "হ্যাঁ, আমি লিখেছি"; অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বলে ওঠেন আসিফ।

- "তাহলে এখন সেই ঘটনাটা ঘটলেই বা দোষ কি?" প্রচণ্ড আতঙ্কে যেন জমে যান আসিফ, হঠাৎই বুঝে ফেলেন সবকিছু। এই লোকটা আসলে একজন সাইকো। এমন এক ধরণের সাইকো, যে কি না গল্প উপন্যাসের ঘটনাকেই সত্যি সত্যি ঘটানোর চেষ্টা করে। ৫ - "আমি আর পারছি না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও"।

- "ছেড়ে দেব? কিন্তু আপনার দি টর্চারের ভিলেন তো নায়ককে ছেড়ে দেয় নি! নায়ক তো ঠিকই অন্ধ হয়ে গিয়েছিল!" - "প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও। আমার স্ত্রী রয়েছেন, ছেলেমেয়ে রয়েছে"। - "তাই নাকি? তাহলে বরং স্যার আপনাকে আরও কিছু লাইন পড়ে শোনাই, আমার মুখস্তই আছে, বইটার নাম দি মোস্ট রাইটিয়াস কিল"। -আমায় ছেড়ে দাও। আমার বউ আছে, ছেলে আছে।

-সবারই থাকে। চোরেরও থাকে, খুনিরও থাকে। -আমি মারা গেলে ওরাও না খেতে পেয়ে মারা যাবে। -তাই? তাহলে তো পৃথিবীতে বিধবা বা অনাথ বলে কিছু থাকত না। -প্লিজ!!! লেট মি লিভ!!! প্লিজ!!! -ফাক ইওর বুলশিট।

জাস্ট ফাক ইট। তারপরই একটা বুলেট বেরিয়ে এল ক্যাম্পবেলের পিস্তল থেকে... - "কি, মনে পড়ে?" - "হ্যাঁ, আমায় ছেড়ে দাও"। - "তাই? কিন্তু আপনার একটা ক্যারেক্টার তো ভিকটিমকে ছাড়ে নি, তার বুলেট তো ঠিকই ঝাঁঝরা করে দিয়েছে ভিকটিমের বুক"। - "প্লিজ, তুমি যা চাও আমি সব দেব, আমার অনেক টাকা, পাঁচটা বাড়ি...সব দিয়ে দেব তোমায়...কি চাও তুমি?" - "আমি তো এগুলো চাই না স্যার!" - "তাহলে তুমি কি চাও? কি চাও তুমি?" - "কি চাই? তাহলে আপনাকে আরও কিছু লাইন শোনাই, এটা হচ্ছে আপনার "ডেথ" উপন্যাসের লাইন"। আমি পেরেকটা ওর হাতের উপর রাখলাম।

ঠিক তালুর মাঝখানে। ও হয়তো বুঝতে পারল আমি কি করতে যাচ্ছি। হাতুড়িটা আরেক হাতে তুলে ধরলাম আমি। তারপর আলতো করে পেরেকটার মাথায় আঘাত করলাম। খুবই আলতো করে।

আস্তে আস্তে জোর বাড়ালাম আমি। আস্তে আস্তে। দেখলাম ওর মুখ লাল হয়ে আসছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করছে ও। আমি গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে পেরেকের মাথায় আঘাত করলাম।

কয়েক ফোঁটা রক্ত ছিটকে এসে আমার মুখে লাগল। ... - "মনে পড়ে?" - "মনে পড়ে...অবশ্যই মনে পড়ে"...যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বললেন আসিফ। - "কত সুন্দর লাইন...কত্ত সুন্দর"...বলতে বলতে লোকটা এসে আসিফের বাম হাত ধরল। আসিফ প্রচণ্ড আতঙ্কে চমকে উঠলেন। ভাবলেন, সে কি সত্যিই এমন করবে?... - "আপনি কি ভাবছেন আমি জানি"।

- "কি ভাবছি?" - "আপনি ভাবছেন...এটা"; মাংশ ভেদ করার একটা জোরালো শব্দ পাওয়া গেল সেই মুহূর্তে। যন্ত্রণায় চিৎকার করে জ্ঞান হারালেন আসিফ। ৬ যখন আসিফের জ্ঞান ফিরল, তখন তার বাম হাতে অসহ্য যন্ত্রণা। চোখ খুলে পিটপিট করলেন আসিফ। ঘোলাটে অন্ধকার।

বাম হাতে চটচটে জমে যাওয়া কিছু অনুভব করলেন তিনি। মুহূর্তেই বুঝলেন, রক্ত। অসহ্য যন্ত্রণায় একটা চিৎকার দিয়ে উঠলেন তিনি। "কোথায় তুমি? কোথায়?" লোকটাকে চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন তিনি। ছাদের বাল্বটা জ্বলে উঠল।

আসিফ দেখলেন, ঘরে কেউ নেই। সেই টেবিলটা তার পায়ের কাছে রাখা। আবার পা ঘষটানোর শব্দ পেলেন তিনি। সেই একই রকম শব্দ। "কোথায় তুমি? সামনে এস"; চিৎকার করে ডাকলেন আসিফ।

ঘাড়ে সেই নিঃশ্বাস আবারও অনুভব করলেন তিনি। শিরদাঁড়া বেয়ে আবার বেয়ে গেল ভয়ের শীতল স্রোত। লোকটা তার বাম পাশে এসে দাঁড়াল। - "হ্যালো, স্যার"। - "আমাকে যেতে দাও!" কেঁদে ফেললেন আসিফ।

- "যেতে দেব? তা যান না, বাঁধা দিচ্ছে কে?" ব্যঙ্গের হাসি হেসে লোকটা বলল। আসিফ হাত পা নাড়াচাড়া করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু খুব সূক্ষ্ম তার দিয়ে বাঁধা রয়েছে দুটোই। যদি বেশি টানাটানি করেন তো হাত পা কেটে তার বসে যাবে। তবুও আসিফ টানাটানি করতে লাগলেন।

এবং আস্তে আস্তে তার হাত পা গভীর থেকে গভীরভাবে কেটে যেতে লাগলো। লোকটি এগিয়ে এল। "স্যার, আমার স্মরণশক্তি খুব একটা খারাপ না। আপনার আরও কয়েকটা লাইন বলি?" - "বাস্টার্ড!!..." যতই টানাটানি করছি, আমার হাতে বাঁধা মেটালের তারটার চাপ আস্তে আস্তে বাড়ছে। কি করব আমি? নড়াচড়া না করে চুপচাপ বসে থাকবো? নাকি নড়াচড়া বেশি বেশি করে হাতটাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলব, যাতে আমি এই নরক থেকে পালাতে পারি?... - "স্টপ ইট!! স্টপ ইট ইউ বাস্টার্ড!" - "রাগ হচ্ছেন কেন, স্যার? এগুলো তো আপনারই লাইন।

উপন্যাসের নাম, স রিলোডেড"। - "আই ডোন্ট কেয়ার...প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও...তোমার যা লাগে আমি দেব..." - "এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেব স্যার? তাহলে এগুলো কি জন্যে রেডি করলাম?" লোকটা আসিফের চুল ধরে মাথাটা ঘুরিয়ে দিল। মেঝেতে একটা খাঁচার ভিতর বিশাল একটা ইঁদুর রাখা। ক্রমাগত শব্দ করছে সে। - "ওটা...ওটা দিয়ে কি করবে তুমি?..." - "কি করব? সেটা বরং আপনার লেখা থেকেই শোনা যাক"।

মীরজাফর কিহার পেটের উপর আমি ইঁদুরটাকে রেখে একটা বড় হাড়ি দিয়ে ঢেকে দিলাম। তারপর হাড়ির সাথে যুক্ত একটা ইলেকট্রিক হিটার চালু করে দিলাম। অন্যরা জিজ্ঞেস করল, এরপর কি হবে? আমি বললাম, এই হাড়িটা যখন গরম হয়ে যাবে, ইঁদুরটা এর ভিতর ছোটাছুটি করতে থাকবে। আস্তে আস্তে এটা আরও গরম হবে। যখন ইঁদুরটার আর সহ্য করার ক্ষমতা থাকবে না, তখন সে একমাত্র পালাবার পথ বেছে নেবে।

কি সেটা? প্রশ্ন করে একজন। সেটা হল, কিহার নাভি। হঠাৎ হা হা করে হেসে উঠি আমি। অন্যরা কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। ... আবার সীমাহীন আতঙ্ক গ্রাস করে আসিফকে।

এই পাগলটা ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছে না। বরং সে ইতোমধ্যে কিছুটা করেও দেখিয়েছে। (পরবর্তী পর্বে সমাপ্য) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪১ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।