আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মঙ্গল গ্রহের চিঠি

এখন আমি আছি মঙ্গল গ্রহে। আমাদের বিচার একটু দেরী হবে। যে হারে পৃথিবীতে মানুষ মরছে, পরপারে মামলা জট লাগবার জোগাড়। তাই নিয়ম করা হয়েছে, স্বাভাবিক মৃত্যু আগে এরপর অস্বাভাবিক মৃত্যু। আমার যেহেতু আত্মহত্যা, অস্বাভাবিক মৃত্যু, তাই পরে বিচার হবে।

ততদিন স্বর্গ নরকের কোনটাই দেয়া যাচ্ছে না। আপাতত তাই মঙ্গল গ্রহে পাঠানো হয়েছে, ট্রানজিট বা ওয়েটিং রুম টাইপ ব্যবস্থা আর কি। এতদিন মান্ধাতা আমলের কাগজে কলমে লেজার খাতায় বিচার কাজ চলছিল। স্টিভ জবস আসবার পরে একটু পরিস্থিতি পাল্টেছে। সব এখন ডিজিটাইজড, পাপ পুন্যের হিসাব ও এখন ডিজিটাইজড ভাবে আসছে পৃথিবী থেকে।

রেকর্ড রাখা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। পুরনোদের হিসাব ও ধীরে ধীরে ডিজিটাইজড করে ফেলা হচ্ছে। সেজন্যেই একটু জট লেগেছে। অ্যাকসিডেন্ট, খুন আর আত্মহত্যা এসবে এখন হাত দেয়া হচ্ছে না। আসলে আমরা ছোট খাট একটা আন্দোলন করেছিলাম।

আমরা তো আমাদের পুরো জীবন শেষ করতে পারি নি। তাই আমাদের জন্য ‘ডাকওয়ার্থ লুইস’ টাইপের কোন ব্যাবস্থা দিতে হবে। সবাই তো পুন্য করে পরের দিকের জীবনে, যখন আর কেউ ঘুস দেয় না, কিংবা রেপ করবার সামর্থ থাকে না। আমরা তো সেই জীবন পাই নি। ফলে পুন্য করবার পূর্ণ সুযোগ থেকে আমদের বঞ্চিত করা হয়েছে।

অনেক আন্দোলন, মানব বন্ধন, মিছিল মিটিং শেষে ‘পুনর্বিবেচনা’ র আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আমাদের বিচার আপাতত হচ্ছে না। মঙ্গল গ্রহে থাকতে দেয়া হয়েছে। যত সুইসাইড, খুন, অ্যাকসিডেন্ট এখানে থাকবে। এই ব্যবস্থা আমি আসবার পূর্বেই ঠিক হয়েছে।

তাই আমাকে আন্দোলন ও করতে হয় নি, মরবার পরে সরাসরি এখানে। বিচার আমার ও হয় নি। তবে ইদানীং নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, ইরাক আর আফগানিস্তানের জন্য। ওখানকার বোমা হামলার মৃত্যু গুলোকে এখন স্বাভাবিক ধরা হচ্ছে। কারণ তাঁরা তো জানেই বাইরে বেরোলে মরতে পারে।

তাই আজকের দিনটিই শেষ ধরে ওদের চলতে হবে। যদিও ওরা আন্দলনের হুমকি দিচ্ছে, কিন্তু ঠিক জুতসই আন্দোলন করতে পারছে না। সিয়া সুন্নী বিভেদ। কে হবে নেতা, এই সমস্যাই মিটছে না। আমার সময় খারাপ কাটছে না।

সেদিন সাগর রুনির সঙ্গে দেখা হল। জানালাম কেস এর সর্বশেষ অবস্থা। তদন্ত চলছে। আপনাদের লাশ কবর থেকে আবার তোলা হয়েছিল। আপনাদের মারবার আগে কোন চেতনা নাশক ঔষধ দেয়া হয়েছিল কি না দেখার জন্য।

ডিএনএ টেস্ট করার জন্য আমেরিকা পাঠানো হয়েছিল, রিপোর্ট ও চলে এসেছে। আপনাদের সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। সেদিন র‍্যাব অফিসে নিয়ে গিয়েছিল। এখনো কোন সুরাহা হয় নি। শুনে শুধু ম্লান হাসলেন।

কষ্টে নাকি হতাশায় বুঝলাম না। এসব নিয়মতান্ত্রিক কাজ করে যে সময়ক্ষেপণ করা হবে এসব তো জানা কথা। সেদিন দেবদাসের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। উনাকে নিয়ে আরেক ঝামেলা দেখা দিয়েছিল। তাঁর মৃত্যু সুইসাইড না টিউবারকুলোসিস এ তা নিয়ে বাঁধল বিশাল ঝামেলা।

মদ খেয়ে লিভার সিরোসিস হয়েছিল কি না, পোস্ট মরটেম তো করা হয় নি। তাই নিশ্চিত ভাবে যেহেতু বলা যাচ্ছে না মৃত্যুর কারণ টিবি না লিভার সিরোসিস তাই তাঁকে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দেয়া হয়, তাঁর মৃত্যুকে সুইসাইড ডিক্লেয়ার করা হল। ইচ্ছাকৃত ভাবে মদ খেয়ে লিভার সিরোসিস করবার জন্য। সক্রেটিস, গ্যালিলিও উনারা যথারীতি এখানেও আতলামি শুরু করেছেন। প্রচুর ছাত্রও জুটে গেছে।

দারুণ জনপ্রিয় এখানে। মাঝে মাঝে যাই। ভ্যাটিক্যানের ক্ষমা চাওয়ার দিন সবাই উৎসব করতে চেয়েছিল, উনারা রাজী হন নি, শুধু বললেন ‘বেটার লেট দেন নেভার’। ক্ষমা করে দিয়েছেন। মহৎ মানুষ তো।

মালালা র জন্য তোরণ বানিয়ে একদম তৈরি ছিলাম। যে কোন দিন আসতে পারে। কিন্তু হল না। সুন্দর অপারেশান হল, খুব ভালো রিকভারী। সেরে ওঠা দেখে সেদিন তোরণ ভেঙ্গে ফেলা হল।

ওদিকে ওসামা বিন লাদেন বেচারাকে দেখে মায়া লাগে। একা একা ঘুরে বেড়ায়। কেউ আবার টিপ্পনী কাটে, ‘আর নাচবি আমেরিকার কথায়?’ কেউ বলে ‘জানিসা না আমেরিকা যার বন্ধু তাঁর শত্রুর দরকার হয় না’ রাশিয়ানরা হাসে, ‘একেই বলে সাম্রাজ্যবাদ, যতদিন তোমাকে দরকার ছিল, আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য, ততদিন তুমি ছিলে স্বাধীনতাকামী, আর এখন হয়েছ সন্ত্রাসী। ’ মুক্তিযোদ্ধারা ভালই আছেন। আত্মীয় স্বজনদের জন্য মাঝে মাঝে মন খারাপ করেন।

কেউ ছোট বাচ্চা রেখে জদ্ধে গিয়েছিলেন, কেউ নববিবাহিতা স্ত্রী কে রেখে। কেউ ছিলেন বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে বা মেয়ে। উনাদের নাম সহ প্রকৃত সংখ্যা সংরক্ষণ কিংবা সম্পূর্ণ ডাটা রাখা হয় নি দেখে একটু মন খারাপ। দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আক্ষেপ করেন। চুরি, দুর্নীতি সন্ত্রাস দেখে বলেন, ‘এই জন্যই কি যুদ্ধ করেছিলাম?’ কিছু বলতে পারি না।

তারপরও মাঝে মাঝে যাই। কিছু উন্নতির কথা বলি। জিডিপি বাড়ছে, গার্মেন্টস সেক্টরের উন্নতি, ফার্মা শিল্পে উন্নতি কিংবা রেমিটেন্স বৃদ্ধি। আমাদের বোধহয় এখান থেকে সরে যেতে হবে। ‘কিউরিওসিটি’ আসবার দিন সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়, ঐদিকে যেন কেউ না যায়।

এলাকার সার্ভে চলছে, সোনা রুপা কিংবা তেল পাওয়া গেলে নাসা যে কি করবে? তাঁর ওপর আছে জমি দখলের ভয়। ২০১৫ তে তো মানুষ সহ আসবার চেষ্টা করবে। যদি অক্সিজেন আর পানি পাওয়া যায় তবে তো আর রক্ষা নাই, আবার সেই কলম্বাস এপিসোড। ঠিক করেছি কালকে চিঠিটা কিউরিওসিটি এর ক্যামেরার সামনে রেখে আসবো। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।