আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরুঞ্চিনামা – বরিশাল

You can do anything, but not everything. বুয়েট এবং রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই – সুত্র মানিয়া যখন ১৪ তারিখের দিকে যখন পরীক্ষা পিছানোর গুজব শোনা গেল তখন এক ফ্রেন্ডের ওয়ালে দেখিলাম ৩-৪ জন মিলিয়া ঘুড়িতে যাইবার প্ল্যান – প্রোগ্রাম করিতেছে। মাত্র ১০ মিনিটের বেবধানে সিদ্ধান্ত হইল উহারা লঞ্চ ভ্রমণে যাইবে। আমি নিতান্ত ঘরকুনো মানুষ হইলেও মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছাটা চাড়া দিয়া উঠে। তাই পোস্টের নীচে ছোট্ট কইরা কমেন্ট করিয়া বসিলাম, “আমারে নিবা মাঝি লগে?” বন্ধুরা রাজি হইয়া বলিল, “ পাত্তি লইয়া কাইল সন্ধায় ক্যাম্পাসে আইসা পরিস; একলগে জামুগা। “ পরদিন ১৫ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টায় ক্যাম্পাস থেইকা ৪ ঘুরুঞ্চি রওনা দিলাম; প্রথমে রিকশা পরে বাসে কইরা সদরঘাট।

লঞ্চের টাইমটেবিল, হিসাব নিকাশ কেউ কিছুই জানি না। সদরঘাট আইসা দেখি ডাকাডাকি চলতেসে। দোয়া দরুদ পইরা দাঁড়াইলাম পারাবত লঞ্চের সামনে। চেহারা দেইখাই ব্যাটারা বুইঝা গেল, পাইসি কতগুলা মক্কু; এই চান্স মিস করা ঠিক হইব না। আমাদের বুঝাইল, লঞ্চে সিট শেষ; তবে আমরা চাইলে একটা কেবিন আছে; সেইখানে নাকি “বিশাল(!!!!)” জায়গা; বালিশ,লেপ,কম্বল সবই আছে; দাম মাত্র ২,০০০ টাকা।

আমি তো বিশাল চিন্তায় পইরা গেলাম; এইরকম ৫ স্টার কক্ষ এত সস্তায় ছাড়িতেসে কেন? বন্ধুরা বিশাল খুশি হইয়া আর কিছুক্ষন মুলামুলি করিয়া ১৪০০ টাকায় দফারফা করিয়া ফেলিল। টাকা জমা দিয়া মহানন্দে গেলাম রুম দেখতে !!!! দেইখা তো মাথায় হাত ; একি !!!! একখানা মুরগীর খোয়াড় সাইজের রুমকে উপর নিচ “দুইতালা (!!!!)” ভাগ করিয়া ভাড়া দেওয়া হইয়াছে !!!! পরে জানিতে পারিলাম, উহা স্টাফ কেবিন; উহারা নিজেরা না থাকিয়া যে যত টাকায় পারে ভাড়া দেয়। লঞ্চ ছাড়িল রাত ৯ টার দিকে। আকাশে চাঁদ তো দুরের কথা, তারাও ছিল না। অন্ধকারেই বেশ কিছুক্ষন ফটোসেশন চালাইলাম (শত হইলেও ভ্রমনের মুল উদ্দেশ্যের একটা তো ছিল প্রোফাইল পিকের মানোন্নয়ন !!!! ) যাই হোক, বাকিটা সময় ডেকে গল্প; পুরো লঞ্চে দৌড়াদৌড়ি করে উহার আকার আকৃতি সমন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ এবং কার্ড খেলিয়া পার করিয়া দিলাম।

ভোর রাত ৪ টা নাগাদ লঞ্চ বরিশাল ভিড়ল। ডেকে সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলাম। ধীরে ধীরে সূর্য উঠিল এবং আমরাও আরেকদফা ফটোসেশন সমাপ্ত করিলাম !!!! লঞ্চ হইতে নামিয়া কাছেই এক দোকানে গো-গ্রাস গিলিয়া চা পান করিয়া বাইর হইলাম শহর দেখার নিমিত্তে। বরিশাল বেশ ছোট শহর; সদর এলাকা দেখতে মাত্র ১-১.৫ ঘন্টা হইলেই চলে। দেখা শেষ করিয়া গেলাম নতুল্লাহ বাস স্ট্যান্ডে।

সেইখানে থেকে যাব প্রধান দুই আকর্ষণ এবং প্রায় একমাত্র আকর্ষণ দুরগাসাগর আর গুঠিয়া মসজিদ দেখতে। ২০ টাকা কইরা টিকেট কাইটা বাসে চাইপা বসলাম। একটা দিক ভাল লাগলো বাসগুলা একদম সময়মত ছাড়ে। বাসে কইরা প্রথমে গেলাম গুঠিয়া মসজিদে। অনেকেই শুনেছি শুধু এই মসজিদ দেখার জন্যই নাকি বরিশাল আসে; কেন সেইটা সাথে সাথেই বুঝলাম।

এইরকম সুন্দর মসজিদ দেখার জন্য বরিশাল আসার ব্যাপারটা আসে । খুব অনায়াসেই মসজিদটাকে সিঙ্গাপুর মালয়শিয়ার বইলা চালাইয়া দেওয়া যায়; এইরকম সুন্দর। সরল অঙ্কের সরল হিসাব মতই এইখানেও চলল ধুন্ধুমার ফটোসেশন; কারো কাছেই ক্যামেরা নাই; তাই মোবাইলই ভরসা। বাকি তিনজনের মোবাইল পাতে তোলা গেলেও আমারটা ছবি তুলতেই অক্ষম; হিসাবমতেই বেশিরভাগ ছবিতেই শুধু আমার চেহারা । মসজিদ দেখা শেষে চললাম দুর্গাসাগর দেখতে।

জায়গাটা যথেষ্ট সুন্দর; তবে আহামরি কিছু না। কিছুক্ষন কাটাইয়া চইলা আসতে পারেন। শহরে যানজট খুব কম হওয়ায় এবং শুক্রবার হওয়ায় রাস্তা একদম ফাকা। দুইটা জায়গা দেখা শেষ কইরা খুব দ্রুত আবার নতুল্লাহ বাস স্ট্যান্ড ফিরে আসলাম। সেখান থেকে বরিশাল মেডিক্যাল।

খাওয়া দাওয়া এবং জুমার নামাজ শেষ করলাম আশেপাশের এলাকায়। এরপর শুরু হইল হা হুতাশ !!! লঞ্চ ছাড়বে সেই রাতে; এতক্ষন কি করমু?!!!! ঠিক হইল নিজেদের মধ্যে পেটুক কেউ নাই বইলা বিখ্যাত কিছু না খাইয়া চইলা যাব – এত বড় অন্যায় তো কিছুতেই মানিয়া লউয়া যায় না। খুজিয়া পাতিয়া সিদ্ধান্ত হইল; সদরের কাছেই “শশী মিষ্টান্ন ভান্ডার” নাকি বেশ বিখ্যাত; উহাতে স্পঞ্জ খাইতে হইবে। নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করিয়া এই রাস্তা সেই রাস্তা ভুল ভাল ঘুরিয়া ৩০ মিনিটের রাস্তা প্রায় ১.৫০ ঘন্টা লাগাইয়া দোকান খুজিয়া পাইলাম; সেই সাথে মিষ্টি ভক্ষন। বলাই বাহুল্য; বেশ ভাল ছিল মিষ্টিটা।

অতঃপর ফিরিবার পর্ব। এইকালে বলিয়া রাখা ভাল, পূর্বে যতই “মুরগীর খোয়াড়” কেবিনকে অবজ্ঞা করিয়াছি; লঞ্চে যাইবার ক্ষেত্রে উহা বেশ কার্যকরী। ব্যাখ্যা করিতেছি। লঞ্চে আপনার যাইবার ৩টি উপায় আছে;এক ডেকে – সকলের সাথে যুদ্ধ করিয়া জায়গা দখল করিয়া; সস্তা; তবে একবার জায়গা হারাইলে শেষ; রাত্রি জাপনের জায়গা পাওয়া মুশকিল। দুই কেবিনে – খরচ পড়বে ভাল; পরিবেশ ভাল, টিভিও আছে ( ); তবে ডাবল কেবিনে দুইটা খুব সরু বিছানা; বেশি বন্ধু বান্ধব লইয়া উঠিলে বিপদ।

আর তিন – স্টাফ কেবিন। ঠিকমত দরাদরি করিয়া ভাল টাকায় পাইলে বেশ ভাল বন্দোবস্ত। এইবেলা কিছুটা বুদ্ধি খরচ করিয়া ১০০০ টাকায় ঠিক করিয়া ফেলিলাম। তবে ভয় পাবার কোন কারণ নাই; এইবেলাও শেষমেশ যে জিতিতে পারি নাই; ঠকিয়া আসিয়াছি- তাহা বলাই বাহুল্য। কেন, কি কারণ – তার বৃত্তান্ত নাহয় নিজেরাই উদ্ঘাটনের চেষ্টা করিবেন।

আরে একটু আধটু মারা না খাইয়া আসিলে বন্ধুবান্ধবদের কাছে বিশাল গল্প ফাদিবেন কিভাবে? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.