আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশরাফুল, স্পট ফিক্সিং ও বিপিএলনামা...

আশরাফুল ও তাঁর স্পট ফিক্সিং কেলেংকারি নিয়ে চারদিকে আলোচনার ঝড় বইছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা যাকে মাঠের বাইরে সহজ-সরল প্রকৃতির আর মাঠের ভেতরে প্রাণবন্ত (ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিং-এ) হিসেবেই জানে। কিন্তু এই গোবেচারা প্রকৃতির ক্রিকেটারটি কী করে এমন কাজ করতে পারেন; সত্যি-ই ভেবে পাই না। আশরাফুলের একজন ভক্ত হিসেবে বিষয়টি আমাকে আরও বেশি হতবাক করেছে। এমন বোমা ফাটানোর পর অনেক প্রশ্নই ঘুরে-ফিরে আসছে।

হোমরা-চোমরা, রাঘব-বোয়ালদের নামও একটু আধটু শোনা যাচ্ছে। সবার অজান্তে বাংলাদেশের ক্রিকেটে কত কী ঘটে গেলো, অথচ কেউ টের পেলো না। আশরাফুলের স্পট ফিক্সিং এর পেছেনে যে বহু ইন্ধনদাতা ও প্রতিকূল পরিস্থিতি ছিলো, তা মোটামুটি নিশ্চিত। যদিও চুরি করার পর চোর-ই ধরা পড়ে ও শাস্তি পায়, তার গুরু নয়। কিংবা সে কী পরিস্থিতিতে চুরি করেছে, তাও বিবেচ্য নয়।

যেখানে এতো সহজে এতো টাকার হাতছানি, সেখানে খুব কম মানুষই তা ফিরিয়ে দিতে পারে। সবাই এই ঘটনার পর হয়তো নিষ্পাপ সাধুবাবা হয়ে বলবেন, টাকাই কী সব! সামান্য কয়টা টাকার মায়া ত্যাগ করতে পারলো না! আমি বলবো, ভাইজান, আপনি যদি এই বঙ্গদেশের সন্তান ( মুষ্টিমেয় দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া) হয়ে থাকেন, তবে নিভৃতে একবার নিজের বুকে হাত দিয়ে এই সাধুতা যাচাই করে নিবেন। টাকার লোভ প্রতিটা মানুষেরই আছে। যদিও ‘লোকে কী বলবে’-এই বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রকাশিত হয় না। আশরাফুলের ক্ষেত্রে যা হয়েছে তা অনেকটা-ই অনুমেয়।

তদন্ত রিপোর্ট যদি ঠিকঠাক মতো প্রকাশিত হয়, তাহলে আরও অনে কিছু-ই জানা যাবে। আমি মনে করি এটা করে আশরাফুল যতটা না অপরাধী, তার চেয়ে অনেক বেশি অপরাধী সেই সব কুলাঙ্গাররা যারা নিজেরা এটা অত্যন্ত চতুরতার সাথে করেছে এবং সেই সাথে অন্যদেরকে এ কাজে প্ররোচিত করেছে। একজন জুনিয়র প্লেয়ার কখনোই এতো বড়ো বিষয়ের সাথে পরিচিত হতো না, যদি না তাকে এর সাথে পরিচয় ও এর স্বাদ সম্পর্কে অবহিত করা হতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়তো বড়ো শাস্তিটা আশরাফুলকেই পেতে হবে। অন্যরা তাদের শক্ত অবস্থানের কারণে সহজেই পার পেয়ে যাবেন।

আশরাফুল কারো কারো নাম প্রকাশ করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। হয়তোবা অগোচরে আশরাফুলকে হুমকিও দিচ্ছেন তাদের মর্যাদায় খানিকটা টান দিয়েছেন বলে। যখন বিপিএল শুরু হয়, তখনই সেখানে টাকার ছড়াছড়ি শুরু হলো। প্রথম আসর কোনোরকমে শেষ করতে পারলেও দলগুলো ঠিকমতো খেলোয়াড়দের টাকা পরিশোধ করেনি। যা বাংলাোদেশের ক্রিকেটের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা।

দলগুলো যেখানে নিজেদের বিনিয়োগকৃত টাকা উঠাতে পারছে না, সেখানে তারা অসদুপায় অবলম্বন করবে এটাই স্বাভাবিক। নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন সেখানে তুচ্ছ। যে খেলায় এমন টাকার ছড়াছড়ি সেটা আর খেলা থাকে কই? ফ্রাঞ্চাইজিগুলোও এটাকে খেলা হিসেবে না নিয়ে ব্যবসার উপাদান হিসেবে নিয়েছে। এই বিষয়টি বুঝতেই আমাদের এতোদিন লাগলো। জাতিতে যে আমরা 'কুম্ভকর্ণ' প্রকৃতির, তা আরও একবার প্রমাণিত।

ঘটনা ঘটলেও আমরা টের পাই না, যদি না তার প্রতিক্রিয়াটা তিক্ত হয়। আমাদের মতো দেশে প্রতিবছর এতো বড়ো বাজেটের একটা আয়োজন কতটা যৌক্তিক, তা হয়তো ভেবে দেখার সময় এসেছে। খেলাটাকে টানটান উত্তেজনা আর বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে থাকবে নাকি জুয়াড়িদের উপজীব্য হবে তা নীতি-নির্ধারকরাই ভালো জানবেন। আমরা ক্রিকেটপ্রেমীরা দেশ ও দেশের ক্রিকেটের মঙ্গলটাই দেখতে চাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।