আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জোড়া খুনের প্রতিক্রিয়া

উন্নত স্তনের বিকল্প হতে পারে শুধুই উন্নততর স্তন। কিন্তু এ তো মার্ডার ! জোড়া খুন !‍ তারপরও স্যালুট। মেয়ের সাহস আছে বটে ! গ্লামার-বাজার-শিহরন সব একদানে খচাৎ ! দিন গড়ালে রাতে যার সঙ্গে বিছানা ভাগাভাগি করতে হয় সেই ব্যক্তিটিও তার রমনী সাহসিকার কম্মোটিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন ‌'হিরোইক' শব্দের বন্ধনীতে। শব্দটা অবশ্য 'সেক্সি'র উল্টো। অনেকটা ঘরের হিরোইনকে ‌‌'হিরোইকে'র মায়াজালে বেঁধে চৌকাঠ পেরিয়ে অন্য মেয়েদের সঙ্গে লটঘট বাঁধানোর মতো ! কিন্তু জনান্তিকে একটা প্রশ্নও উঠছে মাথাচাড়া দিয়ে-'অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সামনের ‌'নিন্দে' দুটির অপসারন নিয়ে সত্যিই কেন এত উত্তাল মিডিয়াকুল ?' আসলে অ্যাঞ্জেলিনার স্তন তার নিজের নয়,গণ্উৎসাহের কেন্দ্র বলেই কি বিশ্বের তাবৎ আদমসুরতদের অধিকার সেই সুষম জোড়া সৌন্দর্য্যের ওপর ? তাই এত হতাশা,যেন কেটে ফেললো,ইসস তার আগে একবার বললো না ! পুরুষকুলের ইগোয় তাই বিরাশি সিক্কার ঢিসুম! যে, দ্যাখ শালা, এই বুকের জন্যে চোখের ডাক্তার দেখাস, বুক দিয়ে আমায মেপে নিস,যাহ ! সব ডিলিট! আমি আমাকে নির্ধারন করব,তোরা না।

আমি কিন্তু ওইসব নির্ধারকের দলে ছিলাম না। 'নিন্দে'র কোরবানির পরদিন কাঁচুমাঁচু মুখ করে এক বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম-‌'আচ্ছা নারীত্ব কি বুকের সাইজে থাকে ?' তামাম নারীকুলের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বান্ধবীটির সকৌতুক জবাব-‌'না । নিতম্বের সাইজেও থাকে !' জবাব না পেয়ে অসহায়ের মতো শুধু মিনমিন করে আওড়াচ্ছিলাম-‌'নারীত্ব তাহলে কিসে থাকে?' আয়নায় বনলতা সেনের সঙ্গে টেক্কা দেয়ার যোগ্যতা রাখা বান্ধবীটি আমার দ্বিধাভ্রমে ডুবে মরার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল। তাই উদ্ধার করতে বললো-‌'নারীত্ব আসলে ব্রেনে,শিক্ষায়,ব্যবহারে,বুদ্ধিতে, কিংবা আচরনে থাকে। ' এইবার আমায় পায় কে ! কায়দা মতো পেয়ে বান্ধবীকে পেড়ে ফেলে একদমে বলে ফেললাম-‌' তাতে দুর্দান্ত মানবিক কাঠামো থাকতে পারে,কিন্তু নারীত্বকে সংজ্ঞায়িত করতে গেলে যুক্তির সঙ্গে বায়োলজিক্যাল আইটেমও পাঞ্চ করতে হয়।

নারীর বুদ্ধি দেখে তো আর যৌ্ন উত্তেজনা হয় না ? তাহলে তো চশমায় স্ক্যানার লাগাতে হতো ! হ্যাঁ নারী শুধুই যৌন অবজেক্ট নয়,কিন্তু আলবত যৌন অবজেক্ট। পুরুষও তাই। তুই যখন টম ক্রুজকে 'ডেডলি-ম্যানলি' বলে লাল ফেলিস,তখন তো তার শিক্ষা-বুদ্ধির খোঁজ নিসনা। ওগুলো সমন্ধে কিছু না জেনেই তুই ওর ফ্যান বাইসেপের,সিক্স-প্যাকের,সম্মোহনী চাউনির,কারন সে একজন যৌন অবজেক্ট। সেলুলয়েড ছাড়,আমরা কেউই পরষ্পরের দিকে পুর্ণ অযৌন তাকাতে পারিনা।

ঈশ্বর মাফ করুন,এমন জমানা যেন কোনদিন না আসে,যখন নারীর উপস্থিত বুদ্ধির সত্যায়িত মার্কশিট দেখে চুমু গজাবে !' -কিন্তু তাই গজানো উচিত ? এবার ক্ষেপে গেলাম। 'উচিত !!! তাহলে তো খেতে-পরতে মিনিমাম যা লাগে তার বাইরে মাইনের পুরো টাকাটা প্রত্যেক মাসে গরিবদের বিলিয়ে দেওয়া উচিত। কঙ্গোতে লাখে লাখে গলধর্ষন হচ্ছে জানা মাত্র সব ছেড়ে কঙ্গো গিয়ে প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত। এমনকী নিজের পায়খানা দেখেও ঘেন্না পাওয়া উচিত,যদিও গতকালই সে তোর আদরের কাচ্চি বিরিয়ানি ছিল। কিন্তু এই উচিতগুলো কি বাস্তবে অনুবাদ করা সম্ভব? একটা মেয়ের ভয়ঙ্কর সুন্দর ঠোঁট-বুক দেখে সাংঘাতিক উত্তেজিত হয়েও অপরাধবোধে ভুগলাম, আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা মাংশপেশীকে বকুনি দিয়ে সুড়সুড় করে আস্তানায় পাঠিয়ে দিলাম !!! বাস্তবে এমন হয়? নারীত্ব যদি শুধুই ব্রেনে থাকত, তা হলে এক জন পুরুষের নারীত্বের প্রেমে এক জন পুরুষের পুরুষত্ব ব্যাকুল, এ জিনিস হরদমই হচ্ছে না কেন? সমকামীরাই বা ব্রেন-প্রেমে পড়ে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে হেসেখেলে বিয়ে করছে না কেন? আসলে, নারীত্ব ব্রেনেও আছে, স্তনেও আছে।

তবে,আমাদের জাত বলবে, স্তনের দিকে কিছুটা হেলে আছে। ' -কিন্তু জোলি তো উদাহারন সৃষ্টি করলো। সে বলছে,দেখ আমি যে স্তনের রানী..ও দুটি ছাড়াও বাঁচতে জানি। সেই বেলা ? শেষ টোটকা হিসেবে বললাম-'কিন্তু খেয়াল রাখিস: এর পর থেকে ওর কোনও নতুন ছবি, স্টিল বা মুভি, তুই কক্ষনও দেখতে পারবি না, পুরনো স্তনগুলোর কথা মনে না-করে। ওকে যখনই দেখবি,তখনই মনের কুঠুরিতে ভৌতিক পেন্ডুলামের মতো, অতীত স্তন দুলবে।

বরং এত দিন যদি বা কেউ জোলিকে অন্য কিছু দিয়েও বিচার করত, কেউ নাভি দিয়ে কেউ বা ওর বিখ্যাত 'বালিশ ঠোঁট' দিয়ে, এ বার থেকে ওকে ডিফাইন করবে এই স্তনই, শুধুই স্তন, তাদের ‘না-থাকা’ দিয়ে। ' রণে ভঙ্গ দিয়ে আমার বান্ধবী বললো-'একটা অনুগল্প শুনবি ? বিধবা রতীমঞ্জরীর গল্প ?' জয়ের আতিশায্যে হেঁয়ালীর ছলে বললাম-‌'বল শুনি?' -স্বামী মারা যাওয়ার পর নিজের পুর্নবিবাহের জন্য কাগজে বিজ্ঞাপন দেয় রতি। আর তার পর তার মনে হয়, ‘সবাই বলছে দেবতাকে ডাকো, দেবতাকে জানো, দেবতাকে ভালোবাসো, দেবতাকে ঘরে আনো, দেবকাহিনী বলো আর শ্রবণ করো। অথচ কেউ মানুষকে ডাকতে বলছে না। যাকে তার দরকার...।

রতির সে বিজ্ঞাপনের উত্তরে আসেনি কোনও মানুষ, আসেনি দেবতাও,শুধু এসেছিল এক বিপত্নীক, নিজের আর তার বাচ্চাগুলির সেবাদাসীর খোঁজে। রতি তাকে অকপটে বলেছিল, ‘বিয়ে করে স্ত্রীকে দিয়ে আপনি কেবল সুলভ গণিকাবৃত্তিই করিয়েছেন। ’ তখন ব্যর্থ রতির মনে হয়েছিল, ‘তার গণিকাবৃত্তিই পৃথিবী চায়... তাই সে গণিকাই হবে। ’ ঈশান কোনে উড়ে চলা একটি শকুনকে তাক করে বান্ধবীকে বললাম-‌' এই সিদ্ধান্ত অভিমানের ফসল। আজকের দিনে গণিকা হওয়া বা নিজের শরীরকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করার নেপথ্যে অভিমান আর তত কাজ করে না, যতটা করে অধিকারবোধ।

নিজের শরীরের ওপর সেই অধিকারবোধ উদ্‌যাপন করার মতো। যে অধিকারবোধে লাস ভেগাসে বিবিধ ধারার পর্নো-ছবিতে রীতিমতো পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিজের অর্জিত শরীরকে ব্যবহার করেন সানি লিওনের মতো পর্নো-তারকারা। কিন্তু সেই অধিকারবোধ মিডিয়ায় যে বহুল চর্চিত হয় সেটা যত না তাকে সম্মান করে তার চেয়ে অনেক বেশি সেই চর্চায় আরও অনেক উঁকি-মারা মানুষের খিদে মেটে বলে। ক্ষমতার এও এক খেলা। সেলাম কাকে দেব, কোন সেলাম কতটা খাবে সেই বিচারের খেলা।

' জানিনা ঠিক বলেছি কিনা ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।