আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিকে (রম্য রচনা)

ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। প্রথম ক্লাস। পরিচিতি পর্ব। আমাদের এক সিনিয়ির রিএড নিচ্ছেন। নাম তার কামাল।

মাঝারি আকৃতির। চোখ গুলো অমরেশপুরীর চেয়ে বড়। মুখে ভ্রুণের দাগ। সে অন্য রকম প্রতিভা । আস্তে আস্তে টের পেলাম।

সে না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় লাইফটা অপূর্ন থাকত। প্রথমেই জানলাম তিনি বক্তৃতা চর্চা করেন যেহেতু নাম করা নেতা হতে হলে ভাল বক্তা হতে হবে। বিভিন্ন গাছের নিচে তিনি বক্তব্য দেন। কোন শ্রেতা নাই। এই কাজ তিনি একাই করেন।

এভাবেই চলছিল। আমরা অবাক হয়ে দেখতাম কামাল কোন গাছের তলায় দাড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছে কোন শ্রোতা নাই। তারপরও তার প্রচেষ্টা চলছে। একসময় তার ধারণা হল নেতা তিনি হতে পারবেন না। তার মধ্যে কবি প্রতিভা আছে।

প্রাণরসায়নে পড়া পপি নামের এক মেয়ের প্রেমে পড়লেন তিনি। আর সেই প্রেম থেকেই কবিতা লিখার হাতে খড়ি তিনি হলেন কবি। কামাল নামটা তার পছন্দ নয়। নাম পাল্টালেন। তার নতুন নাম প্রেম।

যেহেতু বলিউডের সালমান খানএর ফিল্মনাম প্রেম তাই। কিন্তু বন্ধুরা তাকে প্রেম নামে ডাকে না। ডাকে প্রেম কামাল। সংক্ষেপে পিকে। তার প্রিয় একটা টিশার্ট।

বড় বড় গোল ছিদ্রযুক্ত শরীরের সবটাই দেখা যায়। স্যার তাকে এই ড্রেস পরার শাস্তি হিসেবে ক্লাস থেকে বেড় করে দিলেন। এদিকে তার কবিতা চর্চা চলছে। কিন্তু প্রেমিকা তাকে ত্যাগ করলেন এই দুঃখে প্রেম কামালের চরম দূর্দশা। পড়ালেখায় ভালই ছিল সে।

আর সাহস দূর্দান্ত। হুমায়ূন আক্তার স্যার তাকে আমরা জমের মত ভয় পেতাম। মৌখিক পরীক্ষা হচ্ছে আমরা ভয়ে পাথর। সামনে বই। স্যারের চেহারা দেখলে আমরা পড়া ভুলে যাই।

আর কামাল নানা রকম দুষ্টুমি নিয়ে আছে। তাকে আমার অন্তত সেই সময়কার হিরু মনে হলো। প্রতি বছর আমাদের ফিল্ড কোর্সে যাওয়া লাগে। এমন এক ফিল্ড তবু সেই ফার্স্ট ইয়ারে ফিস্টের দিন সবার পারফর্ম করা সুযোগ হলো। কামাল পারফর্ম করলো ‍‌'আমার চেহারাতো খারাপ আমি ভিলেইনের ডায়ালগ দিব।

সুন্দর ডায়ালগ দিল হা হা হা আমার কাছ থেকে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না সুন্দরী আমি তোমাকে ধর্ষণ করব!উল্লেখ্য সেখানে যমসদৃশ হুমায়ূন আক্তার স্যার উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষক মন্ডলী আকাশ থেকে পড়লেন। আমরা ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। যাই হোক তার কবিতা চর্চায় ছেদ পড়ল। প্রেম নামটাও তার আর ভাল লাগে না।

তিনি রাহুল নাম ধারন করলেন আমরা তাকে প্রেম কামালই ডাকতাম। তিনি কবিতা বাদ দিয়ে অভিনয়ে ঝুকলেন। রৃপচর্চা করেন প্রতি সকালে জিম করেন্। মুখে নানা ধরনের খাদ্যখাবার মসলা মেখে সকাল বেলা শক্ত হয়ে বসে থাকেন। দুই চোখে শসা কাটা।

হরর সিনেমার ভুতের মতন গেট আপ নিয়ে বসে থাকা কোন পুরুষ আমার জীবনে দ্বিতীয়টি দেখিনি। বিবেক নামে তার একটি নাটক প্রচারিত হলো সেখানে তিনি ভিলেইন। সেই বছর ফিল্ডে আমরা রাঙামাটি গেলাম্ পুরো একদিন রাঙামাটি লেক এ ট্রলারে ঘুরেছিলাম। সাথে ছিলা শ্রদ্ধাভাজন প্রয়াত সামাদ স্যার্। সেই বড় ট্রলারের গলুইয়ে প্রেমকামাল টাইটানিক পোজ দিচ্ছিল দুহাত ছড়িয়ে।

পরের দিন ছিল ফিল্ড ভাইবা। কামাল ভালই উত্তর দিচ্ছিল। তখন সামাদ স্যার বললেন ভাইবা তো ভালই দিচ্ছ পড়ালেখা করনা কেন?এখানে উল্লেখ্য ভাইবা হচ্ছিল ফিল্ডে সেই ঘরটাই ফুটো ছিল বন্ধুরা সেই ফুটোতে কান দিয়ে সব শুনছিল কে কত মার্কস পেল ইত্যাদি। কামাল উত্তর দিল স্যার আমি কালচারালি বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত তাই পড়াশুনায় সময় দিতে পারি না। স্যার বলল মানে?সে বলল ...তার একটা নাটক টিভিতে প্রচারিত হয়েছে নাম বিবেক।

বলামাত্র সামাদ স্যার হুংকার দিয়ে উঠলেন বিবেক !গতকালকে নৌকার গলইয়ে বাদরের মত করছিলা কেন/ যদি পড়ে যেতা। তখন তোমার বিবেক কোথায় ছিল? প্রেমকামাল অনেক দুঃখ পেল। এই জন্য যে স্যার তার সংস্কৃতি চর্চাকে অপমান করলো তা্ই্ । ভাইবা রুম থেকে বেরুতেই রেজাল্ট জানা যাচ্ছে দরজার ফুটো দিয়ে কান পাতা বন্ধু মারফত। সে পিকে কে জানিয়ে দিল তাকে শূন্য নম্বর দেয়া হয়েছে।

একমাত্র শূন্য পাওয়া ছাত্র কামাল। মনের দুঃখে পিকে বনে গেল। বিধি বাম রাঙামাটি তখন অনুকূল পরিবেশ নয়। তাকে এলাকার লোকজন ধরে ক্যম্পে দিয়ে গেল। যেহেতু তখন বাঙালী অপহরণ মুক্তিপণ আদায় ছিল নিত্য দিনের ঘটনা।

মনের দু:খে বনে গিয়েও লাভ হল না। রাতে ড্রিংকস করে ব্যাসামাল। তার মত দুঃখী আর কেউ নেই। এরপর তার গায়ক হওয়ার সাধ হল্ তার। তুম দিল কি ধারকান মে রেহতে হ রেহতে হ।

এ গান তো নবীন বরনে মাস্ট আর গায়ক সেই বিখ্যাত প্রেম কামাল। হিন্দিবাংলা দুইভার্সন একসাথে গেয়ে তবেই বিরতি। পিকে গান শুনিয়ে মানুষদের যতটা বিরক্ত করতে পেরেছে পৃথিবীর কোন মানুষ এতটা বিরক্ত কাউকে করতে পারে নাই বলেই আমার বিশ্বাস। আয়োজক কমিটি তাকে গাইতে দিবে না্ আর সে গাইবেই বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তার গান গাওয়া। বন্ধুমানুষ পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে।

আফটার অল গান তার সাধনা। অথচ এই গাওয়াগান অনুষ্ঠানকে মাটি করার জন্য যথেষ্ট। যাই হোক সামাদ স্যার ক্লাসে ঢুকেই বলতেন কামাল তুমি আমার ক্লাসে কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। তোমার প্রশ্ন করা হয়না। সারের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে কামাল দাড়িয়ে যেত প্রশ্ন করতে!!পরে পিকে নিজের নাম দাবী করতেন ঋত্বিক আমরা সবাই তাকে ডাকতাম সিদ্দিক।

সিদ্দিক দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রঙ্গন মুখর রেখেছেন। আমাদের এক ব্যাচ আগে তার শুরু আর পাশ করেছেন দুই সেশন পরে। এজন্য না যে তিনি মেধাহীন । বরঞ্চ এই জন্য য়ে বিশ্ববিদ্যারয় লাইফ তিনি খুব এনজয় করেন। তাই যত বেশি থাকা যায় ততই মঙ্গল।

ব্যাপরোয়া পিকে একজন,শুধুমাত্র একজনের কথায় উঠতো বসতো। সে রোগা পাতলা আমাদের সহপাঠী মোক্তার। এটা বিশ্বের বিস্ময়। অন্তত আমাদের কাছে। পিকে আমাদের জীবনে যে আনন্দ আর বিস্ময় উপহার দিয়েছে তা ভোলার নয়।

উই অল স্যালুইট দা গ্রেইট পিকে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.