আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু

‘’সে একটি সমাজের ভেতরে বাস করে করবে এবং সমাজের দৃষ্টিভংগীকে সে গ্রহণ করবে। আমাদের সমাজধর্মে রমণীদের আঘাত করাটা দূষণীয় নয়, সে আঘাত শারীরিক অথবা মানসিক যাই হোক না কেন। আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি, রমণী সবচেয়ে বেশি আঘাত পায় যখন তাকে অবিশ্বাস করা হয়; এবং আমাদের সমাজধর্ম এই যে, রমণীই বিনা প্রমাণে অপরাধী ও বিশ্বাসঘাতিনী বলে সাব্যস্তকৃত। অতএব, মা হিসেবে আপনার কর্তব্য হবে এই প্রতিজ্ঞা করা যে, যদি কোনদিন মামুদ উজ্জ্যাল কোন যুবতীকে, অর্থাৎ তার প্রনয়িনী অথবা পত্নীকে অবিশ্বাস করে, আপনি পুত্রের পক্ষ অবলম্বন করবেন না, যা কিনা আমাদের রমণীদের স্বভাব, বরং আপনি কন্যার পক্ষ গ্রহণ করবেন ও পুত্রকে প্রমাণ উপস্থিত করতে বলবেন। ‘’ (সৈয়দ শামসুল হক -আয়না বিবির পালা) পত্র পত্রিকাতে প্রায়ই খবর আসে, যৌতুকের লোভে শ্বাশুরি বা ননদের হাতে খুন হয়েছে ঘরের বউ।

খবরগুলো দেখে অনেকেই মন্তব্য করেন, মেয়েদের শত্রু মেয়েরাই। কিন্তু আসলেই কি মেয়েরা মেয়েদের শত্রু? যে শাশুরি বা ননদ যৌতুকের লোভে অত্যাচারী হয়ে উঠছেন, তিনি কি আসলে পুরুষতন্ত্রেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন না? এ ঘটনাগুলোর নেপথ্যে কি এক (বা একাধিক) পুরুষই ইন্ধন যোগান নি? যুগ যুগ ধরে চলে আসা পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের ধারাবাহিকতাই কি নয় এই ঘটনাগুলো? নারীরা নিজেরাই চায় না মানুষের মত বেঁচে থাকার অধিকার। তার নিজের কোন অর্জন নেই। পুরুষ তাকে যতটুকু দিয়েছে, ঐটুকু পেয়েই সে মহাখুশি। তাকে কে বোঝাবে, এর চেয়েও বেশি পাবার অধিকার সে রাখে? সে যে নানা ভাবে বঞ্চিত সেই কথা মনে করিয়ে দিলে সে ক্ষেপে উঠে।

বঞ্চিত, নির্যাতিত নারীদের কথা প্রকাশের মাধ্যমে পুরুষতন্ত্রের দূর্বলতাগুলো বেড়িয়ে এলে যেন নারীরাই অখুশি হন বেশি। সামগ্রিকভাবে তারা ভাবতে শেখেন নি, বা তাদের সেভাবে ভাবতে শেখানো হয় নি। সব কিছু ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভেবে বসেন তারা। নির্যাতিত নারীদের কথা শুনে তারা বলে বসেন, কই, আমার বেলায় তো এমন হয় না, আমার স্বামী তো এমন নন, ইত্যাদি ইত্যাদি। নিজে তিনবেলা ভরপেট খেতে পেলে অনাহারীদের দুঃখ কষ্টের কথা কি সবার সামনে তুলে ধরা যাবে না? নিজে নির্যাতিত না হলে অন্য নির্যাতিত বা অধিকার বঞ্চিত মানুষের কষ্টের কথা কি একজন সচেতন মানুষ হিসেবে সমাজে বলা যাবে না? যদি বা কোন সচেতন ব্যক্তি তা প্রকাশ করেন, তখন তারা ছিদ্রান্বেষী হয়ে উঠেন নারীর খুঁত খুঁজে বের করার জন্য।

অথবা উদাহরণ টেনে আনেন কোন অসৎ নারীদের। অসৎ হবার জন্য কাউকে আলাদাভাবে নারী বা পুরুষ হতে হয় না। আর এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে দোষ না করেও যে নারীকে অপরাধের শাস্তি পেতে হয়, অপবাদ নিয়ে চলতে হয়, সে কথা তাদেরকে কে বোঝাবে? অবশ্য পুরুষদের মনোরঞ্জন করেই যারা আত্নতৃপ্তি পেয়ে থাকেন, তাদের কাছ থেকে এর বেশি আর কী আশা করা যায়? তারা তো নিজেদের নিজেকে দূর্বল ভাবার আর পুরুষের জন্য চিন্তাশক্তিবিহীন শরীর সর্বস্ব দাসী তৈরি হবার শিক্ষা ছাড়া আর কোন শিক্ষা পান নি। তাই তারা মানুষও হয়ে উঠেন নি। হুমায়ূন আজাদের ভাষায় তারা হলেন ‘’পুরুষতন্ত্রে দীক্ষিত নারী’’।

নারীর শত্রু কখনোই নারী নয়। নারীর স্বাতন্ত্রকে খর্ব করার জন্য দায়ী পুরষতন্ত্র। এই পুরুষতন্ত্রের নির্যাতনের শিকার কেবল নারীই নয়, অনেক পুরুষও। যারা বঞ্চিত ও নির্যাতিত নারীদের সমর্থন, শক্তি ও সাহস দিয়ে থাকেন, তাদেরকেও সইতে হয় পুরুষতন্ত্রের নোংরা আঘাত। আর এই পুরুষতন্ত্রের চেয়েও ভয়ংকর হলো ‘’পুরুষতন্ত্রে দীক্ষিত নারী’’।

এরা মানবতার শত্রু। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.