আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাকে কেন দুটি ছিদ্র?

লেখে শেষ করা যাবে না তাই বিশেষ কিছু লেখলাম না। ছোটবেলায় একটা বইতে পড়েছিলাম, বাম নাক যদি বন্ধ থাকে তাহলে যাত্রা করা শুভ। আর ডান নাক বন্ধ থাকলে অশুভ। তখন থেকে খেয়াল করেছিলাম দিনের কিছু সময় আমার ডান নাক বন্ধ থাকে আর বাকি সময়টা বাম নাক(সর্দি না লাগলেও)। পরে জানতে পারলাম এটা নাকি সবার ক্ষেত্রেই একই রকম।

বিশ্বাস না হলে টেস্ট করে দেখতে পারেন। তবে এটা নিয়ে পরবর্তীতে কোন রকম চিন্তা করিনি। ক্লাস টেন এ বই থেকে জানতে পারলাম, মানুষের দুইটি চোখ থাকার কারনে চোখের সামনে বস্তুগুলোর 3D অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আমাদের দুটি চোখের দেখা একরকম নয় একটু আলাদা। দুটি চোখ দিয়ে দেখার সময় দুটি আলাদা চিত্র এক করে দেখানো হয়।

এর ফলে আমারা বস্তুগুলোর দুরত্ব, আকার-আকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করি। এটি চাইলে আপনি নিজেই ব্যাপার টা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এজন্য, আপনার দুই চোখ খোলা রেখে নাক বরাবর, চোখ থেকে ফিট খানেক দূরে আঙ্গুল সোজা করে রাখুন। এবার পালাক্রমে একবার শুধু ডান চোখ নিয়ে দেখুন এবং বাম চোখ দিয়ে দেখুন। মনে হবে আপনার আঙ্গুলটা সরে যাচ্ছে।

এবং এটাও বোযহা যাবে দুই চোখে ভিশন এক রকম নয়। অর্থাৎ দুটি চোখ এমনি এমনি দেয়া হয় নি। এর কারন আছে। সেদিন এক পিচ্চি আমাকে প্রশ্ন করলো যে নাকের দুটি ফুটা কেন। তার প্রশ্ন শুনে আসলে আমি নিজেই চিন্তায় পড়ে গেলাম।

দুটি চোখ থাকার যেহেতু কোন কারন রয়েছে, নাকের দুটি ছিদ্র থাকাটারও একটা যুক্তিসঙ্গত কারন থাকতে পারে। খোজ করলাম, পেয়েও গেলাম। নাকের দুইটি আলাদা ছিদ্র কোন দৈব ব্যাপার নয়। এর পিছনে রয়েছে বিশাল চক্রান্ত। কারণ টা বোঝার জন্য আমাদের প্রথমে জানতে হবে আমরা কীভাবে ঘ্রাণ নিই, বা আমরা আলাদা আলাদা ঘ্রাণ কীভাবে বুঝি।

আসলে আমরা যখন শ্বাস গ্রহণ করি তখন বাতাসের সাথে সাথে অনেক কণা নাকের মধ্যে ঢুকে যায়। এইসব কণার মধ্যে কিছু কিছু কণা নাকে অবস্থিত olfactory receptor নামক এক প্রকার cell এর সাথে সংযোগ ঘটে এবং সেখানে কিছু বিক্রিয়া ঘটে। অবশ্যই এক এক রকম বস্তু কণার ক্ষেত্রে এক এক রকম বিক্রিয়া ঘটবে। এই সব বিক্রিয়ার তথ্য নিউরনের মাধ্যমে চলে যায় আমাদের brain এর olfactory lobe সেখান থেকেই আমাদের মস্তিষ্কে ঘ্রাণ অনুভুতির সৃষ্টি হয়। ঘ্রাণ অনুভুতির দিক দিয়ে মানুষ কিন্তু কিছুটা দুর্বল।

খুব তীব্র নাহলে আমরা ঘ্রাণ নিতে পারি না। অর্থাৎ যার ঘ্রাণ গ্রহণ করব, সেটা থেকে কিছু particle বাতাসের মাধ্যমে আমাদের নাক পর্যন্ত আসতে হবে। এবং বাতাসে সেই particle এর ঘনত্ব এবং সেটি olfactory receptorএর সাথে কিভাবে ক্রিয়া করে তার ওপর নির্ভর করবে আমরা ঘ্রাণ নিতে পারবো কি পারবো না। কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি অনেক শক্তিশালী। খুব কম পরিমাণ particle থাকলেওও এরা ধরে ফেলতে পারে।

তবে আমাদের যতোটুকু আছে তাতে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারি। বাসায় ভালো কিছু রান্না হলে সহজেই ধরতে পারি। কোন ফল অথবা খাবার পঁচা কিনা বুঝতে পারি। কিছু কিছু গ্যাসের অস্তিত্ব নির্ণয় করতে পারি। তবে মনে রাখতে হবে, নাকে কাজ কিন্তু শুধু smell গ্রহণ করা না।

সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কাজ হলো ফুসফুস এ প্রতিনিয়ত প্রচুর বাতাস supply দেয়া। এজন্য অনেক প্রচণ্ড গতিতে নাকের মধ্য দিয়ে বাতাস প্রবাহিত করি আমরা। কিন্তু সমস্যা হলো এতো দ্রুত বাতাস গেলে কিছু কিছু কণার smell আমরা কখনোই পেতাম না। এই সব কণা receptor এর সাথে খুব ধীরে বিক্রিয়া করে। কম সময় দিলে বিক্রিয়া করবে কীভাবে? এরকম যেনো না হয়, সেজন্যই আমাদের একটা নাসারন্ধ্র কিছুটা ধীরে বাতাস নেয়।

আমাদের মনে হয় সেটি বন্ধ আছে। আর আরেকটা খোলা। এটার সাথে সর্দি লাগার কিন্তু কোন ব্যাপার নেই। নাকে সর্দি না হলেও একটা নাসারন্ধ্র বন্ধ থাকে অথবা স্পষ্ট করে বলতে গেলে কম বাতাস গ্রহণ করে। ধীরে বাতাস নিলে particle গুলো সহজেই বিক্রিয়া করে তার অনুভূতি আমাদের মস্তিষ্কে পৌছে দিতে পারবে।

আর মজার ব্যাপার হলো যে নাসারন্ধ্র (nostril) বাতাস নেয় সেটি সবসময় এরকম থাকে না। ব্যাপারটা পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ দিনের কিছু সময় বাম nostril এই দায়িত্ব পালন করে আর বাকি সময় ডান পাশের টা করে। আর এই জিনিসটা দিয়ে কোন কিছু করা শুভ নাকি অশুভ সেটা কোন ভাবেই বের করা যায় না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.