আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইংরেজি ভাষা, বাংলার নায়ক অনন্ত ও আমার কিছু কথা।

ভাষা মানব সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কথ্য ভাষার বদৌলতে আমরা খুব সহজেই একে অন্যের সাথে ভাব বিনিময় করতে পারছি যা প্রস্তর যুগে ছিল অনুপস্থিত। তাই বলে যে আদিম যুগে মানুষ ভাব বিনিময় করতে পারত না তা কিন্তু নয় তবে কথ্য ভাষার অনুপস্থিতির জন্য তা মোটেও সহজ ছিলনা। আজ শুধু ভাষার কারনে মানুষের জাতীয়তা পর্যন্ত নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। ভাষার জন্য বা কারনে অনেককে জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে (আমরা) বা বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে (আসামের বা মায়ানমারের বাংলা ভাষী)।

বাংলাদেশি হিসাবে আমরা গর্ব করতে পারি যে শুধু আমরকেই কেবল নিজেদের ভাষা চর্চার অধিকার সংগ্রামের মাধ্যমে আদায় করে নিতে হয়েছে। বিবিসির তথ্যানুযায়ী বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ৭০০০টি ভাষার প্রচলন রয়েছে তার মধ্যে ১০% ভাষাই কেবল বেশিমাত্রায় চর্চা হচ্ছে। আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন যে, পৃথিবীতে এমন ৪৬ টি ভাষা রয়েছে যা কেবল একজন করে মানুষ ব্যাবহার করতে জানেন! সে যাই হউক আজকের লেখার বিষয়বস্তু আমার ব্যাক্তিগত কিছু ভাষা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নিরিবিচ্ছিন্নভাবে আমাদেরকে বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষা নিতে হয়েছে। এতে করে আমাদের এই দুই ভাষায়ই ব্যাপক দখল থাকার কথা কিন্তু মজার বিষয় হল ইংরেজি দূরে থাক বাংলায়ও গুছিয়ে লেখার দক্ষতা অর্জন সম্ভব হয়নি।

কেন হয়নি তা হয়ত আরকেটি লেখার বিষয়বস্ত হতে পারে তবে এই ব্যাপারে আমাদের উদাসীনতা খুবই লজ্জাকর। বাংলায় এহেন নির্লজ্জ দখলের পরেও ইংরেজিতে একে অন্যের ভুল ধরা বা তুচ্ছ্য-তাচ্ছিল্য চোখে পড়ার মত। খবরে প্রকাশ বাংলা সিনামার নতুন নায়ক অনন্ত জলিল তার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন জনপ্রিয় পিজ্জার দোকানে সেখানে গিয়ে তাকে চরমভাবে হেনস্তা হতে হয় পরে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। জানা যায় আশেপাশের লোকজনসহ ঐ দোকানের কর্মচারীরা পর্যন্ত নাকি তার ইংরেজি বলার ধরন ও উচ্চারণ নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করা শুরু করেছিলেন। সেদিন এটিএন বাংলার মুন্নি সাহা সাংবাদিকতার আদব লেহাজ ভুলে অনন্ত জলিলের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় তাকে বার বার ছোট করে দেখানোর আপ্রান চেষ্টা করে গেছেন।

অথচ আমরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সাথে মুন্নি সাহার সাক্ষাৎকার নেয়ার অনুষ্ঠানটি যারা দেখেছেন তারা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন যে নায়ক অনন্ত’র ইংরেজি জ্ঞান বা উচ্চারণ নিয়ে কটাক্ষ বা তাকে ছোট করে দেখানোর সাহস তার না দেখালেও চলত। নরসিংদীর ছেলে রাজন সাহাকে লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে আমার সহকর্মী হিসাবে পেয়েছিলাম। খুবই প্রাণোচ্ছল তরুন, হবে না বা হয়না এমন শব্দ তার অভিধানে নেই। একদিন বাসে করে যাওয়ার সময় তার মোবাইল চুরি হয় পরে কাস্টমার কেয়ারের সাথে অনেকবার যোগাযোগ করার পরেও যখন তার মোবাইল রিপ্লেস হচ্ছিলনা তখন সে বলল “Long time you talk I listen today I talk you listen okay” অর্থাৎ সে বলতে চাচ্ছিল যে, “আপনাদের অনেক কথা শুনেছি এখন আমার কথা শুনুন”! আমি আগেই বলেছি রাজনের অভিধানে হয়না এমন কিছু নাই। তার আত্মবিশ্বাস তাকে তার কাজ সমাধা করতে সব সময়ই সাহায্য করে।

বিলেতের মত দেশে বিলেতি মেমরা যদি না হেসে তার কথা বুঝে তার সমস্যার সমাধান করে দেয় তাইলে আমরা একটু আধটু ইংরেজি জেনে একে অন্যের এত খিস্তি খেউর করছি কেন? পাঠকদের অনেকেই বিদেশে আছেন বা ছিলেন কেউ কি কোনদিন দেখেছেন যে, আমাদের এশিয়ানদের ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে ইউরোপ আমেরিকার সাধারণ মানুষজন হাসি-ঠাট্টা করেছে? তাইলে আমরা কেন বিদেশি ভাষায় সামান্য দক্ষতা নিয়ে কুলিনতা প্রকাশ করতে এক পায়ে দাড়িয়ে থাকি। আমাদের সবারই জানা উচিত ইংরেজিতে দখল থাকা মানেই কেবল জাতে উঠা নয় আর তাই যদি হত তাইলে ফ্রেঞ্চ, জার্মান বা জাপানিরা এত উপরে কেন? তারা কি ব্যাবসা-বানিজ্য করছেনা বা ফিল্ম বা সাংবাদিকতার সাথে জড়িত না? বিশ্বায়নের এই যুগে অন্য ভাষার উপর দখল থাকা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। ইংরেজরা এরাবিক শিখছে, ভারতীয়রা শিখছে মেন্ডারিন এমতাবস্থায় একে অন্যের ভুল ধরা থেকে বিরত থেকে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে হবে আরও নতুন নতুন ভাষা রপ্ত করতে হবে তবেই না সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতা আসবে পরিপূর্ণ হবে জ্ঞানের ভাণ্ডার। সুনামগঞ্জ, নভেম্বর ৩, ২০১২ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.