আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যত্রতত্র মোবাইল টাওয়ার, বিকিরন ঝুকিতে কয়েক কোটি মানুষ, পশুপাখি। বিপন্ন প্রকৃতি। প্রাসংগিক বিষয় নিয়ে হ-য-ব-র-ল মেগা ব্লগ।

ব্লগে অনিয়মিত। মাইক্রোওয়েভ ওভেন সম্পর্কে আমাদের সবারই কমবেশী ধারনা আছে। ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন কোন বস্তুর(খাবার) ভিতর দিয়ে প্রবেশ করিয়ে বস্তুকে উত্তপ্ত করার কাজ করা হয় এই মাইক্রোওয়েভ ওভেনে। ধরে নিন আপনি নিজে একটা পানিভর্তি গ্লাস এবং একটা চালু মাইক্রোওয়েভ ওভেনে এই গ্লাসটিকে(আপনাকে) ১ মিনিট রেখে দিলে ফলাফল কি হবে? আমাকে বলে দিতে হবে না। আপনি সুন্দরবনের গহীনে গেলে মোবাইল ফোনে যেই সীম লাগান না কেন, আপনি কোন সিগন্যাল পাবেন না।

আপনার একাউন্টে কোটি টাকা থাকলেও মোবাইলে নেটওয়ার্ক না থাকলে আপনি কথা বলতে পারবেন না। মোবাইলে পর্যাপ্ত সিগন্যাল পৌছানোর জন্য মোবাইল কোম্পানী কিছুদূর অন্তর অন্তর একটু উচু টাওয়ার বসায় যাতে চারপাশে একটা বড়সড় এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আসে। এই মোবাইল টাওয়ারে বিভিন্ন তরন্গের দুই ধরনের রেডিও এন্টেনা লাগানো থাকে। এক ধরনের হলো মোবাইলের রিসিভিং লো ফ্রিকোয়েন্সী এন্টেনা (৭৯০-২১৮০ মেগাহার্জ) আরেকটা হলো ব্যাকবোন পয়েন্ট টু পয়েন্ট যা সাধারনত হাই ফ্রিকোয়েন্সী এন্টেনা (৮-৮০ গিগাহার্জ)। একটা মোবাইল টাওয়ারে লো ফ্রিকোয়েন্সীর কম(৪-৬-৮) টা এন্টেনা থাকলেও অনেক টাওয়ারে ব্যাকবোন পয়েন্ট টু পয়েন্ট ২০-২৫ টি এন্টেনা থাকে ।

এই প্রতিটা এন্টেনা আলাদা আলাদা তরন্গ ব্যাবহার করে থকে। রেডিয়েশন কি? এবং মোবাইল টাওয়ার থেকে কিভাবে রেডিয়েশন উৎপন্ন হয়। তরন্গ চলাচল করার সময় তার আশে পাশে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে যা থেকে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন উৎপন্ন হয়। তরন্গ ব্যাবহৃত হয়, এমন সব(মোবাইল, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, জিপিএস, ল্যাপটপ, রেডিও টিভি) যন্ত্রেই ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড এবং ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন উৎপন্ন হয়। মোবাইল টাওয়ারে যেহেতু তরন্গ ব্যাবহৃত হয়, তাই মোবাইল টাওয়ারের আশেপাশে শক্তিশালী রেডিয়েশন উৎপন্ন হয়।

এই রেডিয়েশন এন্টেনার যত কাছে থাকে তত শক্তিশালী, এবং দূরত্বে দূর্বল হয়ে পড়ে। মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনে কি কি স্বাস্হ্যগত সমস্যা হয়? সবচেয়ে বেশী যে কথাটি উচ্চারিত হয়, তা হলো ক্যান্সার হয়। world health Organization এর তত্বাবধানে পরিচালিত international agency for research on cancer এর রিপোর্ট পড়ুন। বিগত বছরগুলোতে অনেক অনেক গবেষনা করা হয়েছে যাতে বলা হয়েছে যাতে মোবাইল রেডিয়েশনের সাথে ক্যান্সারের সরাসরি যোগাযোগ আছে। নেট থেকে পাওয়া আরো কিছু স্ক্রীনশট।

দিল্লিতে এক লোক দাবী করেছেন তার সন্তান যেই ক্যান্সারে মারা গেছেন এর কারন তাদের বাসার ছাদের মোবাইল টাওয়ার এবং ঐ লোক আদালাতের কাছে ক্ষতিপূরন দাবী করেছেন এবং হাইকোর্টে মামলা করেছেন যাতে আবাসিক ভবন, হাসপাতাল ও স্কুলের ৫০ মিটার এর ভিতর সব মোবাইল টাওয়ার সরিয়ে নিতে ব্যাবস্হা নেওয়া হয়। রেডিয়েশনের কারনে দ্রত কমে যাচ্ছে পশুপাখি। গবেষনা রিপোর্ট দেখুন। মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের উপর বিষদ গবেষনার ফলাফল দেখতে পারেন এখানে। মোবাইল টাওয়ারে এন্টেনা মাটি থেকে কত দূরে স্হাপন করতে হয় আর ঐ এন্টেনা থেকে সর্বনিম্ন কতটুকু দূরে থাকাটা নিরাপদ? নেট ঘাটাঘাটি করে ৩ টা স্ক্রীনশট তুলে দিলাম।

এবার নীচের ছবি গুলো দেখুন। ১> খিলক্ষেত পল্লী বিদ্যুতায়ন অফিসের পূর্ব পাশে। ২> স্টাফ রোড, ক্যান্টনমেন্ট রেলক্রসিং এ স্বর্নলতা ভবনের পশ্চিম পাশে। ৩> স্টাফ রোড, ক্যান্টনমেন্ট রেলক্রসিং এ স্বর্নলতা ভবনের উত্তর পাশে। ৪> বনানী কবরস্হানের পাশে গল্ফ হাইট ভবনের পশ্চিম পাশের বারান্দা।

৫> বনানি বাজারের পাশে আউয়াল সেন্টারের উত্তর পাশে। ৬> কাকলি ওভারব্রীজের পশ্চিম পাশের ভবনের পূর্বপাশ। ৭> মহাখালী সেতু ভবনের পূর্বপাশের একটা হোটেলের দুইতালা বারান্দা ঢাকা শহরের আরো অনেক যায়গায় যেমন, ফার্মগেট, শাহবাগ, গুলশান, মালিবাগ, শান্তিনগর। গুলিস্হান, মতিঝিল, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আসাদগেটে এরকম মানুষের মাথার কাছে হাই পাওয়ার এন্টেনা লাগানো আছে। আমি শুধু আমার চলতি পথের ছবিই দিলাম।

এখন আপনারা সবাই বলুন এইসব ছবির ক্ষেত্রে একজন মানুষ মোবাইল এন্টেনা থেকে সর্বনিম্ন দূরত্ব কতটুকু???? উত্তর : ০০০০০০০০০০০.১ ন্যানোমিটার। কারন ৪ নাম্বার ছবিতে বারান্দায় দাড়ালে এই বিশাল আকারের এন্টেনা আপনার গায়ে লেগে থাকবে আর ৭ নাম্বার ছবিতে বারান্দায় দাড়ালে এন্টেনা আপনার মাথায় লেগে থাকবে। যেখানে বলা আছে ৪০০ মিটার দূরত্বে এন্টেনা নিরাপদ, সেখানে একটা এন্টেনা মাথায় লেগে থাকলে মাথাটা কতটুকু নিরাপদ? উত্তর আমি দিতে পারছি না, আপনারাই ভেবে নিন। খুব কাছাকাছি দূরত্বে একটা মোবাইল এন্টেনা কতটুকু ইলেক্ট্রোমেগনেটিক পাওয়ার উৎপন্ন করতে পারে। একটা পিকো সাইজের এন্টেনা গেইন ২-৫ dbi ছোট সাইজের এন্টেনা গেইন ৫-১০ dbi মাঝারি সাইজের ১০-১৮ dbi, এবং বড় সাইজের এন্টেনা ১৯-৪০ dbi হতে পারে।

একটা বেজ এন্টেনা যদি ২৫ ওয়াট পাওয়ার ট্রান্সমিট করে আর এন্টেনা গেইন যদি মাঝারি সাইজের(১৭ dbi) হয় তাহলে ১ মিটার দূরত্বে ৭৬ ওয়াট রেডিয়েশন উৎপন্ন করতে পারে তাহলে ১,২,৩,৪,৫ নং ছবিতে দেখানো এন্টেনার কতটুকু রেডিয়েশন উৎপন্ন করে? এই এন্টেনাটির মডেল হলো Kathrein 742 266V02 । যার ওজন ৩২ কেজী, উচ্চতা প্রায় ৪ ফিট। । এবং এর গেইন হলো ৩০, যা প্রায় ১২০ ওয়াট রেডিয়েশন উৎপন্ন করে। যেখানে ১০-১২ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে একটা মোবাইল টাওয়ার থাকে, সেখানেও এই একই এন্টেনা ইউজ হয়ে থাকে।

এবং এই এন্টেনাটি সংশ্লিষ্ট মোবাইল কোম্পানীর ব্যাবহৃত সবচেয়ে বড় এন্টেনা। আপনি ৩ নং ছবির বারান্দায় বসে(৩ মিটার এর মধ্যে) চা খেলে, অবস্হান করলে আপনি ভয়াবহ রেডিয়েশনের কবলে আছেন। বারান্দায়, বেডরুমের দেয়ালের পাশে, অফিসের দেয়ালের পাশে এই মোবাইল এন্টেনা কোন কোম্পানী বসায় এবং কেন বসায়? উত্তর: গ্রামীনফোন এবং গ্রামীনফোনের ট্রান্সমিশনের লোকজন মনে করে এন্টেনা মানুষের মাথার যত কাছাকাছি থাকবে, লোকজন ততই ক্লিয়ারকাট কথা বলতে পারবে। ১-৭ প্রতিটা ছবি গ্রামীনফোনের সাইটের। ১-৭ প্রতিটি ছবিতে চেষ্টা করা হয়েছে যতটুকু সম্ভব মাটির কাছাকাছি এন্টেনা লাগানো যায়।

রাস্তার লাখো লোককে ক্লিয়ার কথা বলার সুযোগ দিতে গিয়ে আশেপাশের কয়েক হাজার মানুষের কয়েকশ রোগ বাধিয়ে ফেললে কার কি !!! বেজ স্টেশনের আউটপুট পাওয়ার কমানো যায়, তার মানে কি ছবিতে দেখানো এন্টেনাগুলোতে আসলে কম পাওয়ার ইউজ করে হয়েছে। মোটেও না। যদি কম পাওয়ার ট্রান্সমিট করার ইচ্ছা থাকতো তাহলে ৩০ dbi গেইনের এণ্টেনা না লাগিয়ে ৫-১০-১৫ dbi ক্ষমতার এণ্টেনা লাগাতে পারত। ছোটবড় সব সাইজের এন্টেনাই মোবাইল কোম্পানী ইউজ করে এবং বড় এণ্টেনা লাগানো একমাত্র উদ্দেশ্য বেশী পাওয়ার ট্রান্সমিট করা এবং যথাসম্বব বেশী কাভারেজ পাওয়া। এইসব ক্রাইম দেখার কি কেউ নেই? আছে, এবং তারা এটাকে ক্রাইম মনে করে না, অথবা মনে করার দরকার মনে করে না, অথবা তারা রিমোট ম্যানেজম্যান্টে চলে।

মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশনের মাত্রা এবং এর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখার একটা রিট হয়েছে গতকাল, এর ফলাফল নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে রাজি না। তবে আশাবাদীদের দলে আমি না। এই রেডিয়েশন কমাতে পাশের দেশ কি করছে? আমরা নিজেরা কি করতে পারি, সারা ভারতে স্কুলের ছাদ থেকে মোবাইল টাওয়ার সরিয়ে নেওয়ার জন্য আদালত আদেশ দিয়েছে। আর আমাদের বনানী বিদ্যানিকেতনের অবস্হা দেখুন। হাইকোর্টের আদেশে রাজষ্হানে ১৯৯ টা মোবাইল টাওয়ার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এক বছরের মধ্যে টাওয়ার ঘনত্ব ৯০ ভাগ কমিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যদিও এর কারনে মোবাইল ব্যাবসা ৯০ ভাগ কমে যাক, কোন ছাড় নাই। বৃহত্তর নদীয়ার স্কুল কলেজ, হাসপাতালের ছাদ থেকে মোবাইল টাওয়ার নামিয়ে ফেলা হয়েছে। ব্যাতিক্রম, আমাদের শাহীন কলেজের ১০০ মিটারের মধ্যে ১ টা ছাদে ৫ টা মোবাইল টাওয়ার আছে, আর বারডেম হাসপাতালের দেয়ালে বিশাল বিশাল এন্টেনা, আর ছাদে আছে ২০ টা ব্যাকবোন লিংক। জয়পুরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ২০০ মোবাইল টাওয়ার। আর কি কি জিনিষ থেকে আপনি এই এর শিকার হতে পারেন? মোবাইল নিজেই, ব্লুটুথ ও ওয়াইফাই রাউটার, জিএসএম মডেম, জিপিএস এনাবল মোবাইল ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, রেডিও টিভি, ত্রুটিপূর্ন মোটর, ফ্যান, হাই ভোল্টেজ লাইভ লাইন।

এইসব থেকে যথাসম্বভ দূরে থাকুন, মোবাইলে কথা বলার সময় হেডফোন, স্পীকার ফোন ইউজ করতে পারেন, দরকার না থাকলে ব্লুটুথ ও ওয়াইফাই, জিপিএস বন্ধ করে রাখুন। ল্যান কানেকশন থাকলে ওয়াইফাই বন্ধ রাখুন। পোষ্ট লিখতে গিয়ে হাপিয়ে গেছি, ভুল ভ্রান্তি হতে পারে, এডিট করে ঠিক করে দেওয়া হবে। এমনিতেই গিগা পোষ্ট হয়ে গেছে তাই পোষ্ট সংক্রান্ত সবকিছু মন্তব্যে বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছা আছে। এই পোষ্টে ব্যাবহৃত সব ছবি আমার নিজ হাতে তোলা।

এই পোষ্টের মাধ্যমে আমি শততম পোষ্টের মাইলফলক পার করলাম। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.