আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটাকেই বলে রাষ্ট্রীয় রসিকতা

অনুতাপ নিপীড়িত ব্যাথিত জনের শক্তিধরে অস্ত্রধারী শত সিপাহের ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে আছি বেশ ক’দিন। বাইরে থাকলে টিভি আর সামাজিক মিডিয়ার ওপর নির্ভরশীল হতে হয় বেশি। মোবাইল তো আছেই। মুহূর্তেই খবর আসে কোথায় কি ঘটেছে। বিরোধীদের ডাকা ৩৬ ঘণ্টা হরতাল চলছে।

বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা। রাজপথে ককটেল বিস্ফোরক আর তাণ্ডবের খবর তো এখন নিত্যদিনের ঘটনা। বুধবার সকালেই দৃশ্যপট বদলে গেল। হরতাল নয় শিরোনাম হলো রানা প্লাজা। আলজাজিরায় খবরটি দেখে চমকে উঠলাম।

এর মধ্যে মানবজমিন-এর অনলাইনেও খবরটি এসে গেছে। মৃত্যুর খবর। প্রতি মিনিটেই মৃত্যুর কাফেলা বাড়তে থাকলো। বাংলাদেশে মৃত্যু কোন খবরই নয় এখন। হয় পুলিশের গুলিতে না হয় প্রাইভেট বাহিনীর গুলিতে কেউ না কেউ নিহত হচ্ছে।

অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই এটা বলা আহাম্মকি ও মস্ত বড় বোকামি। বলতে হবে মানুষ খুনের লাইসেন্স এখন সবার কাছে আছে। আইন আদালত সবই চালু আছে অবশ্য। এ নিয়ে কে কথা বলতে যায়। রানা প্লাজায় শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে বলার কি আছে।

পুলিশের বারণ সত্ত্বেও যখন সোহেল রানা ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেননি তখন কি বলবেন। ক্ষমতা না থাকলে এমনটা করা যায় খবরেই দেখলাম মানুষের যখন আহাজারি তখন যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে স্থানীয় এমপি মুরাদ জং উদ্ধার করে নিরাপদ ঠিকানায় নিয়ে গেছেন। তখন কি বুঝতে কারও বাকি আছে এবারও কিছু হবে না। যেমনটা হয়নি তাজরিন গার্মেন্টেসের মালিকের। দলবাজির কাছে আইন যখন অসহায় হয়ে যায় তখন যে কোন দেশে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে।

এলোমেলো হয়ে গেছে সব কিছু। লিখতে পারছি না। শুধু বলছি এই মৃত্যুর দায় নেবে কে? সহজ উত্তর কেউ নেবে না। রাষ্ট্র তো নেবেই না। সোহেল রানাই বা নেবেন কেন? আল্লাহর মাল আল্লায় নিয়ে গেছেন এটা বলে আমরা সবাই ভুলে যাবো।

তাই যদি না হবে একজন এমপি কি করে শ’ শ’ মানুষ হত্যাকারীকে প্রটেকশন দেন। এমপি বটে। এরাই বারবার জনগণের ভোটে এমপি হন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ আগের দিন মিডিয়ায় খবর এলো। পুলিশও সতর্ক করলো।

ব্যাংক বুঝতে পেরে কার্যক্রম বন্ধ করলো নোটিশ টানিয়ে। বুঝলেন না শুধু কতিপয় ডলার লোভী আর ভবন মালিক সোহেল রানা। না বোঝারই কথা। প্রশাসন যেখানে তার হাতের মুঠোয়Ñ তখন ডরের কি আছে। বরং উল্টো খবর রটালেন একটা ফাটল ধরলেই কি ভবন ভেঙে পড়ে? বিল্ডিং তৈরির কি কোন নিয়মকানুন আছে এই দেশে? রাজধানী ঢাকাতেই নেই।

এটা তো পঁচিশ কিলোমিটার দূরের ঘটনা। সাভার অঞ্চলে গার্মেন্টস কারখানায় মৃত্যু যেখানে হররোজের ঘটনা, সেখানে আমরা এটাকে আমলেই নিচ্ছি না কেন? বৈদেশিক মুদ্রা রাখার জায়গা নাকি নেই। বড়াই করে আমাদের নীতিনির্ধারকরা বলে থাকেন। মুদ্রা খরচ না করলে রিজার্ভ বাড়বে এটাতো পাগলও বুঝে। তবুও আমাদেরকে এই গল্প শোনানো হয়।

অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে মুদ্রায় টান পড়বে এটা কি বুঝতে বড় কোন পন্ডিতের প্রয়োজন হবে। একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা। অন্যদিকে মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগ গার্মেন্টস শিল্পকে অস্তিত্ব সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর পেছনে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক যে কার্যকর রয়েছে এটাও সবার জানা। সব জেনেও আমরা বলছি দেখি না কোথায় যায়।

যেখানে যাওয়ার সেখানেই যাবে। আমরা যখন বুঝবো তখন হা-হুতাশ করা ছাড়া আর কি কিছু করার থাকবে? আগুন লাগলে আমরা বলি হতে পারে এটা নাশকতা। বিল্ডিং ভেঙে গেলে নাশকতা বলবো কি করে? এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। কেউ মানুন আর না মানুন। এই যখন অবস্থা তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর চমক লাগানো বক্তব্য হাজির করেছেন জাতির সামনে।

রানা প্লাজা ভেঙে পড়ার কারণ নাকি মৌলবাদী তৎপরতা। ওরা নাকি ভবনটি ধরে নাড়াচাড়া করেছিল। সে জন্য ভেঙে পড়েছে। খাটি কথা। এটাই একজন যোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা।

এখন বুঝুন সোহেল রানার কি হবে? সোহেল রানারা বার বার এভাবেই পার পেয়ে যায়। মৌলবাদীরা যদি বিল্ডিংও ভেঙে দেয় তাহলে তো রাষ্ট্রও ভেঙে দেবে একদিন। সুযোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি করছেন বসে বসে। যাইহোক, সময় বসে নেই। রাষ্ট্রও বসে থাকে না।

অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ স্থায়ী হয়ে গেছেন। একদিকে লাশের মিছিল। অন্যদিকে বঙ্গভবনের দরবার হলে আলো ঝলমল পরিবেশে শপথ অনুষ্ঠান। একদিন বিলম্ব হলে মহাভারত অশুদ্ধ হতো না। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ যখন মুজিব কোট গায়ে দিয়ে নিজেকে নির্দলীয় দাবি করেন তখন তাকে বাহবা দিতেই হয়।

এটাকে বলে রাষ্ট্রীয় রসিকতা। Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।