আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পোস্টমর্টেম ১: রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন

প্রত্যেকটি মানুষই অন্যদের থেকে আলাদা। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। কথাটি আমাদের সমাজে বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয়ও বটে। কিন্তু সকল জনপ্রিয়ই সত্য নয়। আবার সকল সত্য জনপ্রিয় নয়।

কেউ রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নিলে তাকে পরে পস্তাতে হয়। তাই মাথা ঢান্ডা রেখে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য এই পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু কথাটি কি সম্পূর্ণ ঠিক? আসুন একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। মানুষ মাত্রই রাগ, ক্রোধ ইত্যাদি আবেগ নিয়ে বেড়ে ওঠে। কেউ একটুতে রেগে যায়, আবার কেউ সহজে রাগেন না।

কারও রাগ সহজে পানি হয়ে যায়, আবার কেউ একবার রেগে গেলে খবর আছে। অনেকে আছেন বদমেজাজি, সবসময় রেগে থাকে। আবার কেউ আছেন কিছুতেই যেন রাগেন না। একেবারে মাটির মানুষ। প্রবাদটিতে না রাগতে বলার অর্থ যদি করা হয়, রাগ হলেই তা দমন করে ফেলতে হবে, তাহলে তা ভুল হবে।

ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের অর্থ ক্রোধ দমন নয়। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ বলতে আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ বোঝায়। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে যেন আপনি অতিরিক্ত আচরণ না প্রদর্শন করে বসেন সেটিই বিবেচ্য বিষয়। এটি তো গেল একটি বিষয়। অন্যদিকে পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী রাগ প্রদর্শন করারও প্রয়োজন হতে পারে, যখন কিনা আপনি একটুও রেগে নেই।

রাগ যেহেতু একটি আবেগ, সেহেতু রাগের বশবর্তী হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়। কারণ, আবেগ কখনওই স্থির সিদ্ধান্তে পৌছতে পারে না এবং ক্ষণে ক্ষণে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হতে থাকে। আচরণে রাগের প্রদর্শন কতটুকু হবে তা হবে যুক্তি নির্ভর। এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ধরুন বাবা-মা ও এক ছেলে শিশু নিয়ে একটি একক পরিবার।

কোন কারণে শিশুটির কোন আচরণে তার বাবা খুব রেগে গেছেন। মনে হচ্ছে কষে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেন। কিন্তু তিনি রাগকে নিয়ন্ত্রণ করলেন। তারপর তার ছেলে শিশুটিকে তার এই আচরণ যে সমীচীন হয়নি, তা বুঝিয়ে বললেন। আরো বললেন পরে যেন এরকম না করে।

দশ বছর পর, ঐ শিশুটি এখন কৈশোরে পদার্পণ করেছে। একদিন তার বাবার সাথে সে একটি বেয়াদবী করে ফেলল। কিন্তু যে কারণেই হোক তার বাবা সারাদিনের পরিশ্রমে খুব ক্লান্ত। ছেলের আচরণে তার যেন কোন প্রতিক্রিয়াই হচ্ছে না। অথচ সে বুঝতে পারছে যে তার ছেলের আচরণটি ঠিক হয়নি।

এজন্য তাকে শাসন করা দরকার। সে তার ছেলেকে খুব রাগ দেখাল এবং ধমকাল। তার আচরণে এধরণের বেয়াদবী ভবিষ্যতে আর সহ্য করা হবে না বলে কড়া ভাষায় শাসিয়ে দিল। উপরে দুটি ঘটনাতে আমরা ছেলেটির বাবার দু রকম মানসিক অবস্থা দেখলাম। ছেলেটির বাবা দুটি ঘটনাতে ভিন্ন রকম আবেগ সত্ত্বেও ছেলের ভালর জন্য যে আচরণ যুক্তিযুক্ত সে আচরণই করেছে।

তার রাগ, ক্রোধ এর কারণে তার আচরণ প্রভাবিত হয়নি। ছেলেটির বাবা উভয় ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিত্বশীল মানুষের পরিচয় দিয়েছে। এবং দ্বিতীয় ঘটনাতে আমরা দেখলাম বাবা তার রাগ না হওয়া স্বত্বেও কিভাবে রাগী আচরণ করেছেন। এমন হতে পারে আপনি হঠাৎ করে খুব রেগে গেছেন। কিন্তু সেখানে আপনার রাগ প্রদর্শন যুক্তিযুক্ত নয়।

আবার কখনও আপনার কোন রাগই হচ্ছেনা, তা স্বত্বেও আপনাকে রাগের অভিনয় করতে হতে পারে। আপনি আচরণে রাগ দেখাবে কিনা তা পরিস্থিতিই বলে দেবে। আপনি কোন পরিস্থিতিতে কতটুকু রেগে যাবেন বা রাগ প্রদর্শন করবেন তা নির্ধারণ করবে আপনার যুক্তি, পরিস্থিতি, সময় জ্ঞান ইত্যাদি, রাগ বা ক্রোধ নয়। আর এক্ষেত্রে সবসময় যে আপনাকে রাগ দমন করতে হবে, এটাও ঠিক নয়। বরং ক্ষেত্র বিশেষে আপনাকে না রাগলেও রাগ দেখাতে হতে পারে।

কিন্তু রাগ যেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করে। বরং আপনিই যেন রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন‘ কথাটি হওয়া উচিত ‘রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালেন তো হেরে গেলেন। ‘ অথবা ‘অনিয়ন্ত্রিত ভাবে রাগলেন তো হারলেন। ‘ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।