আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইংরেজী ভাষার একটি অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

একজন ভীরু মানুষ... কোন ব্যক্তি বিশেষের অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি আমি সাধারণত করিনা কিন্তু ইতিহাসের রংমহলে অতীত নিয়ে কচলাকচলি-টা বেশ উপভোগ করি। বেশ ছোট্ট আর উপভোগ্য করে ইংরেজী ভাষার ইতিহাস লিখা খানিকটা কঠিন। তাই ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষকদের নজরে পড়ে না এমন মানের এক ছাত্র ও সাধারণ পাঠক হিসেবে যে সকল বিষয় আমাকে ভাবিয়েছে ও রসায়িত করেছে সেগুলো অতিসংক্ষেপে উল্লেখ করার চেষ্টা করবো। আশাকরি পাঠকের বিরক্তি এতে কিছুটা হলেও কম হবে। /# আমাদের স্নাতক পর্যায়ে “The History of English Language” পড়ানো হয়েছিল।

বিষয়টি আমার অত্যন্ত পছন্দ হয় কিন্তু ইংরেজীর ভীত আর মনের সাহস তখনো এতো শক্ত হয়নি যে Benjamins/Geoffrey Leech / Svartvik/Gough এর মতো লেখকদের বই ঢকাঢক মেরে দেব। তাই খোঁজা শুরু করলাম বাংলা ভাষায় লিখা ইংরেজী ভাষার ইতিহাস; জলিল ভাইয়ের খোঁজ দ্যা সার্চ-এর চেয়ে সেটি কম বিভীষিকাময় ছিল না। সেই সময় নিজের পড়ার খাতিরে বাংলায় কিছু নোট নিয়ে রাখতাম, আজ সেই সব নোট থেকে একটা ককটেল বানানোর চেষ্টা করবো। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সাহায্য নিয়েছি A History of the English Language by Albert C Baugh, ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস- ডঃ শীতল ঘোষ, Mother Tongue by Bill Bryson থেকে। এটি কারো উপকারে না আসলেও খুব একটা ক্ষতি করবেনা বলে আমার বিশ্বাস।

ইংরেজী ভাষা নিয়ে অতি প্রচলিত একটি স্যাটায়ার হচ্ছে- English is a stupid language; There is no egg in the eggplant, No ham in the hamburger and neither pine nor apple in the pineapple. কিন্তু আপনি যদি এটি দেখে ইংরেজীকে সত্যি ষ্টুপিড ভাবতে শুরু করেছেন তবে ভুল করছেন, কারণ ইংরেজী হচ্ছে সেই অস্ত্র যা দিয়ে দু’একটি জাতি পুরো বিশ্বের উপ্র ছড়ি ঘুরাচ্ছে। ভাবুন তো একবার আপনি দেশের সব চেয়ে ভালো বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চশিক্ষা নেবেন অথবা উচ্চশিক্ষা নিতে বা গবেষণা করতে দেশের বাইরে যাবেন অথবা উচ্চশিক্ষা শেষে দেশের শীর্ষস্থানীয় কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবেন অথবা দেশের বাইরে কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে যাবেন; এই সকল ক্ষেত্রে সাধারণত আপনার প্রথম ও প্রধানতম যোগ্যতার মাপকাঠি হচ্ছে ইংরেজী ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা। কিন্তু কেন, কিভাবে, কখন সৃষ্টি হলো এই নিয়ম? ইংরেজী ভাষার সুপ্রাচীন ইতিহাস বেশ খটমট ধরণের; এই সর্ম্পকে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। তবে যুগযুগান্তরের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ফসল থেকে সবচেয়ে গ্রহীত ইতিহাসটি আমি বলব। খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় সাত হাজার বছর আগে ইউরোপের মূল ভূখন্ড থেকে নতুন এক জাতি ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে বর্তমান ইংল্যান্ড ভুখন্ডে এসে বসতি গড়ে।

এরা গুহামানবদের চেয়ে সভ্য ছিল। এরাই ইংল্যান্ডের আদি বাসিন্দা যারা ধীরে ধীরে পশুপালন, বাড়ীঘর, মাটির পাত্র, কাপড় বুনা ও কিছু ধাতবের ব্যবহার শিখল যা প্রচুর পরিমাণে এই অঞ্চলে পাওয়া যেত । প্রায় পাঁচ হাজার বছর পরে খ্রীষ্টপূর্ব দু’হাজার বছরে এলো বোঞ্জ বা পিতলের যুগ। তাই সহজলভ্য ধাতবের লোভে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী একদল নাবিক যারা আদিবাসিদের পরাজিত করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলো; তবে এদের ইউরোপের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ ছিল। এরা পরিচিত ছিল “আইবেরিয়ান” নামে।

তামার যুগ পার করে এলো লৌহ যুগ আর আইবেরিয়ানদের পরাজিত করে কেল্ট-রা দখল করে নিল এই ভূখন্ড কারণ কেল্টরা ছিল লৌহশিল্পে বিশেষ পারদর্শী। এই যুগ তাই কেল্টিক যুগ হিসেবে পরিচিত। অসম সাহসী ও শক্তিশালী এই জাতির আধিপত্য কেড়ে নেয় মধ্য ইউরোপের ব্রাইথন/ব্রিটন-রা পরবর্তীকালে এদের নামানুসারেই রোমানরা এই দেশের নাম রাখে ব্রিটেন। বলতে গেলে এইখান থেকেই শুরু হয় ইংরেজী ভাষার ইতিহাস। ব্রিটনরা ছিল অতি কুসষ্কারাছন্ন, তারা পুরোহিতদের দ্বারা পরিচালিত ও শাসিত ছিল।

এইসব পুরোহিতদের বলা হত “ড্রুইড”। এরা নানা রকমের অদ্ভুত কিছু প্রথা চালু করে। ইংরেজরা নিজেদের অতি সুশিক্ষিত জাতি হিসেবে জাহির করলেও ঐসব প্রথার কিছু কিছু আজও বিদ্যমান। তবে প্রথার সাথে সাথে এদের ভাষার ছাপটিও বেশ গভীর যেমন অ্যাভন,লেক,লক। খ্রীঃ পূং ৫৫ সালে সেসময়ের সবচেয়ে সুসভ্য ও উন্নত জাতি রোমান-রা ইংল্যান্ড ভূখন্ড দখল করে আর তাদের ভাষার কিছু অংশ ঢুকে পড়ে এই অঞ্চলের মানুষের ভাষায়, যেমন ল্যাংকাষ্টার, ম্যাঞ্চেষ্টার ইত্যাদি।

কিন্তু এই পর্যায়ে রোমানরা তাদের গৃহযুদ্ধ ও শত্রুদের হাত থেকে রোমকে বাঁচাতে বেশিদিন এখানে স্থায়ী হয়নি। অপরদিকে রোমানরা তাদের জাতের বিশুদ্ধতায় বিশ্বাসী ছিল তাই কিছু ভাষা সংমিশ্রিত হলেও রক্তের মিশ্রণ ঘটেনি। তারা ব্রিটেনবাসীদের হেয় জ্ঞান করত এবং দাস বানিয়ে রেখেছিল। রোমানরা চলে গেলে মধ্য ও উত্তর ইউরোপের এ্যাঙ্গেলস,স্যাক্সন ও জুট নামে একদল র্জামান উপজাতি ব্রিটেনের মেয়েদের গ্রহণ করে সাথে সাথে তাদের আচার-আচরণ, রীতিনীতি, আইনকানুন, সামাজিক প্রথা, ভাষা ও ধর্ম ব্রিটেনদের মাঝে প্রবতিত করে। ফলে ব্রিটেনবাসী তাদের অতীত ও এসবের মাঝে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।

এ্যাঙ্গেলস,স্যাক্সন ও জুটরা ব্রিটেনকে সাতটি রাজ্যে ভাগ করে যাদের প্রধান ভাষা ছিল তিনটিঃ ওয়েসেক্স, মার্সিয়া এবং নর্দ্রাব্রিয়ান। শেষ পর্যন্ত ওয়েসেক্স ভাষা অন্যসব ভাষার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে একক ভাষা হিসেবে গণ্য হয়। এ্যাঙ্গেলস,স্যাক্সন জাতির একক এই ভাষার নাম হয় অ্যাংলো-স্যাকস্ন ভাষা। এই সময়টিই ইংরেজি সাহিত্যের ঊষাকাল যার অন্যতম ফসল ‘বিউলফ’ কাব্য। এই যুগ প্রায় একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত।

এদিকে তৃতীয় শতাব্দীতে খ্রীষ্টধর্ম বিদ্বেষী রোমান সম্রাট “ডায়োক্লিসিয়ান”-এর সীমাহীন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেক রোমান খ্রীষ্টান পালিয়ে এল ব্রিটেনে অপরদিকে ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষদিকে সেসময়ের খ্রীষ্টধর্ম প্রধান পোপ গ্রেগরী খ্রীষ্টধর্ম প্রচারের জন্য খ্রীষ্ট সন্ন্যাসীদের ব্রিটেনে পাঠান। সন্ন্যাসীরা সাথে করে আনলেন লাতিন ও গ্রীক ভাষার বই যার ফলে ইংল্যান্ডের ভাষায় যুক্ত হলো আরেকপ্রস্থ লাতিন ও গ্রীক ভাষা। এর ভেতর চলতে থাকে আধিপত্য বিস্তারের নানান যুদ্ধ ও কূটকৌশল। অনুপ্রবেশ ঘটলো ডেনিস, নর্থম্যান/নর্ম্যান আর ফ্রান্সের। সুসভ্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও উন্নত নৌযানের অধিকারী ডেনিস আর নর্ম্যান-রা রাষ্টীয় ও জাহাজ সংক্রান্ত নানা শব্দ যুক্ত করলো অ্যাংলো-স্যাক্সন ভাষায়।

অপরদিকে বিজ্ঞান, শরীরবিদ্যা ও আইন শিক্ষায় অগ্রগামী ফ্রান্সে শিক্ষাগ্মণকারীরা বয়ে নিয়ে এল সেদেশের ভাষা। চতুর্দশ শতাব্দীতে শতবর্ষ যুদ্ধের সময় নর্ম্যান-ফ্রান্স আর অ্যাংলো-স্যাকসন ভাষা মিলেমিশে পরিবর্তিত হয়ে যে নতুন ভাষার জন্ম হয় সেটিই ইংরেজী ভাষা। এই সেই ইংরেজী ভাষা যার সাহিত্যে জন্ম হয়েছে সেক্সপীয়র, মিলটন, জন ডান, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, বায়রন, কিটস, শেলী, ইলিয়ট, ষ্টুয়ার্ট মিল, সমারসেট মম এর মত মহামানবের। ব্রিটেনবাসী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়েছে যার ফসল কখনো ভাল কখনো অতি খারাপ। যেমন একসময় ব্রিটেন ফ্রান্সের পদানত হয়।

বিজেতারা নিজেদের প্রভু ও বিজিত ইংরেজদের দাস মনে করত। এই সর্ম্পক ভাষার ক্ষেত্রেও স্পষ্ট। যেমন ফরাসীরা ইংরেজদের ইতর সাধারন মনে করত বলে ইতর প্রাণীগুলোর নাম ছিল ইংরেজী শব্দে অপরদিকে সেই প্রাণীগুলো যখন সুস্বাদু খাবারে পরিণত হতো সেগুলোর নাম হতো ফরাসী শব্দে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় ইংরেজী শব্দ OX (অক্স) কিন্তু রান্না করা ষাড়ের মাংসের কোন ইংরেজী শব্দ নেই সেখানে ব্যবহার হয় ফরাসী শব্দ BEEF(বীফ)। তেমনিভাবে “সীপ” ইংরেজি “মাটন” ফরাসী, “পিগ” ইংরেজী আর “পরক” ফরাসী; এমনকি খাদ্যেরও কোন ইংরেজী শব্দ নেই সেখানেও ‘ফুড’ একটি ফরাসী শব্দ।

কিন্তু এটিও অনস্বীকার্য যে ইংরেজি ভাষা, সাহিত্য ও সভ্য রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এইসব শাসকদের অবদান সবচেয়ে বেশী। হয়তো এতবার এতভাবে নিগৃহীত নিপীড়িত হয়েছে বলেই সেই ভাষা পুড়ে পুড়ে খাঁটি হয়ে আজ সম্পূর্ণ বিশ্বকে ডোমিনেট করছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।