আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মভীরু, ধর্মপ্রান, এবং ধর্মান্ধ...

শুধু আওয়াজ নয়, চিৎকার চাই.... আমাদের দেশটা ধর্মভীরু মানুষের। যে যে ধর্মই পালন করুক না কেন, আমজনতা বলতে আমরা যাদের বুঝি, তারা সবাই ধর্মপ্রান। ধর্মের গূঢ় তত্ব বুঝুন আর নাই বুঝুন, ধর্মগুরুদের মুখনিসৃত আদেশ-নিষেধ তারা যথাসম্ভম মান্য করার চেষ্টা করেন। এদের অনেকেই অশিক্ষিত, অক্ষর জ্ঞান নেই, শোনা কথাতেই তাদের ভরসা করতে হয়। তাদের অজ্ঞতা মাঝে মাঝে তাদের জন্যে কাল হয়ে দাঁড়ায়।

তবুও এই মানুষগুলোকে আমার ভালো লাগে। আমার ভালো লাগে যখন দেখি এক বৃধ বাবা শীতের সকালে কাঁপতে কাঁপতে ফজরের নামাজ পড়তে জায়নামাজে দাড়ান। ভালো লাগে যখন দেখি নূরানী চেহারার কোন লোক সুর করে করে গজল গাইতে গাইতে, অথবা কুরআনের কোন আয়াত আপন মনে তেলাওয়াত করতে করতে হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। ভালো লাগে যখন দেখি অজ পাড়া গাঁয়ের কোন মিলাদ মাহফিলে হুজুরের বয়ান শুনে বাড়ির অন্দরমহলে মা-খালাদের চোখ বেয়ে অশ্রু বেয়ে পড়ে, ভক্তিতে। ভালো লাগে যখন দেখি কোন এক গৃহবধু সাঁঝের বেলাতে সিঁদুর মাথায় তুলসীতলাতে প্রদীপ জ্বালিয়ে ধ্যানমগ্ন।

পেটে অম্বলের ব্যাথা নিয়ে উপবাস পালন করে এক বিধবা, আমার তাও ভালো লাগে। শীতের সকালে নদীতে ববুক সমান পানিতে ডুবে সূর্যপ্রনামরত ব্রাহ্মনটিকে দেখেও আমার অনেক আপন মনে হয়। চীবর পরিহিত অপুষ্টিতে ভোগা বৌদ্ধ ভিক্ষুটিকে আমার বাসায় নিয়ে এসে সমাদর করতে ইচ্ছে হয়, জীবহত্যা মহাপাপ বলে যে কিনা নিরামিষ ভোজন করে। সেই শুভ্র পোষাক পরিহিত পৌঢ় লোকটির পা ছুঁয়ে আমার আশীর্বাদ নিতে ইচ্ছে করে, যে কিনা তার জীবন যৌবন উতসর্গ করেছে জেসাস আর গির্জাকে ভালোবেসে। সেই মধ্যবয়্সী সিস্টারটির কোমল হাতের স্নেহ পেতে ইচ্ছে করে, সারাটি জীবন যে কিনা কাটিয়ে দিলো মানুষের সবাই।

আরো নাম না জানা অনেকের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই ধর্মভীরু, ধর্মপ্রান লোকগুলোকে আমি শ্রদ্ধা করি, মনের গভীর থেকে ভালোবাসি। সেইসাথে, আমি সেই ধরনের লোকগুলোকে চোখের কোনা দিয়েও দেখতে পারি না, সারা বছর যাদের কেটে যায় নানা রকম ভোগবিলাসে, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদির কোন খোঁজ খবরও থাকে না। যাবতীয় প্রকারের দুর্নীতি তারা করে যায় অবলীলায়। ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ সকল কাজই তারা করে যায় চোখের অলক্ষ্যে, কেউ কেউ বা প্রকাশ্যে।

এদের বেশিরভাগের কাছে নারী একতা জীবন্ত মাংসপিন্ড ছাড়া কিছুই না। ধর্মীয় বিধিবিধানের যে খরনের ব্যাখা তাদের পছন্দ হয়, তারা সেগুলোই গ্রহন করে। তা সে যতই মানবতাবিরোধী হোক। আর সেই তারাই হুজুগে মাতাল হয়ে ধর্ম রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ে, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ব্লগ ইত্যাদিতে তোলপাড় লাগিয়ে দেয়, ধর্মানুভুতি গ্যালো গ্যালো বলে ম্যাতকার ছাড়ে। বিরুদ্ধমতের অধিকারী কাউকে পেলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালের বন্যা ছোটায়, বাদ যায় না লোকটির পরিবারও।

প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যার হুমকিও দেয়। এইভাবে ধর্মানুভুতির হেফজত করে তারা আবার ফিরে যায় তাদের স্বাভাবিক জীবনে, আর মনে মনে ভাবে, বহুত পূন্য কামিয়ে ফেললাম! এইসব মৌলবাদী মানষিকতার ভন্ড ধার্মিকদের আমি চুতিয়া বলে গালি দেই। এতে সত্যিকারের চুতিয়ারা যদি অপমানিত বোধ করেন তবে সত্যিকারের চুতিয়াদের নিকট আমি আন্তরিক ক্ষমাপ্রার্থী। ....... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।