আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সঞ্জীব'দা কে নিয়ে 'হৃদয় পুর একা' ও বাপ্পার ' পরী' গানের পেছনের অজানা গল্পঃ

উৎসর্গ ঃ এই পোস্টের দুটি চমৎকার ,অসাধারন গানের স্রস্টা , অসাধারন এক মানুষ প্রিয় ব্লগার 'নস্টালজিক' যিনি আমাদের পরিচিত জনের কাছে প্রিয় 'রানা ভাই' নামে পরিচিত সেই মানুষটিকে । । ব্লগে নতুন কোন লিখা লিখবো না বলে অনেক ক্ষোভ ও অভিমান নিয়ে চলে গিয়েছিলাম। চলে গিয়েও শান্তি পাইনি। নিজে কষ্ট পেয়েছি আর আমার সহব্লগারদের আমার প্রতি অসীম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দেখেছি।

যাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আমাকে আবার ব্লগের উপর অভিমানটা তুলতে বাধ্য করলো সেই সহব্লগার 'দুর্যোধন', 'কালা মনের ধলা মানুষ' 'আরজু পনি' 'রেজওয়ানা আপা' বেইমান আমি' এবং অতি স্নেহের দ্বীপ সহ আমার নির্বাসন যারা মানতে পারেনি তাঁদের সবাইকে জানাই অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। আপনাদের জন্যই ফিরে আসা। আজ সবাইকে জনপ্রিয় 'উইনিং' ব্যান্ড এর ভোকাল প্রিয় চন্দন ভাইয়ের কণ্ঠের 'হৃদয়পুর একা' ও 'দলছুট' ব্যান্ডের বাপ্পা মজুমদার এর সেরা জনপ্রিয় ‘পরী’ গানটির পেছনের মানুষটির কথা বলবো যিনি সবার প্রিয় গানটি সৃষ্টি করেও রয়ে গেছেন পর্দার আড়ালে। ‘নস্টালজিক’ নামে চমৎকার সুন্দর সব লিখার একজন ব্লগারের সাথে আমার পরিচয় হয় গত ২০১১ এর মে মাসে। সেই সময়ের কিছু কথা না বললেই নয় - আমি তখন মাত্র শখের বশে আমার কবিতা ও গল্প লিখার ব্যর্থ চেষ্টার ফসল ‘হিজিবিজি’ লিখাগুলোকে পোস্ট দেয়ার জন্য বাংলা ব্লগের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তম কমিউনিটি ‘সামু’ ব্লগে নতুন আইডি খুলেছি।

সেখানে প্রতি রাতে যা লিখি সেটাই পোস্ট করে দিতাম। ব্লগে নতুন তাই উৎসাহটা একটু বেশিই ছিল। কেউ আমার লিখে পড়ে কোন মন্তব্য করলে বেশ ভালো লাগতো। যখন সপ্তাহখানেক পার হলো তখন ব্লগের মেম্বার দেখে আমি আমার লিখার ধরন ও উদ্দেশ্য পুরোটাই পরিবরতন করে ফেলি। আমি দেখলাম যে হাজার হাজার ব্লগার যারা কোন না কোন গ্রুপে সম্পৃক্ত।

কেউ আছে ফান করতে , কেউ আছে খুব সিরিয়াস , আবার কেউ আছে রাজনৈতিক ভাবে সরকারি দলের দালালি আর বিরোধী দলকে গালিগালাজ করে দেশ উদ্ধারে ব্যস্ত, আবার কেউ আছে বিরোধী দলের দালালি আর সরকারি দলকে গালি দিয়ে দেশ উদ্ধারে ব্যস্ত, এর মাঝে আরও একটি ভয়ংকর গ্রুপ হলো বিকৃত মানসিকতার ‘নাস্তিক’ শ্রেণী যাদের সাথে সারাদিন ‘আস্তিক’ ক্যাচাল লেগেই থাকে। সব ভেবে আমি ঠিক করলাম আমি ঐসব কোন গ্রুপে জড়াবো না এবং ঐ ধরনের কোন পোষ্টে যাবো না। আমি বাংলা গান ও ছবি নিয়ে যে কাজটা করতে চাচ্ছি সেটা এখান থেকেই শুরু করা যাক । এতে যদি ১ জন নতুন মানুষও বাংলা গানের শ্রোতা হিসেবে বৃদ্ধি পায় তাতেই আমি সার্থক। যেই ভাবা সেই কাজ।

শুরু করে দিলাম সব হারানো অ্যালবাম ও গান এর গল্প নিয়ে তথ্যমুলক লিখা। তাতে দেখলাম বেশ সাড়া পাওয়া গেলো। অনেক নামীদামী ব্লগার আমার ব্লগে এসে প্রশংসা করতে লাগলেন । তাঁদের দেখে বুঝলাম যে মানুষের আগ্রহ আছে কিন্তু কেউ হারানো অ্যালবাম ও গান নিয়ে কাজ করে না বলেই কেউ জানতে পারেনা। তাই নিজের কাছে থাকা পুরনো বস্তাবন্দী ক্যাসেটগুলো বের করে প্রতি রাত জেগে কাজ করা শুরু করলাম।

দিনের বেলায় অফিস আর রাতে বাসায় ফিরে পুরনো ক্যাসেট নিয়ে কাজ এই হয়ে গেলো আমার রুটিন। ব্লগে প্রতিদিন একটা পোস্ট দিয়ে যেতাম আর বাড়ি ফিরে সেগুলোর মন্তব্যর জবাব দিতাম। আমার গানের পোষ্টে ‘নস্টালজিক’ নামের একজন ব্লগারের সাথে তখন মাত্র পরিচয়। যিনি দেখতাম পুরনো ব্যান্ড এর গানগুলো দিলেই খুব চমৎকার মন্তব্য করে চলে যেতেন। বুঝলাম যে এই মানুষটি নিশ্চয়ই সেই ৯০ এর প্রজন্ম ।

যিনি সেই প্রিয় গানগুলো শুনেই বড় হয়েছেন। তাই সময় সুযোগ মতো একদিন ‘নস্টালজিক’ নামের মানুষটির সাথে ফেইসবুকে বন্ধু হওয়ার আহবান জানালাম। উনিও চমৎকার ভাবে সেই আহবানে সাড়া দিলেন। উনার প্রোফাইলে গিয়ে আমি তো পুরাই ‘থ’ বনে গেলাম। সাথে সাথে চুপচাপ উনার ব্লগের পুরনো পোস্টগুলো পড়তে লাগলাম ।

যত পুরনো পোষ্টে যাচ্ছি ততই অবাক হচ্ছি তখন। মনে ভাবতে ভাবতে লাগলাম একজন জনপ্রিয় গীতিকার আমার সাথে প্রতিদিন ব্লগে কথা বলছেন অথচ আমি এতো দেরীতে জানলাম এই সেই ‘পরী’ গানটির গীতিকার রানা ভাই !!!!!!! নিজেই নিজের কাছে লজ্জিত হলাম। এরপর আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা গানপাগল হাসান মাহবুব ভাইয়ের সাথে রানা ভাইয়ের কথা বললাম। হাসান ভাইয়ের কথা শুনে আরও লজ্জিত হলাম , হাসান ভাই রানা ভাইয়ের কাজিন এবং উনি যে ব্যান্ড, আধুনিক গানের জনপ্রিয় একাধিক গান লিখেছেন সেটা আরও ভালোভাবে জানতে পারলাম। ধীরে ধীরে রানা ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ রাখা শুরু করলাম।

মানুষটা প্রথম থেকে আমাকে মুগ্ধ করে ফেলেছে উনার কথাবার্তা ও ব্যবহারের কারনে। উনি খুবই নিভৃতচারিণী ও খুব আন্তরিক ও সুন্দর মনের একজন মানুষ। তখন বুঝতে পারলাম ঠিক মানুষটিই ‘পরী’ গানটি লিখেছে। যার ভেতর ‘পরী’ গানটির অসাধারন কথাগুলোর মতো অসাধারন সুন্দর একটা মন আছে। যিনি ‘পরী’র মতো সাদা শুভ্র জীবনের একজন মানুষ।

অভিমানী সঞ্জীবদা, রানা ভাই ও চন্দন ভাইয়ের ‘হৃদয়পুরে একা’র গল্প ঃ ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে ‘দলছুট’ ব্যান্ড দিয়ে যে দুজন প্রতিভাকে মানুষকে ‘বাংলা সংগীত’ পেয়েছিল তাঁদের একজন সঞ্জীব চৌধুরী অন্যজন বাপ্পা মজুমদার। সঞ্জীব চৌধুরী বা সবার প্রিয় সঞ্জীবদা আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি রয়ে গেছেন তাঁর সৃষ্টির মাঝে। বাংলা ব্যান্ড ও পপ সঙ্গীতের ক্ষণজন্মা প্রতিভা হ্যাপি আখন্দ যেভাবে হুট করে সবাইকে কাদিয়ে খুব তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছিলেন ঠিক তেমন করেই আরেক ক্ষণজন্মা প্রতিভা ‘সঞ্জীব চৌধুরী কে বা ংলা সংগীত অকালে হারিয়ে ফেলে। এই দুই জনের মিল এক জায়গায়।

দুজনেই ছিলেন বাংলা গানের এক শ্রেষ্ঠ পাওয়া যারা যতদিন ছিলেন ততদিন চারপাশে আলো ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন। আজ সঞ্জীবদা কে নিয়ে একটি গানের কথার পেছনের গল্পটি বলবো। যে গানটি রচনা করেছিলেন গতকাল আমার লিখা বাপ্পা মজুমদার এর জনপ্রিয় ‘পরী’ গানের সেই অসাধারন মানুষ প্রিয় রানা ভাই আর গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের শুদ্ধ ও মার্জিত গানের অতি জনপ্রিয় এবং বাংলা ব্যান্ড ইতিহাসে চিরস্মরণীয় তালিকায় ঠাই করে নেয়া ‘উইনিং’ ব্যান্ড এর ব্যান্ড লিডার, গিটারিস্ট ও ভোকাল চন্দন অর্থাৎ আমাদের সবার প্রিয় ‘ দূর পাহাড়’ খ্যাত চন্দন ভাই যার পুরো নাম জামান আলী চন্দন। আমার সমবয়সীদের ফেলে আসা সেরা সময়ের খুব প্রিয় একটি ব্যান্ড ছিল যার নাম ‘উইনিং’। আমরা সেইসময় যারা গীটার শিখতে চাইতাম বা টুকটাক গীটার বাজাতে পারতাম তারা সবাই প্রথমেই যে গানটির সুর গীটারে তোলার চেষ্টা করতো সেই গানটি হলো ‘ ঐ দূর পাহাড়ের ধারে’ গানটির সুর।

যে গানে একটি মেয়ে একা বসে আপন সুরে গান গাইছিল। বাংলা ব্যান্ড এর কালজয়ী ও শ্রেষ্ঠ গানগুলোর একটি এই ‘দূর পাহাড়’ গানটি গেয়েছিলেন উইনিং ব্যান্ডের ভোকাল চন্দন ভাই। যার কাছ থেকে আমরা আরও পেয়েছিলাম ‘সোনার মেয়ে’, ‘হৃদয় জুড়ে যত ভালোবাসা’, ‘স্মৃতি গুলো মনে পড়ে যায়’ ‘অচেনা শহর’ ‘ইচ্ছে করে যাই চলে’ ‘কেন জানি মেঘের আলাপন’ ‘এখন তুমি অন্য কারো’ সহ অনেক অনেক প্রিয় গান। যা আজো একটি গানও মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি এবং কোনদিন একটি গানও ভুলে যেতে পারিনি। সেই চন্দন ভাই আজ গান থেকে অনেক দূরে নির্বাসনে সুদূর কানাডায় বসবাস করছেন গত ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে।

বর্তমান প্রজন্মের দুর্ভাগ্য যে তারা চন্দন ভাই ও উইনিং কে পায়নি। তাই তাঁদের কাছে চন্দনদা শুধুই লোক মুখে শোনা গানগুলোর এক জীবন্ত কিংবদন্তী ছাড়া আর কিছুই নয়। আর আমাদের কাছে চন্দন ভাই ও উইনিং মানে হলো একটি ‘ভালবাসা’র নাম। পাগল করা সব গানের যাদুকর এর নাম। ২০০৮ এর দিকে রানা ভাই তখন লন্ডনে থাকেন।

চন্দন ভাই তাঁর বহু আগেই গান ছেড়ে কানাডায় সপরিবারে চলে যান। দুজনের সাথে দুজনের কোন যোগাযোগ নেই। একদিন এই ‘ফেইসবুক’ এ চন্দন ভাইকে পেয়ে যান রানা ভাই। সেখান থেকেই চন্দন ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ শুরু এবং এই যোগাযোগটা ফেইসবুকের মধ্য সীমাবদ্ধ ছিল। দুজনের অবসরে যে কথাবার্তা হতো সেটা এই ফেইসবুকের মাঝেই হতো ইনবক্সে।

এভাবে টুকটাক কথা বার্তা চলতো দুজনের। হঠাৎ একদিন চন্দন ভাই নিজের একটা একক অ্যালবাম বের করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন কানাডায় বসেই । সবগুলো গান তিনি কানাডাতে বসেই অবসরে তৈরি করে রেখেছিলেন। দেশে প্রযোজনা সংস্থা ‘অগ্নিবীণা’র সাথেও যোগাযোগ করলেন , ‘অগ্নিবীণা’ চন্দন ভাইয়ের পরিকল্পনার সাড়া দিয়ে দেয় শুরুতেই। মোটামুটি ১০ টি গান তৈরি ।

আরও দুটো গান হলে ভালো হয় না হলে ১০ টি গান দিয়েই অ্যালবাম প্রকাশ করে ফেলবেন চন্দন ভাই। কারন যতই গান থেকে দূরে থাকুক তবুও গান তাকে ছাড়েনি, সেই গানের নেশা থেকেই প্রায় ১০ বছর পর কোন অ্যালবাম বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে চন্দন ভাই ও উইনিং এর সর্বশেষ অ্যালবাম বের হয়েছিল আমাদের সময়ে সেই ১৯৯৬ সালে। এরপর চন্দন ভাইকে ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবামে পাওয়া গেলেও উইনিং নিয়ে আর পাওয়া যায়নি । মাঝখানে ‘অনামিকা’ নামের একটি একক অ্যালবাম বের করেছিলেন সেটাও ৯৮/৯৯ সালের দিকের অ্যালবাম ছিল।

ফেইসবুকে গানপাগল রানা ভাইয়ের সাথে চন্দন ভাইয়ের কথার ফাকে হেকদিন চন্দন ভাই জানায় ‘রানা, একটা অ্যালবাম বের করবো। ২ টা গান দরকার । থাকলে দিও তো’। চন্দন ভাইয়ের কথা শুনে রানা ভাই দেরী না করেই মাত্র কয়দিন আগেই লিখা প্রয়াত সঞ্জীবদা কে নিয়ে একটি গান লিখেছিলেন যার নাম ‘হৃদয়পুরে একা’ । রানা ভাই ছিলেন সঞ্জিব্দার দারুন এক ভক্ত।

তাঁর চলে যাওয়াটা রানা ভাই লন্ডনে বসেই শুনেন। কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। প্রিয় সেই মানুষটিকে নিয়ে লিখে ফেললেন ‘ তুমি ছিলে হঠাৎ তুমি নাই সবাই ফিরলেও কেউ চলে যায় দূরে বহমিয়ান নদী অচিন সুরে ‘’............... যে গানটির নাম দেন ‘হৃদয়পুরে একা’। কারন সঞ্জীবদার কণ্ঠের অনেক প্রিয় ও জনপ্রিয় একটা অ্যালবাম ছিল ‘হৃদয়পুর’ । সেই সঞ্জিব্দাকে ছাড়া আজ ‘হৃদয়পুর’ বড়ই বিষাদী।

সঞ্জীবদা নেই তাই হৃদয়পুরের সবুজ সজীবতাও নেই । রানা ভাই সেদিন বারবার হৃদয়পুর এর হাহাকার শুনতে পেয়েছিলেন। তাই লিখে ফেললেন সেই হাহাকারের কথাগুলো। গানটিতে ‘তুমি ছিলে ... তুমি নাই’ বলতে এখানে রানা ভাই ‘তুমি’ বলতে সঞ্জিব্দাকেই বুঝিয়েছেন বারবার। চন্দন ভাইকে দিয়ে দিলেন সেই গানটি।

চন্দন ভাই নিজেই গানটির সুর ও কম্পোজিশন করেছিলেন অতি নিখুত ভাবে। যেখানে সেই হাহাকার স্পষ্ট। সেই গান সহ ‘ সেদিন রাতে’ নামের আরও একটি গান দিলেন চন্দন ভাইকে নতুন অ্যালবাম এর জন্য। ২ টি গানেই স্থান পেল চন্দন ভাইয়ের নতুন অ্যালবাম ‘ হৃদয় ভরা ভালোবাসা’ নামক অ্যালবামে যা ২০০৯ সালের প্রথমদিকে ‘অগ্নিবীণা’ প্রকাশ করেছিল। আর রানা ভাইয়ের সঞ্জিব্দাকে ছাড়া হাহাকারটি স্থান করে অ্যালবামটিতে।

কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় যে ডিজিটাল শিল্পীদের অ্যালবাম এর ভিরে মান্সম্পন্ন এই অ্যালবামটি রয়ে যায় অনেকের আড়ালে। যেন গানটির মতোই বলতে হয় ‘ডিজিটাল সুরের ডিস্কো বান্দরদের যুগে আজ আর ভালো গানের স্থান নাই’’ । । হৃদয়পুরে একা - সুর সংগীত ও কণ্ঠ চন্দন , কথা- শেখ রানা বাংলা গানের পেছনের কথা ৭ঃ অভিমানী সঞ্জীবদা, চন্দন ভাই ও রানা ভাইয়ের ‘হৃদয়পুরে একা’র গল্প ঃ কবি ও কাব্য (০৯/১০/১২) বাপ্পা মজুমদার এর জনপ্রিয় 'পরী' গানটির পেছনের অজানা গল্প ঃ জনপ্রিয় ‘দলছুট’ ব্যান্ড এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদার এর ‘পরী’ গানটি শুনেনি ও পছন্দ করেনা এমন মানুষ বাংলা গানে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাপ্পা মজুমদার এর সংগীত জীবনের যদি সেরা ১০ টি গানের তালিকা করা হয় সেখানে বাপ্পার একক অ্যালবাম ‘ধুলো পড়া চিঠি’র ‘পরী’ গানটি স্থান পাবে সেই ব্যাপারে কারো কোন সন্দেহ নেই বরং গানটি ঠাই না পেলে সবাই আশ্চর্য হবে।

বাপ্পা মজুমদার কে নিয়ে আজ কোন কথা বলবো না ও বলার প্রয়োজনও নেই। কারন আমার সমবয়সী থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের বাংলা গানের সব শ্রোতার কাছে ‘বাপ্পা’ একটি জনপ্রিয় শিল্পীর নাম। ‘পরী’ গানটি লিখার ঘটনা ঃ ২০০০- ২০০১ এর দিকে রানা ভাই তখন ‘বিআইটি’ তে পড়েন সেই সুত্রে বিআইটি’র হোস্টেলে থাকতেন। ‘বিআইটি’ তে পড়ার সময় অনেকের সাথে পরিচিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে একজন মানুষ রানা ভাইয়ের পরিচিত থেকে কাছের একজন হয়ে গিয়েছিল।

সেই মানুষটিকে রানা ভাই ‘লিটল এঞ্জেল’ নামে ডাকতেন। ‘লিটল এঞ্জেল’ তাকে বড়দের মতো কখনও শাসন করতো, কখনও অধিকার খাটাতো ভালোবাসার অধিকার নিয়ে। রানা ভাইয়ের ভাষায় – লিটিল এঞ্জেল..... ’’'আশ্চর্য ভাত সবটুকু খেতে হবে'। 'আরে,সারাদিন ঘুম!দিলাম,পানি ঢেলে'। 'এত সিগারেট খেলে সিগারেটের প্যাকেট ফেলে দেবো।

' লিটিল এঞ্জেল। । আমি এ নামেই ডাকতাম। আমাকে বড় মানুষের মত শাষন করতো। আমি কপট বিরক্ত হবার ভান করলেও উপভোগ করতাম লিটিল এঞ্জেল এর শাষন।

সুইট লিটিল এঞ্জেল’’ ........ সেই হোস্টেল জীবনের এক আবেশ দুপুরে রানা ভাই হঠাৎ ব্যাগ গুছিয়ে অজানা উদ্দেশ্য বের হয়েছিলেন। উনার সাথে উনার ব্যগ আর রুপম নামের এক ছোট ভাই। রুপম রানা ভাইয়ের ব্যগপ্যাক দেখে বুঝে নিলো উদ্দেশ্যবিহীন কোন অজানা গন্তব্য ছুট দিবেন রানা ভাই। সেদিনই রিক্সা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ ট্রেন যেতে দেখলেন। সাথে সাথে রিক্সা থেকে নেমে দৌড়ে ট্রেনে উঠলেন।

সঙ্গী রুপম জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ব্যাগ, সিগারেট সব দিয়ে দিলেন। তখন রানা ভাই জানে না ট্রেনটি কোথায় যাবে...... । । সেই অজানা গন্তব্যটি সেবারের মতো নাটোরের লালপুরে গিয়ে শেষ হলো। নাটোরের লালপুরের একরাতে বসে নিজের মনে জয় গোস্বামী’র কবিতার বই পড়ছিলেন ।

এই জয় গোস্বামী’র বই পড়ার আগ্রহটা রানা ভিয়ের মাঝে তৈরি করেছিলেন ‘দলছুট’ ব্যান্ড এর বাপ্পাদা। বাপ্পাদা’র কথায় জয় গোস্বামীর বই পড়া শুরু করলেন। লালপুরে সেই রাতে জয় গোস্বামী’র বই পড়তে পড়তে হঠাৎ করে বইয়রে ভেতরে থাকা সাদা পাতায় হুট করে লিখে ফেলেন – ঃ আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে, তুমি আনমনে বসে আছো আকাশ পানে দৃষ্টি উদাস আমি তোমার জন্য এনে দেবো মেঘ থেকে বৃষ্টির ঝিরিঝিরি হাওয়া সে হাওয়ায় ভেসে যাবে তুমি। আজ তোমার চোখের কোনে জল বৃষ্টিও অবিরাম কাঁদে তোমার সাথে আমার পথে, আমি তোমার জন্য এনে দেবো রুপালী রোদ্দুরের ক্ষন পাখি কে করে দেবো তোমার আপনজন পরী,তুমি ভাসবে মেঘের ভাঁজে..... কথাগুলো লিখেই আবার সেই সাদা পাতাটা বইয়ের মাঝে ভাজ করে গুজে রাখলেন। উদ্দেশ্যবিহীন অজানায় ঘুরা শেষ করে ঢাকায় ফিরলেন।

তখন বাপ্পাদার একক অ্যালবাম ‘ধুলো পড়া চিঠি’র কাজ প্রায় শেষ পথে। বেইলি রোডে রানা ভাই ও বাপ্পা দা একসাথে বসে অ্যালবাম এর কভার ডিজাইন দেখছেন। তখনই বাপ্পা দা রানা ভাইকে বললেন ‘ অ্যালবাম এর জন্য আরও ২ টা গান দরকার যা খুব তাড়াতাড়ি দরকার। ‘ বাপ্পাদার কথা শুনে রানা ভাই জয় গোস্বামীর বইয়ের ভেতরের সাদা পাতায় লিখাটা পকেট থেকে বের করে দিলেন। যতটুকু লিখাছিল ততটুকুই ঐ সময়ে কাভারে দিয়ে দেন কিন্তু তখনও গানটির কোন টিউন হয়নি।

এক সপ্তাহ পর বাপ্পাদার ফোন পেলেন। ফোনের অপাশ থেকে বাপ্পা দা রানা ভাইকে বলছেন ‘’ 'গানটা শোনো,আর এক অন্তরা লাগবে। ‘’ গানটা শুনেই রানা ভাইয়ের ভেতরে এক অপার্থিব অনুভূতি এলো। খুব অল্প সময়ে লিখে ফেলেন আরেক অন্তরা যা বাপ্পাদা কে টেক্সট করে সাথে সাথে পাঠিয়ে দেন – ‘’আজ তোমার জোছনা হারায় আলো প্রজাপতির ডানায় বিষাদ করে ভর যখন তখন, আমি তোমার জন্য এনে দেবো অঝোর শ্রাবন, আকাশছোঁয়া জলজোছনা পরী,তুমি ভাসবে মেঘের ভাঁজে..... ‘’ উৎকণ্ঠায় কাটে দুদিন। ঠিক মতো লিখা হলো কিনা? মাত্রা ঠিক আছে কিনা এসব।

২ দিন পর বাপ্পাদার বাসায় গিয়ে পুরো গানটা শুনে নিজেই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। মনের ভেতরে তখন ‘লিটল এঞ্জেল এর ছবি আর অদ্ভুদ জোছনা বৃষ্টি ‘র অনুভূতি অনুভব করলেন। এইভাবে তৈরি হয়ে যায় ‘পরী’ গানটি। যা ‘ধুলো পড়া অ্যালবাম ‘ এর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসেবে শ্রোতা মহলে দারুন সাড়া ফেলে । আজো অনেকে গুনগুন করে ‘ আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে’ ......... ।

। রানা ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও ভালোলাগা জানাই এমন সুন্দর একটি গান আমাদের উপহার দেয়ার জন্য। আরও বেশি চাই এমন গান যেন বাংলা গানের আজকের আধার যুগকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় দূরে বহু দূরে । । (আগামী পর্বে পাবেন শিবলি, জেমস ও ফিলিংস এর জেল থেকে বলছি গানের পেছনের অজানা গল্প ) ****জনপ্রিয় বাংলা গানের পেছনের গল্প ০৬ ঃ ‘বাপ্পা মজুমদার এর পরী’ গানটির পেছনের মানুষটির গল্পঃ কবি ও কাব্য (০৯/১০/২০১২)**** বাংলা গান নিয়ে এমন আরও অনেক গল্প শুনতে ক্লিক করুন  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.