আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোপনীয়তায় আড়ি পেতেছে প্রিজম

অনলাইনে গোপন কোনো কিছুই আর কার্যত গোপন থাকছে না। অভিযোগ উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন ও টেলিফোনে আড়ি পেতে তথ্য সংগ্রহ করছে । সম্প্রতি তাঁদের বড় একটি অভিযানের খবর ফাঁস করে তোলপাড় তুলেছে ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ান পত্রিকা। প্রতিবেদনে বের হয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের গোপনে তথ্য সংগ্রহ করার কর্মসূচির নাম ‘প্রিজম’।
বৃহস্পতিবার ৬ জুন বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধারণা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৭ সালের পর থেকেই ‘প্রিজম’ নামের এই গোপনে আড়ি পাতা কর্মসূচি চালু হয়েছে।

টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই গোপনে আড়ি পাতার এ কর্মসূচি চালু করেছিলেন। প্রিজমের মাধ্যমে মার্কিন গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহের পরিবর্তে অনলাইনে থাকা সব রকম তথ্যের দখল নিতে পারে। জর্জ বুশের নেয়া সেই কর্মসূচী যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আরও শক্তিশালী করেছেন।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ান পত্রিকায় ‘প্রিজম’ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান ক্ল্যাপার দাবি করেন, প্রিজম সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশিত সব তথ্য সঠিক নয়। তবে এ নিয়ে সমালোচনা থেমে নেই।


ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, নয়টি প্রতিষ্ঠানের তথ্যে আড়ি পাতা হচ্ছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আড়ি পাতা হয়েছে সেগুলো হলো মাইক্রোসফট, ইয়াহু, গুগল, ফেসবুক, পালটক, এওএল, স্কাইপি, ইউটিউব ও অ্যাপল। প্রিজম নামে গোপন এক কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভারে প্রবেশ করেছে এনএসএ। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ড্রপবক্সের মতো নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো নজরদারির তালিকায় রয়েছে।
৬ জুন ওবামা প্রশাসনের গোপনে তথ্য সংগ্রহ করার তথ্য ফাঁস করে গার্ডিয়ান।

গার্ডিয়ানের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ভেরিজনকে গোপনে আদালতের একটি আদেশের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর তথ্য হস্তান্তরের জন্যও বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠান থেকে গোপনে তথ্য নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি-এনএসএ) প্রধান জেমস ক্ল্যাপার ৬ জুন বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে এ কথা স্বীকার করেন।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের গোপনে টেলিফোন ও ইন্টারনেটে আড়িপাতার ঘটনা যে আগের মতোই বিদ্যমান, এ ঘটনায় তা আবারও প্রমাণিত হল।
এদিকে ৭ জুন রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা প্রশাসনের গোয়েন্দারা।

এর আওতায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করতে গোয়েন্দারা সরাসরি নয়টি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে আড়ি পেতেছেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ান পত্রিকা এ খবর ফাঁস করলে গোয়েন্দা প্রধান জেমস ক্ল্যাপার দাবি করেছিলেন, এই নীতি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে তিনি এ তথ্য ফাঁস করায় ভালোমতোই চটেছেন। নজরদারি কার্যক্রমের এ খবর প্রকাশের বিষয়টিকে ‘এখতিয়ারবহির্ভূত উন্মোচন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান। তথ্য ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই, বিচার বিভাগসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা একটি ফৌজদারি তদন্তে নামছে বলেও জানান তিনি।


তবে ‘প্রিজম’ নামের এই গোপন কর্মসূচী যে, প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার লঙ্ঘন করছে তা নিয়ে বিশ্বজুড়েই তৈরি হয়েছে সমালোচনা।
সমালোচনার মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও এ নজরদারির পক্ষেই কথা বলতে হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় গত শুক্রবার বারাক ওবামা সাংবাদিকদের কাছে গোপনে মার্কিন নাগরিকদের ফোন রেকর্ড ও ইন্টারনেট থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার পক্ষে ওবামা বলেন, এর মাধ্যমে তাঁর প্রশাসন নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার মধ্যে ‘সঠিক ভারসাম্য’ নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রিজম’ নিয়ে তৈরি তুমুল বিতর্কের ঝড়ে ওবামা প্রশাসনকে প্রিজমের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়ে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করতে হয়েছে। ৮ জুন প্রকাশিত এ বিবৃতিতে গোপনে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য, কর্মসূচীর বিস্তারিত জানিয়েছে ওবামা প্রশাসন।


প্রিজম নিয়ে ওবামা প্রশাসন বিপাকে পড়লেও ‘প্রিজম’-এর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে শীর্ষস্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। গুগল, অ্যাপল ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গোয়েন্দাদের এ ধরনের আড়ি পাতার কাজে মূল সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ দিতে অস্বীকার করেছিল বলেও জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে গুগল জানিয়েছে, ‘ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়ে গুগল সতর্ক।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ শুক্রবার বলেছেন, সরকারের কোনো এজেন্সি বা আদালত তাঁদের গ্রাহকদের তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেননি। প্রিজম নামের কোনো কার্যক্রমের কথাও তিনি আগে শোনেননি।

’ অ্যাপল কর্তৃপক্ষও প্রিজমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে যে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো অস্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে কতক্ষণ তারা শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে?

এক নজরে প্রিজম


প্রিজম কী?

প্রিজম হচ্ছে ‘প্ল্যানিং টুল ফর রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন, সিনক্রোনাইজেশন, অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ এবং ‘ডাটা টুল’। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ডাটা টুল যা যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভারগুলোতে থাকা সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রিজম হচ্ছে, বিশেষ গ্রাফিকস ইউজার ইন্টারফেস যা তথ্য বিশ্লেষণ করতে এবং তথ্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারে।

প্রিজমের লক্ষ্য

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার বিবৃতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের যেকোনো দেশের নাগরিকদের তথ্যের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি হয়েছিল প্রিজম।



প্রিজমে কোন ধরনের তথ্য দেখা হচ্ছে?

গুগল ও ফেসবুকে থাকা ছবি, তথ্য, মেইল, চ্যাট, ফাইল থেকে শুরু করে সব ধরনের তথ্য দেখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভারে থাকা অনলাইনের যাবতীয় তথ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা নজরদারি করেন বলেই নিউ ইয়র্ক টাইমসের দাবি।

বারাক ওবামার দাবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মন্তব্য হচ্ছে- ‘চিন্তা করবেন না, আমাদের বিশ্বাস করতে পারেন’।

চিন্তার বিষয়?

আপনার পাঠানো ব্যক্তিগত মেইল, তথ্য সব সময় নজরদারিতে রয়েছে। চিন্তার বিষয়।

আবার বারাক ওবামার অভয় বাণী বিশ্বাস করলে চিন্তার কিছুই নেই। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।