আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ্যাংকর ভাট- মধ্যযুগীয় সপ্তাশ্চর্য

অ্যাংকর ভাট অর্থাৎ "শহরের মন্দির" কম্বোডিয়ার অ্যাংকরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মধ্যযুগীয় মন্দির। সুবিশাল এই স্থাপনাটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মন্দির। ১২শ শতাব্দীতে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন রাজা ২য় সূর্যবর্মণ। তিনি এটিকে তাঁর রাজধানী ও প্রধান উপাসনালয় হিসাবে তৈরি করেন। তখন থেকেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান হিসাবে বিবেচিত।

প্রথমদিকে হিন্দু মন্দির হিসাবে ব্যবহৃত হলেও পরে এটি বৌদ্ধ মন্দিরে পরিণত হয়। অ্যাংকর ভাটের নির্মাণশৈলী খ্‌মের সাম্রাজ্যের স্থাপত্য শিল্পকলার অনুপম নিদর্শন। এটি কম্বোডিয়ার জাতীয় পতাকায় স্থান পেয়েছে, এবং দেশটির প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। অ্যাংকর ভাটে খ্‌মের মন্দির নির্মাণ কৌশলের দুই ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে - টেম্পল মাউন্টেন বা পাহাড়ি মন্দির ধাঁচ, ও গ্যালারি মন্দির ধাঁচ। এটি হিন্দু পুরাণের দেব-দেবীদের বাসস্থান মেরু পর্বতের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে।

এর চারদিকে রয়েছে পরিখা ও ৩.৬ কিমি দীর্ঘ প্রাচীর। ভিতরে ৩টি আয়তাকার গ্যালারি বা বেদি আকৃতির উঁচু এলাকা রয়েছে। মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে স্তম্ভাকৃতির স্থাপনা। অ্যাংকরের অন্যান্য মন্দিরের সাথে পার্থক্য হল - এটির সম্মুখ ভাগ পশ্চিমমুখী। মন্দিরটির বিশালত্ব, সৌন্দর্য ছাড়াও এর দেয়ালের কারুকার্যের জন্য এটি সারাবিশ্বে পরিচিত।

অ্যাংকর ভাট মন্দিরের নির্মাণকার্য শুরু হয় ১২শ শতাব্দীর প্রথমভাগে, রাজা ২য় সূর্যবর্মণের রাজত্বকালে (১১১৩-১১৫০)। মন্দিরটির আরাধ্যদেবতা ছিল বিষ্ণু। এটি সূর্যবর্মণের মূল মন্দির ও রাজধানী হিসাবেও ব্যবহৃত হতো। তবে মন্দিরের স্থাপনার সময়কার কোন লেখা বা সমসাময়িক কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় নাই বলে মন্দিরটির আদি নাম কী ছিল, তা অজ্ঞাত। মন্দিরটি বর্তমানকালের সিয়েম রিপ শহরের ৫.৫ কিমি. উত্তরে, এবং প্রাচীন রাজধানী শহর বাফুওন এর সামান্য দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।

রাজা সূর্যবর্মণের মৃত্যুর পর এর নির্মাণ কার্য বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এর দেয়ালের কিছু কারূকার্য অসমাপ্ত থেকে যায়। ১১৭৭ সালে অ্যাংকর শহরটি খ্‌মেরদের চিরাচরিত শত্রু চামদের হাতে পরাজিত ও লুণ্ঠিত হয়। এর পরে নতুন রাজা ৭ম জয়বর্মণ রাজ্যটিকে পূনর্গঠিত করেন। তিনি অ্যাংকর ভাটের কয়েক কিমি উত্তরে অ্যাংকর থোম এ নতুন রাজধানী ও বায়ুন নগরে প্রধান মন্দির স্থাপন করেন।

বর্তমানে অ্যাংকর ভাটের মন্দিরটি কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এটি দেশবাসীর গৌরব। ১৮৬৩ সালে প্রথম প্রবর্তনের পর থেকে কম্বোডিয়ার সব পতাকাতেই অ্যাংকর ভাটের প্রতিকৃতি স্থান পেয়েছে। সারা বিশ্বে এটিই একমাত্র ভবন যা কোন দেশের পতাকায় প্রদর্শিত হয়েছে। অ্যাংকর ভাটে মন্দিরটি খ্‌মের স্থাপত্যের প্রকৃষ্ট নিদর্শন।

পরবর্তীতে এধরণের স্থাপত্য কলাকে অ্যাংকর ভাট রীতি নাম দেয়া হয়। ১২শ শতক নাগাদ খ্‌মের স্থপতিরা ইটের বদলে স্যান্ডস্টোন (বা পাথর) ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করেন। অ্যাংকর ভাটের রীতির পরে শুরু হয় বায়ুন পর্ব, যখন সৌন্দর্যের চাইতে বিশাল আকারের স্থাপনা গড়াকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। এই সময়ের অন্যান্য মন্দিরের মধ্যে রয়েছে বান্তাই সাম্রে, থোম্মানন, চাও সে তাভোদা এবং অ্যাংকর এর প্রিয়া পিথুর আদি মন্দির গুলি। অ্যাংকরের বাইরে বেং মিয়ালিয়া, এবং ফানম রুং ও ফিমাই এর মন্দির গুলি এই ধাঁচ অনুসরণ করেছে।

১৯৯০ এর দশক হতে অ্যাংকর ভাটের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। এর সাথে সাথে শুরু হয় পর্যটনশিল্প। ভারতের পুরাতাত্তিক সংস্থা ১৯৮৬ হতে ১৯৯২ সালের মধ্যে মন্দিরটিতে সংস্কারের কাজ করে। মন্দিরটি অ্যাংকরের বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসাবে ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯২ সালে স্বীকৃত হয়। এতে করে মন্দিরের সংস্কারের জন্য অর্থায়ন ও কম্বোডিয়া সরকারের দ্বারা মন্দিরের সুরক্ষার কার্যক্রম সহজতর হয়েছে।

জার্মানির অপ্সরা সংরক্ষণ প্রকল্প এই মন্দিরের অপ্সরা ও দেবতাদের ছবি সম্বলিত কারুকার্যমন্ডিত দেয়ালের নকশাকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করছে। (সংগৃহীত)  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।