আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবীর সুমন (সুমন চট্টোপাধ্যায়) এর যে অ্যালবামটি আমাকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করে

অর্থ নয়, কীর্তি নয়...আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে খেলা করে কবীর সুমন (সুমন চট্টোপাধ্যায়) এর যে কয়টি অ্যালবাম শুনেছি সেগুলো হল- তোমাকে চাই (১৯৯২) ইচ্ছে হলো (১৯৯৩) মহাসংগ্রাম (১৯৯৩) বসে আঁকো (১৯৯৩) গানওয়ালা (১৯৯৪) ঘুমাও বাউণ্ডুলে (১৯৯৫) চাইছি তোমার বন্ধুতা (১৯৯৬) জাতিস্মর (১৯৯৭) নিষিদ্ধ ইশতেহার (১৯৯৮) পাগলা সানাই (১৯৯৯) যাবো অচেনায় (২০০১) নাগরিক কবিয়াল (২০০১) আদাব (২০০২) Reaching Out (২০০৩) অনেকদিন পর (২০০৫, এটা সুমন অঞ্জন ডুয়েট) দেখছি তোকে (২০০৫) এগুলো এইচএমভি থেকে বের হয়। তাছাড়া ২০১০ এ লেজার ভিশন থেকে ‘সুপ্রভাত বিষন্নতা’ নামে একটি অ্যালবাম বের হয়। এই অ্যালবামের গানের কথা, সুর ও সঙ্গীত সুমন, গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন। এগুলোর মধ্যে যে অ্যালবামটি আমাকে সবচেয়ে অভিভূত করে সেটি হল ‘যাবো অচেনায়’। এখানে গান ও পাঠ মিলিয়ে মোট ১৬টি ট্র্যাক আছে।

প্রতিটি গানই (বা পাঠই) ছুটি বিষয়ক। এই অ্যালবামে সুমন ছুটিকে এত বিচিত্র পরিসরে দেখেছেন যে অবাক হতে হয়। এখানে ‘আমার ছুটি’ নামে একটি ট্র্যাক আছে, যা গান নয়, পাঠ। এখানে ছুটির সকালের একটি অতি মনোরম বর্ণনা পাই। পারসনিফিকেশনে ভরপুর এই ট্র্যাকটি শুনতে শুনতে এক আলস্যমাখা ছুটির সকালে হারিয়ে যাই।

‘চিলকা’ শিরোনামের একটি গানে চিলকা লেকের পাশে ছুটি কাটানোর কথা আছে। আটপৌরে একঘেয়েমি কাটিয়ে চিলকার ছুটি কামনার পটভূমি হয়ে ওঠে। কিন্তু সে কামনা বর্ণনার গুনে হয়ে ওঠে শিল্পশরীর। আরেকটি মজার গান হল ‘ছুটি ডট কম’। ইন্টারনেটের মহাদেশে হারিয়ে গিয়ে আমাদের যেন আর ছুটি নেই।

এখানে কথক ছুটি সার্চ করতেও ইন্টারনেটেই ঢুকে বলছেন, “ইন্টারনেটে ঢুকে খুঁজছি কপাল ঠুকে ছুটি ডট কম”। সুমন এবং অঞ্জন খুব ভাল বন্ধু। এবং এরা এদের গানে প্রায়ই একে অন্যের কথা বলেন। এরকম একটি গান হল ‘দার্জিলিং এর গান’। এই গানে সুমন বলছেন অঞ্জনের গানের কথা যে গান তাকে ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়।

সেই ছেলেবেলা খুঁজতে গানে নিমন্ত্রণ জানানো হয়, “চল অঞ্জন ছুটিতে দার্জিলিঙে/ টেলিগ্রাফের তারেই নাচুক ফিঙে/ ছেলেবেলা তার ছন্দেই একাকার/ চল অঞ্জন গিটারটা দরকার”/ ‘এই ভাবে’ নামের একটি পাঠ আছে। এই পাঠে বলা হয়, “এবার ছুটিতে ছাদে যাব”। সম্ভবত ছুটিতে কোথাও যাবার আর্থিক অসচ্ছলতা কিংবা কোন কারণে বিষন্নতা ভর করে আছে, যে কারণে ছুটি কাটানোর এই পরিকল্পনা। এই পাঠে কিছু চমৎকার লাইন আছে "গোপন প্রেমের মত ছুটি/ সিঁড়ির তলায় গুটিসুটি/...মগডালে পাতা নেই কোন/ নীলিমায় ছুটি ডাকে শোন"/ ‘একলা হলে’ নামের গানটি এক মাঝবয়সী মহিলার এককীত্ব নিয়ে। স্কুল থেকে ফিরে ছেলে কোথাও খেলতে গেছে।

স্বামীর সময় কম। যৌবন ছুট নিয়ে চলে গেছে। বয়সকালে হওয়া নতুন বন্ধুরা আসবেন। তাই বিকেলের চা বানাতে বানাতে স্মৃতিকাতরতা ভীড় করে আসে। ‘হরতাল’ নামের গানটিতে কর্মব্যস্ততার মাঝে ছুটি নেমে আসে হরতালের দিনে।

সেদিন সুযোগ বুঝে আকাশকে জিজ্ঞাসা – কেমন আছ। ‘হঠাৎ ছুটি’ গানটি লোডশেডিং নিয়ে। সন্ধ্যায় হঠাৎ অনেকদিন পর ক্যাবল ফল্টের কারণে বিদ্যুৎ চলে যায়। নেমে আসে হঠাৎ ছুটি। মনে হয়, “রান্না থাক আঁধার ঢাকা/ চায়ের লোভে ব্যস্ত থাকা আমার অবসর/ চায়ের পাট তোলাই থাক/ কাজের কাজ নিপাত যাক অনেক দিন পর”/ ‘জেগেও চিন্তা’ গানটিতে বেঁচে থাকার রসদ যোগান এর উদ্বেগ নিয়ে একটা ছুটির দিন কেটে যায়।

দিন শেষে ছুটির দিনটা বৃথাই কাটল বলে হতাশা উচ্চারিত হয়। ‘মুরগির ছুটি’ একটি পাঠ ট্র্যাক। এখানে প্রথমে একটি দৃশ্যের বর্ণনা আছে যেখানে কিছু ছাল ছাড়ানো মুরগি একটা ভ্যান গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা দেখে কথকের চিন্তা হয় আমরা আসলে সবাই মুরগি। বন্ধুও বন্ধুকে কখন জবাই করবে সেই চিন্তাতেই মগ্ন।

পাঠ শেষ হয় এই উচ্চারণ দিয়ে, “দাঁড়ান ভাই আমিও এই ভ্যান গাড়িতেই উঠি/ একটু পরেই আঁশ বটিতে হবে সবার ছুটি”/ ‘ওই পারে ছুটি’ পাঠে এক কাজ-পাগল লোকের কথা আছে। তিনি ক্যালেন্ডার থেকে ছুটির দিনগুলোকে বাদ দিতে চান। কিন্তু জীবনের প্রান্তে এসে নিজের ছুটিটা এড়াতে পারেন না। সেই ছুটি ওই পারে। ‘রাধানাথের ছুটি’ গানে জীবন যুদ্ধে পরাজিত এক বিপন্ন কল মজুর এর কথা বলা হয়েছে।

রাধানাথের অবিবাহিত মেয়ের গর্ভে বাচ্চা এসেছে। কল বন্ধ হয়ে গেছে। জীবনের এই পর্যায়ে এসে রাধানাথ ছুটি চায়। কিন্তু পেট কবে ছুটি নেয়। এইসব চিন্তায় পথ চলতে চলতে দু’টি বাস প্রতিযোগিতা করে রাধানাথকে শেষ ছুটি দিয়ে যায়।

‘তোমাকেই দরকার’ গানে ছুটি মঞ্জুর হয় না। নাই বা হল, “ছুটি না জুটুক আসলে আমার তোমাকেই দরকার”। ‘তুমি বললেই হবে’ একটি পাঠ। এখানে ‘তুমি’ কথাটিই গুরুত্ব পেয়েছে। তুমি বললেই সব হবে।

এমনকি তুমি বললেই ছুটি। ‘তুমি তো চললে’ গানটি একজনের শেষ বিদায় নিয়ে। এই গানে কিছু অসাধারণ লাইন আছে। “থাকতে এসেছি ভাবতে ভাবতে সবাই পালায়/ ...আসা মানেই তো প্রস্তুতি শুরু বিদায় নেবার”/ এই অ্যালবামের গানগুলোর মধ্যে আমাকে সবচেয়ে আলোড়িত করে অ্যালবামের শিরোনাম এর গানটি ‘যাবো অচেনায়’। গানের সেটিংস পরীক্ষার পর ছুটির উপর।

জীবনের এই পরীক্ষার পর যখন ছুটি হয়, সকলে ছুটিতে যায়, সেই ছুটি অচেনার ছুটি। যাবো অচেনায় (কবীর সুমন) আসুক পরীক্ষাটা তারপরে ছুটি তারপর ছোলাগুড় আর পাউরুটি পাগলা দাশুতে আছে ছু’টির মেজাজ সেসব পরের কথা পরীক্ষা আজ এখনো রয়েছ ছোট বেঁচে গেছ তাই বুঝবে বয়েস হলে বেঁচে থাকাটাই অবিরাম পাশ ফেল পরীক্ষা দেওয়া লুকিয়ে লুকিয়ে চলে কিছু বেঁচে নেওয়া ফিক করে হেসে ফেলা আকাশটা দেখা ফুলঝাড়ু হেঁকে কেউ যায় একা একা লোকটা কোথায় থাকে আছে কি ঘরনী সেও কি আদুরে বউ শ্যামল বরণী পরবাসীর বন্ধুর মুখখানি ভাসে দক্ষিণ থেকে আসা ছুটির বাতাসে ফাল্গুন শেষ হলে ধুলোর সময় স্মৃতিরা প্রশ্ন করে পরীক্ষা হয় উত্তর খুঁজে যাই ভাবনা ফেনিয়ে ঠোঁটে সিগারেট হাতে দেশলাই নিয়ে ধোঁয়ার ভেতরে ছবি অশরীরী কারা চুপচাপ দেখে যায় আমার চেহারা ইন্টারভিউ হয় একা মুখোমুখি বলতো মানুষ তুমি হয়েছ কি সুখী স্বস্তি স্তব্ধতায় উত্তরে চুপ তবুও বাঁচার নেশা বেহায়া লোলুপ এ নেশাও ছুটি নেবে কোন একদিন সেদিনের পরীক্ষা স্মরণে বিলীন শেষ প্রশ্নটা হবে শেষ দরজায় সকলে ছুটিতে যাবো যাবো অচেনায় এই লিংকে গানগুলো পাওয়া যাবে। Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।