আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মকথন০১- পলিটেকনিক এর ঘুষখোর ডিজিটাল মাস্টার ও আমার কম্পিউটার কেনা

আমার লেখা কেও পড়ুক আর না'ই পড়ুক, আমি লিখব, লিখেই যাব। "আহমেদ সজীব আমান। " পলিটেকনিক এর ঘুষখোর ডিজিটাল মাস্টার ও আমার কম্পিউটার কেনা দিনটা ২০১০ সালের ১০ই অগাস্ট, কেমন যেন আলাদা একটা দিন আমার জন্য । খুব ভোরে ঘুম থেকে আমার উঠার অভ্যাস, যথারীতি সেদিনও উঠলাম । এই দিনটা আমার জন্য কেন আলাদা তার একটা ব্যাখ্যা দিয়ে নিই, আজ আমার জন্য কম্পিউটার কেনা হবে ।

এস এস সি পাস করলাম একটা গ্রামের স্কুল থেকে কারণ আমি গ্রামে থাকি । জি পি এ খুব ভাল না মাত্র ৪.৮৮ । যেখানে অন্যরা গোল্ডেন এ+ পাই সেখানে আমার এই রেজাল্ট খুবই নগণ্য । যা হোক ভর্তি হলাম একটা পলিটেকনিক ইন্সিটিউট এ সেখানেও এ+ এর ছড়াছড়ি । টানা এক মাস ওয়েটিং এ থাকার পর ভর্তি হতে পারলাম, পেলাম সবচেয়ে জটিল ডিপার্টমেন্ট ইলেক্ট্রনিক্স, পড়তে গিয়ে ত আমার যা তা অবস্থা ।

আর স্যার মহাশয়েরা তো পুরা ধান্দাবাজ । ক্লাস এ তো সরাসরি বলে প্রায়ভেট না পড়লে মার্কস পাবানা, পড়লে এ+ না পড়লে সি+ । হায় আমার কপাল রে বাইছা বাইছা এই খানে নিয়া আসলি । প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বেশ ভালই দিলাম । প্রাক্টিক্যাল পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখি আমার কয়েক বন্ধু খাম হাতে নিয়ে স্যারের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমি বললাম, কিরে তোরা কি স্যারকে বিয়ার দাওয়াত দিতে আসছিস নাকি? না ঈদ কার্ড দিচ্ছিস? ওদের জবাব শুনে তো আমি লা জবাব, অরা নাকি পাসের জন্য নজরানা দিচ্ছে ।

আমি মনে মনে হাসলাম, হায়রে সরকারী প্রতিষ্ঠান, এমন কইরা টাকার জন্য একজন টিচার এতটা নিচে নামতে পারে । অবশেষে ফলাফল বের হল দেখলাম অবস্থা আসে যাই অবস্থা । ঐ নীতিবান ধান্দাবাজ স্যারের ছিল ৩ টা সাবজেক্ট ৩ তেই সি । বাকি গুলাতে এ, এ+ । আরে ঐ স্যার তো খাতাই দেখে না, না দেখেই নম্বর দিতে এক্সপার্ট ।

এমন গুণী টিচারের ছাত্র হতে পেরে আমি ধন্য । আরে ধুর কম্পিউটার কিনতে গিয়ে কলেজ চলে গেছি । আসল কথায় আসি, আমার এক হাম্বাটাইপ (দোস্ত রাগ করিস না) বন্ধু আছে নামটা বলছি না । ও আমার সাথে ভর্তি হল, পেল কম্পিউটার বিভাগ । ক্লাস শুরু করার কয়েক দিন পরেই পিসি কিনে নিল ।

তখন আমি ঐ জিনিসটার অ আ ক খ কিছুই জানি না । দেখতে জোস লাগল ওর পিসি টা, ব্যাস আমিও বাপের কাছে বাইনা ধরলাম “কিনে দিন কিনে দিন, অনেক কষ্টে রাজি করালাম । বলে রাখি আমার আব্বা কিন্তু কৃষক । বুঝেনই তো আমাদের ইনকাম সিজনাল । অবশেষে কেনা হল ।

কম্পিউটার কেনার পর পড়লাম আর এক ফাঁপরে কিভাবে চালাতে হয় টা আমি জানিনা । একটু কিছু হলেই তো পুরা মাথানস্ট, আমি যখন পিসি টা কিনি তখন ওখান থেকেই কিছু সফটওয়্যার লোড ও ইন্সটল দিয়ে দিয়েছিল যেমন এম. এস অফিস, একটা ফ্রী আন্টিভায়রাস আরও হাবিজাবি মিডিয়া প্লেয়ার ইত্যাদি । একটা পেন ড্রাইভ ঢুকাতে গিয়ে কম করে তিন বার স্ক্যন করতাম । একটু কিছু হলেই বুকের মাঝে ডুগডুগি বাজতে শুরু করত । একদিন রাতে পিসি ঠিকঠাক সকাল বেলা অন করতে গিয়ে দেখি আর অন হয় না ।

আমি ত শেষ কি করব এখন, থাকি তো গ্রামে হেল্প করারও কেও নাই। এক বড় ভাই ছিল এলাকায়, সে আবার কম্পিউটার এ ডিপ্লোমা (!) যাহোক ভাই কে ডেকে নিয়ে আসলাম, সে কেসিং এর স্ক্রু একটা একটা করে খুলে আর মনে হয় মামুর বুঠা আমার হাড্ডি খুলতাছে । শেষ মেশ ঐ ভাই অনেকক্ষণ ঝুলাঝুলি করার পর জানাল, পাওয়ার সাপ্লাই পুড়ে গেছে। আমার তো মাথাই বাঁশ । কেনা এক মাসও হয়নি তার মধ্যেই এই অবস্থা ।

ওয়ারেন্টি আছে কিন্তু পিসি কিনেছি বগুড়া থেকে ওটা অন্য জেলা, চাচার বাড়ি । তারপর নিজের শহরের সারভিসিং সেন্টারে গেলাম, ওরা চেক করে দেখল পাওয়ার সাপ্লাই না জাস্ট পাওয়ার কেবল টা কেটে গেছে । আরও কত কিছু যে হল । ২ বছর ৬ মাস পর ... এখন কত কিছুই না জানি । হার্ডওয়্যার ট্রাবলশুটিং থেকে শুরু করে ওয়েব পেজ ডিজাইন পযর্ন্ত শিখে ফেলেছি ।

আমার মত হাম্বা মার্কা একজন যদি দুই বা আড়ায় বছরে এত কিছু করতে পারে তাহলে আমাদের দেশে অনেক মেধাবী ছেলে/মেয়ে আছে যারা গ্রামে থাকে কম্পিউটার নামক বস্তুটা হয়ত ছুঁয়েও দেখেনি তারা যদি একবার সে সুযোগ টা পেত তবে আমার বিশ্বাস আমাদেরকে কেও প্রযুক্তিতে অনগ্রসর বলতে পারত না । আজ আমরা অন্যতম প্রযুক্তি সম্পন্ন দেশ হিসাবে পৃথিবীর বুকে পরিচিতি লাভ করতাম । আমি মনে করি আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা (শহর গ্রাম নিবির্শেষে) অনেক বেশি মেধাবী । তারা যদি উন্নত দেশের মত জন্মের পর পরই কম্পিউটার বা আধুনিক প্রযুক্তি পেত তাহলে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আর ডিজিটাল বাংলাদেশ চিল্লা চিল্লি করতে হত না , এমনিতেই আমরা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এর এক নম্বরে থাকতাম । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।