আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ অনীনদিতা এবং তার ফলোয়ার !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -একটা ছেলে আমাকে ফলো করে । -আরে তাই নাকি ? ভাল তো । -ভাল ? -হুম । জানিসতো এখন ফেসবুকে যার যত বেশি ফলোয়ার তার ডিমান্ড তত বেশি । আমাদের ইমরান সরকারকে চিনিস না ? ঐ যে কিউট মত ছেলেটা ? জানিস অনার না একান্ন হাজার ফলোয়ার ।

সুমি কথা গুলো প্রায় একদমে বলে ফেলল । অনীনদিতা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারল না । মানুষ এতো বেকুব কিসিমের হয় কেমনে ? আশ্চার্য ! অনীনদিতার মুখ গম্ভীর দেখে সুমি বলল -কি ? আমি ভুল কি বললাম ? এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস ক্যান ? -শোন তোর কাছে কথাটা বলাই আমার ভুল হয়েছে । আমি বললাম একটা ছেলে আমাকে ফলো করে আর কথা থেকে ইমরান সরকারের ফেসবুক ফলোয়ারকে টেনে আনলি ! -তো ভুল বললাম কোথায় ? -আরে গাধা । ঐ ছেলেটা আমাকে ফেসবুকে না সরাসরি বাস্তব জীবনেই ফলো করে ।

অনীনদিতার কথা শুনে সুমি যেন আকাশ থেকে পড়ল ! ছেলেরা যে মেয়েদের ফেসবুকের বাইরে বাস্তব জীবনেও ফলো করতে পারে এটা যেন ওর ধারনার বাইরে ছিল । আসলেই অনীনদিতা কদিন থেকে ছেলেটার উপর বেশ বিরক্ত । এভাবে দিনের পর দিন অনুসরন করার কোন মানে আছে ? ছেলেটাকে সেদিন মুখের উপরেই বলে দিয়েছিল যে সে এইসব একদম পছন্দ করে না । তারপরেও ছেলেটা কোন কথা শুনে না । একদম সরাসরি খারাপ ব্যাবহারও করা যাচ্ছে না ।

ছেলেটা আবার অনীনদিতার এক বান্ধবীয় বড় ভাই । আসলে যত দোষ ঐ পোষাকটার । অনীনদিতার সেদিন একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত ছিল । ওর বাড়ির কাছেই একটা কমিউনিটি সেন্টারে । বিয়ের যাওয়ার জন্য সেদিন ও কালো আর লালের কাজ করা একটা শাড়ি পরেছিল ।

এমনিতে অনীনদিতা দেখতে বেশ সুন্দরী তার উপর বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য যে সাজ দিয়েছিল তাতে যে কারো মাথা ঘুরে যাবার কথা । সাজ সজ্জা শেষে যখন নিজেকে আয়নায় দেখলো তখন নিজেই খানিকটা খুশি হয়ে গেল । পেছন থেকে ওর ছোট বোন ওকে জড়িয়ে ধরে বলল -আপু তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে । -হুম । বলেছে তোকে ? -না আপু সত্যি ! তোর ঐ ব্লগার যদি তোকে এখন দেখে নির্ঘাত গল্প বাদ দিয়ে মহা কাব্য লেখা শুরু করবে তোকে নিয়ে ।

-যা ভাগ ! ভাগ বললেও মনে মনে ও খুশিই হল । কথাটা নেহাত্‍ মিথ্যাও না । কমিউনিটি সেন্টারে অনীনদিতার এক বান্দবীর সাথে দেখা হয়ে গেল । বান্ধবীর নাম নুপুর । নুপুরের সাথে ও একসাথে কলেজে পড়াশুনা করেছে ।

অনেক দিন পরে দেখা তবুও চিন্তে কারওই খুব একটা অসুবিধা হল না । সেই অনুষ্ঠানেই অনীনদিতাকে দেখে ছেলেটা । ছেলেটা নুপুরের বড় ভাই নিলয় । ব্যাংকে জব করে । দেখতে শুনতেও চমত্‍কার ।

নুপুরই নিলয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় । সারাটা অনুষ্ঠানে অনীনদিতা স্পষ্টই বুঝতে পারছিল যে ওর উপর এক জোড়া চোখ নিবদ্ধ আছে । একটু অস্বস্থি লাগলেও অনীনদিতা কিছু বলে নাই । কিন্তু যখন অনুষ্ঠান শেষে বের হতে যাবে তখনই নুপুর ওকে দাড় করিয়ে ওর ভাইয়ার বিয়ের ব্যাপারে বলে । নুপুরের ভাইয়া নাকি ওকে অনেক পছন্দ করেছে ।

বিয়ে করতে চায় । একটু অবাক হলেও সামলে নিলো ! অনীনদিতা প্রায় পরিস্কার ভাবেই বলে দেয় যে ও বিয়েতে আগ্রহী না । তারপর থেকেই শুরু হয়েছে অনুসরন । প্রথম দুদিন ও ঠিক মত বুঝতে পারে নাই । কিন্তু এক সময় অবাক হয়ে আবিষ্কার করে যে নিলয় নিয়মিত ওকে অনুসরন করে ।

অনীনদিতা প্রতিদিন অফিস যাওয়ার জন্য মোহাম্মাদপুর বাস স্টান্ডে আসে । ওখান থেকেই বাসে ওঠে । কয়েকদিন পরেই ও লক্ষ্য কর নিলয়ও ঠিক একই জায়গা থেকে বাসে ওঠে এবং একই বাসে ওঠা । যদিও নুপুর দের বাসা মোহাম্মাদপুরে না ! বাসের ভিতর বসে ওর দুতিন সিট পেছনে এবং প্রায় একই ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে । অফিস থেকে ফেরার পথেও ঠিক একই কাজ ।

অফিস ছুটির সময়ে কোথা থেকে যেন ওর অফিসের সামনে এসে অপেক্ষা করে । ও যেখান থেকে বাসে ওঠে নিলয়ও সেখান থেকে সেই বাসে ওঠে । প্রথম প্রথম ব্যাপারটা গায়ে না মাখলেও এক সময় অনীনদিতা বেশ বিরক্ত বোধ করা শুরু করল । একদিন খুব ভদ্রভাবেই মানা করলো । কিন্তু খুব একটা লাভ হল না ।

সেই থেকে অনীনদিতা খুবই বিরক্ত ছেলেটার উপর । সুমির কাছে বলে মনে হচ্ছে বিরক্তিটা আরো বেশি বেড়ে গেল । সুমি বলল -তোর ঐ বান্ধবীকে বল ব্যাপারটা ! -না । ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায় না ? -তাহলে এক কাজ কর । আমাদের এলাকায় মুরগি মাসুদ নামে এক মাস্তান আছে ।

ওকে দিয়ে একটা পেদানী খাওয়াই ? অনীনদিতা আবার বিরক্তি ভরা চোখে তাকালো সুমির দিকে । -আচ্ছা তাহলে আমার এক চাচাতো ভাই আছে RAB এ । ক্যাপ্টেন আরমান । ওকে বলি । ক্যাম্পে নিয়ে একটা ছ্যাচা দিয়ে দিবে ।

-সুমি তুই চুপ থাক । তোর প্যাচাল ভাল লাগছে না । -আরে শোন না ! আর একটা বুদ্ধি আছে ! -কি ? -তোর ঐ ব্লগার বন্ধুকে বল । ব্লগে একটা জ্বালাময়ী পোষ্ট লিখুক । শিরোনাম হবে সামুর মহিলা ব্লগার যখন ইভটিজিংয়ের স্বীকার ! দেখবি কাজ হবে ।

অনীনদিতা এবার সত্যিই বিরক্ত হল । -শোন তোর কোন বুদ্ধি দেওয়া লাগবে না । আমাকে একটু ভাবতে দে । তবে মুরগি মাসুদ আর ক্যাপ্টেন আরমানের কথা অনীনদিতার মনে ধরেছে । দেখা যাক আর একবার কঠিন করে ও নিজেই ওয়ার্নিং দেবে ।

কাজ না হলে অন্য ব্যবস্থা । পরদিনই বাস্ট্যান্ড অনীনদিতা কঠিন কন্ঠে নিলয় কে ওকে অনুসরন করতে করতে মানা করলো । কথাবার্তার এক পর্যায় আসে পাশে লোক জনও জড় হয়ে গেল । নিলয়কে বেশ অপদস্থ করে ছাড়ল । তারপর থেকেই অনুসরন বন্ধ হল ।

অন্তত অনীনদিতার মনে হল যে ওকে কেউ ফলো করতেছে না । দিনকাল আবার স্বাভাবিক হয়ে এল । একদিন সুমির বাসা থেকে বের হতে হতে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল । যদিও কাছাকাছিই ওদের বাসা তবে মাঝখানের এই পথটা একটু সুবিধার না । সুমি বলল -তুই যেতে পারবি তো ? -হুম পারবো ।

-না আমি আসি তোকে এগিয়ে দিতে ? -তারপর তোকে এগিয়ে দিতে কে আসবে ? -কেন তুই আসবি ! -তারপর আবার আমি তোকে এগিয়ে দিতে যাবো ? এভাবে সারা রাত চলবে তাই । শোন চিন্তার কোন কারন নাই । আমি চলে যাবো । সুমি বলল -আচ্ছা ঠিক আছে । গলির ভিতর দিয়ে যাস না ।

একটু ঘুরে যেতে হলেও বড় রাস্তা দিয়ে যাস । -ঠিক আছে ! আচ্ছা । সমস্যা হবে না । সুমিকে যদিও বলল যে গলির ভিতর দিয়ে যাবে না কিন্তু অনীনদিতা গলির ভিতর দিয়েই যাবার সিদ্ধান্ত নিল । ঘুরে গেল আধা ঘন্টার উপরে লাগবে ।

আর গলিটা দিয়ে গেলে দশ মিনিট বড় জোর । আর এখনও রাত খুব বেশি হয় নাই সুতরাং সমস্যা নাই । কিন্তু গলির ভিতর ঢুকেই মনে হল হয়তো একটু ভুল করে ফেলল । পুরো গলীটা একেবারে অন্ধকার হয়ে আছে । মনের ভিতর একটা কু ডেকে উঠল ।

তবুও অনীনদিতা পাত্তা দিল না । মোবাইলে টর্চ জ্বালিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল । মোবাইলের ক্ষুদ্র টর্চ গলির অন্ধকার তো দুর করলোই না বরং আরো একটু গুমট করে তুলল । অনীনদিতা এগুতে লাগলো ! কয়েক পা এগিয়েছে তখনই অনীনদিতা পেছনে কার যেন আওয়াজ শুনতে পেল । মৃদু হাটার আওয়াজ ।

ওর সাথে সাথে এগিয়ে আসছে । অনীনদিতা গলির মাঝ বরাবর থেমে গেল । পায়ে আওয়াজও থেমে গেল । অনীনদিতার বুকের ভেতর কেমন একটা ভয় ভয় করছে । পেছন যে আছে যদি এই গলির ভিতর ওকে চেপে ধরে কিছু একটা করে ফেলে তাহলে ওর কিছুই করার থাকবে না ।

না এখান দিয়ে আসাটা ওর একদম ঠিক হয় নাই । ঘুরেই আসা দরকার ছিল । অনীনদিতা আবার কয়েক কদম হাটল । পেছন থেকেও আবার কয়েক কদম হাটার আওয়াজ । কি করবে এখন ? সামনের দিকে দৌড় দিবে ? কোন ভাবে গলির মাথায় যেতে পারলে আর কোন সমস্যা নাই ।

নাকি পেছনে ঘুরে দেখবে । পেছনে যে আছে নিশ্চই প্রস্তুত হয়েই আছে । দৌড় দিতে গেলে খপ করে ধরে ফেলতে পারে । তার চেয়ে পেছন ফিরে ব্যাটা কে একটা ধাক্কা দেওয়া যাক । লোকটা নিশ্চই ভাববে না যে অনীনদিতা পেছন ফিরে চাইবে ।

এতে করে কিছু সময় পাওয়া যাবে । যেই ভাবা সেই কাজ । অনীনদিতা ঝট করে পিছন ফিরে চাইলে । ঠিক তকনই ওর মনে হল দ্রুত একটা আকৃতি ওর পেছন থেকে সরে গেল ! কিন্তু খুব বেশি দ্রুত সরে যেতে পারলো না । মোবাইলের মৃদু আলোতে ঠিকই অনীনদিতা নিলয়ের চেহারাটা দেখে ফেলল ! মূহুর্তের ভিতরেই অনীনদিতার সব ভয় রাগে রূপান্তরিত হয়ে গেল ! ব্যাটা ফাজিল ! এখনও ওকে অনুসরন করে ! কালকেই এর একটা বিহিত করতে হবে ! পরডিন সকালের দিকেই অনীনদিতা নুপুরের বাসায় হাজির হল ।

নুপুর কিছু কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতু নিচ্ছিল ! অনীনদিতাকে দেখে খানিকটা অবাক হল ! -তুই এখানে ? -কোথাও যাচ্ছিস ? -হুম ! এতো সকালে ? কোন জরুরী কিছু ! -হুম ! অনীনদিতা বেশ গম্ভীর কন্ঠেই বলল ! তারপর আস্তে আস্তে সব কিছু খুলে বলল ! প্রথম প্রথম কিছু না বললেই যখনই অনীনদিতা গত রাতের কথা বলল নুপুর যেন আকাশ থেকে পড়লো ! কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল -তোর সব কথাই আমি মেনে নিচ্ছি ! ভাইয়াটা একটু এরকমই ছিল ! তোকে তার অনেক মনে ধরে ছিল ! কিন্তু কালকের যে কথাটা তুই বললি তা সম্ভব না কিছুতেই ! -মানে কি ? তুই কি বলতে চাস আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি ! -তা আমি বলতে পারবো না তবে কালকে ভাইয়া কিছুতেই ওঐ গলির ভিতর আসতে পারে না ! -কে পারে না ? কেন ? দুই মাস ধরে আমি যেখানেই গেছি তোর ভাই আমাকে ছায়ার মত ফলো করেছে কালকে কেন নয় ? -কারন .........। কারন ভাইয়া মারা গেছে ? -মানে ? নুপুর বেশ কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ! অনীনদিতা কিছুই যেন বুঝতে পারছিল না ! নুপুর বলল -তুই সেদিন বলার পর ভাইয়া আর যায় নাই । তারপর একটা স্কলারশিপ নিয়ে চলে যায় জার্মানী ! কিন্তু জার্মানী পৌছাতে পারে নাই ! পথেই প্লেন ক্রাস করে ! অনীনদিতা প্রথমে যান বিশ্বাসই করতে পারলো না কি বলছে নুপুর । তারপর নুপুর একটা পত্রিকা এনে দিল ! সেখানে মোটামুটি সব কিছুই লেখা ছিল ! নুপুর আর দাড়ালো না ! কিছুতেই যেন মেলাতে পারছে না কিছু ! কালকে ও স্পষ্টই দেখেছে ! তাহলে ? কাকে দেখলো ? ভুল কিছু দেখেছে ? এ প্রশ্নের জবাব কিভাবে পাবে !! Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।