আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বার্মিজ রোহিঙ্গাদের দুর্বিষহ পরিস্থিতি

আমি বিন্দুমাত্র আলো, মনে হয় তবু আমি শুধু আছি আর কিছু নাই কভু। পলক পড়িল দেখি আড়ালে আমার তুমি আছ হে অনাদি আদি অন্ধকার! নিম্নের প্রতিবেদনটি বিবিসি কর্তৃক প্রকাশিত এবং লেখক কর্তৃক অনুদিত। অনুবাদ ও প্রকাশের জন্য বিবিসির অনুমতি চাওয়া হয়নি। কিন্তু ইন্টারনেটে এই লেখার প্রকাশ ফেয়ার ইউজ পলিসির মধ্যে পড়ে। মূল লেখাটি পাওয়া যাবে এই স্থানেঃ Click This Link “বার্মিজ রোহিঙ্গাদের দুর্বিষহ পরিস্থিতি পশ্চিম বার্মায় অবস্থিত সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের একজন ২২ বছর বয়েসী নাসিমা।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে রোহিঙ্গারা বিশ্বের সর্বাধিক অত্যাচারীত জনগোষ্টীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮২ সালে তাদের নাগরিকত্ব হরন করা হয় এবং বার্মায় বর্তমানে তারা অবৈধ বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে বিবেচিত। তখন থেকে শুরু করে প্রায় কয়েক লক্ষ লোক প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। সেখানকার স্থানীয় ভাষাও তাদের ভাষার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। চলতি বৎসর বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থী গ্রেফতার ও জোরপূর্বক বার্মায় ফেরৎ পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।

সরকারএ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশ দরিদ্র রাষ্ট্র, যার ফলে রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার মতো অবস্থানে নেই। বিবিসির মার্ক ডামেট, কুটুপালং এ অবস্থিত নামকাওয়াস্ত তৈরী একটি ক্যাম্পে নাসিমার সাথে কথা বলেন। ক্যাম্পটিতে বর্তমানে ৩০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। “বার্মায় আমাদের উপর অত্যাচার হয় দেখেই বাংলাদেশে আসছি,” বলেন নাসিমা।

“আমাদের কিছু সম্পত্তি ছিলো যার জন্য অনেক ঝামেলায় পড়তে হইসিলো। “একদিন আর্মির লোক আইসা আমার আব্বাকে বললো উনি বাংলাদেশ থেকে পালায় আসা একজনকে আশ্রয় দিসেন। বার্মায় ফেরত আসলেই যে কাউকে জেলে যাইতে হয় তাই এইরকম কাউকে থাকতে দেওয়াও অপরাধ। কিন্তু আমার আব্বার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ছিলো। “ওরা আব্বাকে মিলিটারী ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়, মারধোর করে।

সাতদিন পর আব্বার রক্তাক্ত কাপড় ফেরত পাঠায় আর সাথে বলে পাঠায় যে আব্বাকে ওরা মেরে ফেলবে। “তারপর আমাদের গবাদি পশু, মুরগী-টুরগী যা ছিল সব বাজারে বেচে সেই টাকা দিয়ে আব্বাকে ছাড়াইসি। “এরপর আমার ভাইকে একদিন কিছু বৌদ্ধ লোকজন অনেক মারলো। অনেক বেশী আঘাত পাইসিলো আমার ভাই। শেষ পর্যন্ত মারা গেসে অনেক কষ্ট পেয়ে।

“আমি বড় হইতে হইতেই আমার আব্বা সিদ্ধান্ত নিসিলো যে আমাকে বার্মায় রাখবেনা। কারন এইখানে নিরাপদ না। সরকার আমাদের বিয়ে করতে দেয়না। তাই আব্বা শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে বাংলাদেশে পাঠায় দিবে। “আমাদের একটা আত্মীয় ছিলো; লুলা আর ভিক্ষা করতো।

ওর কাসেই আব্বা আমাকে দেয়। “আমরা নৌকায় নদী পার হই। খুব বিপদের ছিল নৌকায় পার হওয়া। অন্যপাশে বাংলাদেশ রাইফেলস [বিডিয়ার] আমাদের থামায়। “ওরা পার হওয়ার জন্য প্রত্যেকের কাছে ১০০ টাকা [$১.৫০] ঘুষ চায়।

কিন্তু আমাদের মোট টাকাই ছিলো ১০০। “ ‘মেয়েটাকে তাইলে আমাদের কাছে রাইখা যাইতে হবে,’ বিডিয়ার এর লোকরা বলসিলো। কিন্তু আমার আত্মীয় মেয়েটা, আমাকে ছাড়া ও চলতে পারবেনা ব’লে কোনমতে আমাকে ছাড়ায়। ” পুলিশ রেইড নাসিমা জানায়ঃ “আমার আরেক বোন আগেই বাংলাদেশে আসছিলো। কিন্তু আমি জানতাম না ও কোথায়।

তাই আমরা কক্সেসবাজার যেয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করি। “লোকজন কখনো আমাদের একটু ভাত বা কিছু পয়সা দিতো। তাই দিয়া কোনমতে বাঁচতাম। “শেষ পর্যন্ত এক লোকের দেখা পাই যে আমার বোনকে চিনে। বোন ছিলো আলিকাদামে, ওর জামাই আইসা আমাকে নিয়ে যায়।

“দুই বছর সেইখানেই থাকি। খামারে লেবারের কাজ করি। সব ভালো যাইতেসিলো। আমার বিয়ে হয়, কিছুদিনপর একটা বাচ্চাও হয়। “আমার বাচ্চা হওয়ার পাঁচদিন পর হঠাৎ পুলিশ আসলো।

আমরা বুঝিওনাই এইরকম হইতে পারে। আমরা সেই সময় খাবার খাইতেসিলাম। “ওরা সব বার্মিজ পুরুষ লোককে জড়ো করে একসাথে। তার মধ্যে আমার স্বামী আর আমার বোনের জামাইও ছিলো। এদের সবাইকে পুলিশ ট্রাকে উঠায়।

“আমি পুলিশকে বলি যে আমার একটা নতুন বাচ্চা হইসে। আমার স্বামীকে ছাড়া এই বাচ্চা নিয়া আমি বাঁচতে পারবোনা তাও বলি। “অনেক কান্নাকাটি করসি, ভিক্ষা চাইসি। কিন্তু ওরা বলসে যে রোহিঙ্গাদের কোন দয়া মায়া আশা করা উচিৎ না। তাই আমি বলসি আমাকেও নিয়ে যাইতে।

“ওরা তখন আমাকেও লরিতে উঠায় তারপর গাড়ী নদীর দিকে যায়। “ওরা একটা মাছ ধরার নৌকা খুঁজে বের করে আর মাঝিকে পিটানোর ভয় দেখায় যদি আমাদের ওইপারে বার্মায় না নিয়ে যায়। “আমাদের নৌকায় অনেকখানি নেয়ার পর মাঝি বলে যে ওইপাশে যাওয়ার পর নাকি সে অনেক রোহিঙ্গাকে নাসাকাদের [বার্মিজ সীমান্ত রক্ষী] হাতে গুলি খাইতে দেখসে। মাঝি আমাদের দেখায় দেয় কিভাবে উজানস্রোত ঠেইলা বাংলাদেশে লুকায় ঢুকা যাবে। “আমরা সারা রাত হাঁইটা শেষ পর্যন্ত সকালে এইপারে উঠতে পারসি।

“উঠার পর আমি খেয়াল করি আমার বচ্চাটার কোন সমস্যা হইসে। বাচ্চা আমার আসার পথেই মারা গেসে আর আমি বুঝতেও পারিনাই। আমরা খালি হাতেই ছোট্ট একটা গর্ত করে ওইখানেই বচ্চার কবর দেই। “আমরা তারপর হাঁটতে হাঁটতে একটা রাস্তায় উঠি আর রাস্তার চলন্ত একটা জীপ গাড়ী হাত নেড়ে থামাই। গাড়ীর ড্রাইভারের কাছে অনেক কাকুতি মিনতি করি আমাদের ওইখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

লোকটাকে দেওয়ার মতো আমার শুধু একটা ওড়না ছাড়া কিছু ছিলোনা। “ওই লোক কুটুপালং ক্যাম্প চিনতো। আমাদের সে বলে যে রোহিঙ্গারা ওইখানে নিরাপদে আছে। “ক্যাম্পে আসার এক সপ্তাহ পর আমার স্বামী কাজ খোঁজার জন্য যায়। এর পর থেকে তার আর কোন খবর নাই।

“আমি এখন বন থেকে লাকড়ি টোকাই। যেদিন পাই সেদিন কিছু খাইতে পারি। “এই সপ্তাহে মাত্র তিনবার খাইসি মোট। আমি একলা আসি। যাদের পরিবারে ১০/১১ জন খাওয়াইতে হয় তারা আরো অনেক খারাপ অবস্থায় আসে।

“এইরকম জীবনের চেয়ে মরন ভালো। ”” ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।