আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংরক্ষিত আসন

ঢাকা শহরের অধিকাংশ বাসেই ড্রাইভারের পেছনের তিন সারি অর্থাত্‍ মোট নয়টা সিট মহিলা , শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্যে সংরক্ষিত । যদিও অধিকাংশ নারীই এই নয়টি আসনকে তাদের অধিকার ভাবেন , ব্যাক্তিগতভাবে আমি বাসে আসন সংরক্ষণের বিরোধী । এটা এ জন্যে নয় যে আমি একজন ছেলে । বরং এটা এ জন্যে যে আমি মনে করি এটা নারীর সম অধিকারের পথে বিরাট বাধা । নারী এবং পুরুষের মাঝে একটা অলিখিত দেয়াল তুলে দেয়া আছে প্রাচ্যের সংস্কৃতিতে ।

নারীকে নানা ভাবে নানা পদ্ধতিতে নানা রকম নিয়ম কানুন দ্বারা সেই ছোট বেলা থেকে বোঝানো হয় তুমি মানুষ নও । তুমি নারী । বাসের সংরক্ষিত আসনও এমনটাই ঘোষনা করে , এই নয় সিটে মহিলারা বসবে আর বাকি বাসে বসবে মানুষ ! এটা অস্বীকার করিনা যে বাসের প্রচন্ড ভিড়ে নারীদের পক্ষে দাড়িয়ে থাকা কষ্টকর হবে । কিন্তু সেটা অসম্ভব না । বাংলাদেশ এবং এর আশপাশের দেশগুলোর পিছিয়ে থাকার এই এক কারণ ।

আগে এখানে নারীর অধিকার ছিলো না । এখন সংসদে আসন দিয়ে , বাসে সিট দিয়ে , পরীক্ষায় কোটা দিয়ে আমরা তাদের অধিকার দিচ্ছি । এটাতে নারীর গৌরবটা কোথায় তা বুঝি না । একজন যথেষ্ট শারিরীক ক্ষমতা সম্পন্ন নারী , যার দাড়িয়ে যেতে কোনো সমস্যা হবে না , সেও এক ধরণের আলসেমী নিয়ে বাসে উঠবে । কারণ সে জানে তার জন্য জায়গা রাখাই আছে ।

প্রতিকুলতার সাথে বেঁচে থাকার যে প্রাত্যহিক সংগ্রাম সেটা সে হেলায় এড়িয়ে যাবে । অনুরুপভাবেই একজন ছাত্রী যখন জানবে যে জেলায় তার জন্যে ১৯ টা মেধাবৃত্তি রাখাই আছে তখন তার প্রতিযোগিতা ঐ উনিশটা মেয়ের সাথে । তার চেয়েও মেধাবী কোনো ছাত্র কেবল কোটার কাটায় বাদ পরে যেতে পারে । জানি এসব পড়ে নারীরা বড় রকম হট্টগোল পাঁকাবে । আমাকে নারীবিদ্বেষীও বানিয়ে দিতে পারে ।

কিন্তু সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করলেই বোঝা যায় এই কোটা , এই সংরক্ষিত আসন কেবলই শুভঙ্করের ফাঁকি । । নারী অধিকার তাদের মাথায় খুব ভালো মতই ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে । তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে , ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মত যোগ্যতা তোমার নাই । তাই নিছক দয়া করে তাদের বাসে কয়টা আসন দান করা হয়েছে ।

তাদের যেনো না বলা কথা গুলো দিয়ে বোঝানো হচ্ছে ছেলেদের সাথে পরীক্ষায় তারা পারবে না । তাই আলাদা করে তাদের মেধাবী হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে । নারীদের সেই ছোট্টটি থেকে হাতে দেয়া হয় পুতুল । পঁচিশ বছরের জোয়ান মেয়েও তাই ন্যাকামী ছাড়া আর কিছু পারে না । তাদের সমস্ত প্রতিবাদ বাসের ঐ নয় সিটেই সীমাবদ্ধ ।

। চাক দে ইন্ডিয়া সিনেমাটা আমার অনেক পছন্দ । ভারতের হকি নিয়ে বানানো হলেও এই ছবিটাতে অসাধারণ কিছু বিষয় দেখা যায় । অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে মেয়েরা প্রশিক্ষিত পুরুষ দলের সাথে একটা অসম লড়াইয়ে নামে । হেরে গেলেও হাল ছেড়ে দিয়ে হারে না ।

খেলার শেষে ছেলেদের ঐ উঁচিয়ে ধরা হকিস্টিক এর জবাবে যখন মেয়েরাও স্টিক উঁচিয়ে ধরে , তখন মনে হয় , আরে এই তো চাই ! অথবা ক্যাফেতে ঐ মারামারিটা ? কি বলবেন একে ? এটাই আসলে অধিকার রক্ষার চেতনা । নয়টা সিট দখলের জন্যে খামচা খামচি কখনোই অধিকার সচেতনতা হতে পারে না । । উন্নত বিশ্বে কোথাও এরকম আজব ব্যাবস্থা নেই । সকল নারী এমন নয় এটাও স্বীকার করি ।

কিন্তু তাদের সংখ্যাটা খুব কমই । নয় সিটের ঐ গন্ডিটা ভাঙ্গতে না পারলে নারীরা যে রান্নাঘরের গন্ডিটাও পেরোতে পারবেন না তা জানা কথা । নারীদের জন্যে আসন সংরক্ষণ না করে বরং প্রবীণ অর্থাত্‍ সিনিয়ার সিটিজেন দের জন্যে আসন সংরক্ষণের দাবি জানাই । জাগো নারী জাগো । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।