আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পোশাক কারখানার বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব?

সাভারে ভবনধসে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছে। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার পোশাকশ্রমিক আবার নিজ নিজ কারখানায় কাজে ফিরে গেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় এড়ানো কী সম্ভব?
সম্প্রতি বিবিসি অনলাইনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়।
প্রতিবেদরে তথ্য অনুযায়ী, সাভারের রানা প্লাজার ভবনে পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল। ভবনটি ধসের পর এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।

আড়াই হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। কিছু পর্যবেক্ষক এই বিপর্যয়কে টনক নড়ার উপলক্ষ হিসেবে দেখেছেন। কেউ কেউ বলছেন, এত বড় ঘটনার পরও বাংলাদেশের পোশাক কারখানার পরিস্থিতি বদলানোর সম্ভাবনা খুব কম।
সাত বছর আগে এই একই এলাকায় একই ধরনের একটি ভবনধসের ঘটনা ঘটে। এতে ৬৪ জন পোশাকশ্রমিক নিহত হন।

পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও হুড়োহুড়িতে পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় আরও অনেক দুর্ঘটনা অহরহ ঘটে। এতে শত শত শ্রমিকের প্রাণ গেছে। গত বছর আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শতাধিক শ্রমিক নিহত হন।
বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানির ৮০ শতাংশ আসে এই শিল্প থেকে।

৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের উত্স পোশাক শিল্প।
কিন্তু পোশাক শিল্পে যে ধরনের দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটেই চলছে, তা এড়ানোর দায়িত্ব কার? সরকার, স্থানীয় উত্পাদক, আন্তর্জাতিক ব্যান্ড নাকি ভোক্তার?
বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে কর্ম-পরিবেশের উন্নয়নে উত্সাহ জোগাতে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সাভারে ভবনধসের ঘটনায় তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীসহ ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় তারা এ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছে। এই ‘যথাযথ ব্যবস্থা’র আওতায় ইইউর বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত কোটা-সুবিধার বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।
বাংলাদেশে পোশাক কারখানার বিপর্যয় রোধে সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি।


এ ব্যাপারে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিনডা স্কট বলেন, সমস্যার সমাধানে নানামুখী চাপ দরকার। কিন্তু আসল চাপটা দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারের ওপরই। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া অবস্থার উন্নতি হবে বলে মনে হয় না।
শ্রমিক ও আন্তর্জাতিক ব্যান্ডের মধ্যে আরেকটি পর্যায় আছে—উত্পাদনকারীরা। তাঁদেরও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।


এর বাইরে ইউনিয়ন আছে। সরকার, উত্পাদকারী, ইউনিয়ন যদি তাদের দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে বিদেশি ক্রেতা কোম্পানিগুলোর পদক্ষেপ সেভাবে কাজে আসবে না।
তবে সবচেয়ে কার্যকর দিক হলো পোশাকের সাধারণ ক্রেতার অবস্থান। কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান হবে না। সমস্যা অন্যত্র স্থানান্তর হবে।


শিল্প অন্যদেশে স্থানান্তরিত হওয়ার অর্থ দুর্গতি এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাওয়া। এতে কেবল বাংলাদেশের মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে।
পোশাক শিল্প শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘লেবার বিহাইন্ড দ্য লেবেল’ -এর প্রচারাভিযানের সমন্বয়কারী আনা ম্যাকমুলেন বলেন, আমরা বর্জনে বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি, এটা খুব বাজে একটা ধারণা। এখানকার মানুষ যদি সস্তা পোশাক কেনা বন্ধ করে দেন, তাহলে এর প্রভাব পড়বে সেখানে (বাংলাদেশ)।

এটা ব্র্যান্ডের দায়িত্ব। তারা যদি বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনে, তাহলে তাদেরই শ্রমিকদের মজুরি, ভবনের উন্নতমান, অগ্নি-নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য নিরাপত্তার মাপকাঠি ঠিক করে দিতে হবে। ক্রেতা হিসেবে আমাদের কিছু প্রশ্ন করা উচিত। এই শিল্পে আরও স্বচ্ছতা দরকার। আমাদের জানা দরকার, আমাদের পোশাক কোত্থেকে আসে, কারা এটা তৈরি করে, কারখানার ঠিকানা কী, কোথায় তৈরি হয়, কারখানাগুলোর অবস্থা কী ইত্যাদি।

সমাধান খুব জটিল। জন্য সব পর্যায়ের সবাইকে কাজ করতে হবে। ’
দারিদ্র্য-বিরোধী দাতব্য সংস্থা ‘ওয়ার অন ওয়ান্ট’ এর গণমাধ্যম কর্মকর্তা পল কলিন্স বলেন, ‘আমরা আমাদের বাংলাদেশি অংশীদার, জাতীয় পোশাক শ্রমিক ফেডারেশনের কাছ থেকে দিকনিদের্শনা নিচ্ছি। তারা তাদের সমর্থন করা শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা নেয়। এখানে এসব সদস্য প্রধানত নারী।

তারা বলছেন, পেশাটা পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ হওয়া উচিত। মজুরি হওয়া উচিত জীবনধারণের উপযোগী। অতিরিক্ত শ্রম দিতে বাধ্য করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আশঙ্কা করছেন, পোশাক বর্জনের প্রচারে শ্রমিকেরাই চাকরি হারাবেন। তাঁরা গ্রামীণ এলাকা থেকে এসেছেন।

তাঁরা চরম দরিদ্র। তাই আমাদের বর্জন ডাক দেওয়া উচিত নয়। এটা একটা পদ্ধতিগত সমস্যা। এ নিয়ে অনেক জরিপ হয়েছে। এখানকার (যুক্তরাজ্য) ক্রেতা কোম্পানিগুলো যেসব কারখানা থেকে পোশাক কেনে, সেসব কারখানার শ্রমিকদের সঠিক মজুরি নিশ্চিত করেনি তারা।

তাই ব্রিটিশ সরকারকে এই সমস্যার বিষয়ে কাজ করতে হবে। শ্রমিকদের বিষয়ে একটি মানবাধিকার কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা ব্রিটিশ আদালতে এর প্রতিকার চাইতে পারি। ’
ব্রুকলিনভিত্তিক সাংবাদিক ও লেখক এলিজাবেথ এল. ক্লিন এর মতে, বাংলাদেশ একটি গরিব দেশ। কারখানায় পরিবর্তন আনার মতো যথেষ্ট অর্থ তাদের নেই।

প্রতিটি কারখানায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে পাঁচ লাখ ডলার দরকার। ক্রেতা ব্র্যান্ডগুলো এই অর্থ দিতে পারে। ’
কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশের পরিচালক জেমি তেরজির মতে, পদ্ধতিগত ব্যর্থতার জন্য এত বড় মাপের একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ধরা হলেই সমস্যার সমাধান হবে না। এই সমস্যা অনেক বড় এবং জটিল।

সরকার, জনগণ, কারখানা মালিক, বায়ার এবং পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রেতা—সবার ওপরই নির্ভর করছে সমাধান। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.