আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালবাসতে ভয় হয়

ঝরা বকুলের কান্না....... ভালবাসতে ভয় পায় এমন মানুষ হয়ত পৃথিবীতে আছেন। কিন্তু, আমার মত ভালবাসার কথা ভাবতেই ভয় পায় এমন মানুষ মনে হয় না খুব বেশি আছেন। হ্যা, আমি এমন একজন মানুষ যে ভালবাসার কথা ভাবতেই অস্বস্তি বোধ করি। খুব ছোট বেলার কথা বলি, তখন একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মাঝে শারীরিক পার্থ্যকটা যে আসলে কী সেটাই বুঝতাম না। টিনএজে এসে উপলব্ধি করলাম ছেলে আর মেয়ে পরষ্পরের প্রতি দূর্বার আকর্ষন।

অদ্ভুত লাগত তখন। কি আছে একটা মেয়ের মাঝে, যা একটা ছেলের সমস্ত মনটাকেই জুড়ে বসতে পারে? অনন্ত কোন রহস্য, কোন সমাধান নেই তার। মনের মাঝে কয়েকটা প্রশ্ন খুব বেশি উঁকি দিত সেই সেময়, ১,আচ্ছা, আমার ছেলেদের যেমন মেয়েদের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষন, মেয়েদেরও কি ছেলেদের প্রতি আকর্ষন? ২, ছেলেদের কাছে যেমন মেয়েদেরকে খুব সুন্দর লাগে, মেয়েদের কি ছেলেদেরকে সুন্দর লাগে? ৩, কেন একটা ছেলে আর একটা মেয়ের বিয়ে হয়? অন্য রকম কেন হয় না? ছেলে ছেলে, মেয়ে...... ৪, মেয়েদেরকে এত ভাল লাগে কেন? ৫, বিয়ে হলে কেন নতুন সন্তান জন্ম হয়? আরো কিছু প্রশ্ন অবশ্য জগত বিভিন্ন সময়ে কিন্তু বেসিক প্রশ্নগুলোর জানা না থাকায় সেগুলো আর জানার চেষ্টা করতাম না। স্কুল জীবনের শেষের দিকে আর কলেজ জীবনে আমি সবার মাঝে দেখতাম প্রচন্ড এক অস্থিরতা। আমাদের সবাইকে যেন বেঁধে রাখা হয়েছে এক অদৃশ্য সুতো দিয়ে।

আমরা যারা খুব ভদ্র ছেলে তারা সেই সুতোর বাধন খোলার চিন্তাও করি নি। ভালবাসার কথা ভাবাটা নিজের কাছেই ছিল অপরাধ। মনে মনে নিজেকে সান্তনা দিতাম, “সমস্ত ভালবাসা তোলা থাক ভবিষ্যতের জন্য”; নিজেদের খুব ভয়াল ভাবতাম। আসলে ছিলাম ভীতু। ভালবাসার যুদ্ধে নামার সাহস আমাদের ছিল না।

সেই থেকে শুরু “ভালবাসতে ভয়”। কিন্তু যারা আমাদের মত না, অনেক সাহসী, তারা কিন্তু, অনায়েসে সেই বাঁধন ছিঁড়ে মুক্ত হয়ে গেল। পরিণামের কথা ভাবল না। আসলে, ছোটবেলা থেকে বড়রা একটা কথা খুব বেশি বলত, “বাবা, আগে ভার্সিটিতে ভর্তি হও, তারপর যতখুশি প্রেম করো”। কিন্তু, ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কী এমন হবে যে, তখন প্রেম করতে কোন বাঁধাই থাকবে না? উত্তরটা ছিল এমন,”ভার্সিটিতে উঠলে ম্যাচুরিটি লেভেল অনেক হাই হয়।

তখন প্রেম করার মত মানসিক শক্তি আসে”। কথা খুব একটা ভুল না। কৈশোর প্রেম যার জীবনে আসে তার জীবন সত্যিই খুব যন্ত্রণাময়। আজ পর্যন্ত যতগুলো মানুষের কৈশোর প্রেম দেখলাম, তাদের সবারই একই অবস্থা। কিন্তু কেন? মানসিক অপরিপক্কতা? না; আমার মনে মানসিক পরিপক্কতার বিশাল পার্থক্য।

টীনেজ একটা ছেলে আর টিন এজ একটা মেয়ের মাঝে ম্যচুরিটি লেভেলের পার্থক্য এতটাই বেশি থাকে যে, শেষ পর্যন্ত তাকে পরিণতি দেয়া আর হয়ে ওঠে না। এই বয়েসী ছেলেরা হয় অতিরিক্ত অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়। লুকিয়ে, বাবা-মা’র শাষণের বাইরে এসে এমন একটা কাজ করতে পারাটাকেই তারা বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখে। কিন্তু তারা এইটা বুঝতে পারে না, যার জন্য এতবড় ঝুঁকি নেয়া সেই মানুষটি কিন্তু মানসিক ভাবে তার থেকে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে! যাক সেসব কথা। বড়দের কথা মত ভার্সিটির কথাতেই আসি।

ভার্সিটিতে যারা প্রেম করে তারা কি সবসময় সফল হয়? চোখের সামনে যা দেখছি তাতো সেকথা বলে না। একটা ঘটনার কথা বলি, ” আমার বরাবরই রাত জাগার অভ্যাস। আমার রুমমেটরা আবার একটু ঘুমকাতুরে। আমিতো অনেক রাত জাগি। একদিন রাত প্রায় ২ টার দিকে, সবাই যখন ঘুমিয়ে হঠাত করে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল।

আর এই সময় আমি লক্ষ্য করলাম, আমার এক রুমমেট খুব আস্তে আস্তে কথা বলছে ফোনে! আমিতো অবাক! আমার রুমমেট ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে, ভালইতো! কিন্তু এর এক মাসের মাথায় ঘটলো অদ্ভুত ঘটানা। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমার সেই রুমমেট স্থির হয়ে বসে আছে। কোন নড়াচড়া নেই। ব্যপার কী? প্রায় দুই ঘন্টা চলে গেল, তার মুখে কোন কথা নেই!! প্রায় আড়াই ঘন্টা পর হঠাত করে সে ঘোষণা করল, “জীবনে মা আর আপণ বোন ছাড়া কোন মেয়ের সাথে আর কথা বলব না। ” তাহলে ঘটনা কী সেইটা আপনারাই বুঝে নেন।

সত্য কথা বলতে কি, আজ পর্যন্ত চোখের সামনে অনেক ছেলেকে দেখলাম প্রেম করতে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যতগুলো প্রেম দেখলাম তার চেয়ে বেশি দেখলাম ব্রেকআপ! কারনটা খুব সহজ। যখন কেউ প্রেম করে, তখন সে প্রেম করে কিছুটা গোপনে। তাই সহজে তার প্রেমের খবর জানা যায় না। কিন্তু এই গোপন প্রেম যদি গভীর হয়, তাহলে তার রিঅ্যাকশন হয় চখে পড়ার মত।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যলয়গুলোর হলের ছাদে প্রতিদিন রাতে কত সংখ্যক ছেলে মদ, গাঁজা খেয়ে গোটা রাতটাই পাড় করে দিচ্ছে তার কোন পরিসংখ্যান আমার জানা নেই। তবে সংখ্যাটা অনেক বড়। এখানে যাদের দেখা যায়, তাদের জীবন কাহিনী বিশ্লেষন করে দেখুন, দেখবেন, তাদের প্রত্যেকেই জীবনে গভীরভাবে কাউকে না কাউকে ভালবেসে ছিল আর ব্যর্থ হয়েছিল। কেউ অল্প বয়েসে আবার কেউ বেশি বয়েসে। প্রেম করার মত ম্যাচুরিটি আসলে কোণদিনই আসেনা।

কারন প্রেমে পড়লে মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধিগুলো এমনিতেই লোপ পায়! তবে এই “ছ্যকা” মানুষের জীবনের গতিপথকে অনেকটাই পাল্টে দেয়। একটা উদাহরণ দেই। আমার এক বন্ধুর মোবাইলে সেদিন দেখলাম কয়েকটা নাম্বার সেভ করা। নাম গুলো এমন, *bou 1 *bou 2 *bou 3 *bou processing *bou time pass বড় ধরণের একটা ছ্যকা খাওয়ার পরই এমন ফ্লার্ট করার খেলায় মেতে উঠেছে সে। আজ যদি কেউ আমাকে প্রশ্ন করে,শিক্ষিত যুবকদের অবক্ষ্যয়ের প্রধান কারন কী?” তাহলে আমি উত্তর দেব ,”গভীরভাবে কাউকে ভালাবাসা” আগে রোমান্টিক কোন গান শুনলে, রোমান্টিক কোন দৃশ্য দেখলে মনের মাঝে উথাল পাতাল শুরু হত।

কবে আমিও এমন করে......। কিন্তু এখন অবস্থাটা অন্যরকম। প্রেম করিনি আজও। তবে “ভালবাসা” নামের অভিশাপ থেকে দূরেও থাকতে পারিনি। ভালবাসার কথা ভাবতেও ভয় হয়।

প্রেমিক প্রেমিকাদের নির্মল হাসির আড়ালে কত কান্না যে জমা হয় প্রতি নিয়ত, দুজন মিলে দেখা রঙ্গিন দিনের স্বপ্ন গুলোতে কীভাবে একটু একটু করে অন্ধকার জমা হয় তা তারা জানতেও পারে না। পারে যখন মুহূর্তে পৃথিবীটা অর্থহীন হয়ে যায়, যখন মৃত্যুকেই সবচেয়ে আপন মনে হয়, কিন্তু বড্ড দেরী হয়ে যায় তখন। ভালবাসা? সেতো শুধুই যাতনাময়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।