নিজেকে খবরদার সহজলভ্য করো না। নিজের মূল্য বুঝতে শিখো। তুমি যে অমূল্য সেটি বুঝিয়ে দাও। কমপক্ষে এইটুকু বুঝিয়ে দাও চাইলেই তোমাকে পাওয়া সহজ নয়। কেমন করে যে এতটুকু পথ হারিয়ে ফেললাম তা শুধু সৃষ্টিকর্তা ই জানে।
মনের আজান্তে কিভাবেই না নিজেকে এতটা বদলে ফেললাম ……………
আজও আমি হাহাকার করি সেইসব দিনগুলির জন্য, প্রতি মূহুর্তে খূজে খূজে মরি ফিরে পাবার আকুলতায়। কি ছিল তার মাঝে? যা এক মূহুর্ত ও আমাকে ভুলে থাকতে দেয় না। ………… জানি কখনও ফিরে পাবনা, জানি আর কখনই আমি মিশে যেতে পারবনা তার স্তব্দ হয়ে যাওয়া সময়টাতে। তবুও চেয়ে থাকি সীমাহীন আকাশটার দিকে, দৃষ্টিগোচর চোখে, উদাসহীন মনে। ভেবে ভেবে একাকার আমি ……… ফেলে আসা সেই স্মৃতিগুলো।
কত রঙিনভাবেই না ছিলাম আমি। কিন্তু আজ? ………… সাদা কালো পৃথিবী, অর্থহীন জীবন। যেন আমি পড়ে আছি বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপে। শত ইচ্ছা, শত প্রার্থনা যার কোন রূপ বদলাতে পারছেনা। প্থ হারা এক পথিক আমি।
নেই কোন সপ্ন, নেই কোন ভরসা। তবুও চেয়ে আছি আকাশপানে ………
শেষ কবে খালি পায়ে শিশির ছুয়েছিলাম মনে নেই। লাটাই হাতে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে মুক্ত বাতাসে শেষ কবে ঘুড়ি উড়িয়েছিলাম মনে নেই। কিন্তু আজ খুব মনে করতে ইচ্ছে করছে আমার সেই স্মৃতিগুলোকে। খেলার মাঠ, বাসার ছাঁদ, সারাবেলায় যেখানে আটকে ছিলাম আমি।
আমার সেই স্কুলটি। সমস্ত সপ্ন, সমস্ত স্মৃতি যার কোলে আমি লালিত করেছিলাম। আমার প্রিয় দোস্তরা, শ্রদ্বেয় শিক্ষকগণ, স্কুলের দারোয়ান আঙ্কেল- সত্যি বলছি, আজও আমি তোমাদের ভেবে দু চোখে অশ্রু জড়াই। যে ভালবাসা তোমরা আমায় দিয়েছিলে, যে মায়ার বাঁধনে তোমরা আমায় বেধেছিলে তা কখনই ভুলবার নয়।
এক দুই করে ছয়টি বছর আমি তোমাদের সাথে যে বন্ধন তৈরি করছিলাম, তা সত্যিই অনেক মধুর ছিল।
তিল তিল করে যে সপ্নগুলো নিয়ে তোমাদের সাথে পথ চলেছিলাম তা আজও খুব মনে পড়ে। এখন আবারও ইচ্ছে করে তোমাদের মাঝে ফিরে যেতে। একি ছাদের নিচে আবারও একসাথে সপ্ন বুনতে। দেবে কি আমাই সেই সুযোগ?? ……………
আচ্ছা আমাকে কি তোমাদের মনে আছে?
জানিনা তোমাদের উত্তর কি ……… তবুও আশাই বুক বাঁধি তোমরা আমার কাছে আসবে, খুব কাছে ……।
দোস্তরা, আসলেই বন্ধুত্বের গঠনটা অনেক মজবুত।
অনেক বছর হয়ত তোদের সাথে নেই, কিন্তু কখনও তোদের মন থেকে আড়াল করতে পারিনি। যেই সঙ্গ তোরা আমাই দিয়েছিলি তা আবারও ফিরে পেতে ইচ্ছে করে। তোদের সাথে অন্তরের যে ভালবাসা আদান-প্রদান ছিল, তা মৃত্যুর পরও মনে রাখব।
এই জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছি। কিন্তু, সবার উধ্বে, আমার সবচাইতে বড় প্রাপ্তি হল শুধু তোরাই ……।
তোদের কি মনে পড়ে সেই দিনটির কথা? জীবনের প্রথম ক্লাস পার্টিতে কত মজাই না করছিলাম …… কত্ত সুন্দর করে সাজিয়েছিলাম আমাদের ক্লাস রুমটাকে। আল-আমিন, দ্বীপ্ত, জয় – তোদের আঁকা ছবিগুলো কত চমৎকার ই না হয়েছিল। সারা দেয়াল জুড়েই যেন মিশে ছিলি তোরা।
মনে আছে কি তোদের, স্কুল থেকে পিকনিক এ যাওয়ার দিনগুলির কথা। সবাই মিলে একসাথে হৈ-হুল্লোড় করা …………… ক্লাসের মধ্যে আমরা কত মজা করে ক্যাপ দিয়ে ক্রিকেট খেলতাম।
এসেম্বলিতে জাতীয় সংগীত গেয়ে কতবারই তো গলা ফাটিয়েছিলাম। আমাদের স্কুলের পাশে যে ভূতের বাড়িটি ছিল ওইটার কথা মনে আছে তো? আহা! কত ভয় পেতাম ওই বাড়িটাকে। তাছাড়া ক্লাসের পাশের পেঁয়ারা গাছটায় কত বড় বড় পেয়ারা যে ধরত। মনে আছে তোদের, টিফিন ছুটিতে সবাই মিলে পেঁয়ারা চুরি করে খেতাম। এ নিয়ে মাসির কাছে যে কত লক্ষ-বার ধরা খাইছি।
সবচাইতে মজা হত স্পোর্টস ডে তে। বিস্কুট দৌড়, মোড়গ লড়াই, আরও কত কিছু যে ছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর কথা তো জীবনেও ভুলবনা। অওসাম একটা প্রোগ্রাম ছিল। প্রিন্সিপল স্যার যখন ক্লাসে আসত গলাটা তো প্রায় শুকিয়েই যেত।
অনেক মিস করি সেই সব দিনগুলোকে …………
ইসরাত ম্যাম এর সুন্দর চেহারাটা আজও মনে গেঁথে আছে। ম্যাম আমাকে একবার কি মারটাই না দিয়েছিল। তারপর ক্লাস শেষে একটা স্টারশীপ জুস এনে দেয়। আমি খেতে ইতঃস্তত করছিলাম। তবুও অনেক আদর করে খাইয়ে দিয়েছিলেন জুসটি।
ম্যাম এর মিষ্টি-মধুর রাগী স্বভাবটাকে অনেক মিস করি।
তবে আমি নিশ্চিত তোরা সবাই প্রদীপ স্যার এর পক্ষেই ভোট দিবি। কত্ত গ্রেট একটা স্যার ছিলেন উনি। উনার কথাগুলা যে কত্ত ভালবাসতাম তা ভাষায় বুঝানো অসম্ভব। মনে আছে, আমাদের কত গল্প শুনাতেন।
প্রতি ক্লাস এ তিন-চারটা গল্প না শুনলে যে কোনভাবেই শান্ত হতাম না আমরা। তার সদা হাস্য মুখটি এতটাই মায়াবী ছিল, কি আর বোঝাব ………… দি গ্রেট!
ফাহিম স্যারকে তো জমের মতই ভয় পেতাম। তবে উনার মনটা অনেক ভাল ছিল। আমাদের অনেক গভীর থেকে বুঝার চেষ্টা করত। পড়া দেওয়ার চেয়ে পড়া নেওয়াত স্বভাবটাই বেশি ছিল।
কত মার যে উনার ক্লাসে খাইতাম ……… সেই সব দিনগুলি মনে পড়লে এখনও হাসি পাই।
সবচাইতে মজার ছিল কোনটা জানিস? ……… কি মনে পড়ছেনা ……… আরে আমাদের কম্পিউটার ল্যাব এর কথা বলছি। স্কুলে প্রথম প্রথম কম্পিউটার আনা হয়। আমাদের সব কল্পনা-জল্পনা যেন এর মধ্যেই ছিল। মনে আছে, সঙ্গীতা ম্যাম আমাদের কম্পিউটার শিখাতেন।
কিন্তু আফসোস! এক ছবি আঁকা শেখানো ছাড়া যেন আর কিছুই করতে পারতেননা তিনি। ………… হেহে, তবে আমার মজা লাগত পতাকা আকাঁর ব্যাপারটা। ডিকশনারী দেখে একেক দেশের একেক রকম পতাকা আকতাম। আঁকা-আকির ব্যাপারটা যেন অন্য রকম ছিল আমাদের মাঝে।
বাপ্পি ম্যাম এর সেই বিখ্যাত একটি কথা আবারও শুনতে ইচ্ছে করে ……… "আমি তোমাকে সোনা কিম্বা রূপা দেইনি কিন্তু তার চেয়েও মুল্যবান জিনিস বই দিয়েছি" …….. এই কথাটা বলতে বলতে শেষের দিকে আমাকে একদম পাগল বানাই ছাড়ছিল।
আর রিপন স্যার? উনার হাঁটার স্টাইলটার কথা মনে আছে তো? …… হিহি, এইসব মনে না করাই ভাল।
লিলি ম্যাম কিন্তু চরম সুন্দরী ছিল। মনে হত পৃথিবীর সকল ভালবাসাই যেন উনার জন্যই আসছিল।
চম্পা ম্যাম ও কম ছিলেননা। উনারা দুই বান্ধবীর মত সারাক্ষণ একসাথেই থাকত।
কৃষ্ণকলি ম্যামকেও অনেক ভাল লাগত।
আরও কত শত স্যার-ম্যাম দের সাথে যে আমরা বড় হয়েছি। ছোট ছিলাম বলে সবার কথা মনে করতে পারছিনা। তবে যাই-ই বল, দুনিয়ার সেরা সেরা স্যার-ম্যাম গুলাই আমাদেই সাথে ছিল।
কেয়া আপুর কথা আশা করি সবার ই মনে আছে।
কত্ত সুইট একটা আপু ছিল আমাদের। এইরকম একটা আপু পেয়ে আমরা আসলেই ধন্য। ইউসুফ-নিজাম ভাই দের কথা ও খুব মনে পড়ে।
আমাদের বান্ধবীদের কথা মনে আছে তোদের?
আলিফা, কিশুমনি, জুলিয়া, সিন্থিয়া, নাহিদা ……………। কত শত মেয়েই তো ছিল আমাদের ক্লাসে।
একটা জিনিস আমার খুব ভাল লাগত। কিশুমনি-জুলিয়া হল আমার দেখা সবচাইতে সেরা জুটি। মনে হত একটি হৃদয় দিয়েই যেন দুটি মানুষ তৈরি। একজন যেন অন্য জনের ছাঁয়া। মনে আছে তোদের ক্লাস এ যদি কেও একজন মার খেত, অন্যজন অবশ্যই বলত- স্যার আমাকে ও মারেন।
এ ব্যাথা আমি আর সইতে পারছিনা (আসলে আমিও সইতে পারতামনা )। মাঝে মাঝে স্যাররা এ নিয়া মহা বিপদেই পড়ে যেতেন। আসলেই অনেক মজার ছিল।
সবার সাথে আমাদের বোঝা-পোড়াটাও দারূণ ছিল। মাঝখানের দিকে তো কত ভাব- ই না হয়েছিল তাদের সাথে।
আসলেই ফিরে পেতে ইচ্ছে করে ……।
দোস্তরা, কত আনন্দেই না ছিলাম তখন। সেই হারিয়ে ফেলা পথটির মাঝে আজ কত্ত আসহায় আজ। যতদিন তোদের সাথে ছিলাম ততদিন মনে কোন দুঃখ ছিল না, কোন বেদনা ছিল না। কত আপন-ই না ছিলি তোরা।
আমরা সব বন্ধুরা কতটা কাছাকাছি ছিলাম তা শুধু আমরাই জানি।
তোদের স্মরণ করেই এখন সময় কাটে আমার। …………
শাকিল, ফাহিম, সবুজ, মিনহাজ, ইকরাম, এনজয়, রাকিব, মুরাদ, বাবর, শাহাদাত, দ্বীপ্ত, জয়, আলামিন – সত্যিই তোদের অনেক মিস করি। ……
আবার যদি একসাথে হতে পারতাম। ইচ্ছে ঘুড়ি আকাশে উড়াতে পারতাম।
………… জানি অসম্ভব। তবুও আশায় বুক বাঁধি। সপ্ন দেখেই চলছি আমি ……………………………। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।