আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাঁড়াশি অভিযানে ফাঁকা মতিঝিল

রোববার দিনভর সংঘাতে কয়েকজন নিহত হওয়ার পর সোমবার ভোররাতে মতিঝিলে অভিযান শুরু করে র‌্যাব ও পুলিশ, তার আগেই ওই এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করা হয়।
কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেটে টিকতে না পেরে বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়েন মতিঝিলে অবস্থানকারীরা। এদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর কর্মী বলে পুলিশের দাবি।
রোববার মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশ চলাকালে পল্টন-গুলিস্তান, কাকরাইল, বিজয়নগরজুড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়।
রাতে অভিযানের পর জনতা পাঁচজন এবং পুলিশ দুইজনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন বলে হাসপাতাল ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান।

  
এছাড়া ভোরে রাজারবাগ এলাকায় মো. শাজাহান নামের এক পুলিশ উপ পরিদর্শককে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। হাসপাতালে নেয়ার পথেই মৃত্যু হয় তার।    
রাত আড়াইটায় সাঁড়াশি অভিযান শুরুর আগে থেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক জানান, পুরো অভিযানে আহতের সংখ্যা শতাধিক। বেশ কয়েকজনকে আটক করে রাতে শাপলা চত্বরে বসিয়ে রাখতেও দেখা যায়।
তবে পুলিশের রবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডে টিকতে না পেরে হেফাজতকর্মীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের পুলিশ আটক না করে পালানোর সুযোগ দেয়।


এ রকম অনেককেই মাথার ওপর হাত তুলে নটরডেম কলেজের দিকে দৌঁড়ে যেতে দেখা যায়। তবে অভিযানের মুখে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হেফাজতকর্মী পালিয়ে যান টিকাটুলির দিক দিয়ে।
অভিযানের বিষয়ে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক কিসমত হায়াৎ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তাদের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে আলোচনা চালিয়ে গেছি।
“তাদের বোঝাতে চেয়েছি, তাদের দাবি মানা হবে, তারা যেন অবস্থান ছেড়ে যায়। কিন্তু তারা সেই আহ্বান উপেক্ষা করায় আমরা অভিযানে বাধ্য হয়েছি।


অভিযানের সময় হেফাজতকর্মীরা শাপলা চত্বর থেকে হটে গেলেও অ্যালিকো ভবন সংলগ্ন গলি থেকে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট ও হাতবোমা ছোড়া হয়। এতে দুই পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য জখম হন।  
টেলিভিশনে দেখা যায়, পুলিশের কয়েকটি সাঁজোয়া যান মতিঝিল এলাকায় ঘুরছে এবং পুলিশ ও র‌্যাব মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রবার বুলেট ছুড়ছে।  
হেফাজতকর্মীরা চলে যাওয়ার পর মতিঝিলের সড়কে অসংখ্য কাগজ, স্যান্ডেল এবং কিছু ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে রাখা কাগজে আগুনও জ্বলছিল।

পুড়িয়ে দেয়া পাঁচটি গাড়িও দেখা যায় সড়কের পাশে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঠেকাতে সড়ক বিভাজকের স্টিলের বেড়া ভেঙে সড়কের ওপর আড়াআড়ি করে রেখেছিল হেফাজতকর্মীরা। সেখান থেকে ইট খুলেও তারা টুকরো টুকরো করে রাখে, যা পুলিশের দিকে ছোড়া হয়।
রাতে কয়েক হাজার র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য যখন অভিযান শুরু করেন, তখনো প্রায় ২৫ হাজার কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ মঞ্চ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হচ্ছিল, চলছিলো বক্তব্যও।
নটরডেম কলেজ ও দৈনিক বাংলা থেকে র‌্যাব ও পুলিশ একযোগে অভিযান শুরু করে ১৫ মিনিটের মধ্যে মতিঝিলে শাপলা চত্বরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।


তখন ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী সমাবেশ মঞ্চে হেফাজতের কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।
১৩ দফা দাবিতে রোববার সকাল থেকে ঢাকা অবরোধের পর বিকালে রাজধানীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র মতিঝিলে সমাবেশ শুরু করে হেফাজত।
সমাবেশে সংগঠনের আমির আহমদ শফীর পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেয়ার কথা থাকলেও তিনি শেষ পর্যন্ত সমাবেশস্থলে যাননি। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় হাটহাজারী মাদ্রাসার এই অধ্যক্ষ লালবাগে সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়েই ছিলেন।
আজিমপুর পর্যন্ত এসে তিনি হঠাৎ করেই ফিরে যান বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।


হেফাজতের ঢাকা মহানগরের প্রচার সম্পাদক আহমুদুল্লাহ ওয়াসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিরাপত্তাজনিত কারণে শফী হুজুর সমাবেশে যাচ্ছেন না। ”
তবে সমাবেশস্থলে থাকা হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, “আহমদ শফীকে সমাবেশস্থলে যেতে দেয়া হচ্ছে না। ”
হেফাজত নেতারা সমাবেশে বলেন, দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলে অবস্থানের জন্য আহমদ শফী তাদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন।
বিকালের সমাবেশে অনেক মানুষ থাকলেও আহমদ শফীর না আসা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের প্রস্তুতিতে জনসমাগম কমতে থাকে।
রাত ১২টার দিকে শাপলা চত্বরে প্রায় ২৫ হাজার কর্মী ছিলো, যাদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী বলে পুলিশের দাবি।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতের অবস্থানে শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত এলাকায় ছিলো মূলত জামায়াত-শিবিরকর্মীরা।
সমাবেশ চলার সময়ই বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দৈনিক বাংলা থেকে পল্টন পর্যন্ত এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর চালায় হেফাজতকর্মীরা, আগুন দেয় বহু ভবন ও গাড়িতে।
হেফাজতকর্মীদের হামলা চালায় পল্টনে কমিউনিস্ট পার্টির ভবনেও, যে দলটি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরও এই হামলার জন্য হেফাজতের আড়ালে থাকা জামায়াতকর্মীদের দায়ী করেন।
মতিঝিলে জড়ো হওয়া হেফাজতকর্মীদের সরে যেতে সরকারের পক্ষ থেকে বিকাল থেকেই আহ্বান জানানো হচ্ছিলো।


আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতকে হুঁশিয়ার করে বলেন, সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে মতিঝিল না ছাড়লে সরকারের পক্ষে যা যা করার, তা করা হবে।
তার সংবাদ সম্মেলনের পর হেফাজত নেতারা সমাবেশ থেকে পাল্টা হুমকি দিলে রাতে আবার সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম হেফাজতকর্মীদের মতিঝিল ছাড়ার আহ্বান জানান।
বিএনপির সমর্থন পাওয়া হেফাজত সরকারের আহ্বান উপেক্ষা করার পর গভীর রাতে অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অন্যদিকে বিদ্যুৎবিহীন মতিঝিল এলাকায় অন্ধকারের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে সমাবেশ মঞ্চ থেকে বক্তব্য ও স্লোগান চলতে থাকে।
বিকাল থেকে সংঘর্ষের পর রাত ৮টার দিকে পল্টন থেকে দৈনিক বাংলা পর্যন্ত সড়কে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর পুলিশ সেই পর্যন্তই অবস্থান নিয়ে ছিলো।


এর মধ্যেই রাত সাড়ে ১১টার দিকে র্যাবের অন্তত ৬০০ সদস্য এবং বিজিবির কয়েকশ’ সদস্য পল্টন এলাকায় অবস্থান নেয়।
রাত সোয়া ১টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা পল্টন হয়ে মতিঝিলের দিকে এগোতে শুরু করেন। একই ধরনের অভিযান শুরু হয় নটরডেম কলেজের দিক থেকে।
রাত দেড়টার দিকে দৈনিক বাংলা মোড় পেরিয়ে সিটি সেন্টারের সামনে র‌্যাব ও পুলিশ অবস্থান নিলে কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায় হেফাজতকর্মীরা।
এরপর র‌্যাবের কর্মকর্তারা হ্যান্ডমাইকে হেফাজতকর্মীদের মতিঝিল ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে অবস্থানকারীরা।
এরপর আড়াইটার দিকে শুরু হয় সাঁড়াশি অভিযান। এতে হেফাজতকর্মীরা পিছু হটার পর সড়ক পরিষ্কার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গণজাগরণবিরোধী হেফাজত গত ৬ এপ্রিল মতিঝিলে সমাবেশে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে এক মাস পর ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয়।
হেফাজতের ১৩ দফা ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে সমালোচিত।

ইসলামী এই সংগঠনটি নারীদের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করতে চায় বলে সোচ্চার হয়েছে নারী সংগঠনগুলোও।  

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।