আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রম্য গল্পঃ আবুল হোসেনের ঘড়ি (পৈশাচিক বিনোদন )

পেতে চাই সত্যের আলো, হতে চাই বিশ্বাসীদের একজন তো আবার বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর গল্প। বারবার তথ্যমন্ত্রীর স্ত্রী বলতে ভাল লাগে না, একটা সুইটেবল নাম দরকার। যেহেতু একসময় আবুল হোসেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ছিলেন। সুতরাং ধরে নেই তার স্ত্রীর নাম মিসেস আবুল। তো মিসেস আবুল স্বর্গে গেছেন, সব ঘুরে ফিরে দেখছেন আর যেখানেই যান, দেখতে পান খালি শয়ে শয়ে ঘড়ি।

কি কাজ এসব ঘড়ির? একেবারেই সিম্পল। এসব ঘড়ি বরাদ্দ সব পলিটিসিয়ানের নামে। তারা যখনি একটা মিথ্যা বলেন, সাথে সাথে ঘড়ির সময় ১৫ মিনিট এগিয়ে যায়। বহুকাল ধরে এভাবেই চলে আসছে। তো মিসেস আবুল একদিন ঘুমিয়ে ছিলেন।

হঠাৎ সকালবেলা প্রচন্ড শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। বেচারীতো ভয় পেয়ে গেলেন। ভাবলেন স্বর্গেও আবার জঙ্গী হামলা হল নাকি? বেচারী গলা ছেড়ে কাদতে লাগলেন, ওরে, কে কোথায় আছিস??? আমাকে স্বর্গ নামক এই নরক থেকে উদ্ধার কর। সাথেসাথে এক একটা মুখ দরজা ফাক করে উকি দিল। জানতে চাইল, কি ব্যাপার? এভাবে কাদছেন কেন? তিনি জবাব দিলেন, তুই কে রে ব্যাটা??? আমার ট্যুর গাইড ওই পাতি দেবতাটা কোথায়? -আজকের গল্পটা গ্রীক মিথোলজি অনুসারে হবে না।

তাই আজকের গল্পে উনি নাই। -তাহলে তুই কে? -আমি একজন ফেরেশতা। আজকের গল্পে আমিই আপনার ট্যুর গাইড। আর তুই করে বলবেন না। ভয়ানক মেজাজ খারাপ হয়।

-চোপ শালা। আমি মন্ত্রীর বউ। সবাইকে তুই করে বলতেই অভ্যস্ত। আপনি টাপনি করতে পারব না। -তাই? ভ্রু নাচিয়ে বলল ফেরেশতা।

দেখা যাবে। তবে একটা প্রশ্ন আছে। -কি? -আমাকেতো “শালা” ডাকলেন। একটু বুঝিয়ে বলবেন কিভাবে মেয়েদের শালা থাকে? -চোপ। ব্যাটা ফাজিলের ফাজিল।

উলটাপালটা প্রশ্ন একদম বন্ধ। এখন বল বাইরে কিসের এত শব্দ? ফেরেশতা অবাক হয়ে বলল, আপনি জানেন না আজকের ইভেন্টের ব্যাপারে??? আমিতো আপনাকে আজকের ফেসবুক ইভেন্টে ইনভাইট করেছিলাম। মিসেস আবুল মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন, আরে রাখ তোর ফেসবুক। আমার নিস্পাপ(!!!) জামাইটাকে ওরা ফেসবুকে এত পচানি দিয়েছে যে আমি মনের দুঃখে ফেসবুকে ঢোকাই ছেড়ে দিছি। ফেরেশতা দাত কেলিয়ে বলল, তাই নাকি?তাহলে চলুন, আপনাকে লাইভ দেখাই।

০২. হেলিকপ্টার থেকে তারা দুজন নেমে এলেন। মিসেস আবুল আর ফেরেশতা। মিসেস আবুল চেয়ে দেখলেন, নদীর পাড়ে একটা বিশাল মাঠ। সেই মাঠে জমায়েত হয়েছে কোটি কোটি মানুষ। একটু পরপরই জনতার ব্যাপক হর্ষধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

কাউকে তারা ব্যাপক উৎসাহ দিচ্ছে। মিসেস আবুল বললেন, কি ব্যাপার? -চলুন সামনে আগাই। নিজের চোখেই দেখবেন। -সামনে কোথায়? -আরে আপনার জন্য ভিআইপি সীটের ব্যবস্থা আছে। খালি বসবেন আর মজা নিবেন।

ভিআইপি শুনেই খুশি হয়ে গেলেন মিসেস আবুল। গদগদ হয়ে বললেন, চল তবে। সীটটা বেশ উচুতে। চারদিক স্পষ্ট দেখা যায়। সীটে বসেই তার মনে হল, এ তার চেনা জায়গা।

এখানে আগেও তিনি এসেছেন ফেরেশতাকে ডেকে বললেন, এই ব্যাটা, এটা কোন জায়গা? মনে হচ্ছে আমি এখানে আগেও এসেছি। এটা পদ্মার পাড় না? -আপনি ঠিকই ধরেছেন, আবার ঠিক ধরেননিও। -মানে? -মানে এটা আসলে ঠিক পদ্মার পাড় নয়। এ জায়গাটাকে পদ্মার পাড়ের আদলে সাজানো হয়েছে। নদীর মত যেটা দেখছেন ওট আসলে জাহান্নাম।

মিসেস আবুল ভয় পেয়ে বললেন, তাহলে নদীর ওপর ওই সেতুটা কি? পুলসেরাত? -একদম ঠিক ধরেছেন। অবশ্য আপনারা মানে বাংলাদেশীরা এটাকে পদ্মাসেতুও বলতে পারেন। পাপীরা যেমন পুলসেরাতের ওপর দুলতে থাকে, পদ্মাসেতুর ভবিষ্যতওতো ঠিক সেভাবেই দুলছে। -আর সেতুর ওপারে? -ওটা জান্নাত। -আমি এখানে কেন? -আপনাকে এখানে আনা হয়েছে একটা দৌড় প্রতিযোগিতা দেখার জন্য।

-কি? -জ্বি। মিসেস আবুল খেয়াল করে দেখলেন, প্রতিযোগিদের একজন দেখতে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। ওটা কে? আমার পরানপাখি আবুল না??? ফেরেশতা দাত কেলিয়ে হেসে হেসে বলল, জ্বি, ঠিক ধরেছেন। উনিই আপনার পরানপাখি আবুল হোসেন। -সেকি।

ও এখানে কেন? -উনি আজ দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। যদি জেতেন তবে স্বর্গ আর হারলে হে হে হে... বুঝতেই পারছেন। -নরকে? -উহু,নরক নয়। বলুন পদ্মা নদী। কেবল উনার জন্যই জাহান্নামকে পদ্মা আর পুলসেরাতকে পদ্মা সেতুর আদলে সাজানো হয়েছে।

-পদ্মা সেতু কেন? -বেচারাতো জীবদ্দশায় পদ্মা সেতুর ওপর ভ্রমন করতে পারে নাই, তাই পরকালে এই ব্যবস্থা। -ওর প্রতিদ্বন্দ্বী কে? -কে আবার? দ্যা গ্রেট উসাইন বোল্ট। -হোয়াট? -জ্বি। তাহলেতো ওর জাহান্নাম শিওর। বেচারী স্বামীর দুঃখে কাদতে শুরু করলেন।

ফেরেশতা সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বললেন, কি যে বলেন। ওনার খালি জেতার জন্য ইন্সপায়রেশন দরকার। সেবার মন্ত্রীত্বের লোভে জিতেছেন, এবার স্বর্গের লোভে জিতবেন। তবুও বেচারীর কান্না থামে না। শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে ফেরেশতা বললেন, একটা উপায় আছে।

-কি? কান্না মুছে জানতে চাইলেন মিসেস আবুল। -রেফারী ব্যাটা দুনিয়াতে ছিল বিশ্বব্যাংকের চেয়ারম্যান। ঐ ব্যাটাকে দেখেন ঘুষটুষ দিয়ে কোনভাবে ম্যানেজ করা যায় কিনা। মিসেস আবুলের মুখে অবশেষে হাসি ফুটল। আমি যাব আর আসব।

তিনি উঠে গেলেন। ফিরে এলেন একটু পরেই। কাজ হয়ে গেছে। এবার আমার আবুল সোনাই জিতবে। -কি করলেন? জানতে চাইল ফেরেশতা।

-জাস্ট ওয়েইট এন্ড ওয়াচ। কিন্তু কিছু দেখার আগেই ‘বুম’। প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরিত হল পদ্মা সেতু। ০৩. হাসপাতালের বেড। আইসিইউতে শুয়ে আছেন মিসেস আবুল।

তার পাশে একটা চেয়ারে হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে বসে আছে ফেরেশতা। -আব্বাগো, এইডা কি হইল? জ্ঞান ফিরতেই চিৎকার করে উঠলেন মিসেস আবুল। -আপনেও দেখি খালি আব্বা আব্বা করেন। বিরক্ত হয়ে বলল ফেরেশতা। -কি হয়েছিল? আমার আবুল সোনা কোথায়? ব্যাকুল হয়ে জানতে চাইলেন তিনি।

-তার আগে বলেন ওই শালা রেফারী মানে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টরে আপনি কি ঘুষ দিছিলেন? -কেন?একটা ঘড়ি দিয়েছিলাম। সোনার ঘড়ি। আমার আবুল সোনাকে ওটা গিফট করেছিল প্রধানমন্ত্রী। -তাতেই কাম সারছে। -মানে? -মানে আবার কি?রেসের সময় হেড চিয়ার লিডার আছিলতো আপনাদের প্রধানমন্ত্রী।

আবুলকে উৎসাহিত করার জন্য উনি যে-ই না একটা ডায়লগ দিছে সাথে সাথে ঘড়ির টাইম ইনফায়নাইট পরিমান আগায় গেছে আর সেতুরতো একটা লাইফটাইম আছে। নাকি? যেই না ঘড়ি সেতুর লাইফ টাইম অতিক্রম করছে সাথে সাথে সেতু ধ্বইসা সবাইরে নিয়া জাহান্নামে পরছে। -অ্যা? কি ডায়লগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী? -কি আর বলবে? বলছে, আবুল হোসেন একজন দেশপ্রেমিক। =================================== গল্পে বর্ণিত সমস্ত ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। কারো সাথে মিলে গেলে তা লেখকের অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র, এজন্য লেখক কোন অবস্থাতেই দায়ী নয় =================================== সিরিজের আগের গল্পসমুহঃ রম্য গল্পঃ তথ্যমন্ত্রীর ঘড়ি রম্য গল্পঃ সাহারা খাতুনের ঘড়ি অন্যান্য রম্য গল্পসমূহঃ টিভি অথবা একজন নোয়াখাইল্যার গল্প হাসিনা-খালেদা-এরশাদের স্বর্গযাত্রা  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.