আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার লেখা আর্টিকেল

গরমে শিশুর যত্ন-আত্তি সাদিয়া ফাতেমা কবীর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ঢাকা: শিশু মাত্রই তার যত্নের প্রয়োজন তা হোক শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা কাল। তবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় গরম কাল সত্যিকার অর্থেই শিশুদের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। এ সময়ে শিশুদের নানাবিধ অসুখ হতে পারে। একটু বেশি যত্নই পারে তাকে স্বুস্থ্যু রাখতে। জেনে নেয়া যাক গরমে শিশুর সুস্থতায় করণীয় সম্পর্কে: শিশুর খাদ্য: গরমে শিশুর খাদ্যতালিকায় হাল্কা, পুষ্টিকর, টাটকা এবং সহজপাচ্য খাবার রাখুন।

সেটা হতে পারে নরম খিচুড়ি বা সবজির স্যুপ। মাছ-মাংস দিন পরিমিত। শিশুর খাবার ঘরেই তৈরি করুন। বাইরের কেনা খাবার দেবেন না। এই সময়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশ দেখা যায়।

ঘরে তৈরি টাটকা খাবার শিশুকে এই ধরণের ঝুঁকির হাত থেকে রা করবে। শিশুকে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করান এবং পানি যেন অবশ্যই যথাযথভাবে বিশুদ্ধ হয়। খুব ঠাণ্ডা পানি বা গরম পানি দুটোই শিশুর জন্য ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে পরিমিত ঠাণ্ডা পানি পান করান। শিশুকে মৌসুমি ফল খাওয়ানো যাবে।

বিভিন্ন ধরণের ফলের রসও দিতে পারেন তবে তা নিজেই বাসায় তৈরি করুন। বাজারের প্যাকেটজাত ফলের রস শিশুর দাঁতের ক্ষতি করে। এছাড়া এগুলোতে দেয়া প্রিজারভেটিভ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই বাইরের খাবার, কোমল পানীয় এমনকি ফলের রস ইত্যাদি থেকে আপনার শিশুকে দূরে রাখাই শ্রেয়। আপনার শিশুর দুধটা তার খাবার সময়টাতেই বানিয়ে দিন।

খুব বেশিণ আগে থেকে বানিয়ে রাখবেন না। এতে পুষ্টিগুণ নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে। অন্যান্য খাবার তৈরিতে এই বিষয়টি মাথায় রাখুন। বেশি আগে বানিয়ে রাখা খাবার শিশুর জন্য ভালো নয়। কেনা খাবার এড়াতে বাইরে যাবার সময় শিশুর খাবার তৈরি করে নিয়ে যান।

সেক্ষেত্রে খাবার এবং পানি বহন করার জন্য ভালো মানের ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করুন যাতে করে খাবারের মান অক্ষুন্ন থাকে। খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা এই সময়টাতে খুব বেশি থাকে তাই যেকোনো সময় যেকোনো খাবার দেওয়ার আগে একবার ভালো করে পর্যবেণ করে নিতে ভুলবেন না যে খাবারটা আদৌ ঠিক আছে কিনা। আপনার শিশুর বয়স যদি ছয় মাসের কম হয় তাহলে তাকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ান। মনে রাখবেন ছয় মাসের কম বয়সের শিশুকে এই সময়টাতে আর কোনও কিছু দেওয়ার দরকার নেই এমনকি পানিও নয়। শিশুকে বার বার বুকের দুধ দিতে হতে পারেন।

এর মাধ্যমেই শিশু তার সব প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে যাবে। শিশুর পোশাক এবং আবাসস্থল: আপনার শিশুর পোশাকের দিকে লক্ষ্য রাখুন। শিশুকে গ্রীষ্মের এই দিনগুলোতে অবশ্যই সুতির নরম এবং পাতলা পোশাক পরান। ডিসপোজেবল ন্যাপির পরিবর্তে সুতির পাতলা কাপড়ের ন্যাপি পরানো ভালো কেননা ডিসপোজেবল ন্যাপিগুলো ঘাম এবং তাপ শোষণ করতে পারেনা যার ফলে ঘামাচি, র‌্যাশ প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তীব্র রোদের সময়টাতে শিশুকে বাইরে বের না করাটাই উত্তম তারপরও যদি বাইরে বের হতেই হয় তবে পাতলা কিন্তু ফুল হাতার কাপড় পরান যাতে রোদের তিকর অতিবেগুনী রশ্মি আপনার শিশুর ত্বকের ক্ষতি করতে না পারে।

খেয়াল রাখবেন শিশুর ঘরটি যেন প্রচুর আলোবাতাস যুক্ত হয়। এতে ঘরের আবহাওয়া স্বাস্থ্যকর থাকে। স্যাঁসসে্যঁতে ঘরে শিশুকে রাখবেন না। অনেকে ঘরে এসি ব্যবহার করে থাকেন। আপনি যদি শিশুকে সবসময় এসিতে রাখেন তবে অবশ্যই তাকে একটু মোটা কাপড় পরাতে ভুলবেন না।

কারণ শিশুরা খুব দ্রুত ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া গোসলের পর পর শরীর এবং মাথার চুল পুরোপুরি না শুকানোর আগে শিশুকে এসিতে আনবেন না। আবার আপনার শিশু যদি অনেকসময় ধরে এসিতে থাকে তবে তাকে এসির বাইরে নেওয়ার আগে ঘরের এসিটি বন্ধ করুন। ঘরের তাপমাত্রা এতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে এবং আপনার শিশু ধীরে ধীরে তা সহ্য করে নেবে যার ফলে হঠাৎ করে গরম লেগে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। ফ্যানের সামনে শিশুকে এমন স্থানে রাখবেন না যাতে করে সরাসরি ফ্যানের বাতাস শিশুর গায়ে লাগে।

সরাসরি অনেকসময় ধরে বাতাস লাগার ফলে শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। শিশুর প্রসাধনী: শিশুর প্রসাধনী ব্যবহারে সচেতন থাকুন। গোসলের পর পর ভেজা শরীরে পাউডার দেবেন না, শরীর শুকিয়ে আসলে পরিমিত পরিমাণে পাউডার দিতে পারেন। অতিরিক্ত পাউডার ব্যবহার করবেন না। ঘামাচির জন্য কখনই ঘামাচি নিরোধক পাউডার ব্যবহার করবেন না কারণ এই ধরণের প্রসাধনী শিশুর কোমল ত্বকের জন্য ভালো নয়।

তেল, লোশন ইত্যাদির ব্যবহার বন্ধ রাখুন গরমের এই দিনগুলোতে। মনে রাখবেন শিশুদের প্রসাধনীর ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো মানের বেবি প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া বাহিরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নয়। অনেকেই ধারণা করে থাকেন সানস্ক্রিন শিশুদের জন্য নয়। এটি ভ্রান্ত ধারণা।

সঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার শিশুর কোমল ত্বক রা পাবে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে। শিশুর স্বাস্থ্য: গরমের সময়টাতে মশা, মাছি, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকামাকড়ের প্রকোপ দেখা যায়। এগুলো আপনার শিশুর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। আপনার ঘরকে এসব পোকামাকড় মুক্ত রাখতে এরোসল বা অন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার শিশু যেন কোনভাবেই এগুলোর নাগাল না পায়। এছাড়া ঘরকে পোকামাকড় মুক্ত রাখতে আপনার ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।

ফুলের টবে বা অন্য কোথাও এমন কি বালতিতেও পানি জমতে দেবেন না। কারণ এগুলো ডেংগু রোগবাহী মশার বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন। শিশুর বিছানা পরিচ্ছন্ন রাখুন। শিশুর কোনরকম শারীরিক সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গ্রীষ্মের এই দিনগুলোতে আপনার শিশুর সুস্থতা আপনি নিজেই নিশ্চিত করতে পারেন এভাবেই। তাই শিশুর যথাযথ যত্ন নিয়ে নিশ্চিত করুন তার সুস্বাস্থ্য এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ। লেখক: শিক্ষার্থী, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ, বরিশাল। বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১২ সম্পাদনা: তানিয়া আফরিন, বিভাগীয় সম্পাদক লিঙ্কঃhttp://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=61806a68abf250bf0c84cc86900361da&nttl=20120601011651115809 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.