প্রতিকণা শিশিরেই থাকে দূর কোন সমুদ্রের স্মৃতি। প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসে কোন না কোন মানুষ... মো ইয়ান ঘাসের টুকরাটা চিবুতে চিবুতে বললো, গুল মারার জায়গা পাও না, নাহ?
তে হান বললো, বিশ্বাস করো, এক ফোঁটাও মিথ্যা কইতেছি না। মেরীর কসম।
বলে সে ক্রুশ কাটে শূন্যে। সাদা গরুটার দিকে চোখ ইয়ানের।
সে চোখ কপালে তুলে বললো, তাই বইল্যা তিন বেলা জিআওজি খায়, এইটা ঈশ্বরের চান্নির তলে অসম্ভব।
তে হান ব্রহ্মাস্ত্র ছাড়ার মতো বললো, আরে মিয়া হে অইল রাইটার। রাইটার বোঝ? লেখে। হে গো কাছে টেকা ঘাসের মতো। তিন বেলা জিআওজি হেরা খাইব ন তো তুমি খাইবা।
লেখলে খালি টেকা আর টেকা।
মো ইয়ানের তবু অবিশ্বাস্য লাগে। রাইটার হলে তিন বেলা এমন সুস্বাদু খাবার খাওয়া যায় ভাবতে ভাবতে ঘাসের ডগা আমূল মুখে ঢুকিয়ে কাশতে থাকে সে। নজর করে দেখে, গরু গুলো ঠিক ঘাস খেয়ে যাচ্ছে, তার জন্যও আছে চারদিকে ছড়ানো সবুজ ঘাস।
গরু চরাতে চরাতে ঘাস চিবুনো এই বালকটি উপরের ঘটনার প্রায় ৪৭ বছর পর নোবেল পুরস্কার পান ২০১২ তে।
সাহিত্যে। চায়নিজ এই ভদ্রলোক তার সিফু, ইউ উইল ডু এনিথিং ফর লাফ বইয়ের ভূমিকায় লিখেন, আমার লেখক হবার পেছনে এই একটা কারণই যথেষ্ট ছিলো। ব্যস। যদি আমি লিখি, তাহলে আমি তিনবেলা মাংসে ভরা জাওজি খেতে পারব, লেখক হবার জন্য এর চেয়ে বড়ো প্রণোদনা আমার দরকার ছিলো না। বলে রাখি, মো ইয়ানের শৈশব কেটেছে চীনের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পীড়িত অঞ্চলে।
ভদ্রলোক অকপটে বলেছেন, I didn’t give a damn about improving society through fiction. As I’ve said, my motivation was quite primitive: I had a longing to eat good food.
এ পোষ্টে আমি ধান ভানতে বসেছিলাম। শিবের গীত গাওয়া শুরু করলাম। শিবের গীত ক্ষ্যামা দিলাম। তবে শিবের গীতটা গুনগুনিয়ে উঠলো এই কারণে যে, আমাদের দেশে প্রায় একই ধরনের কথা বলে বলে লেখা চালিয়ে গেছেন যে ভদ্রলোক, তিনি হুমায়ূন আহমেদ। অকপটে বলতেন, টাকার জন্য লিখি, টেলিভিশন কেনার জন্য প্রথম টিভি নাটক লিখি, স্রেফ মজার জন্য লিখি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসব স্বীকারোক্তি নিয়ে কখনো ‘অতি অহংকারী অত্যুক্তি‘, কখনো ‘ধুর অ, তাই ক। এ আবার সাহিত্যিক‘- এসব কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি আমরা দেখেছি। বড় জনেরা নানা সময়ে দেখিয়েছেন, আমরা কখনো হুমায়ূন পড়তে পড়তে এ দু পক্ষের যে কোন এক পক্ষে চলে গেছি। তবে এসবের জন্যও যে লেখা যায়, লিখলে দোষের কিছু ঘটে না, এটা মো ইয়ানের মতো নোবেল লরিয়েটরা বললে আমাদের মনে পড়ে, হ, যায় তো, দোষের কি...
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর অন্যপ্রকাশ প্রকাশ করে ঢাউস স্মারক গ্রন্থ। প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠা।
সম্পাদনা পরিষদ থেকে শুরু করে বইটির লেখক সূচীতে আছেন কবি ও ছড়াকার, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক, সাংবাদিক ও সম্পাদক, গায়ক ও সুরকার, সংগীত পরিচালক ও টেলিভিশনের প্রযোজক, নাট্যাভিনেতা ও নাট্যপরিচালক, চিকিৎসক ও স্থপতি, সহযোগী ও সহকর্মী, সহপাঠী ও আত্মীয়পরিজন। বড় বড় লোকজনের বড় বড় কথা, তাদের বিশ্লেষণ বড় বড়, কত সূক্ষ্ম, আবেগ সঞ্চারী। বইটা পড়ে ভাল লাগবে, হুমায়ূন আহমেদ কে জানা যাবে দশ দিক হতে। শুধু ঘটনা ঘটবে ৪০০ পৃষ্ঠা পাঠ শেষ হলে। হঠাৎ মনে হবে, আহারে! এই সব কথা যদি ভদ্রলোকের মৃত্যুর আগে বলা যেত! এখন বলে কার কি লাভ।
এখন তুমি কার কে তোমার!! যদিও ভূমিকায় লিখা আছে, বইটির পরিকল্পনা তার ৬৪তম জন্মদিনের জন্য করা। কিন্তু পাঠ করলে জানা যাবে, বেশির ভাগ লেখাই লেখা হয়েছে তাঁর মৃত্যুর পর।
তো এত গেল বিখ্যাত, প্রায় বিখ্যাত, বিখ্যাতের দিকে পথচারী ব্যক্তিত্বদের হুমায়ূন বিশ্লেষণ, স্মৃতিচারণ। কিন্তু আমরা আম পাবলিকেরা আছি, যারা হুমায়ূন পড়েছি, পড়ছি। কখনো হেসেছি, কেঁদেছি, টাকা জমিয়ে তাঁর বই কিনেছি, ধুত্তোরি, কি সব লিখছে, টেকা টাই জলে গেল বলে আক্ষেপ করেছি, তাদের কথা কই।
দয়ালের দয়ায় ক‘লাইন আমরাও তো লিখি। হুমায়ূন ভুয়া কি সেরা এ নিয়ে তর্ক করে নাকশা ফাটানোর ঘটনা আমাদের সহপাঠীদের মধ্যেই আছে। আমরা আসলে কি ভাবি হুমায়ূন সাহিত্য নিয়ে? তিনি লিখতেন, আমরা টাকা দিয়ে বই কিনে গিলে ফেলতাম, কেউ কেউ বমিও করেছি গেলার পরে। আবেগ থাকুক, থাকেও মৃত এমন একজন প্রভাববিস্তারী গল্পজাদুকরের জন্য, কিন্তু আমরা কি ভাবে দেখি একজন সাহিত্যিক হুমায়ূনকে। এ সব নিয়ে একটা সংকলন দাঁড় করানো গেলে কেমন হয়।
প্যাঁচাপ্যাঁচি বন্ধ রেখে বলার কথাটি বলি, মানে একেবারে টু দি পয়েন্টে:
১. একটা সংকলন করতে চাই। ই বুক। সাহিত্যিক এবং আরো যা যা গুন ছিলো হুমায়ূন আহমেদের, সে সব নিয়ে কি ভাবি আমরা, যারা এ প্রজন্মে লিখছি, লিখার চেষ্টা করছি, তারা? সে সব কথা এক সাথে জানতে, জানানোর সময় এখন মনে হয়।
২. এমন একটা সংকলন করতে চাই, যা হুমায়ূন আহমেদের ফ্যানদের দ্বার ফ্যানদের দিয়া ফ্যানদের কর্তৃক সম্পাদিত ই বুক নয়, একেবারেই নয়।
৩. অর্থাৎ আলোচনা চাই, সমালোচনা চাই।
যৌক্তিক আলোচনা, যৌক্তিক সমালোচনা।
৩.খ. গল্প-উপন্যাস-নাটক-সিনেমা, মোটকথা, হুমায়ূন আহমেদের যেকোন কর্মকান্ডের রিভিউ, সে সংক্রান্ত কোন নাড়া দেবার মতো স্মৃতিকথা, এ ধরনের যে কোন লেখাও সাদরে গ্রহণযোগ্য।
৪. হুমায়ূন আহমেদ নেই প্রায় বছর গড়ালো, আবেগ না হয় এবার শিকেয় তুলে আমাদের পঠন পাঠনের কোথায় তিনি আছেন, থাকতে পারেন ভবিষ্যতে , বলে বিশ্বাস করি, কেন সে বিশ্বাস- এই পর্যবেক্ষণটি তুলে ধরে দেখার একটা সমন্বিত প্রচেষ্টা এই ই বুক।
৫. হুমায়ূন আহমেদের লেখালেখির সময়কাল আমাদের অনেকেরই সারা জীবনের দৈর্ঘ্যের চেয়ে অনেক বেশী। অর্থাৎ, তিনি সবদিক হতেই মুরুব্বী।
মুরুব্বীর প্রতি আমরা বাঙালিরা রূঢ় হই না, কিন্তু আমরা উচিত কথাটিও বলতে জানি। সাদাকে সাদা আর কালো কে কালো বললে যে দোষ হয় না এটাও আমরা শিখেছি। হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যে সাদা কতটুকু আর কালোইবা কতটুকু এটা জানা আমাদের জন্যই জরুরী। কত দিন টিকে থাকবে তার লিখা, এইসব কচকচানি কেবলি গুনিনের চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়, মনোযোগী পাঠক কে না।
৬. ই বুকটি প্রকাশ করার ইচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু দিন ১৯ জুলাই, ২০১৩ তে।
৭. দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। এটা এক নাম্বারে লেখা দরকার ছিলো। এ পোস্টে লিখা সবগুলো আমরা কিন্তু আপনারা সহ মিন করে। আপনার/ আপনাদের লেখা দরকার। না হলে, এই ই-বুক হবে না।
৮. হুমায়ূন আহমেদের কর্মকাণ্ডের যে কোন দিক নিয়ে আপনার বলার মত কথা গুলো (গদ্যে) লিখে দেন আমাদের। তত্ত্ব হলে ভালো, না হলেও সমপরিমাণে ভালো, কে জানে হয়তো বেশি ভালো, হা হা হা হা।
৯. লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ, মে৩০, ২০১৩।
১০. বিজয়ে হলে বেশি ভালো, না হলে অভ্রতে। কোনটাতেই কোন সমস্যা নেই।
এম এস ওয়ার্ডে।
১১. লেখা পাঠান এ।
১২. এ ব্লগেই উপরের চাওয়া মত হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অনেক লিখা আছে, দয়া করে সে সবও দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে মন্তব্যের ঘরে লিংকটা দিয়ে দেবেন।
১৩. সংকলনটির প্রকাশনার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন: বাবুল হোসেইন, সকাল রয়, মলয় দাস এবং মতিউর রহমান সাগর।
১৪. আপনাদের যে কারো যে কোন পরামর্শ সাদরে বিবেচিত হবে।
একজনের কচকচানি দিয়ে এই লেখা আহ্বান পোষ্টটি শুরু করেছিলাম। অবশ্যম্ভাবীভাবে আরেকটা কচকচানি লাগবে শেষ করতে গিয়ে। “There’s always the chance you could die right in the middle of your life story”, কথাটি আমেরিকান সাহিত্যিক Chuck Palahniuk এর। হুমায়ূন আহমেদের কথা মনে হলে এই স্যাটায়ার্ড বাক্যটিকে এত সত্যি মনে হয়!
বি.দ্র. হুমায়ূন আহমেদ তার নামের বানান লিখতেন হ- এর নিচে ু দিয়ে, হ এর মাথা ভেঙে দেয়াটা পছন্দ করতেন না, তাই সেভাবে তার নাম লেখাও হতো না।
কিন্তু এখানে টাইপ অটোমেটিক্যালি হ - এর মাথা ভেঙে দিচ্ছে। কোন উপায় কারো জানা আছে?
বি.দ্র১. জাওজি জিনিসটা কি জানার জন্য গুগলকে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তর এলো, আটা/ময়দা দিয়ে বানানো একধরনের মাংসের পুর দেয়া পিঠা।
বি.দ্র ২: গল্প বলার সুবিধার্থে মো ইয়ানের ছোটবেলার বন্ধুর নাম তে হান রেখেছি। ভদ্রলোক তার নিজের লেখায় এই বন্ধুটির কোন নাম উল্লেখ করেন নি।
বি.দ্র ৩. ছবিটি গুগল থেকে নিলাম। সামুর কথা মতো কপিরাইট সংক্রান্ত যন্ত্রণা নিতে রাজী হতে হলো। উপায় কি? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।