সচেতনতাই পারে হিট স্ট্রোক এড়াতে
সাদিয়া ফাতেমা কবীর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: মানুষের মুখে এখন একটি সাধারণ বাক্য শুনতে পাওয়া যায়। সেটা হলো, আজ তাপমাত্রা কতো? পত্রিকার পাতা কিংবা টিভির পর্দায় চোখ রাখলে দেখা যায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রংপুর, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কাঁটা ছুঁতে রাজধানীও এগিয়ে।
গ্রীষ্মের দাবদাহে তাই হিট স্ট্রোক বেশ পরিচিত একটি শব্দ। এই দুর্বিষহ গরমে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে হিট স্ট্রোক একটি সুপরিচিত সমস্যা।
আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক হিট স্ট্রোক সম্পর্কিত কিছু তথ্যাদি।
হিট স্ট্রোক কি?
দেহ-তাপের অত্যাধিক বৃদ্ধির একটি প্রকাশ্য রূপ হলো হিট স্ট্রোক। যেখানে দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যায় যা কিনা কিছু শারীরিক উপসর্গ ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে।
আমাদের দেহ সাধারণ ভাবেই পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের দরুণ তাপ উৎপন্ন করে থাকে এবং তা ত্বক ও ঘামের মাধ্যমে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। ফলে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে।
কিন্তু যখনই দেহ এই তাপ নির্গমন প্রক্রিয়াটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেনা, তখুনি সৃষ্টি হয় এই ধরণের সমস্যা। হিট স্ট্রোক একটি জরুরী অবস্থা, দ্রুত এবং সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা জীবননাশের মত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
যাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি:
সাধারণত শিশুরা, বয়ষ্ক ব্যক্তি বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, কিডনির সমস্যা, ঘর্মগ্রন্থির কার্যকারিতায় সমস্যা আছে। অথবা যারা নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন তাদের মধ্যে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি দেখা যায়। এছাড়া খেলোয়াড়, স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তি এবং যারা রোদের মধ্যে বাহিরে অধিক সময় শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন তারাও এই সমস্যার শিকার হয়ে থাকেন।
হিট স্ট্রোকের কারণ:
সাধারণত দেহ যখন তার উৎপন্ন তাপটুকুকে নির্গমন করতে পারেনা তখুনি হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে। সাধারণত অতিরিক্ত গরম, অধিক আর্দ্র আবহাওয়া, অধিক শারীরিক পরিশ্রম, দেহের পানিশূন্যতা এবং সূর্যের তাপের সরাসরি প্রভাবের মত ব্যাপারগুলিই দেহ-তাপের নির্গমনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে যার দরুন দেখা দেয় হিট স্ট্রোক।
হিট স্ট্রোকের ল ক্ষণ ও উপসর্গ:
১) দেহ তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি (১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে যেখানে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
২) ঘামহীন উষ্ণ, শুষ্ক এবং লালচে ত্বক
৩) মাথাব্যথা
৪) মাথাঘোরা
৫) বমিভাব
৬) মানসিক বিভ্রম ও অস্থিরতা
৭) শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা
৮) দ্রুত হৃৎস্পন্দন
৯) নাড়ির গতি বৃদ্ধি
১০) রক্তচাপের ওঠানামা
১১) কোমা
হিট স্ট্রোকে করণীয়:
• হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে দ্রুত ছায়াযুক্ত, ঠাণ্ডা স্থানে নিয়ে যেতে হবে। সমস্ত শরীর ভেজা তোয়ালে বা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে।
• ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।
• রোগীর বগলে, ঘাড়ের নিচে এবং কুঁচকিতে বরফের প্যাক দিতে হবে।
এই কাজগুলো ততণ চালিয়ে যেতে হবে যতণ দেহের তাপমাত্রা ১০১ থেকে ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে না পৌঁছায়। অবস্থার উন্নতি না হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। রোগীকে অবশ্যই কোনো ধরণের জ্বরের ওষুধ (প্যারাসিটামল) দেয়া যাবে না।
হিট স্ট্রোক এড়াতে যা করবেন:
১) প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
২) সবরকম ফলের রস, ডাবের পানি, লেবুর সরবত, বেলের সরবত পান করুন। এসব ফলমূলের ভিটামিন ও খনিজ সমূহ আপনার মস্তিষ্কের তাপ নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রকে উদ্দীপিত রেখে আপনাকে হিট স্ট্রোক থেকে সুরা দেবে।
৩) খাদ্যতালিকায় সহজপাচ্য খাবার যেমন ভাত, টাটকা শাক সবজি, ভর্তা, ছোট মাছ, ডাল ইত্যাদি রাখুন। অতিরিক্ত মশলা, ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত এবং বাসি খাবার এড়িয়ে চলুন। খাবারের তালিকায় কাচা সবজির সালাদ রাখতে ভুলবেন না।
৪) অতিরিক্ত গরমে যতটা সম্ভব বাহিরের কাজ এড়িয়ে চলুন। রোদে বের হলে অবশ্যই ছাতা, রোদ চশমা ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
৫) সুতির ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিন। হাল্কা রং পরিধান করুন যা আপনাকে গরম থেকে খানিকটা হলেও স্বস্তি দেবে।
গ্রীষ্মের এই দিনগুলোতে আপনার সঠিক জীবনযাত্রা আপনাকে রাখতে পারে সুস্থ্য, সজীব ও প্রাণবন্ত।
তাই নিজের জীবনযাত্রার দিকে ল্য রাখুন এবং এড়িয়ে চলুন এ ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা।
লেখক: শিক্ষার্থী, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ, বরিশাল
বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১২
সম্পাদনা: তানিয়া আফরিন, বিভাগীয় সম্পাদক
লিঙ্কঃhttp://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=7678f4bc0accb8824a59a00a5a2ae223&nttl=19052012112613&fb_source=message ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।