বিএনপির সমর্থন পাওয়া হেফাজতকর্মীরা রোববার দুপুর থেকে মতিঝিলে অবস্থান নিয়ে থাকলে ভোররাতে তাদের সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তুলে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অভিযানের সময় গুলিতে আহত আটজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরো বেশি বলে বিএনপির দাবি।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, “রোববার রাতে শাপলা চত্বরের সব বিদুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করে ধর্মপ্রাণ আলেম-উলামা-মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেছে। অনেক লাশ গুম করা হয়েছে।
”
বিএনপির সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা বলেন, “গতকাল রাতের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা সহস্রাধিক হতে পারে। আমরা এখনো পুরো তথ্য পাইনি। ”
ঢাকা অবরোধের পর মতিঝিলে অবস্থানের মধ্যে রোববার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্টন, গুলিস্থান, বিজয়নগর এলাকায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতকর্মীরা। পুড়িয়ে দেয়া হয় অসংখ্য দোকান, গাড়ি। এরপর অভিযান চালায় র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি।
আনোয়ার বলেন, “পুলিশ ও সরকারি দলের ঠেঙাড়ে বাহিনীর তাণ্ডবে কত লোক নিহত হয়েছেন, কত মানুষ আহত হয়েছেন। তা সংবাদ মাধ্যমও বলতে পারেনি।
“যখন অভিযান শুরু হয়, তখন গণমাধ্যমকেও সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ফলে অন্য কোনো সূত্রেও আমরা হতাহতের সঠিক তথ্য এখনো জানতে পারেনি। ”
রোববার রাতে ‘গণহত্যা’ চালানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এই হত্যা একাত্তরের ২৫ মার্চের কালো রাতের পুনরাবৃত্তি, এটা স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধকেও হার মানিয়েছে।
“আমরা মনে করি, এই হত্যাকাণ্ড ভারতের পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যার চেয়েও ভয়াবহ। ”
এর প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে বিএনপি নেতা বলেন, রাতে ১৮ দলের বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে সোমবার বিকালের নির্ধারিত সমাবেশ হয়নি না বলে জানান আনোয়ার।
“সরকার এহেন কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে, তারা দেশে গণতান্ত্রিক ধারাকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। ’’
হেফাজতকে নিয়ে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে সোমবার আওয়ামী লীগও সমাবেশ ডাকায় পুলিশ সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
হেফাজতের তাণ্ডবের সময় বায়তুল মোকাররমের সামনে ফুটপাতের দোকানে অগ্নিসংযোগের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে এম কে আনোয়ার বলেন, “তা যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা দেবাশীষের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত আলোকচিত্রে তা প্রকাশ পেয়েছে।
“অথচ সরকার ওইসব অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে হেফাজতে ইসলামের নামে অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। ”
দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মতিঝিলজুড়ে হেফাজতের অবস্থানের সময় বিভিন্ন দোকান-পাট ও ব্যাংকের বুথ-বীমা কোম্পানি ভাংচুরের জন্যও ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জেও সোমবার সকালে আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা হেফাজতকর্মীদের ওপর হামলা চালায় বলে দাবি করেন আনোয়ার।
দুটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ইসলামিক টিভি ও দিগন্ত টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ায় নিন্দাও জানান তিনি।
সোমবার সকালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ পুলিশের ভেঙে দেয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপির দাবিই প্রতিষ্ঠিত হলো, বলেন সাদেক হোসেন।
তিনি বলেন, ‘‘ শাহবাগের মঞ্চ বিরোধীদলীয় নেতা আগেই বন্ধ করে বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তা বন্ধ করলেন, তবে মানুষ হত্যা করে। ”
“গণজাগরণ মঞ্চের কারণে ধর্মের ওপর আঘাতের প্রতিবাদ জানাতেই হেফাজতে ইসলামের লাখ লাখ নেতা-কর্মী ঢাকায় এসেছিলো। ’’
“আমরা মনে করি, সরকার তিনমাস যাবত এই মঞ্চ চালু রেখে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
তারা দেশে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবেই। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।