আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃন্ময়ীর নীলমণি

চশমাটা মোবাইলের পাশে রেখে একটু চোখ বুজে শুয়ে ছিল মিহি । এমন সময় তার মোবাইলটা কাপতে শুরু করলো । আর সাথে সাথে শুরু হল বুক ধুকধুক করা । ইদানিং মিহি বেশী এক্সাইটেড হতে পারেনা কোন বিষয়েই হার্টে সমস্যা করে । মিহি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো যে একটি মেসেজ এসেছে ।

মেসেজের নাম্বারটি দেখেই চমকে উঠলো মিহি । অনেক পরিচিত যে এই নাম্বারটি । যদিও মোবাইলে Save করা নেই নাম্বারটি । কিন্তু চিনতে ভুল হলো না । যে নাম্বার সবসময় মিহির মোবাইলে ডায়ালড এবং রিসিভড কলে থাকতো ,যে নাম্বার দ্বারা নাম্বারের পিছনের মানুষটির সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো মিহি ,যে নাম্বারে হাজার হাজার মেসেজ পাঠিয়েছে মিহি ,সেই নাম্বারটি মিহি ভুলে কি করে ।

মিহি মেসেজটি Open করে দেখলো একটি লাইনই লেখা তাতে । তা হলঃ "agami kal bikel 4tay rabindro sorobore parle eso". মেসেজটি পরে মিহি ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালো দেখতে ,যে কাল কত তারিখ কিংবা কাল কি কোন বিশেষ দিন ? তো মিহি দেখলো যে কাল ১৪জুন । ভাবলো কালতো তেমন কোন দিন নয় । ভাবতে ভাবতে মিহি FM রেডিও অন করে কানে হেডফোন দিলো এবং আরজে কে বলতে শুনলো যে "Hello,friends আমি RJ Niyon তোমাদের জানাচ্ছি জৈষ্ঠ মাসের শেষ বিকেলের শুভেচ্ছা । কাল থেকে শুরু হবে আষাড়ের প্রথম দিন.........." মিহি বুঝতে পারলো কালকের দিনের বিশেষত্বটা ।

একটু অতীতেই চলে গেল মিহি । পাঁচ বছর আগে| দিনটি ছিলো আষাড় মাসের প্রথম দিন । খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো । মিহি পড়ালেখা করে ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে । রেজাল্ট তার খুব একটা ভালো ছিল না ।

কোন সরাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে নিতান্তই বাধ্য হয়ে এই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় । তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক ভালোই বলা চলে । যথেষ্ট ব্যায়বহুল এবং অনেক ধনী লোকের সন্তানেরাও এইখানে পড়াশুনা করে । তো মিহি ছিলো একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান । অনেক কষ্টে তার পরিবার তাকে পড়াশুনা করায় ।

তার বাবা তাকে বলে "মিহি ধনীদের মেধা না থাকলেও চলে টাকাতেই সব পেয়ে যায় তারা ,আবার গরীবদের টাকা নেই কিন্তু তাদের মেধা আছে ,আর আমাদের মধ্যবিত্তদের না আছে মেধা না আছে টাকা "। মিহি আর কি বলবে চুপচাপ শুনে যায় । মিহি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা মাত্র ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো । দৌড়ে ক্লাসে গেলো এবং দেখলো যে তখনও ক্লাস শুরু হয় নি । মিহি ক্লাসে আর না গিয়ে করিডরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলো ।

হঠ্যাত করেই মিহি দেখতো পেলো যে একটি গাড়ি ঢুকলো এবং গাড়ি থেকে একটি মেয়ে বের হলো । মেয়েটিকে দেখে মিহি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার দিকে । মিহি তখন শুধু একটা কথাই ভাবলো তখন যে এই মেয়েটিকে তার লাগবেই । তারপর মিহি আরও অবাক হলো যে মেয়েটি তাদের ক্লাসে ঢুকলো । দুই মাস পর ।

এই মিহি আজকে তো দুটো ক্লাস হবে না চলো সবাই মিলে কোথাও থেকে ঘুরে আসি । কথাটি বলল সেই মেয়েটি । সবাই মিলে একটু ঢাকার বাইরে নদীর পাড়ে গেলো । আস্তে আস্তে বিকেলের শেষ লগ্ন এসে গেল । তখন পরিবেশটা এত সুন্দর ছিলো যে সে সময় সবার মনটাই একটা অন্যরকম আবেশে ভেসে যাবে ।

তো তারপর হঠাত করেই মিহি মৃন্ময়ীকে (মেয়েটির নাম মৃন্ময়ী এতোক্ষন সবাইকে অপেক্ষায় রাখার জন্য দুঃখিত) আলাদা করে একটু দূরে ডেকে নিয়ে প্রপোজ করে বসলো । মৃন্ময়ী পুরো অবাক হয়ে গেলো । তখন মৃন্ময়ী ওকে বুঝালো যে এইরকম আবেগ ভালো না । তারা সবাই আবার শহরে এসে পড়লো । সবাই ব্যাষ্ত হয়ে গেলো ।

কিন্তু মিহির বারবার মনে পড়তে লাগলো মৃন্ময়ীর কথা । মৃন্ময়ীর কথা চিন্তা করতে করতে মিহির ঘুম খাওয়া দাওয়া সব লাটে উঠলো । তারপর মিহি কয়েকদিনের জন্য সব কিছু ছেরে একটু দূরে এক অজপারাগায়ে চলে গেলো। সাথে নেয়নি মোবাইল তার গ্রামে যাবার কথা জানে শুধু তার পরিবার…..। এই দিকে মৃন্ময়ী এরও শুধু মনে পরতে লাগলো মিহির কথা।

যে ছেলেটা কেমন আছে কোথায় আছে। অনেকদিন ক্লাসে আসেনা। কিছু হলো কিনা। ভাবতে লাগলো না মিহির সাথে দেখা হলে তাকে আবারও বুঝাতে হবে। এইদিকে মিহির গ্রামে গিয়েও শুধু মনে পরতে লাগলো মৃন্ময়ীর কথা।

মিহি গ্রাম ছেরে তাড়াতাড়ি শহরে এসে পরলো এবং সরাসরি মৃন্ময়ীর সাথে দেখা করলো। মৃন্ময়ী তাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো কোথা গিয়েছিল, কেন গিয়েছিলো , নাম্বার বন্ধ কেন, কাওকে জানায়নি কেন। মিহি চুপচাপ শুধু শুনে গেলো এবং এক সময় হঠাত করেই হাওমাও করে কাদতে লাগলো এবং বলতে লাগলো “মৃন্ময়ী তোমাকে ছাড়া আমি বাচতে পারবো না,তোমাকে ভুলে থাকার জন্য সব কিছু ছেরে গ্রামে চলে গিয়েছিলাম কিন্তু তবুও তোমাকে ভুলতে পারিনি, আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না ”। মৃন্ময়ী মিহির কান্না দেখে তাকে আর ফেরাতে পারলো না। দুই মাস পর।

মিহি আর মৃন্ময়ীর কথা জানে সারা ভার্সিটি। তারা দুইজনে ঘুরে বেড়ায় রবীন্দ্র সরোবর,রমনা। বৃষ্টির দিনে এক সাথে রিক্সায় ভিজে। একটি হেডফোনের দুই তারের এক তার মিহি কানে দেয় এবং আরেক তার মৃন্ময়ী কানে দিয়ে বৃষ্টির দিনে শুনে “আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে”। রাত জেগে মোবাইলে কথা বলতো দুইজনে।

হতো মেসেজিং। অনেক সুখেই কাটছিলো দিনগুলো। একদিন বৃষ্টির দিনে রিক্সায় করে ঘুরছিলো দুই জনে এমন সময় একটা পাজেরো গাড়ি তাদের রিকশার পাশে এসে থামল। বের হয়ে আসলো একজন ব্যাক্তি। মিহি বলতে লাগলো আরে আপনি কে এইভাবে গাড়ি থামালেন কেনো এখনই যদি কোন এক্সিডেন্ট হতো।

তারপর মিহি তাকালো মৃন্ময়ীর দিকে দেখলো যে মৃন্ময়ীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে । সেই ব্যাক্তিটি শুধু বলল মৃন্ময়ী ক্লাস শেষ হলে বাসায় চলে এসো। তারপর মিহি জিজ্ঞেস করলো মানুষটি কে । মৃন্ময়ী বলল আমার বাবা। তারপর দুইজনে আর কোন কথা বলতে পারল না ।

একটু পর মৃন্ময়ী বাসায় চলে গেলো। মিহির নানারকম চিন্তা করতে লাগলো। একের পর এক মেসেজ দিতে লাগলো মিহি মৃন্ময়ীকে কিন্তু কোন রিপ্লাই নেই। কল দিতে গিয়ে দেখলো যে নাম্বার বন্ধ। তিনদিন পর।

এই তিনদিনে মিহির সাথে মৃন্ময়ীর কোন যোগাযোগ হয়নি। ক্লাসে আসেনি , কল দেয়নি, দেয়নি কোন মেসেজ। পাগলের মত হয়ে গেছে মিহি। খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ। আর থাকতে না পেরে মিহি তাদের ভার্সিটির এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে ভার্সিটিতে ভর্তি হবার সময় যে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে ভর্তি হতে হয় তার থেকে মিহিদের বাড়ীর ঠিকানা নিলো।

দুরু দুরু বুকে গেলো মিহি মৃন্ময়ীদের বাড়ী। গিয়ে দেখে বাড়ীটি কেমন যেন শুনশান তারপর গেট ঠকঠক করার পর এক বৃদ্ধ মানুষ বের হয়ে আসলো। মিহি সালাম দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো যে মৃন্ময়ী কোথায়? বৃদ্ধটি বলল “বড়সাব ,আম্মাজান আর আফামনি তো আমরিকা চইলা গেছেগা”। শুনে মিহির মাথায় যেনো বজ্রপাত হলো। সেইখানেই মিহি বুক চেপে বসে পরলো।

তারপর কেটে গেলো অনেক গুলো দিন। কয়েকটা আষাঢ়ের প্রথম দিন চলে গেলো। মিহি আর বৃষ্টি পছন্দ করেনা শুধু বৃষ্টি এলে উদাস হয়ে যায়। মিহি পড়ালেখা শেষ এখন বেশ ভালো একটা চাকরি করে। বাবা মায়ের অনেক চাপে পরেও আজও মিহি বিয়ে করেনি।

তার মনের তীব্র একটি আকাঙ্ক্ষা যে কখনো হয়ত মৃন্ময়ী আসবে। সেই প্রতিহ্মায় থাকে মিহি। তাই এতোদিন পর এই মেসেজ পেয়ে অবাক হয়ে যায় মিহি। পরেরদিন বিকাল চারটা। মিহি রবীন্দ্র সরোবরে এসেছে দুর থেকে দেখলো মৃন্ময়ী দারিয়ে আছে।

আসতে আসতে কাছে চলে গেলো মিহি………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….. কিছু কথাঃ গল্পটির পরিণতি এইরকমই । যারা পরবে তারা বাকিটুকু নিজেদের মত করে সাজিয়ে নিবেন। আর আমি তেমন ভালো লিখতে পারিনা। সখের বশে একটু লেখালেখি করি। ভুলত্রুটি হলে হ্মমা করে দিবেন।

উৎসর্গঃ আন্নি নামের মেয়েটিকে। এই মেয়েটির কাছে আমি আমার লেখালেখির ব্যাপারে সব থেকে বেশী উৎসাহ পেয়েছি। ওর কথাতেই মাঝে মাঝে গল্প কবিতা লিখতে বসি। ভালো থেকো আন্নি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।