আসুন অন্যের বিচার করার আগে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখি। নিজের আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছা ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু মাঝে মাঝে চিন্তা করতাম- কেবল তো জীবনের মাঝ পথে আছি। বাকি জীবনে তো আরো অনেক কিছু ঘটার সম্ভাবনাই আছে। তো শেষ বয়সেই না হ্য় লেখা শুরু করবো।
আবার উল্টো ভাবেও ভাবতাম- ওহ মাই ডিয়ার ! এটা আমি কি বলছি!!! আমিও যে একদিন বৃদ্ধ হবো, ৮০-৯০ বছরের থুরথুরে বুড়ো হবো তার গ্যারান্টি কে দিবে আমায় ? কে জানে কবে কোথায় আমার মরণ হবে। হয়তো এই লেখাটাও সম্পূর্ণ করতে পারবো না। তার আগেই প্রাণ বায়ূ দেহ ত্যাগ করবে। একটা জিনিস আমি খেয়াল করে দেখেছি, আমি মাঝে মাঝেই ভয়ানক দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাই। মৃত্যু সামান্য ব্যবধানে আমার পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
আমি ঘটনাটা ঘটার পর পরই মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে তার জন্য ধন্যবাদ দেই। তিনি খুশি হয়েই হয়তো তার পরের বার আমাকে আবারও বাঁচিয়ে দেন।
মূল কথায় ফিরে আসা যাক। হুমায়ূন আহমেদের ফাউন্টেনপেন পড়ার পর থেকেই আমার নিজের আত্মজীবনী লেখার ঝোঁক প্রবল হয়ে উঠে। খেয়াল করে দেখলাম তার জীবনে চাইতে আমার জীবনটা আরো বেশি ঘটনাবহূল।
কিন্তু তিনি কালজয়ী লেখক। আর আমি পুচকে লেখক। তার মতো করে হয়তো আমি উপস্থাপন করতে পারবো না। আমার লেখা গুলে হয়তো মাঠেই মারা যাবে। তবে এটাও সত্য, প্রতিটি মানুষেরই চারপাশে তার কিছু আপনজন থাকে।
যারা তার ভাল চায়। তাকে পরিপূর্ণভাবে জানতে চায়। হয়তো আমারও এমন আনেক আপনজন আছে। কিন্তু আমি এখনও তাদের চেনার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করতে আমার অনেক কষ্টও হচ্ছে বটে।
আমার আত্মজীবনীটা মূলত তাদের উদ্দেশ্যেই লেখা।
আজ সারা দিনই আমার মনটা খারাপ ছিল। মন খারাপের কারণ হচ্ছে আমার পোষা বিড়ালের মৃত্যু। আমি আজই জানতে পারলাম বিলু মারা গেছে। বিলু নামটা দিয়েছিল আমার নানু।
আমার নানু গায়ের মানুষ। তাই তার দেওয়া নামটাও গেয়ো হবারই কথা। তবে আমরা ওকে বিলু নাকে ডেকেই তৃপ্তি পেতাম। আমার আব্বা বিলুকে অনেক আদর করতেন। আমার আব্বা যখন মারা যায় তখন বিলুর বয়স এক কি দের বছর হবে।
আমি খেয়াল করে দেখেছিলাম আব্বার লাশের পাশে বিলু চুপচাপ বসে ছিল। এমনকি তার দু'তিন দিন ও তেমন কিছুই খায়নি। আমি মাঝেমাঝেই দেখতাম আব্বা বিলু সাথে কথা বলছে। আব্বা তার মত করে কথা বলতেন, ও শুধু ম্যাউ ম্যাউ করতো। তাদের দুই জনের মাঝে অনেক মিলই আছে।
আব্বার মৃত্যু হয়েছিল বিনা চিকিৎসায়। বিলুর মৃত্যু হলো বিনা আহারে। দুই জনের মৃত্যুর জন্যই আমি নিজেকে কিছুটা দায়ী করতে পারি। একজন অক্ষম সন্তান হিসেবে আর একজন অক্ষম পালক হিসেবে। যদি বিলুকে আমি ঢাকায় এনে রাখতাম তাহলে তো আর ওকে অনাহারে মরতে হতো না।
হয়তো সে ক্ষুধার যন্ত্রনায় কারো খাবারে মুখ দিয়েছিল। আর খাবারের মালিক রেগে গিয়ে ওকে একটু বেশিই মার দিয়েছিল। যাতে করে আর কখনও এ কাজটি না করে। খাবারের মালিকের মনের আশা পূর্ণ হয়েছে। বিলু আর কখনও তার খাবারে মুখ দিতে আসবেনা।
চলবে ..................... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।