আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতৃপ্তির কুয়েট দর্শন

ছায়া ঘেরা সুন্দর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আগের পোষ্টে কিছু লিখার চেষ্টা করেছি সেখানেই বলেছিলাম সামনে কুয়েট নিয়ে লিখবো। কয়েকদিন ল্যাপুতেই ছিলাম কিন্তু লিখা যেন শুরুই করতে পারছিলাম না , মন বসছিলো না পোষ্ট তৈরীতে। এর অন্যতম কারণ কুয়েটের পর্যন্ত ছবি ক্যামেরায় ধরন করা হয়নি। নিজের বাংলাদেশ ভ্রমনটাকে সংরক্ষনে রাখা আর কথা রাখার জন্যই লিখতে বসা। যাক শুরু করা যাক ....... খুবি থেকে বেড়িয়ে আসলাম গল্লামারি বাজারে ।

প্রচন্ড খরতাপে সহ্য হচ্ছিল না । ছায়ায় দাড়িয়ে আর ক্লোল্ড ড্রিংস দিয়ে গলা ভিজিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম আর খুলনার বন্ধু মাহমুদ চার্জে চালিত অটো খুজতে গেলো কিন্তু কোন অটোই পাওয়া যাচ্ছিল না । সমস্যা কি???? ওদিকে নাকি যেতে চায় না কারণ সোজা পথে রাস্তা খারাপ ........ অনেক পথ হেটে যেতে হবে। প্রায় ১৫ মিনিট পরে এক চাচাকে পাওয়া গেলে । ৪০০ টাকা ভাড়া হাঁকিয়ে ৩০০ টাকায় রাজী।

চেপে বসলাম অটোতে। গল্লামারি ব্র্রীজ পাড় হয়েই খুলনায় পাওয়া আরেক বন্ধুকে অটোতে তুলে নিলাম। তার জাতি গোষ্ঠী সব বহুত আগে থেকে খুলনায় থাকে। সে থাকে এখন ঢাকায়। শহরের মাঝ দিয়ে অটো চলছে তো চললছেই।

নিউামার্কেট , জিয়া হল চত্ত্বর , ময়লাপোতা মোড় ইত্যাদি ঘুরে ঘুরে দৌলতপুর , খালিশপুর, ফুলবাড়ী হয়ে চলে যাওয়া যশোর সড়কে। সম্ভবত একে নতুন রাস্তা বলা হয়। জিয়া হল চত্ত্বর..... সব নিউমার্কেটগুলো মনে হয় একই রকম.....নিউ মার্কেট মসজিদের মিনার প্রায় পৌনে ১ ঘন্টা অটোতে বসে থাকতে থাকতে মাজা ব্যথা হয়ে গেল। দৌলতপুর, খালিশপুর সব ঘুরে শহরের এক প্রান্তে কুয়েটের মূল গেটের সামনে গিয়ে হাজির হলাম। বিশাল গেট, দূর থেকে দেখেই ভালো লাগে।

ভার্সিটি বন্ধ থাকায় এখানেও ঢুকার অনুমতি পাওয়া যাবে কিনা একটু চিন্তা করছিলাম কিন্তু কোন অতিরিক্ত বাক্য বিনিময় করার প্রয়োজন হলো না। অটো বাইক নিয়েই প্রবেশ করা গেল। তবে গেট ম্যান মামার নির্দেশনা হলো...... "ভার্সিটি বন্ধ তাই হলের দিকে বা ছোট রোডগুলোতে যাবেন না, সোজা রোডে যাবেন" অনেকেই বহুদূর থেকে ঘুরতে আসে তাই এই নির্দেশনা। গেট দেখে আমাদের ভালো লেগেছিলো, সকলেই ভালো লাগার কথা.. গেট পার হয়ে সামনে এগিয়ে গেল আমাদের অটো। ছোট্ট একটু বাঁক ঘুরতেই প্রথমেই পরে খান জাহান আলী হল।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো থেকে কুয়েটের যে পার্থক্য ধরা পড়লো তাহলো ঢুকেই এক সিরিয়ালে হলগুলো যা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায়না , একাডেমিক বা প্রশাসনিক ভবনগুলোর পরে অথবা ক্যাম্পাসের এক প্রান্ত হলগুলো থাকে এখানে একটু ভিন্ন। খান জাহান আলী হল , কোন অনুষ্ঠানের জন্য ভার্সিটিতে সাজসজ্জার কাজ চলছিলো হলের দিকে যাওয়ায় যেহেতু বারন আছে তাই আর হলের রোডে ঢুকলাম না। খান জাহান আলী হলের সামনে বিশাল মাঠ পেরুলেই অডিটোরিয়াম। কর্দমাক্ত মাঠ অনেকদিন খেলাধূলা না হওয়ায় আর সৌন্দর্য হারিয়েছে বলেই মনে হলো। বাম দিকে এক সিরিয়ালে ছাত্রদের সকল হলগুলো ।

খানজাহান আলী হলের পরে বিশাল পুকুর কিন্তু শান্ত পুকুরের কোন ঢেউ তোলার মতো কোন মানুষ দেখা গেল না। পুকুর ও খান জাহান আলী হলের সামনের মাঠটি ছাড়া আর কোন মাঠ চোখে পড়লো না বলে মনে হলো এটাই সম্ভবত একমাত্র মাঠ, (হয়তো আমার ভুল হতে পারে) । খান জাহান আলী হল এবং পুকুর এর আশে পাশের নির্মল পরিবেশটা যে কারো মন টানতে বাধ্য। গাছ-গাছালির ছায়া ঘেরা সুন্দর পরিবেশ। কুয়েট অডিটোরিয়াম... মাঠ অতিক্রম করলেই হাতের ডানে পড়লো কুয়েট অডিটোরিয়াম।

ছাত্রছাত্রীদের কোলামুক্ত অডিটোরিয়াম এলাকা সর্বদা মুখরিত থাকে তা আমার মতো ক্যাম্পাস না দেখা ব্যক্তির পক্ষে অনুমান করা সম্ভব হয়েছে। বাস্তবতা নিশ্চয়ই এরকমই হবে, তা কুয়েটের বন্ধুরা আরো বলতে পারবেন। পুরো ক্যাম্পাসে মানুষ হিসেবে যাদের দেখা মিলেছে তাদের মাঝে উপরের ছবিতে অডিটোরিয়োমের সামনের চলমান ব্যক্তিটি একজন। অডিটোরিয়ামের সামনেই গাছের ছায়ায় নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। শহীদ মিনারের বেদিটি খুব বড় না হলেও দেখতে অনেকটা উত্তরা গনভবনের আদলে বলে মনে হলো।

ফেরার সময়ে একটি ছবি তুলতে গিয়ে রিকশার কারণ শহীদ মিনারের ছবিটা আসলো না। রিকশার কারণে শহীদ মিনারে ছবিটি ক্যামেরায় আসলো না তাই নিচে দিলাম নেট থেকে নেয়া আসল ছবি সুন্দর শহীদ মিনার খান জাহান আলী হলটা ছিলো ক্যাম্পাসের সেই শুরুতে এরপরে মাঠ, অডিটোরিয়াম , পুকুর ইত্যাদির লম্বা গ্যাপ। অডিটোরিয়াম পার হয়ে হাতের বাম দিকেই এক সাথে ৪ টি হল। প্রথমে ড. এম এ. রশীদ হল। ৩ তলা রশীদ হলটি রাস্তা থেকে খুব বড় মনে হলো না কিন্তু ভিতরে কত বড় বা এর সৌন্দর্য্য দেখতে না পারাটাই কুয়েট ঘুরার অপূর্নতার একটি।

ড. এম. এ রশীদ হল ড. এম. এ রশীদ হলের সমানের ছোট্ট বাগিচাটি পার হলেই ডানে লম্বা লাইনের ৪ টি বিল্ডিং চোখে পড়লো। খুব বেশী দিন হয়েছে বলে মনে হলো না এর বাহিরের পরিবেশ আর রং ও টাইলস দেখে। এগুলো সম্পর্কে জানলাম একেবারে শেষ প্রান্তে গিয়ে। এ বিল্ডিং গুলো অতিক্রম করার সময় ডানে তাকানার চেয়ে বামে রাস্তা থেকে একটু ভিতরে সুন্দর পথ পেরিয়ে কোথাও কোথায়ও গাছ পালা ছায়াযুক্ত পরিবেশের পরে হলগুলোই দেখা শ্রেয় মনে হলো । বাংলার বাঘ খ্যাত শের এ বাংলা ফজলুল হক হল।

দূর থেকে ফজলুল হকের মুরাল টি দেখা যাচ্ছিল। একজন কর্মচারী হলে প্রবেশ পথটাকে সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, বন্ধের পরে ছাত্রছাত্রীদের পরিচ্ছন্ন একটি ক্যাম্পাস উপহার দিতেই যেন এ প্রচেষ্টা। অমর একুশে হল ও লালন শাহ হল অমর একুশে হল ডানের একাডেমিক ভবনগুলো যেখানে শেষ সেখান থেকেই বা দিকে চলে গেল পর পর দুটি হলে প্রসস্থ রাস্তা। প্রথমে বুঝতে পরিনি দুটি আলাদা হল কিন্তু ভালো পরে ভালো করে দেখার পর বুঝলাম পাশাপাশি লাগোয়া দুটি হল। প্রথমটি অমর একুশে হল , সাথেই লালন শাহ হল।

অমর একুশে হলটি বেশী পরিচিত লাগছিলো বছরের শুরুতে আগে ঘটে যাওয়া কুয়েটের ইতিহাসের নতুন বছর উপলক্ষ্যে খাবার নিয়ে সৃষ্ট নক্যারজনক ঘটনার মাধ্যমে। তখন সামুর ষ্টিকি করার দাবীতে কাঁদল ছাত্র,কাঁদল শিক্ষক। কুয়েট(পর্ব-১) পোষ্টের মাধ্যমে কুয়েট সম্পর্কে কিছুটা অবগত হয়েছিলাম। (স্টিকি হয়েছিলো কিনা পুরো মনে করতে পারছি না) ছায়াঘেরা কুয়েট জামে মসজিদ ডানে মোড় নিতেই কুয়েট জামে মসজিদ। গাছের ছায়ায় মনোরম সুন্দর মসজিদটিতে এক ওয়াক্ত নামাজ পরে আসতে পারলে ভালো লাগতো কিন্তু হাতঘড়ির কাঁটা বার বার হুশিয়ার করে দিচ্ছিল সামনে আরো পথ ........ ............. শেষ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে বেলা ৩ টায়।

মনেই ইচ্ছেটা মনেই রেখে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সামনে প্রখর রোদে মাঝে অল্প কয়েকটি ফটোসেশন করেই ক্ষ্যান্ত, প্রচন্ড রোদের মাঝে বিল্ডিংএর ছায়ায় কয়েক মিনিট বসে থেকে জিড়িয়ে সামনের পথ চলাটা নির্মল করার ক্ষীন চেষ্টা হলো। ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই একাডেমিক বিল্ডিং পার হতেই হাতের ডানে মেডিক্যাল সেন্টার। মাত্রই একজন মটর সাইকেল আরোহী সেন্টারে প্রবেশ করেলেন তিনি ছাড়া আর কেহ আছেন বলে মনে হলো না। মেডিক্যাল সেন্টারের পথ ধরে সোজা সামনে এগিয়ে গিয়ে সামনেই মডেল ল্যাব ও মেকানিক্যাল ওয়ার্কসপ এর বিল্ডিং। সাথের বন্ধুদের সাথে কথায় কথায় এগুলোতে শুধু একনজর চোখ বুলিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা এখন পীড়া দেয় কেন যে হেটে হেটে দেখলাম না আর কেনইবা আরেকটু সময় কাটিয়ে আসলাম না।

সর্বশেষ ডরমেটরির মোড় পর্যন্ত গিয়ে গিয়ার উল্টো দিকে ঘুরানোর জন্য বলা হলো , কোন প্রকার গাইড বা জিজ্ঞাসা করার মতো কাউকে না পাওয়ার কারণে ডরমেটরি পার হয়ে টিচার্স কোয়ার্টারের দিকে যাওয়া হলো না । মনে করেছিলাম এখানেই মনে হয় শেষ। কিন্তু কুয়েট নিয়ে নেটে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে সামনে টিচার্স কোয়ার্টারটা বাদ থেকে গেছে । নেট থেকে ধার করলাম সেদিনের অবস্থা.... মেরামতের কাজ চলছে সি এস ই ডিপার্টমেন্ট ফিরতে গিয়ে একাডেমিক ভবন গুলোর ইট বালির প্রাচীরগুলো দেখা আর বিভাগের নাম পড়া ছাড়া কিছুই করার ছিলো না । বড়ই অসময় কুয়েটে পদধুলি দিয়েছিলাম বলেই কষ্ট লাগলো।

এক সাথে পরপর ভবনগুলো হলো একাডেমিক ভবনের প্রথমটি লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ , এরপর ইসিই ভবন, সিএসসি বিল্ডিং সর্বশেষ ভবনটিকে সম্ভবত সেন্ট্রাল লাইব্রেরি। পাশাপাশি ৪ টি ভবন প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা ফ্যাকাল্টির জন্য কিন্তু এক বিল্ডিং থেকে অন্যটিতে যাতায়াতের জন্য করিডোর প্রত্যেকটি ভবনকে আলাদা না করে একটি ভবনেই পরিনত করেছে। আগেই বলেছি ঘড়ির কাঁটা বার বার সতর্ক করা কারণে আর সাথে জিজ্ঞাসা করে জানার মতো কাউকে না পাওয়ার কারণে সেন্ট্রাল লাইব্রেরী , টেনিস কোর্ট, প্রসাশনিক ভবন, রোকেয়া হল, ট্রি ই ভবন ইত্যাদি দিকে যাওয়াই হলো না। এখানেই এই ব্লগারের অতৃপ্তি........... স্বল্প সময়ে দেখলাম অনেক কিছু কিন্তু আবার দেখা বাদ রয়ে গেল অনেককিছু। ঘুরলাম ঠিকই কিন্তু মানসিক প্রশান্তি নিয়ে বেরুতে পারলাম না।

খান জাহান আলী হলের সামনে কিছুটা সময় কাটালাম । এখানে স্থাপিত হয়ে হয়ে কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম আহসান উল্লাহ ভূইয়ার ম্যুরাল । ২০১০ সালে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে মৃত্যু হয় তার। অটোতো সোজা চলে আসলাম মূল গেটে , সেখানে দু চারটা ছবি তুলে আবার উঠলাম অটোতে। দীর্ঘক্ষন আমাদের সাথে থাকা অটোর ড্র্রাইভার আঙ্কেল তার ছেলে এখান থেকে একটা কোর্স করে পলিটেকনিকে পড়াশুনা করে ।

কোন দুঃখ নেই , আছে গর্ব...... খুলনার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠগুলো একটি কুয়েট খুব অল্প সময়ে অনেককিছু দেখলাম কিন্তু আর অনেককিছুই দেখা হলো না অটোতে করে ঘুরার কারণে....... পায়ে হেয়ে ক্যাম্পাস ঘুরলে হয়তো আরো ভালো করে দেখা হতো তাহলে আর এ অতৃপ্তি থাকতো না। দু চারজন যারা পরিচিত ছিলো ঈদের বন্ধে তারাও না থাকায় জনমানুষহীন রাস্তা আর ইট বালুর প্রাচীর গুলো দেখেই ফিরে আসতে হলো। ছাত্রছাত্রীদের কোলাহলে মুখরিত থাকা অবস্থায় ক্যাম্পাসের নির্মল পরিবেশে ঘুরতে পারলে আরো ভালো লাগতো। ঘুরে এসেছি কুয়েট কিন্তু অতৃপ্তির বেদানাটা এখনো রয়ে গেছে। আবার কখনো গেলে হয়তো এ অতৃপ্তি ঘুচানোর সুযোগ হবে।

কুয়েট বিস্তারিত এখানে.................... খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাগেরহাট নিয়ে আগের দুটির পোষ্টের ধারাবাহিকতাই এ পোষ্ট গন্তব্য বাগেরহাটঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ ও খান জাহান আলী (রহ) এর মাজার দর্শন রূপসা অববাহিকায় -১ ঃ ছায়া ঘেরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শুভকামনা সকলের জন্য। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।