১
আমরা সবাই আধূনিক বাংলাদেশের কথা বলি। আমরা দূর্ণীতি মুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা চাই। আমরা এমন সমাজব্যবস্থা চাই যা হবে জ্ঞান ও ধর্মীয় মূল্যবোধে গড়া এবং আইনের শাসনে প্রতিষ্ঠিত। আমরা নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা চাই। মুক্তি চাই দারিদ্রতা এবং বেকারত্বের কালো অভিশাপ থেকে।
রাজনীতি, নাগরিক অধিকার থেকে দূরে সরে গিয়ে, রাষ্ট্রের বোঝা হোক; তা আমরা চাই না। আমরা স্বাভাবিক জীবনধারার নিরাপত্তা চাই। চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। উচ্চশিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ চাই। মাদক ও কলহমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই।
জাতিকে উন্নতির শিখরে নেয়ার উচ্চভিলাষী শিক্ষাগুরু চাই। জাতীয় স্বার্থে সকলের ঐক্যমত্য চাই। দেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো, শিক্ষাব্যবস্থা, ব্যবসা এবং প্রযুক্তির প্রসারের লক্ষ্যে সময়োপযোগী ও শিল্পমুখী পরিকল্পনা এবং তার সুষ্ঠ বাস্তবায়ন চাই।
২
জাতিসত্ত্বার কারনে আমরা শান্ত, আবেগপ্রবন, ধর্মভীরু এবং বিপ্লবী। ইতিহাস বলে এদেশের যত অর্জন তা আবেগকে লালিত করে।
ক্ষতিও হয়েছে অপরিসীম। ১৭৫৭সালে পলাশীতে পরাজয়ের কালিমা একেছিঁল আবেগ। ১৯১১সালের বাঙালীর ধর্মীও অনুভুতি ব্যবহার করে মানচিত্রে বিভাজন রেখা এঁকেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবেগ। ১৯৫২সালে মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য জীবন উৎসর্গ ও রক্ত ঝড়ানোর ইতিহাস পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের আবেগ, বিপ্লবের মনেকরি সবচেয়ে ভাল উদাহরণ।
বিভিন্ন ধর্মের, বর্নের, গোত্রের এবং আদর্শের সাড়ে সাতকোটি অধিকার বঞ্চিত, নিরস্ত্র বাঙালী শুধুমাত্র স্বাধীকার আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পৃথিবীর অন্যতম সুসজ্জিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করে এবং মাত্র নয়মাসের সংগ্রামে স্বাধীকার লাভ করে বিশ্বের শোষক শ্রেনীদের বুড়ো আঙুল দেখায়। একজন বাঙালী যার জীবনের কোন পর্যায়েই সাম্প্রদায়িকতা ছিলনা, উগ্রতা ছিলনা, নির্মল আবেগ, ভালবাসা আর নিজ ধর্মের মূল্যবোধকে ধরে রেখে নির্যাতিত, নিস্পোশিত, কৃষিনির্ভর বাঙালীদের স্বাধিকার সচেতন করেন এবং সার্বভেৌমত্বের সংগ্রাম এর দিকনির্দেশনা ও পরিচালনা করেন। একজন বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালীজাতি মরনপণ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। পরাধীনতার সকল শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে জাতি পেল স্বাধীনতার স্বাদ ও সার্বভৌমত্বের গৌরব এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এর মত বিশ্ব ইতিহাসের একমাত্র নেতা যিনি একটি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম এর সংগঠক, ঘোষক এবং সফল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী। একই সময়ে সাম্প্রদায়িক একটি দল স্বাধীকারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
তারা ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। মুক্তিকামী মানুষের চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করতে এমন কোন নোংরামী, নির্যাতন, ব্যভিচার নেই যা তারা করেনি। তবু ব্যর্থ হয়েছে। কেননা আমরা ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নই। আমরা বিপ্লবী কিন্তু উগ্র নই।
স্বাধীনতার মাত্র ৩১৪৪০ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশের অদ্ভূদয় ইতিহাসের মধ্যমনি, আধুনিক বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসের বরপূত্র, বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, একদল উগ্র ক্ষমতালোভী এবং ধর্মব্যবসায়ীরা দেশের শাসনভার দখল করে। যে মানুষ বাঙালী জাতির স্বাধিকারের স্বপ্নদ্রষ্টা তার অবশ্যই দেশের মানুষকে সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যমলা বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ লেখার শুরুতে চেয়েছি; এমন একটি দেশের নির্মাণ কাজ করছিলেন। । একজন মানুষ যে জীবেনের অর্ধেকের বেশি সময় জেলে কাটিয়ে, কষ্টে, দূর্যোগে, নির্যাতনে কাটিয়ে তিলে তিলে নিজ মনে এবং বাঙালী সত্ত্বায় স্বাধীকারের বীজ বপন করেছেন, এই দেশের জন্য তার মমত্ত্ববোধ, অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সহ অন্যান্য সকল যোগ্যতার সামান্য কিছুর বিজ বপনের পূর্বেই দেশের মৌলিকতা, স্বাধিকারের আবেগ আর সার্বভৌমত্বকে গলা টিপে হত্যা করে পরাজিত শক্তির একদল এদেশীয় দালাল। বাঙালী জাতিসত্ত্বার বৈপরীত্যে নৈরাজ্যবাদী, উন্মাদ, ধর্মব্যবসায়ী এবং ষড়যন্ত্রকারী গোষ্টী স্বাধীন বাংলার ৪০বছর বয়সের ২৯বছর দেশ শোষন করেছে।
বারবার একটি প্রশ্ন এসেছে: এত ত্যাগের স্বাধীনতার মূল্য কি? বঙ্গবন্ধু দেশস্বাধীনের পর তার এক বক্তব্যে বলেছেন, দেশ স্বাধীন হলে মানুষ সোনার খনি পায় আর আমি চোরের খনি পেয়েছি। গৃহস্থের ঘর যদি চোর সামলায় তাহলে আবাদ আর ফলন কত ভাল হবে তা বলাই বাহুল্য। ছোট বেলায় স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্কুলের ম্যাডামদের একটা ইভেন্টের কথা মনে পড়ল। সব ম্যাডামরা গোল হয়ে চেয়ারে বসত। এক ম্যাডামের হাতে একটি বালিশ অথবা ফুটবল দিয়ে পিছনে উল্টো দাড়িয়ে আমাদের স্কুল দপ্তরি মনু ভাই ঘন্টা বাজানো শুরু করতেন।
ম্যাডামরা বালিশ বা বল হাতবদল করতে থাকত। হঠাৎ ঘন্টা বাজানো বন্ধ করে দিতেন। তখন বালিশ বা বল যার হাতে থাকবে সে আউট। খেলাটির নাম মনে পড়েছে “সতিনের সন্তান কার কোলে”। চোরের দল হীনস্বার্থ চিরতার্থ করার মানসে তাদের তাবেদার, স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাজিত শক্তিকে খুশি করার জন্য বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমান করার প্রতিযোগিতা করেছে।
স্কুলের খেলার সাথে শুধূ পার্থক্য সেখানে ম্যাডামরা সতিনের সন্তানকে কত দ্রুত হাতবদল করতে পারে তার প্রতিযোগিতা করত আর চোরের দল ক্ষমতা ও দখলদারিত্বের নিয়্ন্ত্রন এর জন্য এদেশে নতুন রক্তগঙ্গা প্রবাহিত করে। তাই স্বাধীন দেশের চতুর্থ প্রজন্ম হয়েও স্বাধীনতার সংজ্ঞা খুঁজতে হয়!
"শেষ জমানায় কিছু প্রতারক সৃষ্টি হবে। তারা ধর্মের নামে দুনিয়া শিকার করবে। তারা মানুষের নিকট নিজেদের সাধুতা প্রকাশ ও মানুষকে প্রভাবিত করার জন্য ভেড়ার চামড়ার পোশাক পড়বে (মানুষের কল্যাণকারী সাজবে)। তাদের রসনা হবে চিনির চেয়ে মিষ্টি।
কিন্তু তাদের হৃদয় হবে নেকড়ের হৃদয়ের মতো হিংস্র। (তিরমিজী)"
৩
ভালবাসার কোন সংজ্ঞা নেই। নেই কোন পরিরেখা। কিছু বন্ধন চিরদিনের। এই দেশ আমাদের সকলের।
যে রক্তের রাজপথে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাঙালী দেখেছে, ত্রিশ লাখ বাঙালী স্বাধীনতার সংগ্রামে আত্নহুতি দিয়েছেন, তাদের চাওয়া বা স্বপ্ন কি ভূল ছিল? হাজার বছরের বাঙালীর নিজ জাতিসত্ত্বার স্বপ্ন কি ভূল ছিল? হৃদয়ের গভীর থেকে উচ্চারিত কথাগুলো আমরা বলতে পারি না। দেখি না; দেখাতেও পারিনা। অথচ আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক। আবর্জনা দিয়ে স্বপ্নসৌধ ঢেকে দেয়া হয়েছে। কয়লা দিয়ে মুছে দেয়া হয়েছে রক্তের দাগ।
মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মকে হত্যা, নির্যাতন এবং বঞ্চনার মাধ্যমে হতাশ করে, পরবর্তী প্রজন্মকে জুলুম, ব্যাভিচারের মাধ্যমে দ্বিধা-বিভক্ত ও সংশয়ে ফেলে চোরের দল হাজার বছরের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসে কালিমা একেছে, দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি প্রমান করতে চেয়েছে। মুক্তির স্বাদ থেকে বঞ্চিত করেছে বাঙালী জাতিকে। পাকিস্থানী জাতিসত্ত্বার প্রতি দায়বদ্ধতা অনেক দেখানো হয়েছে। ৪০টি বছর কলুসিত হয়েছে। আমাদের প্রজন্মকে ক্ষমা করুন।
রক্ত নিয়ে হলিখেলা অনেক হয়েছে। নোংরামী, ভন্ডা্মী, ধর্মব্যবসার মুখোশ আজ উন্মোচিত।
................ চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।