আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সপ্ন বিনাশ!

বাড়ির সামনে একটি কুকুর খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে, দৌড়ে এসে এক কিশোর ছেলে কুকুরের ক্ষত স্থানে মলম লাগিয়ে দিলো ব্যস ভালো হয়ে উঠলো কুকুর ছানাটি, এর পর আর পিছু ছাড়েনি । ছেলেটির সব সময়ের সঙ্গি হয়ে থাকতো সে। খালে লাফ ঝাপ করড়ে গিয়ে শামুকে এক বন্ধুর পা কেটে গেছে ছেলেটি দুব্বা ঘাশ এনে চিবিয়ে কাটা জায়গায় লাগিয়ে দিলো ব্যস সেরে গেলো। বন্ধুদের কাছে ডাক্তার বনে গিয়েছিলো। পাড়া প্রতিবেশিরাও তাকে অুসখ বিসুখে কাছে পেত।

বউ জামাই খেলায় সে ডাক্তার জামাই হয়। দেরি করে বাসায় ফেরে, বউয়ের বকা খায়। সেদিন মায়ের সাদা ওড়না কেটে এপ্রোন বানিয়ে ডাক্তার সেজে মায়ের হাতে সেকি ধোলাই। ডাক্তার কাকুরও বেশ আপন বনে গিয়েছিলো হাসান। গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে ওই ডাক্তারকে খবর দেয় ডাক্তারী ব্যাগ টেনে সাহায্য করে, ইনজেকশন দেয়ার সময় ঔষধ আর সিরিঞ্জ এগিয়ে দেয়।

বাবা মা বুঝতে পারে ছেলের ইচ্ছা, ক্লাস নাইনে সাইন্স নিয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়। পড়ালেখায় দুর্দান্ত হয়ে ওঠে হাসান,গ্রামে খেটে খাওয়া মানুষ গুলো অসুস্থ হলে খারাপ লাগতো হাসানের । সেদিন প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেলো রাহেলার মা, তিন তিনটি মেয়ে বিয়ে দিতে ভিটাও বিক্রি করে দিতে হয়েছিলো। শেষে গ্রামের মানুষের উপর ভরষা করে্ই বেঁচে ছিলো, একদিন হঠাৎ শ্বাসের কষ্টটা বেড়ে গেলে উপজেলা সরকারী হাসপাতালে নিয়েগিয়েছিলো হাসান। ডাক্তার দামী ঔষধ দিয়েছে, টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে টাকা দিয়ে ক্রিকেট ব্যাট কেনার কথা ছিলো কিন্তু বুড়িটার জন্য মায়া হলো তাই ঔষধ কিনে দিতে হলো।

তবুও বাঁচানো গেলো না রাহেলার মাকে, ঔষধ কিনে না খেতে পেরে চলেই গেলো। এমন মৃতু্র কাছাকাছি গ্রামের অনেক অভাবী মানুষই। হাসান তাদের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায় আর বলে ইসস আমি যদি এখন ডাক্তার হইতাম গ্রামের কাউকে আর মরতে দিতাম না। ছোট মনে কত ভাবনাই দোলা দিতে থাকে। হাসান যেবার এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ করলো সে বার ছুটিতে কি করবে ভাবতে পারছিলো না ঠিক তেমন সময় এলো মোক্ষম সুযোগ, গ্রামে ঢাকা থেকে এক ডাক্তার আপা আসবে গরীব রোগীদের ফ্রি দেখার জন্য।

ডাক পরলো হাসানের, ডাক্তার আপাকে গাইড দেয়ার জন্য হাসানও এমন সুযোগ হাতছাড়া করেনি। কাছ থেকে দেখেছে ডাক্তার আপা কতটা যত্ন করে রোগী দেখতেন। ডাক্তার আপার চোখও এরিয়ে যায়নি হাসানের কাজের একগ্রতা । মনে মনে ভাবলেন এই ছেলে বড় হলে নিশ্চই বড় কিছু হবে। যাওয়ার দিন ডাক্তার আপা হাসানের বাবা, মায়ের সাথে দেখা করতে চাইলেন ।

হাসান তাদের বাড়ির নিয়ে গেলে হাসানের বাবা, মাকে ছেলেকে ডাক্তার বানাতে বললেন। বাতলে দিলেন কিভাবে কোথায় ভর্তি করাতে হবে। যাবার বেলায় হাসানের মাথায় হাত রেখে আর্শিবাদ করলেন বড় হও, বড় হয়ে ভালো ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের সেবা কোরো। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হাসানের। ঢাকা ম্যাডিকেল থেকে পাশ করে ইর্ন্টানি করছে, বিসিএস এ উর্তিন্ন হয়েছে।

এখন পোষ্টিং এর অপেক্ষা, জনা কয়েক ডাক্তার বন্ধু মিলে গ্রামে ক্লিনিক কাম ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গড়ে তুলেছে, প্রতি সপ্তাহেই গ্রামে দেখাশোনার জন্য যেতে হয়। বাবা মায়ের খুশি যেন ধরে না তাদের হাসান আজ ডাক্তার হয়েছে, গ্রামের মানুষ বিনা পয়সায় ডাক্তার দেখাচ্ছে। দু'হাত তুলে সবাই দোয়া করছে । হরতাল, অবরোধ ,ঝড় ঝঞ্জাট কিছুতেই গ্রামে আসতে বাঁধা নেই হাসানের। সপ্ন দেখেছিলেন গ্রামের মানুষ যেন বিনা চিকিৎসায় না মরে সে সপ্নতো পূরন হয়েছে।

হাসানের আজ খুব আনন্দের দিন,তার পাশের জেলায় পোষ্টিং হয়েছে, তার বাবা, মাকে চমকে দেবে খবরটি জানিয়ে। কাল হরতাল আগে ভাগে রওনা দিতে হবে যাতে কোন ঝামেলায় না পড়তে হয়। কয়েক ডাক্তার বন্ধুকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে রওনা দিলো, হাসানের গড়া হাসপাতাল দেখার জন্য ওরা বেশ কিছুদিন যাবত পিরাপিরি করছিলো। গাড়ি চলছিলো, খুনশুটির কোন কমতি নেই সবাই গল্পে মত্ত। হঠাৎ বিকট শব্দ, গাড়িটা থেমে গেলো ধোয়ায় আচ্ছন্ন।

আশে পাশে কেউ নেই ধোয়ায় যেন ঘিরে ধরেছে হাসানকে। মায়ের মুখটা খুব মনে পড়ছে, ফোন দিয়েছিলো মিথ্যে করে বলেছি আজ আসবো না। ভারি গলায় কি যেন বলতে চেয়েছিলো, দুস্টুমি করে রেখে দিয়েছিলাম। ভাবতে ভাবতে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে গাড়ির দরজায় আঘাত করলাম এরপর আর মেন নেই । জ্ঞান ফেরার পর আবিস্কার করলাম আমি হাসপাতালে ।

শরীরে কোন জায়গা আর বাকি নেই ব্যান্ডেজে, চারপাশে ডাক্তারদের উদ্দিগ্ন চোখ আমার চোখে, ডাক্তার হয়ে নিজেই আমি রোগী! বুঝতে পারছি আমি মরতে যাচ্ছি। মরার আগে সবারই একটা ইচ্ছা থাকে আমারও ইচ্ছা আছে কিন্তু বাকশত্তি নেই। মাকে ইশারায় বলেছি জিঞ্জাসা করতে সেই ছেলেটিকে যে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মেরে দৌড়ে পালিয়েছিলো । ১. তোমার ভাইয়ের গায়ে যদি এমন পেট্রোল বোমা পড়তো তোমার কেমন লাগতো? ২. তোমরা দলের নেতা কি হরতালে বোমা মেরে মানুষ হত্যার আদেশ দিয়েছে?? ২. তুমি কি জীবনে একবারও ডাক্তারের কাছে যাওনি? তাহলে কেন ডাক্তারবাহী গাড়িতে বোমা মারলে। এমন আরও প্রশ্ন আছে যা হয়তো সে উত্তর দিতে পারবে না! আমার মা হয়তো আমার ইশারার কথা বুঝতে পারেননি আর আমিও মনে হয় এ প্রশ্নগুলো তাকে করে যেতে পারবো না........................!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।