আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাদেঁর লোগে দস্তি

একা মানুষ , একা থাকতে পছন্দ করি। চাঁদের সঙ্গে আমার প্রথম দিকে সম্পর্কটা ছিল দোস্ত দোস্ত টাইপের আমি যখন হাঁটতাম, সেও আমার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটত। শুরুর দিকে ভাবলাম এটা মনে হয় আমার মনের ভুল পরে দেখলাম, না, আমি জোরসে দৌড় দিলে তখনো সে আমার পিছু ছাড়ে না। পাক্কা দোস্তি গড়ে উঠল, মাঝেমধ্যে সে আমার সঙ্গে লুকোচুরিও খেলত আমি লুকাতাম গাছের আড়ালে আর ও লুকাত মেঘের আড়ালে পরে অবশ্য সে বন্ধুত্বটা ভেঙে যায়। কারণ ছাড়া তো আর এমন একটা সম্পর্ক ভাঙেনি।

আমিই ভেঙে দিয়েছি, যখন শুনলাম বল্টুর সঙ্গেও সে একই রকম সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে বল্টুর সঙ্গে তখন আমার আড়ি চলছিল, তাই একদিন ভরা পূর্ণিমার রাতে চাঁদকে জানিয়ে দিলাম বল্টুর সঙ্গে যার সম্পর্ক আছে, তার সঙ্গে আমি নেই বেশ কিছুদিন পর একটা কবিতা মারফত জানতে পারলাম, চাঁদ নাকি সম্পর্কে আমার মামা হয় অভিমান ভুলে তাই চাঁদের সঙ্গে সম্পর্কটা আবারও পুনরুদ্ধার করলাম ভরা পূর্ণিমা রাতে তাকে ডাক দিলাম—আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা... কিছুদিন পর আবারও ছ্যাঁকা খেলাম। হায়! ঐ বল্টুটার সঙ্গেও নাকি চাঁদের মামা-ভাগনে সম্পর্ক। রাগে দুঃখে চাঁদটাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করল। ভরা পূর্ণিমার রাতে কবি সুকান্তের কবিতা থেকে ধার করে বলে দিলাম—‘... ব্যাটা পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি কিছুদিন পর যখন জানতে পারলাম ব্যাটা চাঁদ বিশেষ কেউ নয়, নিল আর্মস্ট্রং নামের এক অতি ভদ্রলোক চাঁদের বুক নিজ পায়ে মাড়িয়ে দিয়ে এসেছেন তখন আমার মনে হলো আমি যেতে পারলে আরও বেশি করে মাড়িয়ে দিতাম। আবারও ভরা পূর্ণিমা রাতে ঘোষণা দিলাম, ‘নিলের আর্ম স্ট্রং ছিল,/আমারও কম স্ট্রং না/রকেট পেলে আমিও যেতাম,/এই ভাবনা রং না চাঁদের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা এমন যে, সবাই যখন তাদের প্রেমিকাকে বলে—তুমি চাঁদের মতো সুন্দর আমি তখন গাই, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না, তোমার তুলনা, তুমি চাঁদ হতে যদি... কেউ যখন আমার কাছে চাঁদের আলোর গুণগান করে, আমি তখন অতি সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাদের মনে করিয়ে দিই যে চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, সে সূর্যের আলো কপি পেস্ট করে মাত্র (আমার মতো ) চাঁদের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা দিন দিন খারাপ হতেই থাকে।

আমার কী দোষ? মুরব্বিরাই তো বলেছেন—চাঁদেরও কলঙ্ক আছে কিন্তু কলঙ্কমুক্ত আমি আমার প্রেমিকাকে নিয়ে যেদিন তার বাবার সামনে দাঁড়ালাম, সেদিন সব শুনে চৌধুরী সাহেব ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করার আগে আমাকে একটা কথাই বললেন—কত্ত বড় সাহস! বামুন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়ায় এ কথা শোনার পর চাঁদের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা আরও খারাপ হয়ে গেল। আমি এবং আমার প্রেমিকা দুজনেই বিয়ে করলাম। ও বিয়ে করল ৪ জুন, আমি ১৯ নভেম্বর ওর স্বামী কেমন আমি জানি না, আমার স্ত্রীর কথা এই লেখায় অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, তাই আপনাদের জানাচ্ছি। তিনি প্রায়ই বলেন—ওই যে পাশের বাসার মনন ভাইয়ের বউ নতুন একটা হার কিনেছে অমুক সিরিয়ালের নায়িকার শাড়িটা না বসুন্ধরার তমুক দোকানে পাওয়া যাচ্ছে এই শুনছ, তুমি আমাকে বলোনি তো তোমার কলিগ তানভীর ভাই এক মাস আগে তাঁর বউকে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন অবশ্য এসব নিয়ে আমাকে খুব বেশি ঘ্যান ঘ্যান শুনতে হয়নি, হবেই বা কেন! শেষ পর্যন্ত তো বউয়ের এসব আবদার আমি মিটিয়ে দিতে পেরেছি কিন্তু গতকাল একটা ম্যাগাজিন পড়তে পড়তে তিনি যখন বললেন—এই শুনছ, ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসান আল বলকিয়াহ্ তাঁর স্ত্রীকে চাঁদে জমি কিনে দিয়েছেন। কত শখ ছিল... তখন আমার আত্মারাম খাঁচা ছেড়ে দিল ভরা পূর্ণিমা রাতে চাঁদকে শেষবারের মতো জানিয়ে দিলাম—বউ যদি এটা নিয়ে বেশি ঘ্যান ঘ্যান করে, তাইলে মামা আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা পুরোপুরি শত্রুতায় গড়াবে (সংগ্রহিত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।